গল্প (বড়)
BEING PEOPLE
দৃশ্য ১ :
খেলাঘর ময়দান মাঠ , ট্যাংরা , ২৪ শে ডিসেম্বর , ১৯৯২ (সকাল ১১ টা ৪৫)
(ভিন রাজ্যের কোন এক ধর্মস্থল ধ্বংস করা নিয়ে সাম্প্রদায়িক হানাহানিতে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন চরম উত্তাল)
“......বহু প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে এখন আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে চলেছেন আপানদের সবার প্রিয় , মানুষের নেতা , যৌবনের ও যুক্তিবাদীদের নেতা শ্রী দিব্যপ্রকাশ সেন মহাশয়…..”
মাইকে ঘোষণা শেষ হতেই করতালিতে ফেটে পড়ল ময়দানের চারিদিক , সবার মুখে মুখে তখন শুধু দিব্যপ্রকাশ নামের জয়ধ্বনি । আট থেকে আশি সকলেই যেন অধির আগ্রহে তাদের নেতার ভাষণের জন্য অপেক্ষারত ।
স্টেজে উঠে মাইক স্ট্যান্ডের সামনে দাঁড়ালো ছিপছিপে গড়নের সাদা পাঞ্জাবি পায়জামা পরিহিত বছর ত্রিশের এক যুবক , গাল ভর্তি দাড়ি , কালো ফ্রেম ওয়ালা চশমার পিছনে থাকা চোখ দুটোতে এক অদ্ভুত শান্ত অথচ বুদ্ধিদীপ্ত দৃষ্টি ,সুতির শালের মধ্যে থেকে দুহাত বের করে তা জনগনের উঁচু করতেই ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে এল সেই শব্দ গর্জন ।
সভায় উপস্থিত সকলেই তখন তাকিয়ে তাদের নেতার দিকে , প্রিয় নেতার মুখ থেকে তাঁর আহ্বান শোনার জন্য সকলেই যেন উদগ্রীব ।
“ বক্তব্য শুরুর প্রথমেই আমি জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে আমার সমস্ত ভাই বোন ,আমার পিতামাতার সম সম্মান যুক্ত প্রতিটি মানুষকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাতে চাই , যে তারা সাম্প্রদায়িক বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে মানুষে মানুষে ধর্মের নামে ছড়িয়ে পড়া খুন খারাপিকে অনেকটাই প্রতিহত করতে সমর্থ হয়েছে । আসলে আমি ব্যক্তিগতভাবে এই যে আজ আপনাদের সকলের সামনে দাঁড়িয়ে আপনাদের সাধুবাদ জানাতে পারছি তাতে আমি গর্বিত । আপনাদের সকলের তথা আপামর জনসাধারণের মধ্যে নিভন্ত মনুষ্যত্ব টুকু জ্বলে উঠতে না পারলে আজ হয়তো এই লড়াই সফল হতে পারত না ,তবুও যারা মনে করছেন এই সফলতার একমাত্র দাবিদার আমি বা আমার সহকারী লিটন তারা নিঃসন্দেহে ভুল করছেন , আমরা শুধুমাত্র সেই নিভন্ত মনুষ্যত্বের সলতে তে আগুন জ্বেলেছি মাত্র.....
দৃশ্য ২ :
৮ , শ্যামপুকুর লেন , কলকাতা ।
২৩ শে ডিসেম্বর , ১৯৯২ (সময় রাত ১১ টা)
-আমার খুব ভয় করছে দিব্য । তুমি কাল ওখানে যেও না , ওই সুবীর তালুকদার আর জামাল যে তোমার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে সেটা তো তুমি খুব ভালো করেই জানো । আমার কথা নাহয় নাই বা শুনলে অন্তত আমাদের মধ্যে কিছুদিন পর যে একজন নতুন অথিতি আসছে তাঁর কথাটা তো একটু ভেবে দেখ ।
দিব্যর বুকের উপর মাথা রেখে এক নিশ্বাসে এত গুলো কথা বলে গেল সুরঙ্গনা , টেবিল ল্যাম্পের হাল্কা আলো আধারি পরিবেশে ওদের ঘরের পরিবেশটা যেন মায়াবি হয়ে উঠেছে । সুরঙ্গনার মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে আলতো একটা চুমু খেয়ে দিব্য বলল ,
-আচ্ছা সুর , এই যে মন্দির বা মসজিদ ধ্বংস নিয়ে ধর্মের নামকরে এই মিথ্যা প্রচার , মানুষে মানুষে হানাহানি , রক্তক্ষয় , এসব তোমার ভালো লাগছে ?
