কবিতা (সাধারণ বিভাগ)
আমাদের ছিল উড়াল দেওয়ার মস্ত আকাশ
আমি তোর বিকেল রোদের খেলার সাথী
তুই ছিলি আমার মেয়ে পুতুলের দর্জি
তখনও বোজেনি সব জলা-জমি গুলো
ফ্ল্যাট-বাড়ি ছোঁয়নি ঈশান কোণ
আমাদের ছাদের গোল সিঁড়ি পেরিয়ে দুজনে উঠতাম ছাদের উপর ছাদে,
আম্মার আচারের বোয়ামের দিকে আমার বরাবরের লোভ
তোর আবার এসব ভালো লাগত না মোটে
তুই চেয়ে শুধু দেখতি কোন ঘুড়িটা কাটল,কোন ঘুড়িটাই বা আটকাল আম গাছে
মান্জা দেওয়া তোর রঙিন ঘুড়ির সুতোয়
লাটাই ধরতে গিয়ে একবার আমার আঙুলটাই গেল কেটে
তোর চোখ দেখে বুঝেছিলাম,আমি যত না কেঁদেছি তার চেয়ে অনেক বেশি ব্যথা পেয়েছিস তুই,তবু একফোঁটা জল ছিল না তোর চোখে
দওদের বাগান পেরিয়ে সেই যে বিরাট ঝিল,দুজনে সাঁতরে হতাম এপার-ওপার
মেঘেদের ছায়া পড়ত জলে
আমি দেখে বলতাম, 'দেখ দাদাভাই বাদলও স্নান করে ঝিলে',
আমার প্রতি চেয়ে ব্যঙ্গের হাসি থাকত তোর ঠোঁটে
এমনি করেই কত গোধূলিবেলা মাঠের পর মাঠ
কুমিরডাঙা,কানামাছি,আব্বুলিশ ধুলোবালি মেখে ফিরতাম ঘর
রাত্রিবেলা ছাদের গেটে তালা দেওয়া ছিল মায়ের শাস্তি স্বরূপ
পেতি তুই,বড় ছিলি যে,আমি মজা পেতাম খুব
তবুও সেই কাজে সঙ্গী ছিলাম তোর
ভয় পেতাম,পাছে যদি আমার দাদাভাইকে ভূতে ধরে নিয়ে যায়
জৈষ্ঠের প্রত্যেকটা দুপুর আমরা কাটাতাম
চিলেকোঠায়
তুই কষতি অঙ্ক, "আবোল তাবোল" থাকত আমার কল্পনায়
বাবার আনা লিচুর খোসা ছাড়িয়ে ফলটা খেয়ে বীজটা ফেলতাম উওরের বাগানে
কি আনন্দ আমাদের..!! নতুন গাছ হবে যে.!
তোর আমাকে ইচ্ছাকৃত মার, আমার অনিচ্ছাকৃত কান্না
তবুও যেন চরম শান্তি খুঁজে পেতাম সেই আঘাতে
.
আজ আমার জীবনের বাইশ বছর পেরোলো,তোর সাতাশ
তুই বরাবরই মনের ভাব প্রকাশে ব্যর্থ
আমিও তোর বোন ব্যাতিক্রম নই
তাই হয়তো,আমাদের মাঝের ভুল বোঝাবুঝিটা চিরকালীন হয়েই রইল
.
.
সবসময় প্রেমিক-প্রেমিকা নয় চিড় ধরে
দাদা-বোনের সম্পর্কেও
অনিশা সেন |
No comments:
Post a Comment