এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

মনোজ দে


আর্কাইভ
মনোজ দে



এই বিভাগে আমরা এই সময়ের কিছু বলিষ্ঠ কলমকে বিভিন্নভাবে ধরার চেষ্টা করবো। বুঝতে চাইবো সেই কলমের শক্তির উৎসটা।

এই সংখ‍্যায় আমরা জানতে চেয়েছি এই সময়ের অন‍্যতম শক্তিশালী ও তরুণ কবি মনোজ দে’র কলমকে। তাঁর ও তাঁর কবিতা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিয়েছেন বরিষ্ঠ ও বলিষ্ঠ কবি মাননীয় প্রবীর রায় ও মাননীয় অনিন্দ্য রায় মহাশয়। এছাড়া তাঁর সমন্ধে আমরা অনেক কিছু জেনেছি তাঁর বন্ধু শুভম চক্রবর্তী’র কাছ থেকে। আমরা কবির মুখেই শুনতে চেয়েছি তাঁর অনুভব’টুকু। অতঃপর কবির মুখোমুখি শাল‍্যদানী। জমাটি আড্ডায় উঠে এসেছে অনেক অজানা তথ্য।

আসুন, আমরা জানি ও চিনি কবি মনোজ দে’র কলমকে আরো কাছ থেকে।




■ মনোজ দে’র কবিতা নিয়ে বরিষ্ঠ ও বলিষ্ঠ কবি মাননীয় প্রবীর রায়ের মূল‍্যায়ন :




মনোজ দের কবিতা
প্রবীর রায়

একটা সময় ছিল,যখন ইচ্ছে থাকলেও নতুন কারা লিখছে,এটা বোঝার জন্য বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ঘাঁটতে হত। বহুল্প্রচারিত পত্রিকার ভীড়ে অনেক সময়েই সঠিক ছবিটা পৌঁছত না। ইন্টারনেট এবং ফেসবুক আমাদের এই সুবিধাটা করে দিয়েছে। একজন নতুন কবি তার লেখা নতুন কবিতাটি বিনা বাধায় পোস্ট করছেন ফেসবুকে। অনলাইন পত্রিকাগুলিতে প্রকাশিত লেখায় অনায়াসে চেনা যাচ্ছে নতুনকে। এ ভাবেই নতুন কবি ও কবিতার খোঁজে প্রতিদিন নেট খুলে বসি। ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যায় আমার মত অকেজো মানুষের। এভাবেই চোখে পড়েছে মনোজ দের মত কবিদের,যাদের চিহ্নিত করে রাখি আর অপেক্ষা করি পরবর্তী কবিতার।

মনোজকে চিনিনা আর কটা কবিতাই বা পড়েছি ওর,তবুও ওকে খুব চেনা মনে হয় ওর কবিতায়।
'জল্প'র প্রথম সংখ্যায় মনোজ লিখেছিল,- 

জানা হয়নি কিছুই। তুমিও প্রস্তুত 
প্রতি ঘর অথবা ঈশ্বর
ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখালে আমায় (সরোদ)

মনোজ জানে সে মহাকালের এক ক্ষুদ্র মানুষ আর তার জানার পরিধি নিতান্তই অল্প। সে যা জানেনা সেই ধারনা টুকুও পরিস্কার করে নেওয়ার আকুতি তার কবিতায় পাওয়া যায়। সে না পাওয়াকেই পেতে চায় কবিতায়।

তার যাপনটিকেও তার কবিতায় আমরা পাই তার মত করে।তার প্রথম বই "আমিও ঈশ্বর ছুঁইনি" এর প্রতিটি কবিতায় আমরা তা প্রত্যক্ষ করেছি। মিতকথনের কবিতাচরিত্রও আমাকে তৃপ্তি দিয়েছে। প্রথম কবিতাটিতো  
মনে গেঁথে যায়,- 

সাজিয়ে রেখেছো ছুরি
নিকটস্থ কেক ।। খুন হবে বলে

প্রতিটি হত্যার মুহূর্তেই
আলো নিভে যাওয়া আবশ্যিক (জন্মদিন)

