এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

প্রভাত চৌধুরী



কবিতা (সাধারণ বিভাগ)




আমার কবিতা

এই সংখ্যার জন্য যে কবিতাটি লিখবো তার পায়ে বাঁধা থাকবে
কুষ্ঠ-ঝুমঝুমি, সে হেঁটে গেলেই দুপাশের জ্যোৎস্না নির্মিত ছায়াগুলি
কিছুটা দূরে সরে যাবে, একটা মাউথ  অর্গান
এগিয়ে  আসবে নীল-যাত্রাপথে

আমার কবিতার তাতে কোনো হেলদোল নেই, সে ডানদিকে মাথা
নাড়ালে ঝরে পড়বে শিউলিফুল, আর বাঁদিকে নাড়ালে বকুল

এখন মাথাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সে
দক্ষিণ পন্থী না বামপন্থী





সুন্দরের দিকে



৪৪❤️
আজ নতুন করে সংখ্যার পরে হৃদয়ের চিহ্ন জুড়ে দিলাম, এতে করে কি বেশি হৃদয়ের কাছে পৌঁছে যেতে পারবো? তার কোনো গ্যারান্টি নেই । তবে আমি কি লেখাটিতে আমার হৃদয়কে আরো বেশি করে নিয়োগ করতে সক্ষম হব । তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই । কারণ লেখা চলে লেখার নিয়ম মেনে । সে যেমন পাঠকের কথা ভেবে লেখে না । তবে সে কি লেখকের নির্দেশ মতো লেখে? এই প্রশ্নের ও উত্তর আমার কাছে নেই ।কারণ আমার কলমটি স্বাধীন ।সে আমাকে তার নির্দেশক মেনে নেয় না সব সময়।মাঝে মাঝে কলম তার নিজের কথাও ঢুকিয়ে দেয় আমার লেখার মধ্যে । এটা যে খুব বিশ্বাস যোগ্য কথা, তাও নয়। তবু আপাতত আমার কথাটা বিশ্বাস না করে আপনি যাবেন কোথায়।
আমি তো আপনাকে সুন্দরের দিকে নিয়ে যেতে চাইছি,  এই সুন্দরকে পরিত্যাগ করে  আপনি যাবেন কোন উপকূলে, কোন দ্বীপে, কোন অভিসারে।

পবিত্রদার বইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরির কাজ শ্রেষ্ঠ কবিতা দিয়ে নয়। অনেকদিন  অনুপস্থিত থাকার পর প্রকাশিত হয়েছিল আগুনের বাসিন্দা কাব্যগ্রন্থটি।তার কাজেই আমার হাতেখড়ি । কবিতা নির্বাচনে কিছুটা নির্দয়
কিছুটা নিষ্ঠুর হতে হয়। এটা পবিত্রদার মনে থাকার কথা ।মনে থাকুক কিংবা না থাকুক, এই পদ্ধতিকে অস্বীকার করার কোনো গুপ্ত -বিদ্যা নেই ।আমি  এখনো  আগুনের বাসিন্দা -র পাণ্ডুলিপি প্রস্তুতের কাজটি দেখতে পাই, এবং পাশে বসে থাকা আপাত  একগুঁয়ে, আদতে বন্ধুবৎসল পবিত্র মুখোপাধ্যায়ের সন্ত্রস্ত মুখটিও দেখতে পাই । আসলে পবিত্রদা সেই মুহূর্তে আমার  ওপর অতিরিক্ত ভরসা করেছিলেন । সেই জন্যই সম্ভব হয়েছিল  আগুনের বাসিন্দা কাব্যগ্রন্থটির প্রকাশ । সেই সময়ের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল বইটি ।
শ্রেষ্ঠ কবিতা  এবং আগুনের বাসিন্দা বইদুটির প্রচ্ছদ করেছিলেন শিল্পী প্রণবেশ মাইতি ।

আমার স্পষ্ট মনে আছে সেই  অনবদ্য প্রচ্ছদ।পবিত্র মুখোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা, লেটারিং -এর কৌশলে মনে হচ্ছিল পবিত্র কবিতা । অর্থাৎ পবিত্র  এবং কবিতা মাত্র  এই দুটি শব্দকে হাইলাইট করেছিলেন প্রণবেশ।যাঁরা এই প্রচ্ছদ দেখেননি তাঁরা বঞ্চিত হয়েছেন কবিতার বই  এর শ্রেষ্ঠতম প্রচ্ছদটি দ্যাখা থেকে । বলে রাখা ভালো  এই বইটির প্রকাশের যাবতীয় দায়িত্ব  আমার ওপর থাকায়  এর কিছু পরেই  অমর মিত্র -র মাঠ ভাঙে কালপুরুষ, তুষার চৌধুরী -র অলীক কুকাব্য বঙ্গে কিংবা আমার প্রভাত চৌধুরী শীর্ষক বইগুলি প্রকাশ  এতটা সুচারু হয়েছিল । এবং বলতে দ্বিধা নেই কবিতা পাক্ষিক পর্বে  এসে পাঁচশো র বেশি বই প্রকাশের ব্যাপারে আমি নিশ্চিন্ত থাকতে পেরেছি । এই কারণেই এই প্রসঙ্গটি  এত ডিটেইলে লিখলাম ।

আগামীকাল বাসুদেবপুর যাচ্ছি । এই বাসুদেবপুরে কোন কোন রথী মহারথী , সাহিত্য  এরিনার, গেছেন তার একটা বিবরণ দিতে পারবো ।তার জন্য তো আমাকে আগে বাসুদেবপুর যেতে হবে ।




