এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

@সোঁদা মাটি



প্রচ্ছদ : মৌমিতা ভট্টাচার্য

@সোঁদা মাটি
(আঞ্চলিক উপভাষার কবিতা সংকলন)


সংকলক : বিজন পন্ডিত
ভূমিকা : ভুজুঙ মাঝি

লিখেছেন : উজ্জ্বল গরাই, মানবেন্দ্র ব্যানার্জী, উজ্জ্বল সরকার, সোমনাথ দাস চান্দল্য, লিল্টু মন্ডল, বিকি দাস, চৈতালী ঝুমা বক্সী, নিজাম উদ্দিন মন্ডল, সোমা বিশ্বাস, ভুজুঙ মাঝি

*****

ভূমিকা : “আল ভিনে চাষা , যোজন ভিনে ভাষা”-এই প্রবাদটিতেই বোঝা যায় বাংলা ভাষার বৈচিত্র্য কত ক্ষেতের আল (এক ক্ষেত থেকে আর এক ক্ষেতের বিভেদসূচক উঁচু মাটি বিশিষ্ট রেখা) যেমন পাশাপাশি ক্ষেতের চাষীর ভিন্নতা সৃষ্টি করে তেমনি এক যোজন দূরত্ব(প্রায়৩০কিমি) পরিবর্তনে বাংলা ভাষার ধ্বনিগত পরিবর্তন সৃষ্টি হয়ভারতের বা পশ্চিমবঙ্গের বাংলা সাহিত্যে প্রমিত ভাষা ধরা হয় কোলকাতা কৃষ্ণনগর কেন্দ্রীক চলিত কথ্য ভাষাকে অর্থাৎ রাঢ়ী উপভাষাকে, কিন্তু এর বাইরেও গোটা ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গে অনেক বাংলা কথ্য ভাষা রয়েছেভাষাবিদ সুকুমার সেন বাংলা ভাষাকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করেছেনএই পাঁচটি ভাগের মধ্যেও এক একটি ভাগে আবার ভৌগলিক উপজাতিগত গোষ্ঠীর প্রভাবে অনেক উপবিভাগ সৃষ্টি হয়েছে যেমন-বাঁকড়ী, মানভূঁইয়া, কুরমালী ইত্যাদিতেমনি পশ্চিমবঙ্গে এক এক জেলার বিশেষ টান লক্ষ করা যায় কথ্য ভাষায়বীরভূম, নদীয়া, মালদহ, মুর্শিদাবাদ প্রভৃতি অঞ্চলের লোকের বাংলা ভাষার উচ্চারণ লক্ষ করলেই বোঝা সম্ভব ওটি কোন অঞ্চলের বা জেলার ভাষাসমগ্র বাংলা আঞ্চলিক উপভাষার সাহিত্য যদি বাংলা সাহিত্যে স্থান পেত তাহলে বাংলা সাহিত্য আরো মনিমুক্ত খচিত হতোতবু আমরা লোকসাহিত্যে ভাদুগান, টুসুগান, ঝুমুরগান, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি গান, গম্ভীরা ইত্যাটি সঙ্গীত লোক উৎসবের গীত, পূজামন্ত্র, ব্রতকথাগুলিতে সেই অঞ্চলের উপভাষার ব্যবহারের জন্য সেইসব উপভাষাগুলি বাংলা সাহিত্যে কিছুটা স্থান লাভ করেছেবর্তমানে বাংলা সাহিত্যে কিছুটা হলেও উপভাষায় সৃষ্ট সাহিত্যকর্মগুলিকে স্থান দেওয়ার চেষ্টা চলছে আর ‛এখন তরঙ্গসেই প্রচেষ্টায় সামিল হয়ে “@সোঁদা মাটিনামক আঞ্চলিক উপভাষার সংকলন করার মনস্থির করায় আমি খুশি হয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়েছি আমার সাধ্যমতো আঞ্চলিক উপভাষার একজন সাহিত্য সৈনিক হিসাবে। ‛এখন তরঙ্গে “@সোঁদা মাটিসংকলনে বাঁকড়ী-কুরমালী-মানভূঁইয়া-ঝাড়খন্ডি ভাষা, পশ্চিম বর্ধমানের কয়লা খনি অঞ্চলের ভাষা, বীরভূমের ভাষা, বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার গঙ্গামন্ডল পরগনার ভাষা, নোয়াখালী অঞ্চলের ভাষা এই মাটির ভাষাগুলির মাধ্যমে পাঠকদেরসোঁদা মাটি গন্ধ" উপহার দিতে পেরে আমরা ধন্য

তারিখ -২৫/০২/২০১৮                         ধন্যবাদান্তে---
ভুজুঙ মাঝি(বিপদতারণ দাস)




******


উজ্জল গরাই


হুঁড়কা লাগাই আছে নুনুর মা

কতেক দিনের ভালোবাসা
ক্যামনে ভুলে যাই
ধনিরে তোর পিরিত মরণ
শ্যামের বাঁশী গায় ...

ভাবতেছিলিক গান লিখবক
ঝিরিকঝিরিক বৃষ্টি কলি দ্যাখে ..
দূব্বা ঘাসে গঙ্গাফড়িং লাচ্ছে সকাল সার
নুনুর মায়ের মনট কেবল উদিন থিক্যে বেঁইক্যে ।

ঝগড়াঝাঁটি হয় নাইখ শুধা কথাই রাগ
পরবদিনে কালকে শুধু সিজাই দিলেক শাগ ।
হামিও তখন হাতির বলে চুল মুঠিটা ধইরে
ঝুলি খাটে বসাইঁ দিয়ে শিলকি দিলম ঘরে ।

শুগুম মারে ঘরভিতরেই
সেইর থেইক্যে আর কাঢ়েনাই  রা
শিলকি খসাইঁ দিতে দেখি
হুড়কা দিয়ে আছে নুনুর মা ।

রাধার মানে কিষ্ট বেটা ধরেছিলক পা
হামি খানিক দম্ফ দেখাইঁ হেলান দিলম গা ।
ঝুপুকঝুপুক বৃষ্টি তখন গুমরে মরে হাওয়া
বাবলা গাছে ঝুনপুকিদের বন্ধ আসা যাওয়া ।

এমন সময় হুড়হুড়ানি মেঘট বুঝি ফাটে
ধইড়পে উইঠ্যে কপাট খুইল্যে
জড়াইঁ ধরে দুই বগলে
কপালে তার লাল টিকলি আমার গালে সাঁটে ।।

(হুঁড়কা=দরজার খিল ; সিজাই=সেদ্ধ ; ঝুলিখাট= যে খাটের দঁড়ি ঢিলা হয়ে ঝুলে আছে ; শিলকি=শেকল ; শুগুম=চুপচাপ ; রা=আওয়াজ;)



পহিল বৈশাাগ

চৈতের গাজন বুঢ়াবাবার পুহাতে শিবরাতি
বৈশাগ মাসের পহিল দিনেই দুঁইড়কে যাছেক
ছাতি ।
কী ঘোর কলি খুড়া
ঘাস পাত সব চিমড়াই যাঁয়ে শুঁইটনাই হছে দড়া ।

পেটের বতর কইরতে খুড়া বাইরাতে হয় ডেলি
ই দুপুরে একশদিনে ভাইঙতে খ্যাতের ঢেলি ।
ঝলসে যাওয়া পলাশগাছের গড়ায়
যে কটা ফুল সাইজত খঁপায় তাও বঁইছে দঁড়ায় !

রুখা দিনের সুখা পালহায় আগুন লাগে বনে
মাড়ভাতে আর ভাব লাগেনাই লতুন বউয়ের মনে ।
মেঘগুলা য্যান পাটির নেতা জোড়হাত করে আসে
গুড়গুড়ায়ে ধূলা উড়াইঁ ঠঁকান দিয়ে হাসে ।

লাল সবুজে লৈক শুধু বুইঝলে খুড়া দ্যাশে
তিশুল টাঙি খুনখারাবি ধম্ম সব্বনাশে ।
হামদের উটায় কী ...
ঢেলা ভাঙেই দিন ফুরাছে অন্ধ হঁয়েছি ।

রেশন কাডের কেরাসিনে ডিবা জ্বালাই রাইতে
আইগনাতে ব দি ঘল্টে খাটটা জ্যুতাইঁ পাইত্যে
কাল আকাশ তারায় তারায় মাঝরাত্যে চাঁদ উঠে
গোটাদিনের খাটালিতে দিব্যি দুঘুম জুটে ।

সকাল হলেই আবার আঁধার মাথা ঝিমাই পড়ে
ঢেলা ভাঙতে যাঁয়ে খুড়া ফিরতে লারি ঝড়ে ।
দ্যাশে তখন তিশুল টাঙি উদমা টাকার খেলা
গাঁইতি হাতে ফিরতে ঘরে
বউ যখনি গিলাস ধরে
দুচোখ চাঁহে ফুরাঁই আসে পহিল বৈশাগ বেলা ।।


