ইতিমধ্যে আমার জীবনে ঘটে গেছে একটা তুমুল ঘটনা,
বা, বলা যেতেই পারে, আমার জীবনের এক চরমতম ঘটনা,
প্রলম্বিত তটে কিছু প্রোটিনঘটিত অঙ্গীকার
জড়িয়ে। ভরিয়ে
সীমা ছুঁলো আমাদের জলজ অহঙ্কার
সারাংশ করলে এটাই দাঁড়ায় যে, আমি বাবা হলাম। একটি টুকটুকে মিষ্টি মেয়ের বাবা আমি। একটা অসম্ভব পূর্ণতায় ঘিরে থাকা চারপাশ, আমার সত্ত্বার ভিতর সবটুকু হেঁটে গিয়ে খুঁজে পেয়েছি তাকেই, যাকে আমি চেয়েছি, আমার তবাস্মি।
এই একমাস আমি পুরো ঘেঁটে ছিলাম, কী লেখালেখি, কী সম্পাদনা, একটা অশালীন অনীহা, একটা বিরক্তি। সত্যি বলছি, সাহিত্যজগত থেকে পুরোপুরি দূরে সরে যেতে ইচ্ছা করছিল। নিউটনের তৃতীয় সূত্র মেনে নিয়ে এই অনীহার কারণটুকু খুঁজে নিতে পারেন আপনারা।
না পারিনি দূরে সরে থাকতে, উপায়ও তো ছিল না,
পরিত্যক্ত শরণার্থীর মতো
বহমান উৎসবের
নিজস্ব ক্যানভাসে কিছু অর্থহীন অনাসৃষ্টি
বহমান উৎসবের
নিজস্ব ক্যানভাসে কিছু অর্থহীন অনাসৃষ্টি
একদমই তাই, পরিত্যক্ত শরণার্থীর মতোই পৌঁছে গেলাম কোলকাতা বইমেলায়। অর্থহীন তো অবশ্যই এবং অনাসৃষ্টি’ও। (সৃষ্টিশীল মানুষেরা অর্থনৈতিক সমীকরণের বাইরে দাঁড়িয়ে অনাসৃষ্টি করবেনা, তা আবার হয় নাকি? কোনও দিন হয়েছে ?) সারা শীতকাল ধরে চলা কবি/লেখকদের বহমান উৎসব থেকে অবশ্য আমি দূরেই ছিলাম, কিছু ব্যক্তিগত আমন্ত্রণ থাকলেও কোথাও যেতে পারিনি। অতঃপর গোয়িং টু ‘কালকুত্তা’......
ভোরে (আদতে আমার কাছে গভীর রাত) ওঠার জন্য কীনা জানিনা, মেজাজটা আমার প্রথম থেকেই রংরুট্ ধরেছিল। জানলাতে মাথা রেখে….কানে দাড়িবাবার ‘কীর্ত্তন’ চালিয়ে এবং হাওয়া গিলে ও মেখেও কিছুতেই মেজাজটা ঠিক হচ্ছিল না, বুঝতে পারছিলাম, কামরা জুড়ে ক্যাচড় ম্যাচড় ফুলকো লুচির মধ্যে আমি হলাম না ফোলা সেই লুচিটি, যাকে ঠিক পাতে দেওয়া যায় না।
ট্রেনটা তখন হাওড়া ঢুকছে, হঠাৎ ক্যাচাৎ ক্যাচ্……
সবার মুখে চোখে বিরক্তি, শ্লা….একেই লেট্, আবার লেট করবে…….
হঠাৎ জানলায় চোখ রেখে দেখি, ট্রেনটা পিছিয়ে হাঁটছে….হঠাৎ গরম তেলের মতো চলকে উঠলাম আনন্দে, যাক, আর কোলকাতায় ঢুকতে হবে না।
আরে দূর দূর কোথায় কী, ভুলটা ভাঙলো মুহুর্তেই, যখন মাথার মধ্যে কিলবিল করে উঠলো ফিজিক্সের কিছু সূত্র। অগত্যা নিরূপায় শরণার্থীর মতো প্রবেশ করলাম কোলকাতায়। একমাত্র রেললাইনের পাশে পাথর ফুঁড়ে গজিয়ে ওঠা সরষে গাছটাই
পড়তে পেড়েছিল আমার মনটা, হঠাৎ সে বলে উঠলো, ‘হেথায় তুকে মানাইছেনারেএএএএএ…’
পড়তে পেড়েছিল আমার মনটা, হঠাৎ সে বলে উঠলো, ‘হেথায় তুকে মানাইছেনারেএএএএএ…’
জানিনা কেন, হাওড়া স্টেশন ঢোকার মুখেই একটা চরম বিরক্তি কাজ করে, অথচ কী আশ্চর্য, শিয়ালদহ ঢোকার সময় কিন্তু এটা হয় না। আর কোলকাতা ঢুকলে একটা চরম বিরক্তিকর আঁশটে গন্ধ সবসময় নাকে লেগে থাকে, অসহ্য……..