৪৫.
আমরা জানতাম হুল এক্সপ্রেস। কিন্তু হাওড়া স্টেশনে গিয়ে দেখলাম ওটা সিউড়ি এক্সপ্রেসে। এই বিভ্রান্তি কেন তা বুঝলাম না। যেমন কোনো কোনো রাস্তার নাম বদলে হলেও আমরা পুরোনো নামটাকে ভুলে যেতে পারি না । মির্জাপুর স্ট্রিটের নাম হয়েছে সূর্য সেন স্ট্রিট । আমি কিন্তু এখনো মির্জাপুর স্ট্রিট নামটা কেই মনে রেখে দিয়েছি।
টিকিট কেটে রেখেছিল গাজু অর্থাৎ অভিজিত রায়। ও টিকিট করে না রাখলে  এবার বাসুদেবপুরে আসা হত না ।গাজুর আসার কথা গ্যান্টক থেকে । কিন্তু চলে  এসেছিল  একদিন  আগে ।
গাজুর বউ সুজাতা, স্কুলে পড়ায়। এখন বি  এড করছে । সুজাতা  এবং আমরা দুজন C 1-এ।গাজু পরে টিকিট করায় D 1-এ।পাশাপাশি বগি, কিন্তু মাঝের গেট বন্ধ ।সেকারণে দূরত্ব  অনেক । দুর্গাপুরে নেমে গাড়ি। ব্রজকুমার সরকার শারদীয় সাপ্তাহিক কবিতা পাক্ষিক -এর প্যাকেট নেবার কথা, কিছুটা দেরি করলো আসতে ।মউল সম্পাদক প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানালো ও পখন্না র হাটতলা মোড়ে অপেক্ষা করবে । দ্যাখা হল।কিন্তু বাসুদেবপুরের কাছাকাছি  এসে যাওয়ার ফলে  ওকে বেশি সময় দেওয়া গেল না ।
এবার সরাসরি গাজুদের বাড়িতেই উঠলাম ।অর্থাৎ মেজোরায়দের বাড়িতে ঢুকে পড়লাম ।রায়বাড়ির দৌহিত্রর দৌহিত্র থাকলাম না ।
আমাদের প্রতিমা  এতদিন  একচালা ছিল,  এবার প্রথম এককে ভেঙে তিন । তাই দেখে সন্তুষ্ট থাকতে হল ।বিকেলে জোড়া লাগবে শুনলাম । বিসর্জনের কথা ভেবেই এই পরিবর্তন ।
আজকের কথা  এসে গেল আগে । এবার  অতীত -ঐতিহ্যে ডুব দেওয়া যাক।

যখন লেখালেখি চলছে পুরোদমে তখন সঙ্গে থাকতো  এক ব্যাগ পত্র পত্রিকা।কেন আনতাম তাতো জানতাম না ।তবে কষ্ট করে হলেও  আনতাম । বাসুদেবপুরের সকলকে কি দ্যাখাতে আনতাম? তা তো নয়।
তবে মিহির রায় আসতেন বিদ্যাধরপুর থেকে ।তখন সম্ভবত সোনামুখী স্কুলে পড়াতেন, পরে বিষ্ণুপুর কলেজে চলে যান । মিহির দা ছিলেন আমার সেজদিদিমার ভাই । একমাত্র মিহির দা আমার আনা পত্রিকা পাতা উল্টে পাল্টে দেখতেন । আমার পরিশ্রম সার্থক হতো।
মিহির দার মতো জ্ঞানী গুণী মানুষ  আমার মতো তুচ্ছ এক কবির লেখা দেখতেন তাতেই আমি পূর্ণ হয়ে যেতাম। এই পূর্ণতা নিয়ে ছুটে যেতাম দামোদরের কাছে ।এখানে দামোদরের সংখ্যা দুই।আমাদের দিকে ছোটো নদী, সেটা হেঁটে পার হলেই বড়ো নদী ।সেই নদীর কাছে  এসে বসে থাকতাম ।শুনতাম নবদ্বীপ কী বলতে চাইছে।আমি শুনতে সক্ষম হতাম বলেই আজ কবিতা লিখতে পারছি ।হয়তবা সেই নদীই  আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নেয় কবিতা ।