কুটুমবিতা

আ'স কুটুম বইস উঠানে
এতদিনে পইড়ল মনে
কুটুমের এতদিনে পইড়ল মনে
আ'স কুটুম বইস উঠানে ।

কাঁচা রোদে গা শেঁকেছি
কনক'না জাড় বাতাসে
ইঁদুর ছুটে ভুঁসি ধানে
আমার ঘরের ফাটা সের ...
নুনুর বাপে নাই কথা শুনে
শুধু খুকড়া লাগাই দিন গুনে
খুকড়া লাগাই দিন গুনে
আ'স কুটুম বইস উঠানে ।।

ওইদিকে যাইওনা কুটুম
টুসু মাকে পা'তেছি
এই মকরে টুসু পূজা
লৈতন গ'ড়হা ভা'তেছি
লৈতন গ'ড়হা ভাতেছি
নুনুর বাপের মন কেবা জানে ।
কুটুম আ'স বইস উঠানে
কুটুম আ'স বইস উঠানে
নুনুর বাপের মন কেবা জানে ।।

বিটি আমার উস্কুলেতে
থালা বাজায় টিফিনে
নুনুর বাপের তর ধরেনাই
নুনুর বাপের তর ধরেনাই
আ'নল লাল ফিতা কিনে
নুনুর বাপে বুইঝবে কেমনে
কী জ্বালা মিয়ার মনে ...
আইস কুটুম বইস উঠানে ।

পাঁড় নিয়ে ওই আ'ল কুটুম
মুখে হাসি ধরে নাই
কা'ল রাতে ধন হাতাহাতি
মুহে তবু রা স্বরে নাই
দেখল পাড়ার লোক জনে জনে
তবু নুনুর বাপেই মন টানে
আইস কুটুম বইস উঠানে ।।


পারলে উয়াদের 'চেতনাশ্রী' দিন

"উপরে বালি নীচে জল যাছে ...."
শালা ই কলি কালের মানুষগুলানের হাবভাব ট হছে
এইরকমেই ....!
কে লিখেছিল গানট মনে নাই তবে ই গানের মর্মটা আইজ হামি হাড়ে হাড়ে টের পাছি ..|

না বাবু হামি কনহ নকশাল লই
কনহ পার্টির লোক লই ।
হামি খাটে খাওয়া গরীব দীনমজুর বঠি ।

ই ছটরলে বিটিটাকে হামি একাহাতে মানুষ করেছি । কনহদিনও মায়ের অভাব বুঝতে দি নাই ....
যতটুকু পাঁইয়েছি ততটুকুই বুকে আঁউগলাঁই
রাইখে বিটিটার জন্য জীবন দিঁয়ে সবকিছু
পূরণ করেছি ।
কেউ ফুটাকড়ি দিয়ে এতটুকুন সাহায্য
করেনাই ।
না তার জন্য এই বিশু মাহাত কারু কাছে
এক টাকার লাগ্যেও কভু হাত পাতে নাই -
হাত পাততে যাবেকনাই।

হামি মুখ্যু হতে পারি বাবু তাবলে কি
বিটিটাকেও মুখ্যু রাখব ?
দশের কেলাস তক্ক পড়হাই ছিলি ।
বিটি হামার ইস্টার মার্ক আনে
হামার নামট গোটা গাঁয়ে উঁচু করে দিলেক |
ছাতিটা দু আঙুল ফাঁপরে যাথ যখন
অঞ্চলের মানুষগুলান বইলথ -এই হছে দম !
বিটিটাকে কেমন উতরাঁই দিলেক ।
লোকে ধন্যি ধন্যি কইরথ
আর আড়ালে যাঁইয়ে হামি ফুঁপরে ফুঁপরে
কাঁদথম .. হামার মরা বউটার কথা মনে
পইড়ত দমে ।
আকাশটার দিকে ভালে ভালে চেঁচায় চেঁচায়
বইলথম- পারেছি রে জবা হামি বিটিটাকে
মানুষের মতন মানুষ করতে পারেছি ।
উপর থাকে মনে হত
বউট যেন হামার দিকে তাঁকাই ফুটা
পলাশফুলের পারা হাঁসছে ।

তোদের মতন ত ইটা শহর লয় ,
ইটা হল টাঁইড় মানভূম !
ইখানে বিটি যতই পড়হুক
শেষ ঠিকানা পালহা পুড়া হেঁসাল ঘর !
গোরুর গোবর ভরা গুয়াল ঘর নইলে
বর্ষাদিনে কাদা ক্ষেতে নামহে ধান লাগা ।
বুকের থাকে রক্ত ঝরাঁই গাদা টাকা দিয়ে
বিটি বিকে তারপর শ্বশুর ঘরের খেঁকসানি !

তবহু হামি আশা ছাড়ি নাই ।
ভাবহেছিলি বিটিটাকে উচ্চমাধ্যমিক দিয়া করাব।
ইস্কুলের মাস্টার গুলান বিন পয়সায়
বিটিটাকে হামার পড়হাঁই দিথ ।

আগুয়েই বলেছি হামি কনহ পাটির লোক লই ,
হামি খাটে খাওয়া দীনমজুর
এতবছর কনহ চাঁদি কে একটাও ভোট দিনাই ।
যখন পাটির লিডার গুলান গাড়িয়ে চাপে
জোড়হাত করে গটা অঞ্চলটা ঘুইরথ
হামার দমে হাসি পাথ ।
ভাবথি ই শালা মাগা পাটি বঠে !
বিটি হামকে শিখাঁইছিল
-ভোট হামার অধিকার ,
হামারও অধিকার আছে হামার সরকার গঠনের ।
তবেই ন এই বিশু মাহাত
পথম ভোটট দিঁয়েছিল ।
ভাবহেছিলি যে সরকার
হামার বিটিটার এতবড়ো সাহায্য কল্ল
ভোটটা হামি তাখেই দিব ।

ভোটের আগুর দিন অন্য দলের লে হুমকি আল্য -
তবহু হামি ভোট দিলিক |
তারপর দু'চার দিন যাতে না যাতেই খবর
পালি বিটিটাকে হামার কারা শেষ করে দিঁয়েছে ।
বিটির গতরের কাপড়টা টেনার মতন কুটরা কুটরা হঁয়ে রক্তে লেশাঁয় আছে !
সেইদিন আরেকবার আকাশটার দিকে ভালে ভালে হামি
দমে জোরে চেঁচায় চেঁচায় কাঁদেছিলিক
-হামকে মাফ করে দিস জবা !

ব্যাঙ্কের লে কন্যাশ্রীর টাকা আ'সেছিল ।
হামি টাকাট ঘুঁরাই দিঁয়ে বললিক
-দিদি 'কন্যাশ্রী' লয়
পারলে উয়াদের 'চেতনাশ্রী' দিন ।
উ মানুষগুলানের টুকুন চেঠা জাগুক -
টুকুন চেতনা জাগুক ||



কুথায় সইরাইঁ যাচ্ছ্য

                       (১)
বলতে পার মুখ্যু বঠি আন জামানার লক
বুঢ়া বয়স ভীমরতিতে ধরেছে চইখ কান
লাল ফিতাতে খুঁপা দেখে গুলায় যাথক ভক
বুইজতে লারথি বাবুর মা'তে কোন জনমের টান ।

কিলাস তখন সেভেন এইট হাফ পেন্টে চটি
ফোর পিরাডে ভত্তি পকেট তেঁত্যল বিচ আর গুঠি
ঠিক ধরেছ্য এঁঠই বঠে বাবুর মা'দের গাছের
কখন লিঘুম রাত পাইরাথ্য ষোলো দিনের লাচে ।

গাছের লীচেই শুগুম মারে খাইট দঁড়িতে বইস্যে
সখী যখন লাইচতে আইসথ , হুইদকে যাথক হাসে ।
আড় চখেতে হেসেক লাইট কালো টিক আর গাল
খানিক মায়ে ঝাঁইকরে উইঠত "ছো লাচ দিকে ভাল " ।

আরেকট দিন জ্যুতের ছিল্য ভাদুর ভাসান দিনে
গাঁয়ের মোড়ের পরব টাঁড়্যে জিলপি দিতম কিনে ।
খুকড়া লাগাই ঘর ঢুকথি বাপ ত হাঁড়্যার ঘোরে
চুপু চুপু ক কুট্যা মাস দিয়ে আইসথম তারে ।

আইসথ যেদিন মকর সিনান রাত থাইকতেই ডুব
গতর ছিল্য আঁইড়ার মতন জাড়াথ্য নাই খুব ।
মায়ের হাতের গড়গড়্যাতে জবাব লাইক কারঅ
পিঠা খাওয়াই বাবুর মায়ের মন মজাতম আরঅ ।

পিঠার সাথে দুয়েক কলি টুসু বাবুর মায়ের
পরবদিনে জাগরণে নাম কামাথক গাঁয়ে ।
লালফিতাট গুঁজে দিথম কভু পলাশ কদম
আইড় ঢেঙা পথ দুব্বা ছুঁয়ে রোদ ঘুইরথম বেদম ।

পড়াশুনাই ভালই ছিলিক কপাল গুনে বাগাল
শেষ বেলাতে বাপ বইল্ল ইবার মাকে আগাল ।
বৈশাগ রোদের তাতল ধুলায় সেই ছাড়লম গাঁ
দিনে দিনে পিরিত আঁচে ধুঁইসকে হল্য ঘা ।

                          (২)
হামি তখন রাঁচির মড়ে জল ঢালছি কাপে
পাশের গাঁয়েই বিহা দিলেক বাবুর মায়ের বাপে ।
মা জাইনথ .."তর বিটিকে ভালবাসেক বেটায়"
"টেনা গুঁজার হিম্মত নাই পিরিত করার হেতা"!

