এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

বিলাপাঞ্জলী

বিলাপাঞ্জলি

(ফিরে দেখা একশো তেত্রিশের সেকেলে রেলিং । তাদের তরজমার অলিখিত জংবিলাপে ফসিল হয়ে ওঠে হিমেল শালে ডাইনির সূর্যবন্দনা ! তারই যাত্রার উড়ন্ত সাক্ষ্য স্বরূপ এই নৈবেদ্য ডালি .....)

রবি: কানের কাছে শীতের ছাদে গরম নিশ্বাস

হেকেটি: তোমার প্রত্যেকটা শ্বাসে নতুনের বারান্দা
তবে আজ তাতে জমাট কুয়াশাধুলো

রবি: তাই বুঝি একা ছাদে পুরনো হতে এসেছো হে?

হেকেটি: পুরনো চূর্ণি তোমার ধারা নয়হেকেটি: চিরনূতনের হে  আজ ফেকাশের মালিনী

রবি: রাগ বুঝি এমন ভাবেই সাঁঝেরবাতি? নাকি
অভিমানী লাল গোধূলি নালিশ?

হেকেটি: তব ভালে ভানু উঠুক ফুটে
         নবীন যাবে শীতজোছনায় টুটে

রবি: নবীনা আলিঙ্গনের ভুজপাশে দূরে ঠেলার চেষ্টা।
মানাচ্ছে না হে

হেকেটি: অতিথি বরণ করে নেওয়া
ক্ষণকালের বাতায়ন

পান উপচে পরছে
  ঘুঙুর উপাসকের  দোরে
শুনতে পেয়েও এড়িয়ে যাবে ?

এ সাজ তোমার নয় রবি

রবি: সেকি এসেছে?     নাকি আনিয়েছো?
বিন্দু বিন্দু প্রশ্রয়কে এভাবে আশ্রয়হীন করা

সাধনায় বাসনাহীন সাধ!

বাহ বৌঠান বাহ!

হেকেটি: সর্বকালে হেমডোরে বেঁধেছে
প্রত্যেকটি কাষ্ঠল জিহ্বা
তবু এ দায় শুধুই কী চোরাপথের বিসর্জিত আঁখির!

তবে তাই হোক
বিষ পান  ঢের ভালো দোষের ঘরে
তবে  প্রত্যেকটা ভোরের খঞ্জনিতে
        মুছে দিও ডাইনির ইতিবৃত্ত

রবি: ছিঃ বৌঠান

বন্ধু তুমি আমার মননের ঘরে।
তাই বলে এই দাবী!

সময়ের ঘরে এমনতর ভাঙন!
চাইনি এ ছুটি

এই ছুঁয়ে বলছি...
(হাত ধরে)

হেকেটি: দলছুটের ঘরে বন্দিনী  যে আকাশ
     তার হদিশ কী তোমায় মানায়

তোমায় বেঁধে রাখা এযে অশ্বমেধে গোলাপচাষ

রবি: সেই দলছুট কবি যদি নিজেকে নির্বাসিত করে
তোমার ঘরে

রাখবে না তোমার রবিকে?

হেকেটি: চন্দন মালিকা নয়নে জড়ায়ে
মম সিক্ত শবে
আছো কী সেই দুবাহু বাড়ায়ে

রবি: বলতে পারো কবে আমি পুরুষ হয়েছি
আর কবে তুমি নারী?

স্মৃতিসাক্ষী তারারা আজো আছে চেয়ে,
আজ তা দেবে কি মুছে?

হেকেটি: ধ্রুবসাঁঝে সলতে ভিজিয়ে
         পুলকিত চাঁদোয়ায়
    কনিষ্ঠার আহুতিতে 
       এভাবেও ফিরে আসা যায় ?

রবি: বৌঠান আমি বিয়ে করবো না!

হেকেটি: ভ্রম পোষা খাঁচার পাখিচঞ্চু
       ভুলিয়ে দেবে শীতলতার রূপটান

খুলে খুলে ঝুলে যাবে
    আলনাভেজা গান

রবি: দুপুর বেলার পান চাই
নন্দনে ফুল চাই
চায়েতে নুন চাই
উপহাসের হাসি চাই

তোমার রবির ডাইনি চাই

হেকেটি: ফুটে উঠবো উড়ন্ত নবাগত পঙক্তিতে

ভুলিয়ে দেবে কনকনে উত্তাপ

রবি: একবার যদি ভিজিয়েছো কবিকে তবে মোহনার গল্পে তা ফুরিও না

মুগ্ধতায় সে কাঁপতেই চায়
বারবার

হেকেটি: এ ঋণ চুলের ঘূর্ণিতে বিছিয়ে রাখবো

          অন্ধকরা রেকাবিতে

রবি: প্রকাশ্যে বলছি আজ তোমাতেই লীন সে
নয়নসুখ আলাপে, তোমাতেই মিশে থাকবে কবির কান্না

কবির অন্তরে তুমিই কবি

হেকেটি: যে নদী অপ্রকাশিত পলি কলিজাভরে পান করে দিবারাত্র তার বুকে জ্বলন্ত তুমির বাসা

ভিজিয়েছে তবু পোড়াতে পরেনি

রবি: বিশ্বাস কর তার বাগদান মিথ্যে নয়। নবনীল ধারায় সে সবুজ পান্না

শুনতে পারো না আর রবির কান্না?