৪৬.
আবার সিরিয়াল নম্বরে গোলমাল । আবার সেই  অমল বসু ভুলটা দেখিয়ে দিল। আজ ফেসবুকে বাসুদেবপুরের পুজো সমীক্ষা পাঠিয়ে গেছি ।
এবার রায়বাড়ি সম্পর্কিত কিছু তথ্য পরিবেশন করি।আমরা  এখন মেজরায় বাড়ির এক অংশে আছি।যখন লেখালেখি শুরু করেছিলাম তখন থেকেই  আমি এই বাড়িই আমার বাড়ি। বাবার এক পিসিমার বিয়ে হয়েছিল গোমস্তাজেঠা  আর চণ্ডীকাকার বাবার সঙ্গে ।তখন জেঠা -কাকাদের  এক- অন্ন। জেঠার তিন ছেলে ।হারা বা নদেরচাঁদ বড়ো ছেলে । আমার থেকে বেশ অনেকটা ছোটো হলেও বন্ধুর মতো ছিল ।ভমা বা ত্রিলোচন মেজছেলে।আর ছোটো ছেলে বোদে।এই বোদেই আমাদের ফেসবুকের হরেকৃষ্ণ রায়। বোদে ছিল পরিবারের সবথেকে ব্রাইট।মেডিক্যাল রিপ্রেন্ডটিটিভ ।পরে ওষুধের স্টকিস্ট।জাঁদরেল মোটরবাইকে যাতায়াত করতো। এখন ধম্মকম্ম নিয়ে থাকে ।ওদের যখন নতুন বাড়ি হল তিনতলা । আমি এবং যূথিকা ওই বাড়ির দোতলার  একটা ঘরে উঠতাম। ভৈরব পিসির কথা খুব মনে পড়ে । আমি এতদিন জানতাম  ওই পিসি গোমস্তাজেঠার বোন।কিন্তু এবার দুর্গাপুর থেকে বাসুদেবপুর আসার পথে গাজু জানালো ভৈরব পিসি  ওদের নিজেদের পিসি নন।জেঠা-কাকাদের কাকার প্রথমা স্ত্রীর মেয়ে।আমার চুয়াত্তর বছরের জানাটা তার জন্য তো মিথ্যে হয়ে গেল না । ওই পিসিই ছিলেন এ-বাড়ির গৃহকর্ত্রী ।জেঠিমা কাকিমা দের আদেশ করতেন ।গোমস্তাজেঠা আচার তথা আচরণে ছিলেন পরম বৈষ্ণব । আর চণ্ডীকাকা চাকরি করতেন এবং রীতিমত ভোজনবিলাসী । আমার হাতের রান্নার একনিষ্ঠ সমর্থক ।গাজু-লালু-ভুলো রা বেশ অনেকটা জুনিয়র ।
হারা দের বোন ঝর্না, যাকে ঝুনি বলে ডাকা হত।ঝর্না র বিয়ে হয়েছে গড়-এ। গাজুদের দিদি কলি  -র বিয়ে খাঁটপুকুরে, দুর্গাপুর লাগোয়া গ্রামে।আর ছোটো বোন আরতির শ্বশুর বাড়ি ভাটপাড়া ।
আমি যখন কবিতালিখিয়ে হিসেবে কিছুটা পরিচিত হচ্ছি তখন  আমার মেজমামা-র ছোটো মেয়ের নামকরণের দায়িত্ব পড়েছিল  আমার  ওপর। আমি ওর নামকরণ করেছিলাম কবিতা ।তখন বা সেই মুহূর্তে কবিতার বিকল্প কোনো শব্দই মনে আসেনি ।এই প্রসঙ্গে কবি তারাপদ রায় তাঁর ছেলের নাম রেখেছিলেন কৃত্তিবাস , কথাটা জানিয়ে রাখলাম । আসলে যাঁরা কৃত্তিবাস -কে একক অভিলাষ মনে করেন তাঁদের ভাবনাটা পরিবর্তন করা জরুরি ।
বাসুদেবপুরে পুজোর সময়ে নাটক হত।নাটকের ড্রপসিন সব কলকাতায় ন-দাদুর বাড়িতে ।প্রতি বছর সেসব নিয়ে  আমরা বাসুদেবপুরে আসতাম।
নাটকের সাজঘর দুর্গামণ্ডপের পেছনে চাটুজ্যেদের জরাজীর্ণ বাড়ির খোলা বারান্দা । ওখানে রং টং মেখে , সাজপোশাক বদলে বেরিয়ে  আসতো নাটকের কুশীলবরা।
ওই নাটকে দর্শকের অভাব হত না ।কারণ তখন বিনোদন বলতে ওই নাটক । অর্থাৎ বিকল্প কোনো বিনোদন   ছিল না । সকলকেই প্রায় বাধ্য হত সেই নাটক দেখতে ।এখন প্রচুর বিকল্প ।ঘরে ঘরে টেলিভিশন ।তার সংখ্যাহীন চ্যানেল । চ্যানেলগুলির আকর্ষণের বিপুল প্রচেষ্টা এবং পরিকল্পনা ।ঘরে বসেই পেয়ে যাচ্ছে বিনোদন । তাহলে আর কষ্ট করে অপেশাদারদের নাটক দেখতে যাবে কে।বাসুদেবপুরের নাটক উঠে গেছে ।

আমার সঙ্গে  আমার সাহিত্যের বন্ধুজনেরা প্রায় সকলেই  এসেছেন বাসুদেবপুরে ।এসেছেন পবিত্রদা, পবিত্র মুখোপাধ্যায়। অমর মিত্র শচীন দাশ তুষার চৌধুরী তো এসেছে, মনে পড়ছে ।শেষ যেবার বাসুদেবপুরে কবিলেখকদের পায়ের ছাপ পড়েছিল, সেই ছাপগুলির  সঙ্গে শৈবাল মিত্র -র পদছাপও ছিল। আমরা যেবার সমস্ত  আয়োজন সঙ্গে নিয়ে দামোদরের কাছে গিয়েছিলাম ।জলযাত্রায় যে জল আমরা ব্যবহার করেছিলাম তা ছিল দামোদরের বালি সরিয়ে চুয়াকেটে বের করা জল।গ্লাসের সংখ্যা কম থাকার জন্য কিছুটা  সমস্যা হয়েছিল , এটা মনে পড়ছে ।তবে যদি হয় সুজন, তেঁতুল পাতায় নয়জন,  এই লোককথাটিকে মান্যতা দিয়ে দুটি  অথবা তিনটি গ্লাসে সাতজনের জলযানে কোনো সমস্যা হয়নি।
সেই সন্ধ্যা এবং রাত্রির যোগসন্ধিক্ষণের স্মৃতি মুছে যাবার নয়। আমি ভুলে যাইনি বোতাম খোলা এবং বোতাম লাগানোর দিনের কথা, রাতের কথা । চুলের সঙ্গে চিরুনির আত্মীয়তার কথা।সকলে মিলে বকুলফুলের মালা গাঁথার কথা।
সেই যোগসন্ধিক্ষণের থেকেই আগামীকাল সন্ধিপুজোয় যাবো।অপেক্ষার আর এক নাম বাঁচতে শেখা ।