শুনেছিলিক মোধার কাছে ঝইড়্যা সেদিন খুব
বাবুর মায়ে মাঝপুকুরে  গেইছল দিতে ডুব ।
মাতাল স্বামী তাস লোটারি মাঝরাতে কন রাজা
জমি ছিলেক বিঘা দশেক তার গুনে বর সাজা ।

ভাদর মাসে ফুটাকড়ি মহুলে তাও বুঁদ
বাবুর মাকেই শুইনসাঁ রাতে গুইনতে হত্যক সুদ ।
লষ্ট আঁচড় এমনি করেই বাবুর মায়ের দিন
স্বামী মইরল পোষের জাড়ে গাইদ্যে যখন ঋণ ।

                         (৩)
সেদিন ছিল মকর পরব ঠিক পড়েছে মনে
বছর বাদে নাম্হলি গাঁয়ে লৈতন শিইরণে ।
আইড় ঢেঙা পথ দুব্বা ছুঁয়ে তেঁত্যল বাড়ি হঁয়ে
ঝিমুরে আছে গাঁ ট যেমন গুমরে মরা রোঁয়ে ।

মাইক ভাইঙে বাইজছিল গান টুসু ত লয় মটে
বছর দুয়ে গাঁ ট যেন বিকাইঁ গেছেক ভটে ।
বলছি বলছি টুকু দাঁড়হা শেষ টানটা দি
ভুলে গেছিক কবে নেশার সঙ্গী হঁয়েছি ।

রাত থাইকতে উইঠতে লারি আলিস লাগে বড়
মকর ডুবে পালই ভাঙে পুয়াল করি জড় ।
গইড়গড়্যা সাজাঁ যে থাল ডেঙ্ঘতে লাইরথ বিড়াল
দু এক কামড় আর রুচেনাই জল ধুয়ে খাই চিঁড়া ।

দিন দুই  তিন মনগুমারে এমনি ছিলিক বইস্যে
বাপ বইললেক " ইবার বেটা বউ না দেখেই শেষে..."
"বাবুর মাকেই কইরলে কইরবে নানত করবনাই"
এমন কথার সাহস দ্যাখ্যে অবাক বইনল্য গাঁয় ।

                          (৪)
বিন ভাতারের একার বাসা সাদা থানের বেশে
হামকে দেখে গুমরে উঠে -"ফিরলে কবে দ্যাশে"?
খানিক ধুরে ফুইট্যে আছেক পলাশ ডালে ডালে
ভাবলি খানিক চুলের গছায় রাঙাই দিবক লালে ।

থেঁইথলে আল্য বুকটা হঠাৎ "ফিরা হল্য কই"(!)
কাঙাল হামি ফিরলি যখন 'পাকা ধানে মই' ।
"বিহা কইরব তখে জবা লিয়ে যাব ঘর"
কলজা ছিঁড়ে আগ্ইন হাওয়াই বইতেঁ লাইগল ঝড় ।

"আচিরে পাঁচিরে পদ্ম পদ্ম বই আর ফুটেনা"
ধরন জবা সেই টুসুটা যে গান কুথাও জুটেনা ।
কুথায় সইরাইঁ যাচ্ছ্য জবা ধরনঅ সেই গান"
"চাহেঁ দেখঅ সে গান মিছাই 'আজ টুসু ভাসান' !"

                              (৫)
সত্যি বইলছি শ্যাষ বয়সে আইজ বাদে কাইল ধুঁয়া
এই মাটিতেই পদ্মকলি টুসুর আজান রোঁয়া !
এই মাটিতেই দুব্বা ছুঁয়ে রোদ ঘুইরথম বেদম
এই মাটিতেই বাবুর মায়ের খোঁপায় পলাশ কদম ।

চোখ খুঁয়েছি ইবার শুধু তাকে দেইখব বল্যে
সেই কালো টিক লালফিতা আর কদম গুঁজা চুলে
শুইনব সে গান মকর দিনে যে গান কুথাও জুটেনা
টুসুর হাতে জড়া শালুক ভমর তবু বসেনা  ।।


(ভক=ক্ষিদে; যাথক=যেতো; ষোলো দিনের লাচ= ছৌনাচ; সিরাইঁ=সরে; লারথি=পারতাম না ;পাইরাথ=পেরিয়ে যেত; শুগুম=চুপ ; হুইদকে=আনন্দে
আকুল ; ঝাঁইকরে=চেঁচিয়ে; জ্যুত=ঠিকঠাক; হাঁইড়্যা=মদ্যপ পানীয় ;কুট্যা=পিস; কলি=গানের লাইন আইড়=আল ; জাড়=ঠান্ডা ;গড়গড়্যাতে=শীতকালীন একপ্রকার পিঠে ; আগাল=সামলানো ; তাতল=উত্তপ্ত; ধুঁইসকে=ছেঁকা খেয়ে ; টেনা গুঁজা=পরিধানের বস্ত্র ; ঝইড়্যা=খুব বৃষ্টি; শুইনসাঁ=শুনশান ; গাইদ্যে=খুব বেশি ; লৈতন=নতুন ; শিরণে=শিহরণ ; ঝিমুরে=ঝিমিয়ে; বিকাইঁ=বিকিয়ে; ডেঙ্ঘতে=লাফিয়ে পেরোতে ; ধুরে=দূরে ; কলজা=পাঁজর ; আগইন=আগুন ; খুঁয়েছি=হারিয়েছি ;)


উজ্জ্বল গরাই
বাসস্থান বাঁকুড়া জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম ধানারাঙ্গী । বর্তমানে বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর বিভাগে পাঠরত । দীর্ঘ পাঁচ ছয় বছর ধরে অনেক ছোটো পত্রিকাতে লেখালেখি । বাংলা মান্য ভাষার সাথে মানভূমের আঞ্চলিক ভাষাতে কবিতাচর্চার প্রতি সমান অনুরাগ ।  সাহিত্যচর্চার সাথে ভালোবাসা সঙ্গীতচর্চাতেও ।






*****



মানবেন্দ্র ব্যানার্জী




পুঁটির বিহা

সাঁজের বেলি বদন খুড়া বল্ল্য শুনচু ভাইপ
পুঁটির বিহা লাগাই দিছি হাজার পাঁচেক চাই ব।

কথা শুন্যে হকচকাই যাই পুঁটির বয়স কত?
মাইরে-কাট্যে চইদ্দ হবেক উয়ার বেশি লয় ত!!

খুড়ায় বলি এই বয়েসেই বিটিই দিচ্চ ছাঁট্যে?
এই ত সেদিন টিক পরাত্যে নাক্-দনা পাত্ বাট্যে!

ইস্কুলেতে পাঠাও কেনে পাবেক ইটা উটা
পড়ালিখায় দুক্খু ঘুঁচায় কথা ট লয় ঝুটা।

খুড়া হামার রাগ্যে গেলেক বই্লত্যে থাকে যা তা
বড় পণ্ডিত হইচু বঠে পঢ়ে দু'চার পাতা |

বয়েস যদি পারহাই গ্যেল পনর থাক্যে ষল
দায়ের হবেক পাত্ত পাওয়া নাই পাব হে ভাল |

ইমন সময় বাসাতের কান পঁছায় খবর থানায়
উঠাই দিল বিহার আসর হল্য যা-বার তা লয়!




আঞ্চলি ভাষায় লেখা দশটি লিমেরিক


টুকুন ছুঁয়ার লাগ‍্যে

জছনা রাইত‍্য ট উঠল‍্য হাঁইস‍্যে কাঁসার বাসন আসমানে
ধুরে কুথায় লাগড়া বাজে মন ট ঘরে নাই মানে
লেশায় লেশায় হঁ‌ইয়ে চুর
মাদলেতে বাঁধ‍্যে সুর
মাটি ছুঁয়ার লাগ‍্যে আন্তর হুঁকর‍্যে উঠে আনমনে!


মাখল
(পান্তাভাতের উৎসব)

ঝাঁপান পরব স‌ইরপ‍্যে যাঁইল আজক‍্যে আইল‍্য মাখল।
সিজান করা পোস্টা ভাত ব তুইলব ডাবল ডাবল!
দ‍্যাশের যতেক সাঁড়াহাঁস--
হ‌ইলছে উদের সব্বনাশ--
উদের উপরে প‌ইড়ল বঠে বিষহরির ছোবল!


