এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

আরণ্যক



কবিতা (সাধারণ বিভাগ)




পাট

বাতাসে মিশে আসা পাটের গন্ধে
বাবার শিরীরের সৌরভ পাই,
পাটের শরীর বেড়েছিলো বাবার বিন্দু বিন্দু ঘামে!

পাটের চাঁপায় ভায়ের মৃত্যুতে শোকার্ত মা কেঁদে বলেছিল, "আর পাট বুনতি দেবো না"
আমি কম্পিত কণ্ঠে বলেছিলাম- হন্তারক পাট!

যার প্রতিটি আঁশে লেগে আছে বোনের আঙ্গুলের স্পর্শ!
ছাড়ানো আঁশে এঁকেছিলো সে একটা লাল শাড়ির স্বপ্ন-
ক্ষুধার সভায় মা বলেছিলো,
সামনে বার পাট উঠলে আমাদের ক্ষুধার কষ্ট হবে না,সখিনাকে কিনে দেবে একটা টকটকে লাল শাড়ী।

হায়রে বন্ধকী জমির পাট!
যার ঘামে বেড়ে ওঠো তুমি তাকেই বাঁধো ঋণের দায়ে।
তুমি বেঁধে রাখো একই আঁশে জীবন ও মৃত্যুকে!





ছায়া-মানবী

কাল অনেক ঘুরেছিলাম-
রোদ্দুর থেকে মেঘ ছায়ায়;
ফুটপাত থেকে রাজপথে;
বহুজন থেকে নির্জনে।
একটি মানুষের মতো ছায়া ছিল সাথে!

অজস্র বন পেরিয়েছিলাম - অশোক, তমাল, হিজল আর কত কি!
জারুল আর চালতার ছায়া ছিল অন্ধকারের মত।
আর দুর্বোধ্য এক নিশ্বাস ছিল আমলকী বনে।
সে ছিল নিশ্বাসের দূরত্বে!

বেণু আর বেত বনে কাঁটা আর পাতার মাঝে রাত্রির অন্ধকার,
আমি থমকে গিয়েছিলাম সবাক আহবানে-
অন্ধকারে তাঁর বড় ভয়!
যে অন্ধকারে অসংখ্য প্রেমিক যুগলকে আমি লীন হতে দেখেছি!

গাছের লতায় ঝুল খেতে খেতে ভেবেছি-
এই বুঝি পেলাম স্পর্শ তাঁর!
কিন্তু ছায়া মনবী থেকেছে ছায়ার দূরত্বে।
আমার বিচ্ছিন্ন আঙুল চেয়েছে তার তালুর স্পর্শ।
কিন্তু ছায়া-মানবী থেকেছে ছায়ার দূরত্বে।





শাশ্বত সন্ধ্যা

ষোড়শীর দেহের মত সূর্যের শেষ হাসিটুকু
বেঁকে পড়েছে বেগুনের শিষে,
কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যা নামবে আমাদের জনপদে।

ধানক্ষেতে ঝিঝিপোকাদের উল্লাস ধ্বনি ঘোষণা
দেয় আর একটা রাতের।
শাশ্বত শান্তির নিশান উড়িয়ে ঘরে ফেরে বলাকার দল
জনহীন প্রান্তর ছাপিয়ে কুয়াসারা আসে বিষাদের সুরে।
দূরন্ত ছাগ শিশুর নরম ক্ষুর-
উড়ন্ত ধুলোদের পেছনে ফেলে ছুটছে আপন নীড়ে ।
গ্রামের সীমানা পেরিয়ে ভেসে আসা আযান ও শঙ্খ ধ্বনিতে ধ্বনিত এক অঘোষিত সাম্যের সুর ।

ঘাস ফোড়িংগুলো নরম ঘাসের সিংহাসনে
বসে প্রচার করছে একক কতৃত্ব।
সন্ধ্যার প্রথম চন্দ্র পানে তাকিয়ে বুড়ো
বাদুর ছুটছে জীবনের আহ্বানে ।
প্রত্যাহ সন্ধ্যা নামে এখানে,
কতটা সন্ধ্যারই বা সাক্ষি এ দুচোখ!





একজন রহমআলী

কপালে এলোমেলো কয়েকটা দাগ
ভাজ পড়া দাগগুলোতে দুশ্চিন্তারা কারাবন্দী।
কাঁচাপাকা দাড়িগুলোতে আনাড়ি হাতের হালচাষ
ঢলে পড়া ঘাসের মত মলিন মুখ ঝুঁকে থাকে মাটির দিকে।
কাস্তেটা তুলে নেয় হাতে;
বিড়ির উচ্ছিষ্ট অংশ ফেলে দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ে আকাশে।
যত্নে চালায় কাস্তে জমাটবাঁধা মাটির বুকে
বেশিক্ষণ আর চলে না-
কি করে পাঠাবে টাকা!
বাজারে যায় না ভয়ে, যদি পাওনাদারে ধরে
কার কাছে যাবে আবার?
পাওনাদারের চোখ শকুনের;কথা ধারালো ঈগলের নখের মত !

কাস্তেটা বোগলে চেপে
আস্তে আস্তে পা চালায় পাশের ক্ষেতে;
ছোটভাই চাষ করে সেখানে।
সমস্ত লজ্জা পায়ে ফেলে রহমআলি বলে-
"ছাওয়ালের বড় অসুখ শহরে,
ভার্সিটিতে যাতি পারে না কয়দিন।
কিছু টাহা না পাঠালি যে হচ্ছে না ভাই।
কিছু টাহা ধার দে -
দরকার হলি বাগুনির ভুঁইডা তুই নিস।"

কথাগুলো বলতে কণ্ঠ কেঁপে ওঠে তার-
বাবার লজ্জায় আত্মহত্যা করে ঈশ্বর!

No comments:

Post a Comment