তবুও কবিতাভাবনায় নিজস্ব চলনে ওকে অস্থির মনে হয়, যখন দেখি ও প্রচলিত ধারায় তার কবিতাকে খুঁজছে।পয়ার ধাঁচের কবিতাগুলি লেখা কি শুধু একরকম লেখার ক্লান্তিকে কাটানোর জন্য নাকি নিজের ক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য। একটি কবিতার অংশ,-

"লালন শুনেছি শুধু। অজ্ঞাত সঙ্গীত
কান্না ছুঁয়ে বলতে পারি কোন ঘরানার
পাখীকন্ঠ হয়ে নেমে সংসার জন্মায়
তবুও নালিশ আছে গপপে ছড়ায় " (বায়স পত্রিকায় প্রকাশিত 'গতজন্মের কবিতা')

কবিতায় প্রাণ থাকলেও ,এ যেন তার ভাষা নয়। তার কাছে আমরা চাই আগামী দিনের কবিতা। এখনও অনেকটা পথ যেতে হবে তাকে। আমরা তার কবিতায় নিজের স্পষ্ট স্বর শোনার অপেক্ষায় থাকবো।





■ মনোজ দে’র কবিতা নিয়ে এই সময়ের অন‍্যতম শক্তিশালী কবি অনিন্দ্য রায়ে’র মতামত ও মূল‍্যায়ন, যিনি মনোজ দে’কে দেখেছেন খুব কাছ থেকে।




মনোজ দে- অদ্ভুত বাড়ি
অনিন্দ্য রায়



তোমার আটপৌরের ওপর বিষণ্ণ বুটিক
দেখো কেমন উজ্জ্বল

অথচ মলিন হবে বর্ণহীন শ্রান্ত
ঋজু হতে হতে হয়ত কোনদিন পরিত্যক্ত
বাসনওলা নিয়ে যাবে বিনিময়ে শৌখিন টিফিন কৌটো

অফিসের লাঞ্চ ভরে দেবে তাতে
কিছু আদর, খানিক পরিপাটি
যা তোমার খুব প্রিয় ছিল
(একান্নবর্তী )

এই আটপৌরে বিষণ্ণতাই মনোজের কবিতা, সে নীচু স্বরে কথা বলে। কম কথা বলে । কবিতায় যতটা লেখে সে লেখার আগেই মনে মুছে ফেলে তার বেশি। আর সেই ইরেজড অংশগুলো সে রেখে দেয় পাঠকের জন্য, উন্মুক্ত । সেখানে পাঠক প্রবেশ করেন, অংশগ্রহণ করেন, কবি হয়ে ওঠেন ।
মনোজের কবিতা তাই পাঠকের জন্য, আমাদের জন্য; তাই সে এত প্রিয় হয়ে ওঠে, এত মানুষের প্রিয় কবি হয়ে ওঠে সে । সাম্প্রতিক বাংলা কবিতায় যাঁরা সদ্য লেখালেখি শুরু করেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম উজ্জ্বল মনোজ দে।
তার উচ্চারণ সংযত, ‘সংহত কবিতা’ আন্দোলন থেকে সময়কালের ও ভৌগলিক দূরত্বে থেকেও আবেগ ও শব্দের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে সে আমাদের মুগ্ধ করে।
সাজিয়ে রেখেছ ছুরি
নিকটস্থ কেক। খুন হবে বলে

প্রতিটি হত্যার মুহূর্তেই
আলো নিভে যাওয়া আবশ্যিক
        ( জন্মদিন )
শিরোনাম ‘জন্মদিন’ অথচ হত্যমুহূর্তের আবশ্যিকতার কথা বলা হয়েছে । বলা হয়নি অনেক কিছুই, শুধু একটি জন্মদিনের পরিমণ্ডল প্রথম স্ট্যাঞ্জায় আর দ্বিতীয়টিতে হত্যার ইঙ্গি্তময়তা, আলো নিভে যাওয়ার সাসপেন্স – এইটুকুর মধ্যে মনোজ মুছে ফেলে তার ভাবনার পঙ্‌ক্তিগুলিকে । আমরা পড়তে পড়তে সেগুলি ফিল আপ করি আর আমাদের এই পার্টিসিপেশনকে ওয়েলকাম করে মনোজ ।
            সাইকেলকোরাস। প্রজন্মবাহিত