আঞ্চলিকে লিমেরিক

হুঁকরি পিটে কাঁনছে ম‍্যেইগ ট জমিন ভাসে বুকজলে
ঝরন দ‍্যেখে মনে লাগে ----উয়ান ফুঁকছে ফুঁকনলে !
উপর যাঁইয়ে কন লকে
দিঁল কি হে ম‍্যেইগ ভুলকে
চকশা ক‌ই হছে ইবার------থাকব‍্যে খুড়া সামহাল‍্যে!


বিবাগী

সংসার বড অসার লাগে বুঝল‍্যে লতুন বিহাই
তুমার বিহান লাগছ‍্যে দ‍্যেখ দিনে রেতে লিহাই
কাঁখ বগলে কেঁদরা লিয়ে
লদির ধারে ব‌ইসব যাঁইএ
ফকির হব ,বাউল হব ---লিলম গুরুর দুহাই।


মন ট আছে দুখাই

বান বাদলে মন ট গেছে ভিতর হত‍্যে দুখাই
দ‍্যেশ ট যদি খন্না হ‌ইয়েঁ যাইত ইখন সুখাই!
বানের পানি হ‌ইত ক্ষান্ত
মন ট টুকুন হ‌ইত শান্ত
লক জনরা খাবার লাগ‍্যে আছে বড় ভুখাই!

রুখা টাঁড়ের মানিষ হল‍্যেও উদের মনের দুখ
পরাণ মাঝে বিঁধে আইসে কাইড়ে লিছে সুখ
উদের জন‍্যি লাই কি দরদ
লাই কি দ‍্যাশে তেমন মরদ!
উদের  দিকে হাত বাড়াইয়েঁ ঘুঁচাই দিবেক ভুখ!


ভাদর মাস

ভাদর মাসের পখর রদে ঝুঁঝক‍্যে উঠে মাথা
ছাওয়া কত্ত‍্যে পারে নাই খ কমার ফুটা ছাতা
চাল বাড়ন্ত ---ক্ষেত‍্যে ধান
প‍্যেটে ধরে ---ভাদুর‍্যা টান
ভাল‍্যে দ‍্যাখ বঢ় পরব ---আছে সিতান পাতা!


ভাদর‍্যা আদর

রদ উঠল‍্যে --ফুইটল ফূর্তি পাড়া গাঁ ও লগরে--
গয়ং গচ্ছ ভাব ট দিখাই ম‍্যেগ চল্ল‍্য হ‌ই সাগরে
কাঁড়-বাঁশেতে ঘুঘু বিঁধ‍্যে
তেমনি রদে দিছে ভিঁদ‍্যে ---
ভাদর মাসে আদর ভুল‍্যে ঘর জামাইরা ভাগ রে ।


দাঁড়া তুঁই

আপুয়া ভর বাঁধ আগালে আড়‍্যে ছিলম গেঁতুই
দ‍্যাঁড়কা পুঁঠি ট‍্যাঁংরার সঙে প‌ইড়ল পাকা রুই
গা ছমকা ঝুপকা ভরে
গুটাই মাছে আইসব ঘরে
এমনি সময় খনা সুরে ব‌ইলল 'খাঁব দাঁড়া তুঁই"!


আঞ্চলিকে লিমেরিক

আইস খুড়া  গপ্প করি  পরান টুকুন  জুড়হাই
দ‍্যেশর দশের কথা ভাইব‍্যে গেলম বঠে বুড়হাই
জিনিস পত্তর আকাশ ছুঁয়া
দামের নাই খ  কনহ‌ই টুয়া
গরীব লকের হঁ‌ইয়ে খুড়া কে ক‌ইরবেক ব লঢ়াই?

মানবেন্দ্র ব্যানার্জী


******



উজ্জ্বল সরকার


ঠাকুর কষ্টের ভাগ লাও

হেই বাবা দামোদর,
মেলাই সুখে আছিস তুই _
মুনিস মজুর মুটে মুই
লিস লে চেলার খবর!

কত্তা বাবা তুকে ডাকি
খানিক সুখের তাগিদি,
তুয়ার আছে গদির আসন
আরাম কাঠের পিঁড়ি,
হামার আছে প্যাটের জ্বলন
ব্যারাম গায়ের সিঁড়ি!

তোর সুখের স্বগ্গে টাল খোয়াবো
লাবাবো  মুদের মাঝে_
এ গতরে কষ্টের জ্বালা
সকাল-সনঝে বাজে!

আয় ঠাকুর মুদের গেরামে
খবর লিয়ে যা
মুরা সালো মরি যেচি
আহা! খিদের জ্বলনে!

আয়রে ঠাকুর মুদের মাঝে
শাল পিয়ালের দ্যাশে,
কষ্টের লোদী ভাগ কোরিলি
মিটির ঘরকে বোসি।



কিষ্টো রাধা সংলাপ

রাধা: কিষ্টো চূড়া গাছের লিচে
     কে গা বাজাইছিস বাঁশি;
    ও সুর ভালোবাসি ভালোবাসি....

কিষ্টো: হামার নাম কিষ্টো কাহার
        বাঁশি বাজাই আপন সুখে
        তু বিটি ছেল্যা কে বটে?

রাধে: তু কিষ্টো হলি মু রাধে
       ঘর হামার বিল গাবাতে
      রোজ শুনি তোর বাঁশি,
      রান্না ফেলি চলে এইচি
      কোলের ছেল্যে কাঁদি!
       তু কোন হারামি বটে!
       বাঁশির শব্দে সারাদিনটো কাটে
       ঘর-সংসার উঠাইলি তু লাটে|

কিষ্টো: গরু গুলান ঘাস চিবাইছে
           ছাড়িন দিছি অদের
           দারুণ তেজ রোদের
          সি যাতনায় ই ছায়াতে বসি
          বিন্দাবুনে কিষ্টোর ল্যায়
          ফুঁকতেছি মধুর বাঁশি|

রাধে:  কালা তুয়ার বাঁশি রাখ
          ই খানে ক্যান বাজাস
         শব্দ টুকুন আটকে রাখ
        কেনে মোরে পিরিতি মজাস!

কিষ্টো: তুয়ার সেথে পেম হব্যেক লাই
         শব্দের হব্যেক বিয়া
        কলি কালের কিষ্টো-রাধা
        শুধু শব্দের দিয়া-নিয়া।


জোবানটো তু ফিরিন লে

মুর মিটির ঘরে
মিটির দিয়াল,
মুর মিটির ঘরে
খড়ের চাল,
বাঁশের বেড়া;
খিদের জ্বালা!

মুর মিটির ঘরের চাল,
লীচে পড়হে জল!
মিটির দিয়াল গল্যে_
মিটির পিদিম লেভে,
সি যাতনা লিত্য যে
কেও দ্যাখেলাই ফিরে!

সি মিম্বারটো লিত্যে আসতো
ভোটের আগে ঘরকে__
জোবান দিতো ধোরিন মুর মুখ:
"ভোটটো দিস্ জাগা মুতো,
রোটি দিবো, ঘর দিবো
দিব্যক মেলাই সুখ।"

এটো করি পতিচসুরুতি
ভুল্যে গ্যালো মিম্বার,
রোগে শোকে পাশে লা পাই
ভাত  জুট্যে লা অ্যাকবার!

মিম্বার হল্যি, জিতান দিলাম
খোঁজ নিলি লাই পরে
মুর মিটির ঘরে খড়ের চালে
ঘুণ লাগিনছে বাঁশে!

লিত্য মুদের ভাত জুটে লা
জুটে লা সোয়ামী সুখ,
মিছে জোবান দ্যায়লা সোমী
ধোরে হামার কেলে সুনা মুখ!

ভাতারটো মুর লষ্টো লয়
লষ্টো হল্যি তুই_
মিছে কথায়
লইলে পরে রেত-বিরেতে
প্যাটের জ্বালায়
তুয়ার সেথে শুই?

জোবানটো তু ফিরিন লে
ঝুটা কথার ঝুড়ি,
অযোতা কেনে তুয়ার সেথে
পিরিতের হড়পা বাণ তুলি?

ঝুটা বাত জোবান মিছে
ত্যুর ল্যায় বাবুগের মুখে
জোবানটো তু ফিরিন লে
বরং মুরা আচ্যিই সুখে।


উজ্জ্বল সরকার

শিক্ষকতার সাথে যুক্ত| কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাট্য সাহিত্যে মাস্টার ডিগ্রি,পরে বি.এড, ডি.এল.এড ডিগ্রি লাভ| বাড়ি নদীয়া জেলায়| কর্মসূত্রে বীরভূম জেলায় থাকেন| স্কুল জীবন থেকে লেখালেখি| বিভিন্ন লিটিল ম্যাগাজিন সম্পাদনার সাথে যুক্ত| গল্প কবিতায় অন্ত্যজ মেহনতি মানুষের কথা বলেন| প্রথম প্রকাশিত গল্পের বই "দেশাল মানুষের গল্প"|




*****




সোমনাথ দাস চান্দল্য বাদল

'অতি সুখের দুঃখ বিলাসী'

খুব খারাপ আমার শরীলডা --
খাইলে লাগে না ক্ষুধা,
ঘুমাইলে চোহে দেহি না;
কুনু ক্রমে চশমা লইয়া
স্বপ্নডিরে টুহাই !!