-কখনোই ভালো লাগছে না , একজন মানুষ হিসাবে কি করে এগুলো মেনে নি বলত ? কীভাবে এই স্বার্থপরায়ণ শয়তান গুলো আড়ালে নিজেদের মধ্যে বন্ধুত্ব বজায় রেখে এই হিংসে গুলো ছড়াচ্ছে ! কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না ! কিন্তু দিব্য আমি এটাও তো চাই না তোমার কোন ক্ষতি হোক...।
-বিগত কয়েকমাসে সারা রাজ্য চষে খেয়েছি সুর , মানুষকে সত্যিটা বোঝানোর জন্য পঞ্চাশের উপর সভা করেছি , শুরু করেছিলাম দুজনে আর ভেবে দেখ এখন লাখ লাখ মানুষ শুধু আমাদের দিকে চেয়ে আছে , গড়ে উঠেছে “Being People” দলটা, এত কিছু করার পর ভয় পেয়ে কিকরে পিছিয়ে আসি বলত ?আর আমার কোন ক্ষতি হবে না , তুমি নিশ্চিন্ত থাকো । আমি জানি ওদের দেওয়া হুমকি গুলো এখনো তোমার মাথায় ঘুরছে , তাই না ?
স্বামী কে আরও একটু শক্ত করে জড়িয়ে নিলো সুরঙ্গনা , বলে উঠলো ,
-প্রতি মুহূর্তে তোমার নিশ্বাসের গন্ধে বেঁচে আছি দিব্য !আর একটু ভেবে দেখো , তোমার কিছু হয়ে গেলে তোমার পিছনে যে মানুষ গুলো আজ আছে তারা ভবিষ্যতে তোমাকে কেউ মনে রাখবে তো ?
-এরকম কিছু হলে মনে রেখ তোমার দিব্য ব্যর্থ হয়েছে । যে মানুষ গুলোকে জীবনের উদ্দেশ্য , মানুষে-মানুষে ভালোবাসার মর্ম , এগিয়ে চলার আদর্শ বুঝিয়ে কিছুটা হলেও আয়ত্তে এনেছি তারাই যদি আমি থাকার বা না থাকার উপর নির্ভর করে নিজেদের চিন্তাভাবনাকে সীমিত রাখে তাহলে হ্যাঁ, আমি ব্যর্থ...
-আমাদের সন্তান দিব্য...
- তুমি এমন ভাবে বলছ যেন আমার সত্যিই কোন ক্ষতি হবে , হাহাহাহাহা , আমার প্রিয়তমা সুর , আমার কিচ্ছু হবে না , আমার নাম যেমন , আমাদের এই প্রচেষ্টার বিকাশ ও ঠিক সেই ভাবেই হবে , ভেব না ...
-হুম , তা তোমার সাগরেদ লিটনের কি খবর , টেলিফোন করেছিলে ?
দৃশ্য ১ এর বাকি অংশ...
“...আসুন আমরা আজ সকলে মিলে সংকল্প করি এই জ্বলন্ত মনুষ্যত্বের প্রদীপকে আমরা কোনদিনও নিভতে দেবো না । কি দেবনা তো ?”