ঝুড়িতে চকলেট রেখে প্রেমিকারা ফেরে
সে'সব চাকার দাগ। কোমল অক্ষর
মৃদু হাতে তুলে
সোনাকুড়ানিমেয়ে তোমায় বানান শেখাবে

হে নশ্বর ঈভ, এসো
            ( ঋণী/ ২ )
মফস্বলের এক তরুণের জীবনভাষ্য লিকে রাখে মনোজ। ব্যক্তিগত অনুভূতিমালা, ভালবাসা, অভিমান। পাওয়া ও না-পাওয়া, শরীর ও অশরীরী উত্তাপ ছড়িয়ে দেয়। এবং সে উচ্চকিত হয় না, এই কোলাহলমুখর সময়ে, এই আত্মপ্রদর্শনের হুল্লোড়ে সে তার নিজের কথা, নিজের বেঁচেথাকার সুক্ষ্ণ টানাপোড়েন খুবই আস্তে আমাদের বলে ।
কেউ আর কথা বলি না, এখন

রিসাইকেল পেপারব্যাক কভার ভেতরে সভ্যতা।
পাতার রোদন ছিঁড়ে আঙুলে বসাই

ও মেঘপারা মেয়ে আমরা এভাবেই
পরস্পরের কবিতা লিখি
        (মেঘপারা মেয়ে ১৩ )
এরকমই সহজ অথচ তীব্রভেদী মনোজের কবিতা।
ভাষার ভেতর এক দ্বন্দ্ব উদযাপন করে সে। আর এই দ্বান্দ্বিক থ্রেডদুটি পরস্পরের পারপেন্ডিকুলার । হ্যাঁ, বয়ন করে, এই টানাপোড়েনকে সে বয়ন করে দক্ষতায় ।
এই ভাষাবস্ত্রগুলি সে পরে নেয়, মনোজের কবিতাই তার পরিচয় হয়ে ওঠে ।
প্রত্যাবর্তন তোমায় মানায় না আর
মৃদু মেঘ সরে আসে। এত আলো, দুয়ো
তমসাকালীন তুমি। বলেছ গ্রহণ ফেটে যায় যাবতীয় বিষাদপ্রণয়

ছিটকে আসা দগ্ধ দাগ রক্ত নয় জেনে
নিঃসঙ্গতার ভেতর আহ্লাদিত হই উৎসব, সম্ভোগে মাতি। বিগত অভ্যাসে
ভ্রূণের বিরুদ্ধে যেন তোমায় পেয়েছি

লালন শুনেছি শুধু। অজ্ঞাত সঙ্গীত
কান্না ছুঁয়ে বলতে পারি কোন ঘরানার
পাখি কন্ঠ হয়ে নেমে সংসার জন্মায় তবুও নালিশ আছে। গোপণে ছড়ায়
দূষণের কথা বলো যতই আদরে তোমার স্বপ্নের রঙ আমি জানি, লাল
                  (গতজন্মের কবিতা )
সঙ্গীত তার কবিতায় ছড়িয়ে থাকে, বিমূর্ত ধ্বনিশরীর থেকে অবয়ব হয়ে ওঠে। কবিতার শব্দ- পঙ্‌ক্তি-স্তবক বিন্যাসে সে কবিতাকে এমনভাবে সাজিয়ে তোলে যে তা একটি বস্তুর অবয়ব প্রকাশ করে। সে অবয়ব কবিতার আঙ্গিকে পৌঁছতে চায়।

এভাবেই নির্মিত হয় মনোজের কবিতাজীবন, মনোজের কবিতার বসবাস
মনোজ দে-র অদ্ভুত বাড়ি ।




মনোজ দে’র সম্পর্কে তাঁর বন্ধু ও কবি শুভম চক্রবর্তী’র কিছু কথা:

মনোজ দে- কে নিয়ে যা বলতে চাই


শুভম চক্রবর্তী

তরুণ কবি মনোজ দে-এর সঙ্গে প্রথম আলাপ হয় কবি অনিন্দ্য রায়-এর বাড়িতে।তারপর নানান স্থানে; গভীরভাবে।প্রথম দশকের তথাকথিত অন্তসারশূন্য স্মার্টনেসের বিপ্রতীপে মাত্র যে কয়েকজন আমায় মুগ্ধ করে মনোজ দে তাদের একজন।তার করুণ আন্তরিকতা আমার বড় প্রিয়।টান অনুভব করি,সহযাত্রার টান।কত নথিপত্রহীন মুহূর্ত আমাদের আলোচনায় কেটেছে।বস্তুতপক্ষে,লেখালিখির প্রথমদিকে হতাশাজারিত অগ্রজ কবিদের মুখে শুনেছি--'ব্যাল্ডেলের পরে কোনো কবির বাড়ি হয় না ।" অগ্রজ কবিদের এই হতাশা সম্পূর্ণ অমূলকও নয়।কারণ প্রতিভা ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও অনেকেই কল্কে পাননি তথাকথিত কেন্দ্রে।বৃহত্তর কলকাতার সাহিত্যরাজনীতিবিদেরা তাদের মুখে একটুও আলো পড়তে দেননি।তাঁরাও আলো চাননি।দূরে সরে গেছেন স্পর্ধায়-অভিমানে। সে যাই হোক,ব্যান্ডেলের পরও যে কবিদের বাড়ি হয় তা প্রমাণিত হয়েছে প্রতিটি দশকেই।প্রথমদশকেও মনোজ দে-এর মতো কবিরা এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।ওর অবয়ব কবিতা বিষয়ক কাজগুলির কথা আমি আমার বন্ধু এবং মাস্তুলের সম্পাদক আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়কে জানাই।আকাশ সেগুলি তার পত্রিকায় প্রকাশ করে গুণীর যথার্থ কদর করেছিল।তার অবয়ব কবিতা আমারও ভালো লেগেছিল।যে কোনো পরীক্ষামূলক কাজের ক্ষেত্রেই যে আশঙ্কা আমার প্রথম হয় তা হলো--'এসব করতে গিয়ে কবিতাটিই মাটি হবেনা তো !' ।মনোজ দে আমার সেই আশঙ্কাকে ভুল প্রমাণিত করেছে।তার অবয়ব বিষয়ক কাজও যথেষ্ট কাব্যিক।তাতে পরীক্ষামূলকতার নামে পারম্পর্যহীন শব্দগুচ্ছের ভিড় নেই ; আবার স্বতস্ফূর্ততার চিরায়ত আড়ালে শিল্পসুষমাহীন উচ্চকতাকেও প্রশ্রয় দেওয়া নেই।মনোজ দে সব অর্থেই আমার প্রিয় কবিবন্ধু ও মানুষ।তাকে ভালোবাসা।কিন্তু মনোজ দে কে কেন্দ্র করে কিছুদিন ধরে যে ভার্চুয়াল নাচনকোঁদন চললো।একজন তো জয় গোস্বামীর মতো ক্রান্তদর্শী কবির সঙ্গের ওর তুলনা টানলেন,তা আমার ভালো লাগেনি।মনোজ দে-এর প্রতি আমার আবেগ ও ভালোবাসা সামলে নিয়ে নিরপেক্ষভাবে বলি মনোজ দে কোনোভাবেই জয় গোস্বামীর তুলনীয় নয়,ছিটেফোটাও না। তুলনীয় করে তোলারই বা দরকার কি ? শিল্পী স্বীয় প্রতিভার স্বতন্ত্র স্বকীয়তায় বিকশিত হবেন--' অমুকের মতো' বা 'তমুকের থেকে ভালো' হওয়ার চেয়ে নিজের মতো হওয়াই একান্ত কাম্য।তাই মনে রেখো মনোজ দে, এই ভার্চুয়াল নাচাকোঁদা ক্ষণস্থায়ী ।তোমার কবিতাই তোমায় বাঁচাবে অথবা মেরে ফেলবে ।তাই যাঁরা তোমায় অন্যের সঙ্গে তুলনীয় করে তোলে,তাঁদের সন্দেহ করতে শেখো। বাঁচো,ভরপেট কবিতায়. . .