ক্ষুধা নাই, স্বপ্নহারা
ক্যামনে আমি বাঁচি;
তাইতো উপাস থাহি,
জাগরণে জাগিঅ যে নিশি !!

আমার খুব কঠিন রোগ,
সুখে আমার বড়ই দুখ;
সঙ্গী আমি পাই কই,
আমার দুখের দুখী !!

( টুহাই -- খুঁজি )



'রোজ নামচা"

এক মাদানে রাইন্ধা বন্ধে রে ,
কয় মাদানে খায় !
বন্ধের লেইগ্যা পরান পড়ে ,
বন্ধে ক্যারে আহ্ত পুড়াইয়া খাস্ ??

রান্ধাবাড়ায় বন্ধের দিলঅ
ক্লেশ তো কুনু নাই ,
বন্ধের কেবল মনে পড়ে ,
কত শ্রমে রানতো বাড়তো মায় !!
রান্ধস্ তুই দহন কত ,
করস্ তোরা সোহাগ যত
রাইন্ধা বাইড়া বন্ধেরে খাওয়াস !!

এক মাদানে রাইন্ধা বন্ধে
তিন মাদানে খায়,
খাইতে বইয়া পারণ কান্দে
তোরে থুইয়া বন্ধে যখন খায় !!

( মাদান- বৈকাল ,বন্ধে -- বন্ধু ,
থুইয়া --রেখে বা ছেড়ে , আহ্ত - হাত )


"আত্ম উপলদ্ধি"

আর জিদ করুম না ,
বানটাক্কর  
মানু
অহইবো এবার ।
বানচিকলির মতঅ হান্ডুই হান্ডুই    
না কইরা
ধীর স্থির অহইব ,
ভালা অহইয়া চলবো ,
সময়ের কাইম কাইজ
সময় ধইরা করবো ।

উদাসীন সতর্ক হবে ,
এবার !!

( জিদ -জেদ , করুম - করবো , বানটক্কর - অসম্ভব দুষ্ট , মানু- মানুষ ,  বানচিকলি -- আসমানী বিদ্যুৎ , হান্ডুই হান্ডুই- উদ্দেশ্য হীন ভবঘুরে , অহইব -- হবে , কাইম কাইজ- কাজকর্ম, অহইয়া - হয়ে )



সোমনাথ দাস চান্দল্য বাদল
জন্ম বাংলাদেশে, দেশভাগের পর বেড়ে ওঠা ত্রিপুরায়, বর্তমানে ECL চিফ ম্যানেজার।লোক সংস্কৃতির বড়ই পাগল।বাংলার বাউল ফকিরদের নিয়ে যার ভাব জগৎ।বেশ কয়েকটি গ্রন্থের লেখক। ঝিঙে ফুল সাহিত্যপত্রিকার প্রধান সম্পাদক।



******


লিল্টু মণ্ডল

উরির রক্ত

মা, মাগো কি আর বইল্‌বো তুখে;
বড়ই বাজে এই পোড়া বুকে !
আটকুড়ির ব্যাটারা উরিতে আমার জুয়ান ব্যাটাগুলাকে দিল্যাক মার‍্যে !
ছুয়াগুলান আমার কিছু জানে নাই, মাগো…
অঘোরে ঘুমাচ্ছিল্যাক মা !
ঘরে উয়াদের বুড়া বাপ-মা আছে,
আছে বউ-বিটি-ব্যাটা !
তুই ত মা অসুর মার‍্যেছিস…
উই কামাইনা গুলাকে ফুইড়ে ফুইড়ে মার গো !
তুই পারল্যে গণ্‌শা-কাত্‌তিকাকে পাঠা;
উয়ারা দু-ভাই মিল্যে উয়াদের টুটি-ট ছিঁড়ে লিয়ে আসুক।
ঘরের মুরুব্বি গুলান চুপচাপই বস্যে থাক্‌বেক, কিছু কইর্‌বেক নাই, মাগো !
রক্তগুলাই জল ঢুক্যে গ্যেইছে, হড়কা বাণের জল !
ধর্‌মলিরপেক্‌খ আমার দ্যাশ বঠে,
অহিংসার দ্যাশ ভারত্‌বর্‌ষ।
দ্যাক যেয়ে উরির মাঠি-ট ক্যামন রক্ত-রাঙা !
আর কি বইল্‌বো মাগো, তুই ত সবই জানিস্‌…
ভারত্‌বর্‌ষ ভকৎ সিং, লেতাজীরও দ্যাশ বঠে ন !

বিরক্তি

যা বাবা দিল রাতের বারোটা বাজিয়ে,
শুবো আমরা এখন কোথায়, কাঁথা মুড়ি দিয়ে !
ভিজে সপসপ ফুটপাতের ওই তল,
মুছে যা আমার শ্লেটের জল !
দিনে রোদে পুড়ে জীবন হয় পোড়া ছাই,
শীতল রাতে একটু আরাম তবু জুটল নাই !
বলি অ্যাঁ কামাইন্যা ঠাকুর, আদিখ্যেতার ব্যাটা,
খালি গণ্ডা গণ্ডা বিয়াইলেই হবেক?
তার খেয়াল রাইখতে হবেক নাই?
ঘর দুয়ারের বদলে দিলি বেবাক দুনিয়া,
ইটা কি করলি, ভিজায় দিলি ভুঁইটা !
মর মর, মরণ নাই তুর !
অ অ ভুলেই গ্যাছি উসকল ত তুর কিছুই নাই !
যা ! ছেড়ে দিলম তুখে,
এবার থেক্যে বিয়ালে ভেবে বিয়াস !
সবাই তো আর আমাদের মত হবেক নাই,
রাবণের মত দিবেক ঠুক্যে তুর মাথা !
বুজবি তখন ক্যামন হয়, না থাকাদের মাথা ব্যথা !

(রচনা- ১৭/০৬/২০১৭, বেনারস)


বুজলই নাই ক্যাউ আমাকে

মন নিয়ে যখন জনম্যেছি,
তখন ফল তো ভোগ করত্যেই হবেক।
বুজলই নাই ক্যাউ আমাকে !
অ্যাই যে সারাদিন খ্যেটে মরি,
কার জনন্যে তুদের জনন্যেই তো নকি ?
হা ভাল শরীল ট দ্যাখছিস,
ক্যামন হয়ে গেলছে।
শিরা গেইলা খাইট্যের দড়ির পারা দ্যাখাচে।
রক্ত জল কইর‍্যে টাকা আনি তুদের জনন্যে।
আমার মনেও ত সখ আললাদ আছে নকি ?
বুজলই নাই ক্যাউ আমাকে !
ভালবেস্যেছিলম যাকে,
সেও থোড়াই বুজল্য !
ভেব্যেছিলম তাকে লিয়ে ঘুরত্যে যাব ড্যাম ধারে, শতাব্‌দি-লেহুরে পার্কে !
বাদামভাজা কিনে খাওয়াব,
আর খাওয়াব গুপচুপ-চাট।
তাকে মনে-প্রাণে কত ভালব্যেসেছিলম
সে কি জানে,
তা জানবেক কি কর‍্যে ?
আমার মন ত দ্যাখে নাই,
খালি বাইর‍্যেটাই দ্যাখলেক !
চোখের সামনে দিয়ে চলে গ্যালো
অন্য ছিলার হাত ধর‍্যে !
বুজলই নাই ক্যাউ আমাকে !
তারপর তুখে বিহা কর‍্যে আন্‌লম।
তুইও চাঁদি কি বুজলি আমাকে !
ক্যাবল ই ট দাও সি ট দাও।
কি দি নাই তুখে ভাঙা মনের সবই ত
উজাড় কর‍্যে দিন্‌ছি।
আমার বুকের ধুকপুকিটা
দ্যাখেছিস কক্‌খনো;
ক্যামন কামারশালের হাপ্‌র‍্যের মত ধড়পড়াই !
বুজলই নাই ক্যাউ আমাকে !
ছিলাগেলাও চাঁদি হঁছ্যে মহাচ্যাদঁড়;
তারাও এখন যে যার যার বুজে লিন্‌ছে।
ক্যাউ বুজলি নাই র‍্যে আমাকে,
ক্যাউ বুজলি নাই !
ভাঙা মন ভেঙেই রইলেক,
জুড়ার ক্যাউ নাই !
খালি বুকটতে বাতাস বুলে।
জুড়াই ত জুড়াবেক চিতার আগুনে।
আর পারলম নাই, সবই ত দিন্‌ছি।
শুদু এইটই খ্যাদ থেক্যে গ্যালো......
বুজলই নাই ক্যাউ আমাকে !