৪৭.
এবারে  আমাদের জন্য যে ঘরটি বরাদ্দ হয়েছে সেই ঘটিতে চণ্ডীকাকা থাকতেন ।এবার  আমরা  এর দখলে নিয়েছি। খাটে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে  আবিষ্কার করলাম  এই কামিনীফুলের গাছটিকে।এই গাছটি তো আগে থেকেই  এখানেই ছিল ।তাহলে আবিষ্কার বলতে চাইছি কেন । এটা তো আবিষ্কারই।বাস্তবে ছিল, কিন্তু  আমার মনোযোগের সঙ্গে মিশে যায়নি ।তার অর্থ হল এই সপুষ্প কামিনীফুলের গাছটি সুন্দরের দিকে -র অন্তর্গত হল।
এই গাছটির  অবস্থান ঘোষ দের গোয়াল ঘরের মধ্যে ।কিন্তু  এই জমিটি ছিল  আমার দিদিমার বাবা বিনোদ রায়-এর ।বড়ো দাদু  এই জমিতেই গোয়ালঘর বানিয়ে ছিলেন।দিদিমার মুখে বহুবার  এই কথা শুনেছি ।দিদিমা কথায় কথায় বলতো ----আমি বিনোদ রায়ের বিটি ।

দিদিমার বাপের বাড়ি ছিল  ও-পাড়ায়। বাসুদেবপুর ঢোকার মুখেই ও-পাড়া। আমরা শৈশবে  অনেকটা সময়  ও-পাড়াতেই কাটাতাম । ওদের বাড়ির নাড়ুর স্বাদ  এখনো মনে আছে ।ক্যাবল দাদু ছিল  আমার দিদিমার খুড়তুতো ভাই । ওই বাড়িটিকেও  আমরা  আমাদের বাড়ির মতো জানতাম ।
ক্যাবল দাদুর দুই ছেলে ।নারান বা নারায়ণ আর অমল।নারান ছিল  আমার বন্ধু ।আর নারানের ভাই  অমলকে  আমরা সকলেই গোপাল বলে চিনতাম  এবং ডাকতাম ।আমি মামু নামে ডাকতাম ।
কামিনীফুলের গাছ কিংবা ফুল সূত্রে দিদিমার কথা  এসেছিল ।দিদিমার টানে  ওপরের সব লেখাটাই।আর আমি শুনতে পেলাম দিদিমার ঘুমগান।
অনেক কাল আগে লিখেছিলাম --- দিদিমার ঘুমগানে, দামোদরে, দক্ষিণারঞ্জনে ।
অনেক বছর আজ দামোদরের সঙ্গে দ্যাখা করতে গিয়েছিলাম ভোর ভোর ।গতকাল হাঁটতে হাঁটতে চলে গিয়েছিলাম কুলডাঙার মোড়।যাকে সম্ভবত মর্নিওয়াক বলা হয়ে থাকে ।সেই সকালের হাঁটা  আমাকে নিয়ে গিয়েছিল দামোদরে ।
ছোটো নদী বিলুপ্ত ।ওখানে এখন কৃষিকাজ হয়। আমরা দুপুর বেলায় নুন লংকা নিয়ে কাঁচা আম খেতাম সেখানে ও ধান চাষ। আর বিকেলে যে মাঠে বল পেটাতাম বা ফুটবল খেলতাম, সেখানেও সবুজ ধান ।কিছুদিনের মধ্যেই তোমারই সোনার ধানে ভরে যাবে ।
আমি খুঁজে পেলাম না  আমার শৈশব কে ।আমার কিশোরবেলার চঞ্চলতার সব চিহ্নই কি মুছে গেছে ?
এর কোনো উত্তর  আমার ঝুলিতে নেই ।কিন্তু স্মৃতি -চিত্র ? তা যে আলতামিরার বাইসনের গুহাচিত্র র মতো অমলিন আঁকা আছে । সেই অঙ্কন কেউ মুছে দিতে পারে না ।
একারণে প্রতি বছর পৌঁছে যাই বাসুদেবপুরে । মূলত নিজেকে খোঁজার জন্যই  এখানে  আসা।কিছুটা খুঁজে পাই, কিছুটা পাই না ।যা চলে গ্যাছে, তার সবটুকু ফিরে আসে না ।যতটুকু ফিরে  আসে ততটুকু নিয়েই নিজেকে পূর্ণ করার চেষ্টা করি ।
আজ মহা অষ্টমী। সন্ধিপুজো ।সন্ধিক্ষণের পুজো।বিকেলে শুরু হবে।কাজেই  আজকের লেখাটাকে ভেঙে দু-টুকরো করে,  প্রথম টুকরোটি এখন ই পোস্ট করছি ।