সমস্ত ময়দান জুড়ে একত্রে সবাই মিলে হাততালি দিয়ে তাতে সম্মতি জানালো , এরপর আবার শুরু করলো দিব্যপ্রকাশ ,
“আসলে কি জানেন তো আমরা মনুষ্য জাতি বড় দুর্বল , আসলে আমাদের মন বড় ভিতু । কোথাকার কোন ধর্মগুরু , মৌলবি সাহেব বলে দিলেন হিন্দু বা মুসলমান ভাইবোনেরা একে অপরের শত্রু , আর আমরাও সাথে সাথে তাদের কথায় সারা দিয়ে নেমে পড়ি একে অপরের নিধন করতে ! কখনো জানার চেষ্টা করি না আসল বা প্রকৃত সত্যিটা কি ? সবসময় মনে রাখবেন প্রকৃত যারা ধর্মের কথা বলেন বা এর আগে বলেছেন তাঁরা সকলেই ঈশ্বরের নামে মানুষকেই সেবা করেছেন । সে রামকৃষ্ণ থেকে স্বামী বিবেকানন্দ হোক বা কবির থেকে গুরুনানক হোক , সকলেই মানুষের দুঃখ কষ্ট পার্থিব যন্ত্রণাকে অনুভব করে সেই কষ্টের সমাধানের পথ বাতলেছেন ! স্বয়ং শ্রী রামকৃষ্ণ দেব হিন্দু , মুসলমান ও খ্রিস্টান এই তিন ধর্মের উপাসনা করে এক অমোঘ সত্যি জেনেছিলেন , যে সব ধর্মের সারাংশ একই , ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয় আর তিনি মানুষের মধ্যেই সহাবস্থান করেন । আর আমরা কি করছি এসব কিছু না জেনে নিজেদের কে নিজেরাই হত্যা করছি , আর তাতে ফায়দা লুটে পুটে নিচ্ছে সেই রাজনৈতিক নেতারা । আমি আবারও সকলকে অনুরোধ করছি আসুন আমরা সকলে মিলে বানচাল করে দি এই নোংরা খেলার ছক , গড়ে তুলি এমন এক পৃথিবী যেখানে কোনোদিন কোন মন্দির , মসজিদ বা গির্জা ধ্বংস হবে না , যেখানে কোন মন্দিরে গিয়ে এক মুসলমান বা খ্রিস্টান খুঁজে পাবে তাদের ঈশ্বরকে বা কোন মসজিদে গিয়ে এক হিন্দু খুঁজে নেবে তাঁর ভগবান কে । কি আমরা পারবো তো ?”......
দৃশ্য ২ এর বাকি অংশ :
..... -না করা হয়নি গো । হয়তো মাউথ অর্গান নিয়ে অভ্যাসে ব্যস্ত , হাহাহাহাহা , কালকের সভা নিয়ে সেও মারাত্মক সিরিয়াস বটে ।
-তো কি চলবে কালকের সভায় ? ফিদেলের বক্তব্যের সাথে সিগারের গান ?
হেসে জিজ্ঞেস করে সুরঙ্গনা ।
-আসলে কি জানো , ফিদেল বা পিট নয় , আমাদের মূল উদ্দেশ্য , মানুষের মধ্যেকার এই বর্বর আচরণ টাকে বাস্তবিক সত্য দিয়ে ধ্বংস করে ফেলা আর সেই সত্যের পথ যারা বলেছেন তাদের সকলেই আমাদের আদর্শ ।
-হ্যাঁ তোমার পড়ার ঘরে ঢুকলেই সেটা আঁচ করা যায় বটে ।
আলতো হাত সুরঙ্গনার মাথায় রাখে দিব্য ,
-অনেকদুর এগিয়েছি সুর , হেরে গিয়ে পিছিয়ে আসতে চাই না গো , শুধু ওই ভণ্ডদের মুখোশ সবার সামনে টেনে খুলে দিয়ে আগামি দিনের সমাজকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে বেঁধে দিতে চাই , যাতে আর কোনদিনই ধর্মকে সামনে রেখে মানুষকে কেউ ভুল বোঝাতে না পারে , যাতে আর কোনোদিন কোন গলির প্রান্তে কোন শিশুর ক্ষতবিক্ষত দেহ না পাওয়া যায় ...
দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে জবাব দেয় দিব্য ।
-তুমি পারবে দিব্য , নিশ্চয় পারবে , শুধু এটুকুই চাইবো এই লড়াই তাদের নেতার উপস্থিতিতে পরিণতি পাক । আচ্ছা অনেক রাত হল , এখন ঘুমিয়ে পড় , কাল তো আবার অনেক ধকল ।
-হুম ...
দিব্যর বুকের উপর হাত রেখে ঘুমিয়ে পড়ে সুরঙ্গনা , আর দিব্যর দুচোখে জেগে থাকে তাঁর স্বপ্নের পৃথিবী ।
..... -না করা হয়নি গো । হয়তো মাউথ অর্গান নিয়ে অভ্যাসে ব্যস্ত , হাহাহাহাহা , কালকের সভা নিয়ে সেও মারাত্মক সিরিয়াস বটে ।
-তো কি চলবে কালকের সভায় ? ফিদেলের বক্তব্যের সাথে সিগারের গান ?