(রচনা- ২৪/১০/২০১৬, রাত্রি- ০০:৪১
সংযোজন- ৩১/১০/২০১৬, দুপুর- ১:১০)


লিল্টু মণ্ডল

বাবা - দক্ষিণ মণ্ডল,
মা - কবিতা মণ্ডল।
পশ্চিম বর্ধমান জেলার বারাবনী থানার অন্তর্ভুক্ত বালিয়াপুর গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে গবেষক, বাংলা বিভাগ, কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তর প্রদেশ।
সখ - পড়াশুনা, লেখালেখি আর বিভিন্ন জায়গায় ঘোরা।
ভালোবাসে মানুষের সাথে মিলেমিশে থাকতে। বর্তমান একবিংশ শতাব্দীতেও নিম্ন হতদরিদ্র মানুষদের সামাজিক অবস্থান তাকে ভাবিয়ে তোলে। তাদের কথা বলার জন্যই তার লেখালেখি।


******



বিকি দাস







পিরিতি শিখাইলা


বন্ধু কেমনে ভালোবাসার বিষ পান করাইলা।
নামাবলি লইয়া ছিলাম সুখের কারণে,
আজ ব্রতকথা নষ্ট হইলো তোমার'ই বারণে।
প্রেমের জলে নামাই দিলা সাঁতার না শিখাইয়া,
আমার নৌকো ডুইবা গেলো তুমি গেলা বাইয়া।
বন্ধু কেমনে ভালোবাসার বিষ পান করাইলা।

লাউয়ের ডগার মতন আমার হৃদয় ঘরে,
দু'এক ফোঁটা বৃষ্টি পাইয়া ভাঙবে ঠিকই ঝড়ে।
দুপুর বেলায় কলস নিয়া অমন কেনো চাইলা,
মিঠা পানে বন্ধু তুমি চুন মিশাইলা।
বন্ধু কেমনে ভালোবাসার বিষ পান করাইলা।

তোমার কাছে প্রেমের পরাগ মানেই শুধু ধূলা,
আমার প্রেম তুচ্ছরূপে জেনো ভাঙা কুলা।
বাউল তুমি কি মায়াতে এ গান বাঁধিলা,
কোন যাদুতে তুমি বন্ধু রাত জাগাইলা।
বন্ধু কেমনে ভালোবাসার বিষ পান করাইলা।




দিন বদল


মোর হুছে জ্বালা, খুব জ্বালা বাবু।
কেরালা গিলাম কাজে, দু'ইটা ভাতের লাইগে।
বাবা, মা কে দিখবে বল।
চুখের নিচে সাগর জল।
মোর সরকার একদিন হাঁকে হাঁকে চিল্লাইছিলো,
দিন বদল.....  দিন বদল.... দিন বদল.......




ভোট


সেই দিন নেতা আইসা কইলো
ভোট দেও, তোমার ছল চাকরি পাবে।

ভোট দিছিলাম....
আমার ছল চাকরি পায় নাই।
চাকরি পাইছে পঞ্চায়েতের ভাই।

হায় রে আমার নেতাগিরি।
কিয়ের লাইগা প্রতিশ্রুতি।

শিবু মাঝির ঘর নাই,
আবাস যোজনা পাইছে পঞ্চায়েতের খুড়তুত কাকা।

ভোট দিছিলাম......
হায় রে আমার নেতাগিরি।
হায়!  হায়!  হায়!




প্রেম


মুই বাঁধবো না বিনি,
চুখে লাগাইনি কাজল।
তোর ঠোঁটে ঠাট মইরে,
হয়েছি পাগল।
তুই দূরে ক্যইনে যাইস
আর ব্যথা বাড়াইস।
এমনি কইরা কথার জালে
আমাকে হারাইস।
আমার পইড়া রয় কাজ,
আমি ক্যমনে ভুইলা যাই।
তুই আমার মাথায় বইসা,
আমারে ছিঁড়া খাইস।
তোর পিরিতি ভাল লাগেনা
বাঁশী বাজাইস ক্যনে।
বিয়া কইরা ঘরে তোল
সামনের অগ্রহায়ণে।

বিকি দাস

১৯৯৪ সালের ২১ মার্চ বিক্রম দাসের (বিকি) জন্ম নদিয়া জেলার রানাঘাট শহরে। তিনি বর্তমানে দুবাই তে কর্মরত। ছাত্র জীবন থেকেই লেখালেখি। বর্তমান সময়ে দুই বাংলার বিভিন্ন পত্রিকা ও অন লাইন ম্যাগাজিনে লেখালেখি করছেন।


******



চৈতালী ঝুমা বক্সী



মন চুরা

তুর তো বড় বুকের পাটা বাঁশি বাজায় ফিরিস

সোয়ামীর সাথে ঘর ট তে  মুর কি লেগে উঁকি মারিস?

বাইজলে বাঁশি ক্যামনে ব্যল তো মন ট ধইরে রাখি?

উনুন শালে কাঠের ধুঁয়োর সাথে চুখের জল ট ঢাকি,
রেতের বিলা শুতে গেলম ওরে কানহা শুন...

যমুনা তীরে দাঁড়াই দাঁড়াই বাজাই দিলি  ধুন.

কি করি তায় কুথাকে যাই,দুয়োরে খিল ট তুলা,

উয়ার কাছ টয় শুঁয়ে দিঞছে জটিলা কুটিলা..

কুনু মতে রাত ট কাবার ভুর ট হল যিমন..

পোড়া বাঁশি ট বাঁজায় দিলি রাগ ট লাইগে  কমন!

থাম কেনে তুই মন চুরা তুই জেইগে যাবে আয়ান

তুর সাথে ত পিরিতি মুর দিবি কও লুককে জানান?

হাতে বেড়ি পায়ে বেড়ি ক্যামনে ঘর ট ছাড়ি

তুর সাথে যা কুথা কব না, করিস বড়ই বাড়াবাড়ি..

বার ট করলম আপুন  তুর লেগে ঘর ট করলম পর..

বেহায়া বাঁশি জ্বালাঞ দিব , উয়াকে শাসন কর।



মানটো বিককিরি লাই

অমন লয় গো..
চেইয়ে মেইগে কিছু লিই না..
গতর খাটাই প্যাটের ভাতটো জুগাড় করি..
বিটিছেলে হলম তো কি হয়েন গেল,
সুমানে মাঠে ঘাটে কাজটো করি...
হুই পুকুর হতে গেঁড়ি গুগলিটো, চুনোপুটিটো
জাল ফেলাই উঠোইন আনি..
তা বাদে বিককিরি কইরতে যাই গেরামের হাটটোতে,
তাকাই তাকাই দেখতে লাগছিস যে বড়?
ভিখারি পেয়েনছিস বটে?
অমনি তুর কাছটোতে পয়সাটো লিতে লারলম,
লাজ শরমটো বিককিরি লাই বটে,
চুখের ভিতর তুর কুনো ফন্দিটো লজরে আইসছে..
অমন ডেবডেবিয়ে তাকাইন দেখ আর একবারটো
চুখটো যদি গেলে না দিয়েনছি!
মায়ের জাতটোকে একটুক মাইনতে লারছিস?
তুদের ইটোতেই মানটো তো আপনার ই ভাসাউন দিছিস
বিটাছিলের  গরবটো লিয়ে ধুইয়েন ধুইয়েন জলটো খা,
এ বিটিছিলাকে পয়সার গরবটো দিখাইনতে লারবি..
ইটো আলু বেগুনটো কিনা লয় গো..
এমনটাতে কিছু লিতে আসি লাই..
সম্মানটো দিবি,সামানটো কিলে লিবি  
তুর সাথে এর চেইয়ে দুটো বেশি কথায় মুনটো লাই।


চৈতালী ঝুমা বক্সী
ঝিঙেফুল পত্রিকার কার্যকারী সম্পাদিকা

*****



নিজাম উদ্দিন মন্ডল


মিলা

ছুটুপারা বামুন গাঁয়ে
এনেক ডাগর মিলা
এনেক লুক, এনেক দুকান
লাগর দুলার খিলা।
বাসনকুসন মিলায় যতক
গরুর গাড়ির ভিড়
আমি যাবক মিলায় ইখন
অজয় লোদীর তীর।

ভাত-কাপড়

গাঁয়ের যতক মরদগুলা
মাঠের থেকে এসে
জলায় যতক বৌগুলান
ভাতদে আজিক থেসে...
কানের কাছে বকর বকর
ত্যাল নুনট নাইকো
কখন তুমি বাজার যাবেক..
এখুনি মুখ আন্দারি হি যাবেক
কুলের ছোরার ওষুধ লাইকো
কেশে কেশে মরে
তুমি এক মরদ বটে
বুকটো আমার ডরে
হাপিন হাপিন বুক যে আমার
হুঁশ ফুসিনে উঠে
আমিও তো গতর খাঁটি
ভাত কাপড় টই জুটে


নিজাম উদ্দিন মন্ডল
1993 সালে8ই মে জন্ম বীরভূম জেলার অন্তর্গত ইলামবাজার থানার বারুইপুর গ্রামে। বাংলা বিষয় নিয়ে স্নাতকোত্তর।সাপ্তাহিক সংবাদ পত্র 'চৌপাহারি'পত্রিকার অবৈতনিক সাংবাদিক।সবুজ পৃথিবীর সন্ধানে,সেতু কাব্য গ্রন্থ প্রকাশিত। 2018 সালে আলোর দিশা পত্রিকা আয়োজিত আলোর দিশা সাহিত্য সম্মান লাভ।এছাড়া অনুগল্প, প্রবন্ধ, প্রতিবেদন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে বা হচ্ছে।


*****


সোমা বিশ্বাস


ছুটু জাত লয়

মুরা সিডুল টাইব তবে ছুটজাত লয়
মুরা মানুষ হঞে জন্ম লিঞেছি ।
মুদেরও লাল রক্ত বাইর হঞ,
তুদের কী লীল রক্ত বাইর হঞ?
তবে তুরা ছুটু জাত ব্যলে গালি দিস্ ক্যানে ?
তুইও মানুষ হঞে এসেছিস
মুও মানুষ হঞে এসেছি
তবে ছুটজাত বলে গালি দিস ক্যানে ?
মুরা অছুত লয়
মুরাও মানুষ
তুরা বুঝিস না ক্যানে ?




