এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

পৃথা রায় চৌধুরী



মুক্তগদ‍্য



বিসর্জন

গেছিলো সে মা'র কাছে মহাষ্টমীর সকালে, অঞ্জলি দিচ্ছে সবাই... সে এক কোনায় দাঁড়িয়ে শুধু চেয়ে রইলো মা'র দিকে। ত্রিনয়নী মা গো, মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে দেখলে না একবার? না না, চেয়ে দেখেছো তো, এই তো নতুন জামাকাপড়, এই তো তার চোখে মুখে সুখ ঝরে পড়ছে। মিসেস এবার মিস্টারের সাথে উইথ ডটার, বেরোবে প্রতিমা দর্শনে...

#

মহাষ্টমীর উপোস, গতকাল রাত থেকে প্রায় কিছুই খাওয়া হয়নি। সে না খেলে অবশ্য কৈফিয়ত চাইবার কেউ নেই, এই এক সুখের কথা। হাজব্যান্ডের সাথে ‘চরতে বেরলো’ সে, সাথে অবশ্যই একমাত্র ডটার। পেটে টিপটিপে একটা ব্যথা, হোক গে।

চতুর্থীর দিন গোটা চারেক ঠাকুর দেখেছে বর আর মেয়ের সাথে... পুরনো ঘেমো জামাকাপড়েই। আনন্দ...

#

“বর, তোমার ফোন ধরতে পারিনি, জানতাম না তুমি তখন ফোন করবে... রেগে গেলে, তোমার বড়োমেয়ের দিব্যি করে বললাম, আমি মা’র কাছে গেছিলাম, যদিও অঞ্জলি দিইনি। কারণ জানতে চাইলে না, শুধু মারলে!

নালিশ করতে গেছিলাম গো... কিন্তু আমার নালিশ কেউ শোনে না, মা’ও না।”

#

মহানবমীর সকাল... অনুরোধ রক্ষার্থে দুপুরের লাঞ্চ এক আবাসনে... মা, তোমার মেয়েকে কতো দেখেছো তুমি, সুখী মেয়ে তোমার। হাজব্যান্ডের কেয়ার অফ... ওয়েল মেনটেন্ড... প্রাউড মাদার অফ আ বিউটিফুল চাইল্ড...

“আচ্ছা বর, তুমি তো জানতেই আমি অষ্টমী আর নবমী বেরোই, তবু রাগলে কেন? এতোই রাগলে, যে আমায় একেবারে ‘মেয়েছেলে’ বলে দিলে!... আমার মাকেও... আমার বড়োমেয়েকেও এমন কথা বললে, যে নিজেকে সন্তান বা মা ভাবতে লজ্জা হচ্ছে আমার। ক্ষমা কোরো আমায় তোমরা সবাই।”

#

বিজয়া দশমীর প্রণাম করতে গেল সে বরকে। ঘেন্নায় পা সরিয়ে নিলো তার বর। তার অপরাধ? বড়োমেয়ের খুশির কথা ভেবে ঠাকুর দেখতে যাওয়া।

“বাবা, জানো... একবার তোমার মতোই তার হাতটা রাখতে বললাম আমার মাথায়, রাখলো না... মারলো অনেক। কেন বাবা?”

#

শাস্তি পাওয়া উচিৎ তার... মহাষ্টমীর অঞ্জলি দেয় না, এয়োস্ত্রী সিঁদুর খেলে না... ছিঃ! বরের জন্য এসব তো করা উচিৎ ছিলো তার।

“বর, তোমার বিবি কারুর কাছে আজ পর্যন্ত কিছুই চায়নি, তুমি জানো। সে চায় না কিছু মুখ ফুটে। পুজোয় নতুন জামাকাপড়ও তো দাবী করেনি সে তোমার কাছে! দাওনি বলে কষ্টও পায়নি। ভেতরে একটা ইচ্ছে ছিলো, এক কৌটো সিঁদুর আর এক শিশি আলতা কেনার পয়সাটুকু তার হাতে তুমি দেবে। দাওনি... মা’র সামনে দাঁড়িয়ে এই কষ্টটুকু জানাতে গেছিলো সে... অভিমান। ভেবেছিলো সে, তোমার কাছে এগুলো পেলে সেও অঞ্জলি দেবে, সিঁদুর খেলবে।

দোষ অবশ্য তার মা’র, ওই যে কি এক কুসংস্কার ঢুকিয়ে দিয়েছিলো ভেতরে... স্বামীর কাছে শাঁখাসিঁদুর চাইতে নেই! তাই তো এগুলো চাইবে ভেবেও চাইতে পারেনি সে।

বর বড়ো আদরের ডাক গো...”

#

মাটির ওপর আলপনা... ছোটবেলায় জ্যেঠিমাকে দিতে দেখতো সে সপ্তমীর দিন সক্কাল সক্কাল...

টুকুস টুকুস করে ছোট্ট ছোট্ট লাফে পার হতো টানা বারান্দা, সিঁড়ি... আলপনা বাঁচিয়ে...

সুখী মেয়ের গর্বিত মা, তোমার দুঃখী মেয়ের অভিমান নিয়ে যাও সাথে...

#

একটা ছাদ...।


পৃথা রায় চৌধুরী

জীবনী -
ভারতবর্ষ, পশ্চিমবঙ্গ নিবাসী, কলকাতা শহর। জন্মস্থান ভারতবর্ষের ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ শহরে। সাহিত্য চর্চা শুরু, ছোটবেলা স্কুলে থাকতেই। প্রাণীবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ও পরিবেশ বিজ্ঞানে ডক্টরেট।এপার ওপার বাংলার বিভিন্ন প্রিন্ট পত্রিকা ও অনলাইন ওয়েবম্যাগ ও ব্লগে নিয়মিত লেখালিখি করি ২০১২ সাল থেকেই।
নিজের একক কাব্যগ্রন্থ দুটি... "মন্দ মেয়ের সেলফি" ও "জন্মান্তরে সিসিফাস"।
এ ছাড়া এপার ওপার বাংলার বিভিন্ন কবিতা সংকলনে স্থান পেয়েছে আমার কবিতা।
কিছু কাব্য সঙ্কলনের সম্পাদনা করেছি ও ক্ষেপচুরিয়াস নামক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক মণ্ডলীর মধ্যেও আছি। সহ-সম্পাদক : 'শহর' পত্রিকা
২০১৬ সালে “শব্দের মিছিল” সাহিত্য গোষ্ঠীর তরফ থেকে “আত্মার স্পন্দন” ১৪২৩ সম্মানপ্রাপ্ত হয়েছি।)

No comments:

Post a Comment