প্রবন্ধ (ধারাবাহিক)
অঙ্ক
√কবিতা
অঙ্ককবিতার ইতিহাস বেশ
পুরোনো।
সুমেরীয় সভ্যতায়( ১৮০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ ) চাঁদের দেবী নান্না-র উদ্দেশ্যে রচিত মন্ত্রে, গ্রীসে আর্কিমিডিস(২৮৭-২১২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) -এর ‘গবাদি সমস্যা’য় , ভারতীয় গণিতবিদ আর্যভট্ট( ৪৭৬-৫৫০খ্রিষ্টাব্দ) )-এর রচনায় , ইংরেজ কবি Samuel Taylor Colridge ( ১৭৭২-১৮৩৪ খ্রিষ্টাব্দ)-এর কবিতা A Mathematical Problem-এ, জার্মান দার্শনিক ও কবি Friedrich Schlegel( ১৭৭২-১৮২৯ খ্রিষ্টাব্দ)-এর সমীকরণ কবিতায়, আর আমাদের বাংলায় বিষ্ণুপুর মল্লরাজত্বে শুভঙ্কর রায় ( প্রকৃত নামঃ জগন্নাথ চৌধুরী, জন্মঃ ১৭০৩খ্রিষ্টাব্দ )-এর শুভঙ্করী আর্যায় আমরা কবিতা ও গণিতের মিলে মিশে যাওয়া দেখতে পাই।
বাংলাভাষাতেও যথেষ্টই সমৃদ্ধ ঐতিহ্য গণিত এবং কবিতা, এই দুই প্যাশনে আক্রান্ত এক মানুষের নাম বিনয় মজুমদার। তাঁকে নিয়ে কিংবদন্তি ও নানাবিধ আকর্ষণের আড়ালে অঙ্ককবিতায় তাঁর কাজগুলি তুলনামূলক কম আলোচিত।
তিনি লিখেছেন
কবিতা লিখলেই মানুষ, গণিত আবিষ্কার করলেই বিশ্বের মালিক
( ১ / এক পঙ্ক্তির কবিতা )
সৃষ্টিরহস্যকে বুঝতে তিনি গণিতকেই অবলম্বন করেন।
x = 0
এবং y = 0
বা x = 0 = y
বা x = y
শূব্য ০ থেকে প্রাণী x ও y সৃষ্টি হলো
এই ভাবে বিশ্ব সৃষ্টি শুরু হয়েছিল ।
( একটি গান / বিনয় মজুমদার )
তিনি লিখেছেন, ‘গণিত ও কবিতা একই জিনিস । ... ইংরেজি অক্ষরসমূহের সবকটিরই গণিত সমীকরণ আমি লিখে দিয়েছি । ইংরেজি অক্ষরের A-এর সমীকরণ B-এর সমীকরণ এইভাবে ইংরেজি অক্ষর Z-এর সমীকরণ পর্যন্ত । মোট ছাব্বিশটি অক্ষরের ছাব্বিশটা সমীকরণ । এর ফলে অভিধানের সব শব্দ গণিত সমীকরণ হয়েছে । ফলে এই বিশ্বে সবকিছুই গণিত হয়ে গেছে । সব সাহিত্য গণিত হয়ে গেছে ।’
বিনয় মজুমদারের জীবনে গণিত এবং কবিতা, তাঁর অঙ্ককবিতা আমাদের কাছে বিশেষ আকর্ষণের হয়ে উঠছে দিনেদিনে।
‘কবিসেনা’ কাগজকে কেন্দ্র করে যে ‘সর্বাঙ্গীন’ কবিতা আন্দোলন গড়ে ওঠে, তাতে ঘোষণা ছিল,“কবিতাকে মহাকাশ যুগোপযোগী করে তোলার জন্য কবিসেনা কবিতায় আনছেন গাণিতিক বিচার বিশ্লেষণ পদ্ধতি সম্বলিত সম্বলিত গাণিতিক বিস্তার”।
এঁদের মধ্যে ভট্টাচার্য চন্দন, বসু অসিত বসু উল্লেখযোগ্য।
[ ধরা যাক্ ভালোবাসা = ০ ]
বোধায় ভালোবাসা শূন্যের ( ০ ) মতন
ক্যানোনা ∵ মিলনে ভালোবাসা + ভালোবাসা = ভালোবাসা
বিরহে ” - ” = ”
অগণিত ” × ” = ”
অবিভাজ্য ” ÷ ” = ”
অনুপাতে ” : ” = ”
আবার (ভালোবাসা + ভালোবাসা )২ = ”
(ভালোবাসা - ভালোবাসা )২
কিংবা সমানে সমানে সমকোণে ভালবাসলেও ভালোবাসা
অসমে বিসমে বিসমকোণে ” ”
লম্বভাবে ” ”
বিলম্বে ” ”
নতুবা ভালোবাসা তাহলে কি রকম ?
যা শুনেছি তাই - > ভালোবাসা কি মহাশূন্যের ০ মতন
অসীমঅনন্তগাধউদারঅপার ? !
নাকি ধরা যাক ভালোবাসা জলের মতন
নিরাকার অথচ যে আধারে ঢালা যায় সেই প্রকার ! ?
( সরল কর ঃ ভালোবাসা / ভট্টাচার্য চন্দন )
অঙ্ককবিতা, আমাদের কাছে এখনও, কবিতায় বিষয় হিসেবে, রূপক হিসেবে গণিতের ব্যাবহার।
এছাড়াও রতন দাস তাঁর অনেক কবিতাতেই ব্যবহার করেছেন জ্যামিতিক মেটাফর যা তাঁর কবিতাকে বিশিষ্টতা দিয়েছে ।
আমার ত্রিভুজ তোমাকে দিলাম
তোমার চতুর্ভুজ আমাকে দাও
আমার আয়তক্ষত্র তুমি নাও
তোমার বর্গক্ষেত্র আমি নিলাম।
তোমার বর্গক্ষেত্রগুলো আমার ত্রিভুজের পাশে বসাও
আমার ত্রিভুজ খুব ধারালো
যেন কেটে টুকরো টুকরো করতে চায় তোমার বর্গক্ষেত্র
অবশ্য তোমার বৃত্তগুলো কম যায় না
তারা কেবল সুযোগ পেলেই বেদম ঘোরাতে চায়।
আমি বন্বন করে ঘুরে মরি
আমার মাথা ভনভন করতে থাকে
দু-হাত বাড়িয়ে আমি আমার ১০ বাই ১২ আয়তক্ষত্র
খুঁজতে থাকি
তুমিওআয়তক্ষত্রটি পাবে বলে হাত বাড়াও
আমরা দুজনে হাত ধরাধরি কর ঘুরতে থাকি
আয়তক্ষত্রটি আমাদের নাগালের মধ্যে এসেও ফসকে যায়।
ফল যা হবার তা-ই হয়
তোমার বৃত্ত এবং আমার ত্রিভুজ পারস্পরিক সংঘর্ষে লিপ্ত হয়
আমরা দুজনেই ছিটকে পড়ি...
(জ্যামিতিক কবিতা / রতন দাস)
বাংলা কবিতাতে অঙ্ক যেভাবে ব্যবহৃত হয়েছে নানাভাবে, নানা সময়ে পৃথিবীর অন্যান্য ভাষায় তার সমতুল্য উদাহরণ খুব একটা নেই ।
No comments:
Post a Comment