ইসকুলটতে য্যাতি দে না মা

মা আমি ইসকুলটতে যাবোক
লিকা-পড়া করএ মানুষ হবোক
মুকে ইসকুলটতে য্যাতি দে না মা
তুর দুটঅ পায়ে পড়ি ।
বলেছিলি, মুকে বড়অ হতেই হবেক,
দারিদো ঘুচাতে হবেক,
কাম-কাজ করতি হবেক ।
আমি কাম-কাজ করবোক মা,
সাথে লিকা-পড়াও করবোক ।
এমা, তুর চোখে জল ক্যানে ?
কান্দিস না মা, কসট হঞ ।
তুর চোকেরর জল পারিনা সইতে
তুই খাটিস জমিতে মজুর জনে ।
জানি, নুন আইনতে পান্তা ফুরঅয় ।
জানিস মা, ইসকুলটতে মিড-ডে মিল দ্যায়,
কন্যাশ্রীর ট্যাকা টো দ্যায়,
প্যাটে ভাত ফিরিতে দ্যায়,
চটি-জুত-জামা-প্যান্ট ওটঅ ফিরিতে দ্যায়
সাইকেলটঅ দ্যায়, চিকিৎসাও করঅয় ।
তুর দুটঅ পায়ে পড়ি
ইসকুলটতে য্যাতে দে না মা ।


সন্দ বাতিক

তুই কি মুকে ভালোবাসিস্ ?
না কেবল শুতেই আসিস্ ?
সেই সকালে বাইর হোস্
রাত করে ঘরটো আসিস্ !
মুর কথা কি প্যড়ে না তুর মুনে ?
যা আসিস্ না আর মুর কাছে,
কেবল আসিস্ আদর খেতে, সুহাগ পেতে ।
যা মরদ তুই চোল্যে যা
সতীন বেটির ঘরটো যা ।
রাখবো না আর তুকে বেন্ধে ।


সোমা বিশ্বাস
আলোর দিশা সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদিকা


*****


ভুজুঙ মাঝি

পিরিতের দিন বটে

মুনের মাঝে ময়ুর লাচে
ম্যেঘ ন্যেমেছে পরান মাঝে,
পিরিত হামার পেখম তুলে
লাচছে লাজ শরম ভুলে ।

এঞ দেখঅ চোকের লাচন
টিপিক টিপিক ডাকছে কিমন,
পিরিত দুব পিরিত লুব
ইতে কি আর ইমন শরম।

পুঁড়া দেহে শান্তি এল্য
টিপিক টিপিক টিপাঞ দিল্য
লাগর হামার লাচছে মুনে
শরম ভুলে ঘরের কুনে ।

পিরিত করার দিন বটে গ
কি যিন একট নাম বটে
ইংরাজিট মুকে আসে না
বাংলাটই পিরিতের দিন বটে।

লাল লিপিসটিক লাগাঞ লুব
ফিতে দিয়ে চুল ব্যেঁধে লিব
সেন ত্যেলট মাথায় দিব
লতুন শাড়ি গায়ে দুব ।

এ্য  নুনুর বাপ ই দিকটই ই দিকটই
এক বার চেয়ে দেখ ক্যেনে
তুর লিগে কিমন সেজেছি
কিমন পিরিত সাজাঞ বসেছি ।


এক বার দিকা দে লিতাজী

লিতা বল্যে কথা সি কি কম কথা
তবে এখুন কার মত লয়
ভক্তি আসে এই একট লিতাতেই ;
তবে মরন বাঁচন লায় জানা
বলছে নাকি গুবনামি বাবায় গুবনামা !

তুকে কুথা কুথা খুজি লাই
দেশ বিদেশে আন্দ্যারে পান্দ্যারে
পিলম দিকা উঁচু মাথায় শ্যামবাজারে
জীয়ন্ত লয় গ পতুল গ্যড়ে রাখা আছে সিয়ানে !

দেশের অন্য লিতাগালা
তুর পিছাতে কম কি ল্যেগেছে,
দেশট ত বিকতে হবে তলে তলে
সাদা চামড়ার সথে চাল চ্যেলেছে সিয়ানে!

এখুনও লিতা বল্যেই মনে আসে তুর নাম
ই দ্যেশটই তুর বাকি আছে অনেক কাম ;
হে লিতা বাবু হে সুভাষ আছিস যদি বেঁচে
দেশের লুককে দিকাদে একবার লিতা হঞে !

দেশ বিচ্ছে লিতা গালা
জনগনের রক্ত খেচে টেনে টেনে ,
এখুন লিতা গালার স্বাধীলতা বছরভুর
দ্যেশের লুকের এখুনঅ কাটে লাই স্বাধীলতার ঘুর;
তুর মত লিতা পাওয়া দ্যেশের লুকের ভাগ্যি
তুর মত লিতা হওয়া এখুন লিতা গালার কী সাধ্যি !
হে লিতাজী একট বার দিকা দে ক্যেনে
এখুনঅ তু বেঁচে আচিস ইদ্যেশটর জনগণের মুনে !


বন্দ্যে খর দিন বটে

খুড়া যেচ কুথা
বন্দ্যে খেতে ইশকুলে ...
না না বয়েস হঞ্ছে কিলাপ পানে ।
আজ কে ত বন্দ্যে খর দিন
আর একদিন বটে শাবন মাসে
দুল পুনিমার আসে পাশে।

মুনে যদি না থাকে মুনেকর মুনে মুনে
ইসকুলের মিছিলট হবে যুন দিনে,
রঞে রঞে বনদে মাতরম ..
হাঁকবে যবে যেতে হবে তবে ।

তাও যদি না ঠাঁওর হয় কানে
চোক লাগাঞ দে মাঠ পানে
তিনরঙা কানিট যদি পতপঁতায় উড়ে
দ্যোড় লাগাঞদে ইসকুল কিলাপ পানে।

এত্ত কিসের হুরুম দারুম
এত কিসের গদগদ ভাব ,
এই দুট দিনইত জুটে গান শুনা
আর বন্দ্যে খর একটু ভাগ।

মুখ্য ভুজুঙ মাঝির কপাল ভাল
কুনু লিতা গুচের ছ‍্যেলে নাঞ ঘরে
তা না হল্যে কুনু কিলাপ ঘরে ..
তিনরঙা কানিট উরুত কে জানে ?

তিনরঙা কানিট দেখতে লাগে ভাল
ডেলি ডেলি উড়ে না ক্যেনে জানঅ?
উইট উড়লেই খাবার দাবার দিতে হবে
গুরা আর ইদের তফাত কী জানঅ ?