■ কবির মুখে কবি’র কথা :



কবিতা ও আমি
মনোজ দে

ব্যক্তি হিসাবে আমি একান্তই নিজের নিয়ে থাকতে পছন্দ করি। খুব চেনা সার্কেল ছাড়া আমি খুব বেশি কথাও বলি না, বলতে পারি না। যদি কোনো একদিন একটিও কথা না বলে থাকতে দেওয়া হয়, আমি অনায়াসে কাটিয়ে দিতে পারি। এইরকমই একটি আদিগন্ত কুঁড়ে প্রকৃতির ছেলে, আমি। স্বভাবতই কবিতায় ব্যক্তিগত জীবনের ছাপ রয়েছে। রয়েছে কম কথা বলা। চুপ রয়ে যাওয়া। রয়েছে মুছে যাওয়া। যদি ধরে নিই ২০১৫ থেকে আমার সচেতন কবিতা যাপন শুরু। আজ ২০১৭ এর শেষ দিক। আমার কবিতা ভাবনা নিয়ে কিছু বলতে গেলে যে মানুষটির কথা প্রথম উঠে আসে, তিনি, আমার জীবনের অন্যতম প্রিয় মানুষ অনিন্দ্য রায়। আমার প্রতিটা অক্ষর, এমনকি প্রতিটা স্পেস তার কাছে ঋণী। অনিন্দ্যদাই আমায় বলেছিল, 'মুছে যাওয়াটুকু কবিতা'। আজ আমি শুধু তার কথাগুলোর অনুশীলন করে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে যখন লেখা আসে না, আমি ফোন করি অনিন্দ্য দা'কে। ওপার থেকে হাসি মুখে ভেসে আসে, ' ছেড়ে দাও, আবার আসবে। এমনি চলুক কিছুদিন। ক্ষতি কি!'। অনিন্দ্য দার এই কথাগুলো যতদিন মাথার মধ্যে বাজবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমি ততদিন কবিতায় থাকতে পারব। কত সন্ধে আমি, অনিন্দ্য দা, সুদীপ দা, একসাথে আড্ডায়, কবিতায় কাটিয়েছি। আলোচনার কথাগুলো যত্নসহকারে শুনে যেতে চেয়েছি। যতখানি পেরেছি, তা আমায় কবিতায় ও জীবনে অনেক কিছু শিখিয়েছে। এই ভালবাসা থেকে কোনোদিন বঞ্চিত যেন না হয়, এটুকুই প্রার্থনা, এ জীবনে। আর আমার বিশ্বাস আমি বঞ্চিত হব না। আমার বিশ্বাস সুদীপ দা, অনিন্দ্য দা, কবিতাডিহি, আমরা একসাথে থাকতে পারব। কবিতা লিখতে এসে অনেক মানুষের ভালবাসা পেয়েছি। আমি কৃতজ্ঞ প্রত্যেকের কাছে। হয়ত আমি সাধ্যের তুলনায় অনেক বেশি পেয়ে গেছি। অনেক কিছু শিখেছি, শিখছি। আর একজন মানুষের কথা না বললেই নয়, পলাশ দে। একটা সময় আমি পলাশ দা কে অনুকরণ করতাম। পলাশ দা'র মত লেখার চেষ্টা করতাম। লিখেওছি বেশ কিছু। পলাশ দা, ততবার আমার পাশে থেকেছে। আমায় ফোনে বারবার বলেছে  স্বতন্ত্র হতে। পলাশ দা একদিন ফোনে আমায় বলল, 'দেখো মনোজ, আমাদের দেখাগুলো কোনোদিন এক হতে পারে না, তবে কবিতাগুলো কিভাবে এক হবে। তুমি আমার লেখা পড় না, এখন। দেখবে ধীরে ধীরে প্রভাব কেটে যাবে'। কথাগুলো ভীষণ উপকার করেছে। এখন হয়ত অনেকটাই প্রভাবমুক্ত। আমাদের দেখাগুলো পৃথক পৃথক। যাই হোক, ভালো থাকবেন সকলে। সুস্থ থাকবেন। কবিতায় থাকবেন। আর যা যা লিখলাম না, সেটাই কবিতা হয়ে ফুটে উঠুক।





সঙ্গীত মিডিয়াম

১.