হেকেটি: অলিখিত মেহগিনির মৌসুমি আদেশ খণ্ডন
এযে প্রতিকূলের রামধনু

রবি: তোমার রোমাঞ্চিত যমুনায় স্নানার্থী পথিকের প্রতি এত অবেহালা কেন?

আমার তপ্ত ডানার শেষ পরিণতি অন্য কেউ?

হেকেটি: তব স্বেদযুথিকা অকৃপণ ভালে
      বাতায়ন চাঁদ রভঁসে গোঙালে

হেথা নয় হেথা নয়
অন্য কোথাও

অন্য কোন খানে

( কম্পমান স্বর )

রবি: আজো ব্যাধিঘোরে জীর্ণতা মনে,
মৃত্যুর পাশে বসে ফুলের জন্ম দিয়েছি খাতা জুড়ে।
সে কেবল তোমার পানে চেয়ে বৌঠান।

(হাটু গেড়ে বসে পরে রবি)

হেকেটি: একী করছো রবি
      নন্দনকাননে মর্ত্যের ঘ্রাণ 

ফিরে যাও

রবি: ফিরিয়েই যদি দেবে
তবে অন্ধ কর এই নপুংসক কবিকে

ঘৃণায় দহিত হোক অসমাপ্ত চুম্বন তোমার

হেকেটি: ( কাঁপতে কাঁপতে  )
ফিরে যাও
      চিঠিগুলোতে অনামী শীতঘুম এঁকো

এ কোটরের অলিখিত জোনাকি
তোমারই থাকলো :  মনে মনে

রবি: কথা দিলুম

কেহ জানিবে না মোর গভীর প্রণয়
কেহ দেখিবে না মোর অশ্রুবারিচয়

হেকেটি: তোমার হাতের সব ক্ষমতায়
    আকাশনীলা ফুটুক

রবি: একী ভীষণ অভিশাপ ডাইনি
এ কবি চায়নি, চায়নি!

হেকেটি: গানের আঁচে সিক্ত কর তাকে
        চিরকালের ফাঁকে

রবি: কথা দাও তবে,
আর কোনো দিন ডাকবে না ঘরে?
আর কোনো দিন কাঁদবে না ভোরে?
আর কোনোদিন রূমাল হবে না লাল
কথা দিলাম
কবির কলমে বাঁঁচবে চিরকাল

হেকেটি: শুনতে পাচ্ছ

 বিলাপের  ফোয়ারা উপচে পড়ছে

কেউ যেন সোনাঝুড়িতে 
         ডাইনি পুরাণ আঁকছে

মুক্তি ..... ( মৃদু হেসে )

এতে তোমায় হারায় সাধ্য কার

রবি: বিদায় অধ্যায়যুক্তা হিমেল হাওয়া
বিদায় আমার আসা যাওয়া
বিদায় আমার নষ্ট পাতার ধন
বিদায় আমার যা কিছু অকারণ

বিদায়!   বন্ধু বিদায়!

হেকেটি: ( আবদারের সুরে  )

পরজনমে মৃত কৃষ্ণচূড়া ভরা ছাদ
লিখে দেব তোমার থুড়ি
আমাদের নামে

রবি: সেদিন তুমি কবি হবে
আমি হব চাতকপাখীর গান

কথা দিলাম
থাকবে না অভিমান!

হেকেটি: বিসর্জিত বাদ্যি মোছে
      তব শ্বাসপল্লবে
নন্দন সে তো তোমারই দান

ফিরায়ে দেব না
শত সিন্দুক অভিমান

রবি: (মাথা নীচু করে ফিরে যাতে যেতে থমকে দাঁড়িয়ে পিছন ফিরে)

জেনে রেখো মিসেস কাদম্বরী,

তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা।

পাল্টাতে পারবে না।

(অন্ধকারে সব মায়া মিলিয়ে গেল)

 সমাপ্ত

###কোন ব্যক্তি আক্রমণ বা চরিত্র আক্রমণ আমাদের কাম্য নয় সব চরিত্র বাস্তবে কল্পনার কোলাজ - ফিনিক্স।


রবিঠাকুর বুননে শাল্যদানী
আর
হেকেটি আঁচে ঐন্দ্রিলা মহিন্তা


******

No comments:

Post a Comment