অতঃপর, হাওড়া স্টেশন থেকে রওনা দিলাম সোজা সল্টলেক। এই সময়টুকু বেশ আনন্দেই কেটে গেল, ট্যাক্সির ড্রাইভার কাকুর সাথে একচোট জমিয়ে গল্প।
অতঃপর, অনেকগুলো গেটকে উপেক্ষা করে উনি ঠিক নামিয়ে দিলেন আমাকে চার নম্বর গেটেই, যেখানে অপেক্ষা করার কথা শাল্যদানীর। নামলাম, চারদিকে তাকালাম, শাল্যদানীকে খুঁজে পেলাম না। হঠাৎ মনে হলো, ড্রাইভার কাকুকে তো বাই বলা হয়নি, পিছনে ফিরে দেখি…….
জীবনে কিছু কিছু সম্পর্ক আসে, যার কোনও নাম থাকেনা, থাকেনা কোনও আকার, তবু টলটলে জলের মতোই চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ে জীবনের বাকিটুকু জুড়ে।
শাল্যদানী গেটের মুখে নাই দেখে বুঝে নিলাম কোথায় থাকতে পারে, অতঃপর ১৬৫…….
বইমেলায় না গেলে আমার জীবনের একটা অংশই অপূর্ণ থেকে যেত, হয়তো জানা হতোনা প্রভাত চৌধুরীকে। প্রভাতজ্যেঠুকে চিনতাম ও জানতাম, কিন্তু এবারের বইমেলায় আমার আবিষ্কার প্রভাত চৌধুরী।
(হয়তো জানার বাকি আছে আরও অনেক কিছু, তবে নির্দ্বিধায় স্বীকার করছি, সাহিত্য জগতে উনিই আমার একমাত্র দুর্বলতম স্থান)
অনেক খুঁজে, ভিড় ঠেলে পৌঁছে গেলাম কবিতা পাক্ষিক স্টলে। ঝাঁকড়া চুলের ছেলেটাকে ঠিক চিনতে পারিনি, প্রথম দেখছি তো, অতঃপর আবিষ্কার করলাম ‘সাঁইজি’ আদতে শাল্যদানী। মুরারিদা, অমলদা, অতনুদার সাথেও এই প্রথম দেখা। প্রথম দেখা তুলি, স্বপ্নার সাথেও। দেখা হলো, সব্যসাচীদা, বেবীদা, শীর্ষেন্দুদা, নাসেরদা, পাবলোদা, শান্তনু, রোশনি, আমার অন্যতম প্রিয় বন্ধু সাহানারা…...এবং আরো অনেকের সাথেই।
(বইমেলায় কাটানো মুহূর্তগুলো ও বন্ধু রাজীবের সাথে কাটানো সময়বিতান লেখার ইচ্ছা আছে একটু বড়ো করেই, তাই সম্পদকীয়তে এই অংশটুকু বাদ থাক)
এখন বাজছে ৬.৪৩ আর ১৫ মিনিটের মধ্যেই প্রকাশিত হবে পত্রিকা, তাই উপায় নেই সম্পদকীয়তে আর বিরক্তিকর বকমবকম্ করার। বাকিটুকু বলবে শাল্যদানী, তরঙ্গের বার্তায়। শুধু এইটুকুই বলবো, আমরা বিশ্বাস করি নচিকেতার সেই চরম আত্মবিশ্বাসী উক্তিটিতে, ‘অনেকের মধ্যে আমি প্রথম, অনেকের মধ্যে মধ্যম, কিন্তু অধম কখনোই নই।’
জ্যোতির্ময় মুখার্জি Chief Editor at 'এখন তরঙ্গ' |
অনেক সাধাসিধে আর অসাধারণ !
ReplyDelete