৪৮.
আজ সকালের পোস্ট করার পর অনেক জমা কথা বেরিয়ে আসতে চাইছে ।বিশেষ করে  আজ যাঁরা  অনুপস্থিত, তাঁদের কথা ।
এখন সেইসব  অনুপস্থিতির কিছু কিছু কথা লেখার চেষ্টা করা যাক ।সে তো খুব অল্প কথা নয়।
প্রথমেই জানিয়ে রাখি যাদের হাত ধরে বাসুদেবপুরে আমার প্রথম পদার্পণ, তাঁদের একজনও নেই ।তাঁদের কাজকর্ম শেষ করে চলে গ্যাছেন ভিন্ন এরিনায়। ন দাদু, ন দিদিমা, আমার দাদু বা ফুলদাদু  এবং ফুলদিদিমা,  এমনকি ডাক্তার মামা ও নেই ।আর যাঁদের ভরসায় আসতাম, সেই বড়দাদু, মেজদাদুও  অতীত -চিহ্ন।বড়দাদু থাকতেন দক্ষিণদুয়ারি ঘরে ।যেটা এখন আমাদের দখলে ।তাও পুরোটা নয়।ছোটদাদুর সঙ্গে  আমাদের  আধাআধি ।শর্ত হল যাদের যেবার পালা পরবে তারা পুরোটাই ব্যবহার করতে পারবে।এবার ছোটদাদুর পালা, এবার ওদের ব্যবহারের অধিকার ।ছোটদাদু সপরিবারে বসবাস করতেন হাট কেষ্টনগর। ওই হাটকেষ্টনগরেই আমার জন্ম ।যেবার  কলকাতায় নাকি বোমা ফেলবে  সেই  আশঙ্কায় আমার মাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল তার ডাক্তার কাকার জিম্মায়। জন্মের পর আমার নামকরণ করেছিল ছোটোদিদিমা। খুব ভোরে জন্মানোর কারণে প্রভাত ।
সেই ছোট দাদুদিদিমা কেউ নেই ।
সেজদাদু স্যানিটারি  ইন্সপেক্টর, পোস্টং ছিল খাতড়ায়।সেজদাদু আমাদের ৮৮এ, কালীঘাট রোডের বাড়িতে একবার কোমরে গামছা দিয়ে লেজ বানিয়ে দিয়েছিল।দুদিকে দুটি খাট ।আমি  আর মেজভাই দুজনেই লেজ নিয়ে এ-খাট থেকে অন্য -খাটে ।আবার  অন্য -খাট থেকে এ-খাটে।এই এক পারাপারের খেলা শিখিয়ে দিয়েই নিজে যে কোনপারে চলে গেলেন, ঠিক মতো বুঝে উঠতেই পারলাম না ।
মৃত্যু তখনো খুব স্পষ্ট হয়ে ওঠেনি  আমার কাছে । সেজদাদু যে নেই, এই কথাটা কোনোদিনই বুঝতে দেয়নি সেজদিদিমা ।নিজেই কখনো দাদু আবার পর মুহূর্তেই দিদিমা ।নিজেকে দুই ভাগে ভাগ করার কৌশল রপ্ত করা তখনকার দিনে খুব একটা সহজ ছিল না ।
তখন আমি মাঝে মাঝেই চলে  আসতাম বাসুদেবপুরে ।সেজ দিদিমা নারকেল নাড়ু বানিয়ে রাখতো হরলিস্কের খালি শিশিতে।ইচ্ছা মতো খেতাম ।সেজদিদিমা পাঁপড়ের তরকারি করতো।আমি চেটেপুটে খেতাম ।আমি নিজেকে খুব বড়ো রন্ধনশিল্পী মনে করি ।তার স্বীকৃতিও কম নয়। কিন্তু বলতে দ্বিধা নেই সেজদিদিমার মতো পাঁপড়ের ডালনা  আজও বানাতে পারিনি । তার জন্য  আমার কোনো বেদনা নেই, বরং আনন্দ  আছে ।জয়ের  আনন্দ ।সেজদিদিমার জয় মানে তো আমারই জয়। আমাদের দাদুদের পরিবারের বা প্রজন্মের  একমাত্র সদস্যা গতকাল দুর্গামণ্ডপে গিয়েছিল,  আজ অষ্টমীর  পুজোতেও নিজের হাজিরা দিয়ে  এসেছে, এর থেকে বড়ো ঘটনা  আর কী হতে পারে ।
মেজমামা ছিল বাবার অন্তরঙ্গ বন্ধু । মেজমামা চাকরি সূত্রে কলকাতায় থাকতো।যদু ভট্টাচার্য লেনের একটা মেসবাড়িতে ।কিছুদিন  আমাদের বাড়িতেও থেকেছে।তবে তা ছিল স্বল্প দিনের জন্য ।মেসবাড়িতে তাসের  আড্ডা বসতো।বাবা সেই আড্ডার নিত্য যাত্রী ছিল ।মেজমামা প্রকৃতই সৌখিন ছিলেন ।মেজমামিমা কালনার পাঁচু পান-এর মেয়ে । যথেষ্ট ধনী বাড়ির মেয়ে হয়েও বাসুদেবপুরে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিল। আমি দু-একবার মেজমামিমাকে ভাই দ্বিতীয়ার দিন কালনা নিয়ে গেছি, মনে পড়ছে ।
যেমন ন-দাদুর ছেলে, আমার ডাক্তার মামার স্ত্রী বেলামামিমাকে নিয়ে কাশীপুর -এ সুশীল পালের বাড়িতে নিয়ে যেতে হয়েছে,  আবার ফোঁটার পরে ফেরত আনতে হত।
এসব আমার নিত্য কর্ম ছিল । এজন্যই  আমার পরিবারের পরিধি  আমার কাছে অনেকটাই বেশ বড়ো।
আর কারো এতটা নয়।
ভোঁতাদাদু কে আমার হালকা মনে আছে ।ভোঁতাদাদুরা বর্ধমানের টাউন হল পাড়াতে থাকতো।ভোঁতাদাদুর দুই ছেলে, ভবানীশংকর  আর উমাশংকর।ভবানীশংকর আমার মামু, মামু বলেই ডাকতাম । আমাদের সময়ের সবচেয়ে ডাকসাইটে মানুষ ছিল । উমাশঙ্কর ছিল নানু।আমার বাসুদেবপুরের অন্যতম সঙ্গী ।দেবীমামা, যাকে একদিনের জন্যও মামা বলে ডাকিনি।দেবী-র পরই ছিল নানুর স্থান ।
বর্ধমানের মামুর স্ত্রী মিনতি,  ওকে মামি বলেই ডাকতাম ।গুসকরা র কাছে বেলগাঁতে বাপের বাড়ি । আমি আর দেবী একবার গিয়েছিলাম ।ওখান কার পরিচিত ডাক্তার বাবুর মেয়ে ছিল ওই মামিমা।কালীপুজোর সময় গিয়েছিলাম ।ফকিরপুরে তখন মোষ বলি হত।বড়ো মেলা হত।
আর বর্ধমানের টাউন হল পাড়ার বাড়িতে মাঝে মাঝে বাসি পোলাও আর বাসি মাংস খেয়েছি, এটাও বেশ মনে আছে । আর বিসর্জনের দিন বিকেল হলেই হাজির হতাম মামুদের বাড়ি।সিদ্ধি-র লুচি এবং শরবত ছিল বরাদ্দ । এই আন্তরিকতা খুব একটা  দ্যাখা যাই না ।
সেই মামু এবং মাসিমা আজ কয়েক বছর অনুপস্থিত বাসুদেবপুরের পুজো থেকে ।খুবই ফাঁকা ফাঁকা লাগে ।
সেই শূন্যস্থানকে পূর্ণ করার কোনো ক্ষমতা  আমার নেই ।নিজেকে খুব  অসহায় লাগে ।





