গল্প : ছোটগল্প
"কুরবানি"
(সামাজিক ছোট গল্প)
— মেমসাব থোড়া ইয়ে নং মে ফোনআ লাগা দীজিয়ে না,বহুত মেহেরবানি হোগা!
—কিঁউ ,কিয়া হুআ?কাঁহা?
—ধানবাদমে৷
—কল ছুট্টি হোগা না ,তো ঘর জানে কে লিয়ে৷
—ইঁহা কাঁহাসে আয়ে?
—কিতাডি৷
আচ্ছা নং দীজিয়ে৷
—ইশারাতে নির্দেশ দিলেন নবাব চাচা—মা আপহি বাত কর লিজীয়ে না,ছুটি হোনে কে বাদ ঘর পর লে জানে কে লিয়ে৷
—অপরপক্ষের নির্লিপ্ত জবাব—
—ঘর পর কোই নহী হ্যায়,নহী সকেঙ্গে হম,কহ দীজিয়ে৷
—বাবা আপনি কোথায় থাকতেন?
—কিতাডি মে৷
—কোটরাগত দু'চোখ জলে ভরা,'কোই নহী হ্যায় মেমসাব,একেলা কাম করতে আউর ইহাঁ রহতে৷
—মতলব?
—আরে বাব্বা বুড়ারিমে বোঝ বন গইল তো ম্যাঁয় পেটি বনাকর কামাতে হ্যাঁয়,মালিক মেহেরবানী করকে খানা দে দেতে হ্যাঁয় আউর ওহীঁ পরহি শোতা হ্যাঁয়৷
—বাংলা বোঝেন বাবা?
—মা আমি তো হিন্দু,বাঙ্গালী৷মালিক মুসলিম তো তাই দাড়ি বাড়িয়ে নাম বদলিয়ে মালিকের দোকানে থাকি,খাই৷কত পাপের ফল মা ,চার চারটে ছেলে আমার আর তিনটে মেয়ে৷বুড়িও মরে গেল বছর দশ৷ছেলেরাও কামে ব্যস্ত৷তাই পেটের জ্বালা নিবারণ করতে মা জাত বদলালি৷পরব পালে ঈদের চাঁদ দেখি,রোজা রাখি৷আল্লার মেহেরবানিতে জানটা বেঁচে আছে৷চোখটা গেলে আর দু'মুঠৌ ভাতও জুটবেনা বাছা৷তাই চোখ ছুলাতে এলি আপনার কাছে৷
সকাল বেলায় আমার কানের কাছে গলা রেখে স্বীয় এফিডেফিটের নবাবউদ্দিন শেখের পরিবর্তিত বিবৃতির সংক্ষিপ্ত ধারাভাষ্য দিলেন নবাব চাচা৷
বাঙ্গালীর মনে শারদোৎসবের আনন্দের রেশ এখনও কেটে ওঠেনি৷আর একি দারিদ্রের নগ্নরূপ!একি কলুষিত সমাজ!একি মানবিকতা!একি নৈতিক শিক্ষা!দীপাবলী আগত প্রায়৷শরতের আকাশে ক্লান্ত মেঘের অবিরাম আনাগোনার সাথে নবাব চাচার মনের মেঘের গুরুগর্জন নীরবে শুনতে পাই আমি৷বয়স নব্বই ছুঁইছুঁই৷পকেটে একটি কাগজে লিখিত তাঁর মেয়ের ফোন নং টি—যাকে তিনি নিজের জীবনের থেকেও হয়তো বেশি ভালবেসেছিলেন তাই সযত্নে ছোট্ট কাগজটি প্লাস্টিকে মুড়ে বুক পকেটে রেখেছিলেন৷কিন্তু হায় !বিধাতার কি অভিশাপ!
—কাল কোথায় যাবেন বাবা?
—বারিনগর মাদ্রাসায় যাবেন?ওঁরা সময়মত খাওয়া দাওয়া ও চোখে ওষুধ লাগিয়ে দেবেন৷
আল্লা তেরা ভালা করে মা৷মেহেরবানী কর৷আঁখি অাচ্ছা হোনে পর তুমকো মুহঁ মিঠা করায়েঙ্গে৷
পতা নহী ,কল নবাব চাচাকা তীসরা ডেরা কাহাঁ হোগা!!
*******
No comments:
Post a Comment