স্কুলে যায়নি 

ভাষাজ্ঞান স্পষ্ট নয়


শুধু তুমি রেওয়াজে বসলেই

বাকি পৃথিবী বধির মনে হয়



সঙ্গীত মিডিয়াম
...

১.
স্কুলে যায়নি অথচ
ভাষাজ্ঞান স্পষ্ট নয়

শুধু তুমি রেওয়াজে বসলেই
বাকি পৃথিবী বধির মনে হয়



ট্রাফিক
...
যেন সান্ধ সিরিয়াল। ফিরিয়ে দিয়েছ
যেভাবে বাড়ির বউ ভাষার অভাবে
একমুখ অবজ্ঞা নিয়ে চ্যানেল পাল্টায়
অথচ এমন নয়; অভিনয়ে পটু
তীব্র সংকেত সত্ত্বেও কেন পিছু ফেরা
লিপি নেই। দাগ নেই। আশ্চর্য হলে না
তাই। জলসা। গান গাও। দূরে। বহুদূরে
স্বরলিপি খুঁজতে খুঁজতে শ্রান্ত সে যুবক
কোন সবুজ সিগনালে থমকে আছে আজ
যদি পারো একটিবার
                          অন্তত অক্ষর নিয়ে যেও






সারোদ
...
১.
জানা হয়নি কিছুই। তুমিও প্রস্তুত
প্রতি ঘর অথবা ঈশ্বর
ছুঁয়ে ছুঁয়ে শেখালে আমায়

ফের দূরে যাও
আমিও উৎসবে খুলেছি বোতাম

ভীতি নেই। পিঁপড়ে হই। স্পর্শ রাখি

সেলাইয়ের দাগে দাগে
                       দেখি ঈশ্বর উধাও



বিয়োগ
...
যেহেতু শাশ্বত বলে কিছু নেই
মিথ এক উজ্জ্বল মিথ্যে
এ শহর। তোমার সংকেত
                     জানি ফিরে যাওয়াটাই রীতি

আমাদের একটাই বিচ্ছেদ
অথচ আলাদা আলাদা কবিতা লিখছি



কুয়ো এবং কুয়োতলা

কুয়ো এবং কুয়োতলা। দুটি ভিন্ন অঞ্চল আমাদের বাড়িতে। কুয়োকে দেখি, আস্ত এক সীমানা ধারণ করে আছে। আমাদের এবং পাশের বাড়ির। গতবছর তীব্র গ্রীষ্মে কুয়োর জল শুকিয়ে গেলে, সালিশি বসেছিল। যেন বৃদ্ধ হয়ে যাওয়া মা, ছেলেরা ঋতু বসিয়ে ভাগ করে নেয়

কুয়োতলা, অথচ কুয়ো নেই। ঠাকুরদাদার আমলে এখানে কুয়ো ছিল, শুনেছি। বছর দুই আগেও গ্রীষ্মের দুপুরে আমরা কুয়োতলায় বসে লুডু খেলতাম। গল্প শুনতাম। এখন আর লুডু খেলি না। বসি না কুয়োতলায়। কাঁঠালগাছটাও নেই। অনেকদিন কেউ চিৎকার করে বলেনি, কুয়োতলায় আয়। চার-পাঁচটা সাইকেল আর একটা বাইক এখন কুয়োতলা আগলে।

চোদ্দ বছরের সদ্য বিবাহিতা মেয়ে স্বামীর স্নানের জন্য এখনও স্মৃতি থেকে জল তোলে। আমরা, ঠাকুমা বলি

           ( প্রকাশিত, বাক্ ১০৯)







■ জমাটি আড্ডায় মনোজ দে’র মুখোমুখি শাল‍্যদানী :




[ 24/12 12:01 am]
শাল্যদানী:  'আমার প্রেমের খাতায়
ওই চাঁদ-ফুল-তারার জায়গা কোথায়'
             
কবি কি কন এ বিষয়ে?


[24/12 12:04 am]

মনোজ দে: অবশ্যই আছে। আমরা তো প্রিয়তমাকে প্রকৃতির আলোকেই দেখি। আমি মনে করি আমার প্রিয়তমা চাঁদের আদল।

[24/12 12:05 am]

শাল্যদানী: প্রকৃতি প্রমিক নাকি প্রেমে প্রকৃতি?