হেসে জিজ্ঞেস করে সুরঙ্গনা ।
-আসলে কি জানো , ফিদেল বা পিট নয় , আমাদের মূল উদ্দেশ্য , মানুষের মধ্যেকার এই বর্বর আচরণ টাকে বাস্তবিক সত্য দিয়ে ধ্বংস করে ফেলা আর সেই সত্যের পথ যারা বলেছেন তাদের সকলেই আমাদের আদর্শ ।
-হ্যাঁ তোমার পড়ার ঘরে ঢুকলেই সেটা আঁচ করা যায় বটে ।
আলতো হাত সুরঙ্গনার মাথায় রাখে দিব্য ,
-অনেকদুর এগিয়েছি সুর , হেরে গিয়ে পিছিয়ে আসতে চাই না গো , শুধু ওই ভণ্ডদের মুখোশ সবার সামনে টেনে খুলে দিয়ে আগামি দিনের সমাজকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে বেঁধে দিতে চাই , যাতে আর কোনদিনই ধর্মকে সামনে রেখে মানুষকে কেউ ভুল বোঝাতে না পারে , যাতে আর কোনোদিন কোন গলির প্রান্তে কোন শিশুর ক্ষতবিক্ষত দেহ না পাওয়া যায় ...
দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে জবাব দেয় দিব্য ।
-তুমি পারবে দিব্য , নিশ্চয় পারবে , শুধু এটুকুই চাইবো এই লড়াই তাদের নেতার উপস্থিতিতে পরিণতি পাক । আচ্ছা অনেক রাত হল , এখন ঘুমিয়ে পড় , কাল তো আবার অনেক ধকল ।
-হুম ...
দিব্যর বুকের উপর হাত রেখে ঘুমিয়ে পড়ে সুরঙ্গনা , আর দিব্যর দুচোখে জেগে থাকে তাঁর স্বপ্নের পৃথিবী ।
দৃশ্য ২ এর শেষ অংশ :
“হ্যাঁ দাদা আমরা পারব , আমরা সবাই পারব” হইহই করে বলে উঠলো মঞ্চের আসে পাশে উপস্থিত জনতা ।
গলাটা একটু খাকরে নিয়ে আবার বলে উঠলো দিব্য ,
“আসুন আমরা আজ এই শপথ গ্রহণের পাশাপাশি কিছু কর্মসূচি ঠিক করে ফেলি । আমরা এই এখন থেকে এমন এক ideology র কথা ভাববো যা সাম্প্রদায়িকতার সরাসরি বিরোধী , আর এই ভাবধারা পৃথিবী থেকে স্বর্গের দিকে ওঠে যা কোন কল্পনা থেকে নয় বরং শুরু হয় প্রকৃত সক্রিয় মানুষ থেকে , যে মানুষ স্বাধীন , যে সমাজ স্বাধীন , যেখানে মিথ্যা প্রচারিত ধর্মের কথা বা অধিবিদ্যা নিষ্প্রয়োজন । সক্রিয় মানুষ হতে গেলে প্রথমেই আমাদের ভাবতে হবে কর্মসংস্থান বা শিল্পের বিকাশ । আপামর জনসাধারণের কাছে আমার আহ্বান , এই হানাহানি ভুলে সকলে কর্মের সন্ধানে লেগে পড়ুন , আসুন আমরা এমন এক যুক্তিবাদী সমাজ গড়ি যে সমাজের চিন্তা ভাবনা আদর্শের বিকাশ হোক শৈল্পিক ও সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে , আর এই ধরনের রুচি থেকেই জন্ম নিক একাত্মর সৌন্দর্য উপভোগের দৃষ্টি , তৈরি হোক সংস্কৃতি । সামনের নির্বাচনেই আশা করছি আমরা সেই সব “রাম ভক্ত গুন্ডা” বা “আল্লাহ ভক্ত বর্বর” দের বিনাশ করে এই সমাজের সূচনা করতে পারব । কি পারব তো ?”
সকলের উৎসাহী মিলিত কণ্ঠের সমর্থনে গমগম করে উঠলো সমগ্র ময়দান ।
“আপনাদের মতোই কলকাতা শহরের বিভিন্ন জায়গায় আপামর জনসাধারণ আমাদের এই আহ্বানের অপেক্ষা করে আছেন । তাই আমার এই সংক্ষিপ্ত বক্তব্য এখানেই শেষ করছি লিটনের কণ্ঠে একটি গান দিয়ে । সাধুবাদ জানাই আপনাদের সকলের দৃঢ় মানসিকতাকে ।”
অজস্র হাততালির সমাগমে মঞ্চে উপস্থিত হলেন পাতলা গড়নের , মাথা ভর্তি লম্বা চুলওয়ালা , এক খুব শান্ত অথচ প্রখর দৃষ্টির অধিকারী লিটন , মাইকের সামনে সকলকে অভিনন্দন জানিয়ে মাউথ অর্গান বাজিয়ে শুরু করল সে ,
“আমরা করব জয় ! আমরা করব জয় !