৪৯.
গতকাল  বাবার  অনুপস্থিতির কথা লেখা হয়নি। তার অর্থ এই নয় যে বাসুদেবপুরের পুজোর সময়ে বাবা জামাইয়ের মতো গৃহ-কপোতের মতো বসে থাকতো।বরং ছিল ঠিক  উল্টোটা । বাসুদেবপুরের পুজোর মূল ব্যক্তি ছিল  আমার বাবা ।সেটা  অবশ্য দাদুদের আমলে নয়।দাদুরা অতীতকালে চলে যাবার পর বাবা হয়ে গেল ক্যাপ্টেন । পুজোর যাবতীয়কে বাবা আত্মস্থ করে নিয়েছিল শিলামপুরের সিংহবাড়ির দুর্গাপুজো থেকে ।যদিও খুবই শৈশবে বাবা তার মা-কে হারিয়ে ছিল ।কিন্তু বাবা তার মামাবাড়িকে হারাতে দেয়নি।প্রায় নিয়মিত যোগাযোগ ছিল শিলামপুরের সঙ্গে ।বিশেষ করে দুর্গাপুজোতে উপস্থিতি ছিল 100%। অর্থাৎ প্রতিবছর। তাছাড়া বিয়েবাড়িতেও আমরা সপরিবারে শিলামপুরের সিংহবাড়িতে হাজির হয়ে যেতাম ।চিত্ত কাকুর বিয়ের কথা  আমার  এখনো মনে আছে ।মা আমার জন্য ক্রুশ দিয়ে  একটা গেঞ্জি বুনে দিয়েছিল ।আমার খুব পছন্দ হয়েছিল গেঞ্জিটা।বিয়েবাড়িতে পরে গিয়েছিলাম ।রাত্রে শোবার সময় খুলে খাটের স্ট্যান্ডে ঝুলিয়ে রেখেছিলাম ।ঘুম থেকে উঠে গেঞ্জি টা দেখতে পাইনি ।খুবই মন খারাপ হয়েছিল  আর কোনো দিন বিয়েবাড়িতে যাবো না ।
বাবার পূজা-প্রীতি প্রসঙ্গে শিলামপুরে চলে গিয়েছিলাম ।এখন  আবার ফিরে  আসি বাসুদেবপুরের পুজো নির্ঘণ্ট -এ।তার আগে রাখি শিলামপুরের থেকে দামোদরের ওপর দিয়ে হাঁটা লাগালেই বাসুদেবপুর ।আগের বাক্যে জানিয়ে শব্দ টি বাদ পরে গেছে ।তা বাদ যেতেই পারে, কিন্তু সন্ধিপুজোয় প্রদত্ত ১০৮ টি পদ্ম থেকে একটিও কম হতে দিত না বাবা ।ঘোষালদাদুর পাশে বসে পুজোর যাবতীয় দেখভাল করতো নিজের হাতে । আর ছিল ১০৮টি নিখুঁত বেলপাতার  ওপর রক্ত চন্দন দিয়ে শ্রী শ্রীদুর্গা লেখা ।প্রতিটি নিজের হাতে লিখতো বাবা । আমি কয়েক বছর বাবাকে সাহায্য করার জন্য লিখে দিয়েছি দুর্গানাম। এজন্যই কোনো কবি যখন দুর্গা বানানে দূ লেখে, আমি বলি তোমার বাবা -মা কি নিরক্ষর ছিলেন ।
এখন তো কলকাতার  অধিকাংশ সর্বজনীন দুর্গাপুজোতে  ব্যানারে লেখা হয়--- সার্ব্বজনীন দূর্গা পুজা।একটি বাক্যাংশে কতগুলি ভুল ।ভাবা যায় না এই অ-শিক্ষা এবং অজ্ঞতা । এরা বছরের  অন্যান্য দিনগুলোতে  অশ্লীল হিন্দি গানের সঙ্গে তদুপরি অশ্লীল নাচানাচি করে।পুজোর কদিন রবীন্দ্র সংগীত ।ভাবুন কী ক্যামোফ্লেজ। এই পাপ ক্ষমার অযোগ্য ।
হচ্ছিল বাবার সঙ্গে পুজোর ঘনিষ্ঠতার কথা,  আত্মীয়তার কথা। এর পর  অর্থাৎ পুজোর পর প্রসাদ বিতরণ সেটাও হাতছাড়া করতো না।
বাবা পদ্মফুল করতো আমাদের কাদাকুলির রানিসায়র এবং ইঁদভাঙা নামের দুটি পুকুর থেকে ।
এখন  এই ১০৮ পদ্মের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে   আমাদের বড়ো বোন খুকুর বর কান্তি ।প্রতি বছর বিষ্ণুপুর থেকে পদ্মফুল নিয়ে উপস্থিত হয়ে যায় সন্ধিপুজোর  আগেই ।গতকাল ও এসেছিল । এখানে একটা লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো --
দাদুর জামাই ছিল  আমার বাবা ।
বাবার জামাই কান্তি ।
এরমধ্যে কি কোনো ট্রাডিশনের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে ।