[24/12 12:07 am]

মনোজ দে: প্রেমে প্রকৃতি। এই প্রাকৃতিক অবক্ষয়ের দিনে দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রকৃতি প্রেমিক বলার স্পর্ধা আমার নেই

[24/12 12:09 am]

শাল্যদানী: কবিতার ভাঙা গড়া নিয়ে যে এক্সপেরিমেন্ট চলছে কবি কি তাতে আছেন?

[24/12 12:10 am]

মনোজ দে: হ্যাঁ, আমি আছি। আমি নিজেও আমার মত করে চেষ্টা করে যাই।

[24/12 12:10 am]

শাল্যদানী: চেষ্টা করে কবিতা?

[24/12 12:12 am]

মনোজ দে: হ্যাঁ, অবশ্যই। কবিতা লেখাও একটা কাজ। যেকোনো নতুন ভাবনা এক একটা প্রোজেক্ট। সেখানে নিজের সাধ্যমত সেটাকে সফল করার চেষ্টা করি।

[24/12 12:13 am]

শাল্যদানী: স্বতঃস্ফূর্ত হয় তাতে?

[24/12 12:14 am]

মনোজ দে: স্বতঃস্ফূর্ততা না থাকলে কাজে আগ্রহই থাকবে না। স্বতঃস্ফূর্তভাবেই আমি কবিতা লিখি।

[24/12 12:16 am]

শাল্যদানী: চেষ্টা আর স্বতঃস্ফূর্ত একসাথে। কি ভাবে ম্যানেজ করেন কবি?

[24/12 12:16 am]

মনোজ দে: ইচ্ছেশক্তি দিয়ে আমি এদের মিশিয়ে দিই

[24/12 12:18 am]

শাল্যদানী: কবি না পাঠক? কোন তত্ত্ব?
নাকি দুটোই?


[24/12 12:20 am]

মনোজ দে: কবি তো শুধু লেখার সময়ই। বাকিসময় পাঠক হয়েই থাকতে চাই। কিছুই তো এখনো পড়লাম না। কত বাকি!

[24/12 12:20 am]

শাল্যদানী: যদি পাঠক না পেতেন, কবিতা লিখতেন কার জন্য?
নিজেকে বাদ দিয়ে


[24/12 12:23 am]

মনোজ দে: সময়ের কাছে রেখে যেতাম।

[24/12 12:24 am]

শাল্যদানী: পত্রিকা নাকি নিজস্ব কাব্যগ্রন্থ?

[24/12 12:25 am]

মনোজ দে: নিজস্ব কাব্যগ্রন্থ


[24/12 12:25 am]
শাল্যদানী: পত্রিকা সম্পাদনার সুযোগ পেলে?

[24/12 12:26 am]

মনোজ দে: করব না। আমি মনে করি না, আমি এখনো সেই যোগ্যতা অর্জন করেছি

[24/12 12:28 am]

শাল্যদানী: বাজারে একশো মতবাদ। পুনরাধুনিক, উত্তরাধুনিক, আই চিন্তন। কবি কোন পথে?

[24/12 12:29 am]

মনোজ দে: আমি আমার পথে। আমি আমার যাপন লিখতে চাই। আমি আমার বাঁচাটুকু লিখতে চাই, আমার দেখাটুকু


[24/12 12:30 am]
শাল্যদানী: প্রেমিকা না কবিতা?

[24/12 12:31 am]

মনোজ দে: ভীষণ কঠিন প্রশ্ন! প্রেমিকা কবিতা ছাড়তে বলবে না

[24/12 12:32 am]

শাল্যদানী: কবিতা যদি প্রেমিকা ছাড়তে বলে?

[24/12 12:33 am]

মনোজ দে: তবে, তিনজনে মুখোমুখি বসে আলোচনা করে নেব। প্রেমিকা বুঝবে আমায়, সে ছেড়ে যাবে

[24/12 12:34 am]

শাল্যদানী: প্রথম কবিতা লেখা কবে?

