এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

ভাস্কর মন্ডল


গদ‍্য : অণুগল্প


রামায়ণ (পর্ব - ১)

নিঝুম অরন্য। বিচিত্র কল-কাকলি মুখর। ওরই মাঝে কিঞ্চিৎ  ফাঁকা  স্থান । এক তরুন শাল বৃক্ষ তলে এক দূর্বাদল শ্যাম বর্ণ সুপুরুষ। প্রভাতের আলো ও তাপ , তাঁর অর্ধ-উন্মুক্ত শরীরে পড়েছে।পাথরে বসে বৃক্ষে হেলান দিয়ে ,ব্যক্তিটি তখনো তন্দ্রাতুর । নীলাভ আলোতে দৃশ্যমান ,তাঁর সুগঠিত বক্ষদেশ ও আজানু লম্বিত বাহুযুগল। পদ্মের মৃনাল তুল্য অঙ্গুলী সকল। তীক্ষ্ণ নাসা। ভ্রু পল্লব,ওষ্ঠ,অধর সহ সারা দেহে দিব্য কমনীয়তা । অনুপম আভায় দীপ্ত। কয়েকটি শালিক জাতীয় পাখি তাঁর পায়ের কাছে কিচিরমিচির করছে।

তাদের কলতানময়ে ধ্বনি অরণ্য মুখরিত । নিদ্রালু চোখ ইশৎ খুলে গেল। ব্যক্তিটি শশব্যস্ত । পরনের ইশৎ স্খলিত বাস সলজ্জ বদনে, অনুপম শরীরে জড়িয়ে নিলেন।

অদুরে সারি সারি ,সাধু অপেক্ষারত। সৌম ,সুচিস্নান সুস্নিগ্ধ তরুন ও যুবা ও কিশোর সন্নাসীর দল। কারুর করজোড়ে পুষ্প-পল্লব,কারুর গঙ্গা জল,সাজি,ধূপ-ধূণা,চন্দন।

ঘুম ভাঙা চোখে দীর্ঘদেহী উঠে দাঁড়ালেন। কলতানরত পক্ষীর দল এলো মেলো উড়ে পালাতে লাগল। দুরে কোন অরণ্য কুঠিরে হোমাগ্নি কুন্ডলী কৃত ধুম উড়ে আসতে লাগল। সন্নাসী দল থেকে এক প্রবীনতম জন এগিয়ে এলেন। হাতের গন্ধরাজ পুষ্পদল মাটিতে রেখে ,প্রনাম করলেন। আজানু লম্বিত  বাহু প্রতি নমস্কারে জড়ো হলো।

— প্রভু , হে নরত্তম , আপনি স্বয়ং ভগবন বিষ্ণু অবতার শ্রী      রামচন্দ্র। ধ্যানযোগে ঞ্জাত হয়েছি এ সবই আপনার লীলা ! কোন , অঞ্জাত পূন্যকর্ম ফলে আপনাকে , এই মর চক্ষে ,দৃশ্যমান দেখলুম !

— যুগে যুগে ভক্তের কাছে ঈশ্বর ধরা দেন, এ তো তাঁর আনন্দ ! দয়া হবে কেন ? তিনি প্রেমের কাছে কাঙাল ,শক্তির কাছে ,ধনের কাছে নয়।

—আমি নেহাত ই সাধারন ভক্ত। নিজের কি গুন, কি দোষ জানিনে। এ আপনার ই দয়া !

—ঈশ্বর যদি শুধুই সর্বঞ্জ ও সর্বশক্তিমান হয়েই থাকেন তবে ,তিনি কি ভীষন একা,কী অসীম নিঃসঙ্গ ! ভেবেছেন ?

—অত উচ্চ ভাবনাহীন আমরা! শুধু পুজন ও প্রেমই বুঝি ! ভগবন শ্রী আর্যশ্রেষ্ঠ আমাদের পূজা গ্রহন করুন। আমাদের পাদ পূজনের অধিকার দিন।

কোমল ওষ্ঠ যুগলে হাসির রেখা ফুটে ওঠে।


রামায়ণ  (পর্ব - ২)

সীতা নিরুদ্দেশ হবার পর,বিফলমনরথ অরণ্য মধ্যে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে,পথ শ্রান্তি তে চোখ বুজে এসেছিল। কাছেই ঋষি মুনিদের কুটির আছে। এমনটা আন্দাজ করেই হয়তো বৃক্ষ তরুমূলে শ্রী রাম ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। এখন নিকটস্থ সাধুরা তাঁর অর্চনা করতে উপস্থিত । তাদের কাতর স্বর -

- ভগবান , যখন ,দেখা দিলেন পূজনের সুযোগ দিন।
- আমাদের  কুটিরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন।
- আমাদের গৃহে আহার্য গ্রহন করুন,আর্য ।

মন যখন বেদনার্থ থাকে,নিঃসঙ্গ অসহায়,কোমল বাক্য তাকে আরো সিক্ত ও শান্ত করে। প্রসন্ন সজীবতায় ফিরিয়ে আনে। এই মমত্বে স্নেহে বড় বন্ধন। কিন্তু তাঁকে যে, ত্বরা যেতে হবে। কোথায় সেই রাক্ষস রাজের রাজ্যে সীতা বন্দীনী। কত অনাদর,কত বিপদের মাঝে আকুল প্রাণ!মুহুর্তের জন্যে যেন সেই দূর্বিপাকের কথা ভুলে গেছিলেন। চোখে জল এসে সব ঝাপসা হয়েগেল।

সম্মুখের সৌম সাধু বৃন্দ,অদুরের বনানী ,পর্ণকুটির ,সূর্যালোক পারহয়ে বহুদুর বহুদুর ছাড়িয়ছে তাঁর দৃষ্টি। লোক থেকে লোকান্তর,কল্প থেকে কল্পান্তর । বহুদূরাগত স্বরে তিনি বলে চল্লেন -

- হে সৌম,তোমাদের অকৃত্রিম সরলভাব আমায় প্রীতি দিয়েছে। এ জন্মে তোমাদের ইচ্ছা আমি পূর্ণ করতে পারলাম না। আমি বড় বিপদগ্রস্ত  ! দ্বাপরে তোমাদের ইচ্ছা আমি পূরণ করব। আমরা এক সাথে খেলা করব,গরু চরাব,বাঁশি বাজাব সারাদিনব্যাপী । তোমরা নিজ নিজ হাতে আমায় খাইয়ে দিও।

আনন্দে সরার চোখে জল। ধিরে ধিরে প্রনামান্তে সাধুগণ বিদায় নেন।কোথায় শ্রী রাম ! কোথায় তিনি !শুধু, নির্জন অরণ্য মধ্যে বাঁশির সুর বাজে।নিবিড় করুণ আনন্দধারা।
                                                             সমাপ্ত।
ভাস্কর মন্ডল।

শ্যামপুর। হাওড়া।
******

No comments:

Post a Comment