আপনারা সেই গন্ধের সন্ধানে যান,  আমি সকালের পর্ব শেষ করি।




৫০.
বাবার কথা সকালের লেখায় শুরু করে ছিলাম ।এখনো অনেক কথা বাকি  আছে।
বাবা বাসুদেবপুরের পুজো কমিটির ব্যাঙ্ক  অ্যাকাউন্ট -এর সিগনেচারিস্ট ছিল । রায়বাড়ির একটা বড়ো  অংশের সমর্থন বাবার ওপর ছিল ।কারণ বাবা ঘোষবাড়ির জামাই হবার  আগেই রায়বাড়ির সঙ্গে যুক্ত ছিল । আগেই বলেছি গোমস্তাজেঠা  এবং চণ্ডীকাকার মা ছিলেন বাবার পিসিমা । কাজেই এখন সে বাড়িটিকে নিজেদের বাড়ি মনে করেছি ।
বাবার বাসুদেবপুরে পুজোতে চলে  আসার পর কাদাকুলির দেখভালের দায়িত্ব নিতাম যূথিকা  এবং আমি । গোরুর দুধের সদ্ব্যবহার করাটাকে বেশি গুরুত্ব দিতাম আমি । উপরন্তু রাজকল্যাণ চেলের সান্নিধ্য ও  আকর্ষণ করতো আমাকে ।

এবার  এমন দুজনের  অনুপস্থিতির কথা লিখতে যাচ্ছি, সেই লেখা যেন আর কাউকে না লিখতে হয়।
বোদে বা হরেকৃষ্ণর শিশুপুত্র অর্ঘ্য মাত্র |৫|৬বছর বয়সে আমাদের সঙ্গে সব রকম সম্পর্ক ছিন্ন করে যেখানে চলে যায় সেখান থেকে ফিরে আসা সম্ভব নয়। ওয়ান ওয়ে সেই পথটিকে  আমরা মৃত্যু নামে চিহ্নিত করে থাকি ।  
অর্ঘ্য -কে আক্রমণ করে জি বি সিনড্রম, পৃথিবীর সবচেয়ে দুরারোগ্য এবং বিরল রোগ।প্রথম দফায় জয় হয়েছিল চিকিৎসা বিজ্ঞানের ।কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের ।রিল্যাপ্স করে  আবার । তার পরিণতি  আমাদের কাছ থেকে  অর্ঘ্য -কে ছিনিয়ে নিল মৃত্যু । এখন বেঁচে থাকলে অর্ঘ্য  অনেকটা বড়ো হয়ে যেত। বাবুর মেয়ে অস্মিতার মতো কোনো ইন্জিনিয়ারিং কলেজে পড়তো।
আর লালুর ছেলে সৌম্য বা অভ্রদীপ চলে গিয়েছিল মাত্র ৭ বছর বয়সে । ওকে কেড়ে নিয়েছিল নিউরো ব্লাস্টোমা । স্পাইনাল কর্ডে মাস ছিল ।নিডল বাওপ্সি করা হয়েছিল ।মুম্বই টাটা মেমোরিয়াল -এ চিকিৎসা চলছিল ।তাও সৌম্য -কে ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। এখন থাকলে  ও আমার  অনেক কাজে পাশে থাকতে পারতো।হয়তো সুন্দরের দিকে আমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যেত।
এই স্মৃতি মনে  না এলে মনটা ভারী হয়ে যেত না ।এতদিন তো মনে আসেনি ।কেন যে এলো?এর কোনো উত্তর নেই । এতে কি লেখাটা সমৃদ্ধ হল?  কী প্রয়োজন ছিল লেখাকে সমৃদ্ধ করার  তার পরিবর্তে  অর্ঘ্য  এবং সৌম্য কে পাশে পেলে অনেক পূর্ণ থাকতাম আমরা ।