[24/12 12:35 am]

মনোজ দে: মনে নেই। যতদূর মনে পড়ে ক্লাস ফাইভ সিক্সে লিখেছিলাম মনে হয়, কবিতার মত কিছু একটা

[24/12 12:35 am]

শাল্যদানী: কবিতা না লিখলে গদ্য না উপন্যাস? বা নাটক?

[24/12 12:36 am]

মনোজ দে: গদ্য লেখার ইচ্ছে আছে। তবে সেটা অনেক পরে। উপন্যাস লিখব না, নাটকও না

[24/12 12:38 am]

শাল্যদানী: বাংলা কবিতা কোন দিকে এখন? কবি কি খুশী নাকি....

[24/12 12:40 am]

মনোজ দে: আমরা কি চাইলে কবিতাকে নিজদের মত করে গতি দিতে পারব? পারব না। কবিতা বয়ে চলুক, কবিতার মত। আমরা স্বাদ আস্বাদন করি শুধু।

[24/12 12:40 am]

শাল্যদানী: ছন্দ নাকি ছন্নছাড়া?

[24/12 12:41 am]

মনোজ দে: ছন্দ। তবে সেটাকে কবিতার প্রয়োজনে ভাঙা

[24/12 12:42 am]

শাল্যদানী: তুমি কোন ভাঙনের পথে এলে...
নাকি
বাঁধ ভেঙে দাও?


[24/12 12:43 am]

মনোজ দে: সমস্তটাই নির্ভর করছে,  কবিতা কি চাইছে তার উপর

[24/12 12:43 am]

শাল্যদানী: মনন না মরণ?

[24/12 12:43 am]

মনোজ দে: মনন

[24/12 12:44 am]

শাল্যদানী: প্রেমিকাকে প্রেমপত্র  নাকি  কবিতা?

[24/12 12:44 am]

মনোজ দে: অবশ্যই কবিতা

[24/12 12:45 am]

শাল্যদানী: কবিতাকে জ্যান্ত সামনে পেলে কি বলতেন?

[24/12 12:47 am]

মনোজ দে: দেখতাম শুধু। কবিতার সামনে কথা বলা বোকামো

[24/12 12:47 am]

শাল্যদানী: কবি তাহলে চালাক?

[24/12 12:48 am]

মনোজ দে: কিছুটা

[24/12 12:50 am]

শাল্যদানী: অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই এখন তরঙ্গ পত্রিকার পক্ষ্য থেকে। আমাদের সময় দেওয়ার জন্য। পাঠকদের জন্য কটা লাইন না বললে চলবে না। তাই.....

[24/12 12:50 am]

মনোজ দে: আচ্ছা। আমারও ভীষণ ভালো লাগল

[24/12 12:51 am]

মনোজ দে: ধন্যবাদ আপনাকেও

[24/12 12:54 am]

শাল্যদানী: পাঠকদের জন্য দুটো লাইন..

[24/12 12:54 am]

মনোজ দে: বলতে হবে?

[24/12 12:55 am]

শাল্যদানী: তাহলে পাঠক অপেক্ষা করুক?

[24/12 12:55 am]

মনোজ দে: করুক

[24/12 12:57 am]

শাল্যদানী: ভেবেছিলাম ইন্টার্ভিউ শেষ করবো পারলুম না। তাই নিয়ম ভেঙে আর দুটো প্রশ্ন করতে চাই

[24/12 12:57 am]

মনোজ দে: হ্যাঁ


[24/12 12:58 am]
শাল্যদানী: পাঠকের জন্য কবিতা বোধ করি কবি লেখেন না?

[24/12 1:00 am]

মনোজ দে: আমি আমার যাপন লিখি। আমার দেখাটুকু লিখি। যাদের সাথে মিলবে, তারাই আমার পাঠক হবে। এই বিশ্বাস থেকেই কবিতা প্রকাশ করি

[24/12 1:01 am]

শাল্যদানী: যাপন না সাধন? নাকি দুটোই?

[24/12 1:01 am] মনোজ দে: যাপন


[24/12 1:02 am]

শাল্যদানী: অসংখ্য ধন্যবাদ

[24/12 1:02 am]

শাল্যদানী: নমস্কার

[24/12 1:02 am]

মনোজ দে: স্বাগতম




*******

No comments:

Post a Comment