আমরা করব জয় নিশ্চয় !
আহা বুকে গভীর , আছে প্রত্যয় ,
আমরা করব জয় নিশ্চয় !
আমরা করব জয় ! আমরা করব জয় !
আমরা করব জয় নিশ্চয় !
আহা বুকে গভীর , আছে প্রত্যয় ,
আমরা করব জয় নিশ্চয় !...
সকলে মিলে ,
আমাদের নেই ভয় , আমাদের নেই ভয় ,
আমাদের নেই ভয় আজ আর !
আহা বুকে গভীর , আছে প্রত্যয় ,
আমরা করব জয় নিশ্চয় ।
সকলে,
আমরা নই একা , আমরা নই এক...............”
গুলির আওয়াজের প্রচণ্ড এক শব্দে বিচ্ছিন্ন হল মানুষের গান , হই হই শব্দে আর আতঙ্কে মুহূর্তে ভেঙ্গে গেল সভা , কাতর আর্তনাদে পিছনের চেয়ার থেকে মঞ্চে লুটিয়ে পড়ল দিব্যপ্রকাশের শরীর আর তাঁর আদর্শ ।
দৃশ্য ৩ :
২৪ শে ডিসেম্বর , ১৯৯২ (বেলা ১ টা)
দিব্যর অনুপস্থিতে বিছানায় হেলান দিয়ে বই পড়তে বেশ পছন্দ করে সুরঙ্গনা ।
এদিনও তার নড়চড় হয়নি , সুরঙ্গনার হাতে তখন “Economic Manuscript” আর পাশের রেডিওতে বেজে চলেছেন হেমন্ত মুখার্জি । চকিত ভাবে পিছন দিক থেকে মুখ আর নাকের উপর এক অমানুষিক চাপ অনুভব করল সে , পেরে ওঠেনি সেই শক্তির সাথে , শ্বাসরোধ ও কণ্ঠনালীতে প্রচণ্ড চাপ পড়ার ফলে মুখ থেকে উঠে আসা রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারিদিক , নিথর দেহটা পড়ে রইল খাটের উপর , শেষ হল দুটো তাজা প্রাণ ।
দৃশ্য ৪ :
২৪ শে জুন , ১৯৯৩
“নমস্কার , আকাশবাণী ভবন । শুরু করছি খবর পাঠ , প্রথমেই শুনে নেওয়া যাক গুরুত্বপূর্ণ খবর গুলি ! দিব্যপ্রকাশ সেন ও তার পরিবারের নির্মম হত্যার কূলকিনারা এখন করতে পারেনি প্রশাসন তবে বিধানসভা নির্বাচনে তাঁরই আদর্শে তৈরি হওয়া পার্টি Being People পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র বিপুল ভোটে জয়লাভ করে ক্ষমতায় এল যার প্রধান মুখ লিটন সরকার…….”
রেডিওটা বন্ধ করে দিল লিটন । মাথায় দুহাত দিয়ে শরীরটা এলিয়ে দিল আরামকেদারায় । লম্বা চুলটা পিছনে বাঁধা , সামনে রাখা মাউথ অর্গান । সামনের চেয়ারে বসে সুবীর তালুকদার , সমর পাল সহ বিরোধী দলের কয়েকজন নেতা । তাদের মধ্যে একজন বলে উঠলো ,
-আপনার সময় তাহলে আমাদের মুনাফা লোটায় কোন অসুবিধা হবে না তো ?
-কে তৈরি করবে অসুবিধার ?
-যদি আবার কোন দিব্যপ্রকাশ....
তাঁকে থামিয়ে লিটন ফিরে তাকাল পিছন দিকে , দীর্ঘ চেহারার জামাল ঠিক সেখানেই দাঁড়িয়ে !
-শুনছো জামাল এরা কি বলছে ! হাহাহাহা....
হাসির রোলে সারাঘর ভরে উঠলো আর নিশ্বাস ছেড়ে লিটন আবার গান ধরল
“আমরা করব জয়
আমরা করব জয়......
হাহাহাহা ……….”
(সমাপ্ত)
No comments:
Post a Comment