৫১.
গত দুদিন সুন্দরের দিকে  যাওয়া হয়নি, তার  অর্থ  এই নয় যে আমি সুন্দর থেকে দূরে সরে গিয়েছিলাম । সুন্দরেই ছিলাম, তবে বাসুদেবপুরের দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনা  এসে যাওয়ার পর আর অন্য বিষয়ে ঢোকার সাধ্য ছিল না  আমার । এতটাই গভীর ক্ষত তৈরি করেছিল  ওই ঘটনা। এই সম্ভাবনার কথা কি আমি  আগেই ঠের পেয়েছিলাম ? এমনটা হতে পারে জেনে বুঝেই আগের দুদিন দুকিস্তি করে লিখেছিলাম  এবং পোস্ট করেছিলাম ।
গতকাল বাসুদেবপুর থেকে ফিরে এসেছি । এখন লেখা শুরু করতে পারবো।তাহলে কি বাসুদেবপুর মুছে গেল স্মৃতি থেকে । তা আবার যায় নাকি ।বাসুদেবপুর থেকে গেছে বাসুদেবপুরেই, আমার অবস্থান সরে এসেছে পটলভাঙার বিছানায়। বাসুদেবপুর যাবার আগে যেখানে যেভাবে লিখতাম, ঠিক সেখানেই শুরু করলাম ৪৯ পর্বের লেখাটি লিখতে ।
একটা লিঙ্ক বোঝাবার জন্য  এই কথা কটি লিখলাম ।বা একে কেউ শব্দ নিয়ে খেলা করলামও ভাবতে পারেন ।

বই- প্রকাশ বা গৌরব প্রকাশনীর কথা  আগেও লিখেছি,  কিন্তু  এখনো লেখা হয়নি  একাল নামক পত্রিকার কথা । একাল ছিল গল্পের পত্রিকা ।প্রকাশের বাঁধাধরা কোনো সময়সীমা নির্ধারিত ছিল না, যদিও ঘোষণার মধ্যে  দ্বিমাসিক কিংবা ত্রৈমাসিক লেখা থাকতো।সম্পাদক ছিল  নকুল মৈত্র এবং ভরত সিংহ। ওদের  আড্ডা ছিল খালপাড়ের  একটা বস্তিঘরে ।আমি ওখানে দু-তিনবার গেছি । বেশ ভালো জলযাত্রার ব্যবস্থা থাকতো।জলযাত্রা বুঝতে  অসুবিধা হলে মদ্যপানের  আসর পড়ে নেবেন, তাহলে  আর কোনো সমস্যা হবে না ।
তো একাল-এর আড্ডায় আমাকে নিয়ে গিয়েছিল গল্পকার কবি কৃষ্ণ মণ্ডল ।কৃষ্ণ তখন RGKar- এর ছাত্র কিংবা  ইনটার্ন।হোস্টেলে থাকতো।শ্যামবাজার মোড়ের কাছে যে কান্ট্রি লিকার শপ ছিল  ওখান থেকেই কেনা হত রশদ। নকুল তখন  যেমন ভালো গল্প লিখতো , ঠিক তেমনই মদ্যপানে সিদ্ধ ছিল । কৃষ্ণ মণ্ডলই প্রথম সন্ধান দিয়েছিল  অমর মিত্র -র। আরো একজনের নামও বলেছিল কৃষ্ণ । তার নাম  এই মুহূর্তে মনে  আসছে না ।কেননা সে  আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি । খালপাড়ে আমার প্রথম  আড্ডায় বা আসরে  অমর মিত্র ছিল কিনা মনে করতে পারছি না । কিন্তু এর ঠিক পরে পরেই  অমর একদিন  এসে হাজির হয়েছিল আমার  অফিসে, রাইটার্স -এর পাঁচ নম্বর ব্লকের তিন তলায় বা সেকেন্ড ফ্লোরে । সঙ্গে  এনেছিল সদ্য লেখা গল্প । গল্পটা  আমাকে শুনিয়েছিল অমর। তারপর ওই দিনই গল্পটা দিয়েছিলাম পরিচয় দপ্তরে বা দীপেনদার হাতে ।দীপেনদার গল্পটি পছন্দ হয় এবং খুব দ্রুত পরিচয়-এ প্রকাশিত হয়। এর আগে  অমরের কোনো গল্প বিশিষ্ট কোনো পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি। কবিপত্র-র গল্প -সংখ্যা এর অনেক পরের ঘটনা ।
এর অর্থ হল অমর মিত্র প্রথম থেকেই ছাপার যোগ্য গল্প লিখতে সক্ষম ছিল । এবং দক্ষতাও ছিল ।
এরপর শচীন দাশও আমাদের কবিপত্রর সঙ্গে জড়িত হয়। শচীনের গল্পও পরিচয়-এ ছাপা শুরু হয়।


এলায়িত কলমের কলাপাতা ছাউনি

(ছবিটি দেখে) আমি একটা কবিতা লেখার চেষ্টা করছি, দেখি কী দাঁড়ালো।

(ছবিটি দেখে) আমি একটা কবিতা লেখার চেষ্টা করছি, দেখি কী দাঁড়ালো।

হালকা সবুজ রঙের পাঞ্জাবি পরলেই যে যাবতীয় সবুজ
হয়ে যাবে, এটা বানান  অভিধানে লেখা নেই
এরজন্য কি ভূ- বিজ্ঞানকোষে যেতে হবে, তাও ঠিকঠাক বুঝতে পারছি না

একটা বিস্ময়চিহ্ন অপেক্ষা করে থাকে

যদি বিস্ফোরণ থেকে নিজেকে বাঁচাতে সক্ষম হই
তখন গণনা করে দেখবো পাঞ্জাবির রং
সবুজের পরিবর্তে কী করা হলে পার্শ্ববর্তী সজনেডালে টিয়া-র
জায়গাতে বসে পড়বে কিংফিশার
এখনো পর্যন্ত তো কোনো পুকুরের কথা লেখাই হয়নি

প্র চৌ □ 23.02.2018□ 09: 15

No comments:

Post a Comment