(খুড়া=মুরুব্বী, কাকা।হঞ্ছে=হয়েছে।কিলাপ=ক্লাব ।খর=খাওয়ার ।রঞে রঞে =থেমে থেমে।ঠাঁওর=উপলব্ধি, বুঝতে পারা।কানি =কাপড়, বস্ত্রখন্ড।উরুত=উড়ানো।গুরা =গৌর বর্ণ, ইংরেজ ।)


ছুটু বিলার সরসতী পুজ

ছুটু বিলায় ভাল ছিলম ব্যেশ
সরসতীপুজো এল্যেই ঘইটত নানা কেস,
টপকা কুইল খাব মা-গ তুর পুজোট এল্যে
এতদিন খাই নাই মা যদি যায় পড়াশুনট ভুল্যে।

বাবার কাছে বকা খেতম আর কিল চড় থাপড়
গিনরুমে বিড়ি ফুঁকে ধুমো বার করার সে কী বতর,
কান্নাকাটি ক্যরে মার খেঞে লিতম মায়ের শাড়ি
ছিঁড়লে পরে নাইক ক্ষমা পরইত লাঠির বারি।

বার করতম উপুষ থেকে নুক কাটাতম লাপিত ডেকে
বই পত্তর বাগাঞ রেখে ডাকতম তুকে মাগো ভক্তিভরে হেঁকে,
পুজর দিনে রেতে গুম যবের শিশ আম জামের ডগা
ফুল বেলপাতাচুরি করে জুগার করা সে কী কম কথা।
 
সকাল সকাল চানট ক্যরে লিতম ভাল জামা প্যান্ট ট প্যড়ে
পুশপাঞজলিট দিতম মা গ গেদ্যে ভক্তি ভ্যরে;
পড়াশুনাট হয় যেন গ মা এঁকটুকু পারা প্যড়ে
পাশ ক্যরাঞ দিস গ মা বছর বছর ভাল ক্যরে ।

উ বয়সে দাদাদের কাছে পাবে যত কুশিকখা
গিনরুমে রাত বাস ক্যরে লাও খাঁটি দিকখা,
কার ভাললাগে কুন পাড়ার কুন মেয়েট
কারু আবার ইসকুলের কুন বাঁদবি ট;
দাদাদের ফরমান জারি হল্য উ দিন থিকে
পিছা পিছা ঘুরাঘুরি জয় মা সরসতী ডেকে।

বাঁকা চোকে বাঁকা চাওনি উ বয়সেই শিকা
পেম পিরিতির চিটি তুর পুজতেই পুথম লিকা,
এখুনো সি দিনগালা মা পরান জ্বালাঞ দ্যেয়
তুর পুজট এলেই মা উদের কথা মুনে পরাঞ দ্যেয় ।

ছুটু বিলায় ছিলম ভাল বেইশ
হে মা তুর পুজট এল্যেই মুনে পড়ে যায়
ছুটু বিলার নানা রকম ক্যেস,
সেই গিনরুমে পিথম বিড়ি ফুঁকা
আর পিথম খারাপ ছবি দিকা,
আবার মুনের মাঝে চলে এল্য
কত না বলা সুখ দুকের কতা।
তু লে মা গাদা গাদা পুষ্পের ভার
আমাকে দে মা যত ছুটু বিলার সুখের ভার
জয় মা সরসতী  জয় মা সর সতী।


টুসু

আমার টুসু ইস্কুলে যাবে
সরকারি সাইকেলট লিবে,
আমার টুসু ডাংডহরে ঘুরে না
লোকে মিছা বদনাম দিবে না ।

আমার টুসু ইস্কুলে যাবে....
সরকারি সাইকেলট লিবে...

গায়ে গতরে টুসু মেয়ে হঞেছে
মদনা ছুঁড়া বাঁকা নজর দিঞেছে,
১৮না হল্যে টুসুর বিহা নাই দিব
কন্যাশ্রীর টাকাট টুসু গুনে লুব ।

আমার টুসু ইস্কুলে যাবে....
কন্যাশ্রীর টাকাট লিবে.....


মরদ আমার হারাঞ গ্যেল

খাদানটই লুকে লুকে লুকারন্য
তুমাকে এ্যকবার দিখার লিগে ,
টিবি কাগজের লুক এ্যসেচে
ওগো তুমার খবর লিবার লিগে ,
সবায় ব্যইলছে তুমি আচ নাকি
এখুন কয়লা চাপা প্যড়ে  !

এ্যত সুখ সইল্য না আর
ই মাগির কপালট পুঁড়া বটে ,
জ্ঞান হবার আগেয় বাপ খেঞেছে
মরদ খ্যেলে ইবার তবে ,
মা বিটিতে এ্যকই পথে --
সাদা থানের কাপড় বটে l

মরদ আমার হারাঞ গ্যেল
খাদানগাবায় কয়লা কাইটতে যেঞে,
লাল ফিতে আর লাল আলতা
প্যরব ইবার কিমন ক্যরে ,
লাল সিঁদুরট হারাঞ গ্যেল
ওগো তুমি চ্যলে গিঞে l

তুমার শরীর উঠল্য না আর
খাদান গাবায় রইল্য প্যড়ে ,
নুনুর বাপট বল্যে দাও গো
এখুন আমরা রইব কিমন ক্যরে ,
মরদ আমার সেই যি গ্যেল
আর এ্যলো না ঘরবাগে ঘুরে ..
খাদান গাবায় শুঁয়ে আছে
ওগো কয়লা ক্যাইটতে গিঞে l

অঘেন মাসের ধানে

অঘেন মাসের পাকা ধানের ঘেনে
লতুন যইবন উথলে উঠে মুনে,
চাষা ভুষোর উঠুনভরা সুনার ধানে
গ্যাদে গ্যাদে সপুন আসে মরা জানে ।

সুম বছরের খাবার লিগে রেখে ..
বাকি ধানট দিনা মিটায় বিচে ;
যদি কিছু বাঁচে বৌ বিটিরা সাজে
লতুন কাপড় লতুল জামা ..
বাকিটুকু কুটুম ঘরে আনাগুনা ।

লতুন ধানে এ্যনেক পরব গাঁয়ে গাঁয়ে
লতুন চালে মিস্টি ফলে লবান হবে দমে ,
হিতাসুতা মিলা হবেক হরেক রকম দুকান
যাত্রা লটো পঞ্চরস আর বাউল কিত্তন গান ।

লতুন ধানে লতুন সপুন আঁকব কত্ত মুনে
সব খরচের পরে বাকিটুকু জমা খাতায় জমে ,
বৌবিটিদের নিয়ে ঘর সংসার বটে ..
বলা যায়না শরীল খারাপ কখন কার ঘটে ।

গতর খাটায় দমে ফসল ফলে সুনার মতন খেতে
সরকার বাবুরা বলবেন লেয্য দামট পায়না ক্যেনে ?
সুমবছরের সপুন নিয়ে মাঠে ঘাটে খাটি
লতুন ধানটই বেঁচেআছে মুদের মরা জীবন খানি ! !


মা তু তিরশূলট ক্যেনে নিয়ে এ্যলি

হেঁ মা দুগ্গা তুর হাতে পায়ে পরি
তুর তিরশূলট ক্যেনে নিয়ে এ্যলি ,
মত্তে এখুন দমে বাওয়াল অস্ত্র নিঞে
ক্যেস খাবিমা বিনাদুসে দাঙ্গাকারী হঁয়ে l

লুকুঞ রাকমা তুর তিরশূলট আঁচল বাগে
কি জানি কুন কবি অ্যাসবেক কনডম হাতে ,
মত্তে তুমা আপুন মুনে আসিস ছেলে পিলে নিঞে
যেতে ইরা দিবেক না মা কেস কাছারি বিনে l

আগের বছর পাঠাঞ দিবি মা খিপা ভুলাট কে
নিসা খেয়ে জমায় দিবেক ওই ভুতা তিরশূলে ,
ভুল বকাট ছারাঞ দিবেক সততার মুকোস খুলে
মত্তের অসুর গালার পেট ফুটুবে ঐ ভুতা তিরশূলে ll


প্যেটের লিগে যুদ্দু

ভুজুঙ কী ক্যরে লিকবে
তুদের লাঠালাঠির গান ?
বুঝলো না তুরা কী জেতে
তুরা মানুষ?হিনদু না মুছলমান ?

খালি চোকে মানুষ ভাবি
দুট্ রক্তই তুদের লাল ,
তুরা যাকে আল্লা ডাকিস
ইরায় উকে ডাকে ভগমান l

রাম -রহিমে যুদ্দু ক্যরে
উদের ক্যরে দিলি উদ্দার ,
খিলখিলিঞে হাঁসছে উড়া
তুরা দিলি তুদের দুট্ জান l

ধম্ম নিয়ে মাতামাতি গ্যেদে
কম্ম নিয়ে কইছে কতা কই ?
ভুখা প্যেটে ধম্ম উড়ে কত ?
ভাতের লিগে যুদ্দু হছে কই ?

ধম্ম আফিং গুলে খেছিস
আঠার মতঅ ছিটিঞ দিছিস ,
ভুখা প্যেটে লড়ছে কত্ত লুক
যুদ্দু হোক প্যেটের লিগে নুনু
ভুজুঙ বটে ই -দলেরই লুক !!


ধিতাং ধিতাং মাদল বাজে

ধিতাং ধিতাং মাদল বাজে
মুনের মাঝে পিরিত জাগে,
পিরিত লিগে গুলুঞ আসে গা
লাগর তুকে দ্যাখতে প্যেলম না l

ধিতাং ধিতাং মাদল বাজে
পায়ে পায়ে ঘুঙুর লাচে,
মুনট মুর প্যড়ে আছে কুথা
চুক দুটোতে সপুন দেখি বিথা l

ধিতাং ধিতাং মাদল বাজে
সুর তুলে গান পরান মাঝে …
লাগর লাগর কুথা আচিস
আয় একবার্ দিকা দিঞে যা
তুর লিগে মুই পিরিত রেখেছি
তুর পিরিতে সাজাঞ লুব গুটা গা !!


ভুজুঙ মাঝি


🙏🙏🙏
সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment