এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

কেয়া রায়



সিনেমা রিভিউ




(প্রথমেই বলে রাখছি যে, আমি কোনও দক্ষ সিনেমা বিশ্লেষণকারী নই। এক ভদ্রস্থ গোছের সিনেমাপ্রেমী।)

# ময়ূরাক্ষী

আজ আমি যে "ময়ূরাক্ষী"র কথা লিখতে বসলাম, তা নি:সন্দেহে কোনও নদী নয়। তবে সে বোধ করি এমন রহস্যময়ী নারী যার অস্তিত্ব কখনও প্রত্যক্ষ, তো কখনও পরোক্ষ। অতনু ঘোষ পরিচালিত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় অভিনীত এই সিনেমাখানি গতকাল দেখে এলুম গ্যাঁটের কড়ি খরচা করেই। নি:সন্দেহে প্রমাণিত হল আবারও যে, আমি টাকাগুলো জলে দিয়ে আসিনি। তার কারণ হিসেবে যদি এক এক করে বলতে শুরু করি তবে পাতার পর পাতা লিখেও শেষ করা যাবে না। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, প্রসেনজিৎ, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, গার্গী রায় চৌধুরী, ইন্দ্রাণী হালদার - এদের অভিনয় দক্ষতার কথা নাই বা বললুম (আমার মতো তুচ্ছ অধমকে তা শোভা পায় না)। আর বাকি রইল সঙ্গীত পরিচালক দেবজ্যোতি মিশ্রের অনবদ্য ব্যাকগ্রাউণ্ড মিউজিক, সংলাপ, দৃশ্যপট, স্থান নির্বাচন - প্রত্যেকটি এককথায় অসাধারণ।

      এবারে আসি মূল কাহিনীতে। আজকের বর্তমান আধুনিক সমাজে দাঁড়িয়ে আমরা উন্নতির চূড়ায় ওঠার দৌড়ে একটা সময় পর আমাদের মা-বাবার হাতটা একরকম বাধ্য হয়েই ছেড়ে দেই নিজের অজান্তেই। তারপর কি হয় জানেন কি?? কি আবার হয়, বুড়ো বটগাছটা বয়সের ভারে জরাজীর্ণ হয়েও সন্তানকে কাছে পাওয়ার অপেক্ষায় প্রহর গোনে। আর আপনিও সময়ের সাথে সাথে নিজের সন্তানের কাছ থেকে একটু একটু করে দূরে সরতে থাকেন। কিন্তু তাই বলে কি বাবা ও ছেলের মধ্যেকার টান ঠুনকো হয়ে যায়?? না, তা সম্ভব নয় কখনোই। যাই হোক, এখানে যে ছেলে ছোটবেলা থেকেই সম্পর্কের বোঝাপড়াগুলো মানিয়ে চলতে জানে, তারই পরপর দু-দু'টো বিয়ে টেকেনি। আজ সেই ছেলে একাকীত্বকে সঙ্গী করেই নিজেকে নিয়ে অনেকগুলো সংসারের খরচ চালাচ্ছে। চাইলেও আর সেখান থেকে বেরনো সম্ভব নয়। দেখানো হয়েছে কিভাবে বার্ধক্যজনিত স্নায়ুরোগে আক্রান্ত বাবার মুখে যখন প্রতিনিয়ত ২৫ বছর আগের স্মৃতির কথা শুনে ছেলে তাঁকে সুস্থ করার তাগিদে যথাসাধ্য চেষ্টা করে এবং শেষে সেই অতীতকে এক কঠোর মিথ্যের জলে ভাসিয়ে দেয়। আর আবেগপ্রবণ বাঙালীদের জন্যে বলছি, শেষ দৃশ্য দুটো দেখার সময় মনটাকে শক্ত করতে চাইলেও বোধ করি পারবেন না। এমন একটি বাস্তব বিষয়বস্তুকে এত সুন্দরভাবে অবলীলায় তুলে ধরার জন্যে সিনেমার সাথে যুক্ত প্রতিটি সদস্যকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আর হ্যাঁ, আমাকে যদি বলা হয় ১০ এ কত দেব, তবে বলব চোখ বন্ধ করে ৯.৫ দেওয়া যায়....আমার মতে, এই ধরণের অর্থপূর্ণ সিনেমা সকলের অন্তত একবার হলেও দেখা উচিত।





মুক্তগদ‍্য


#এক_ঝলক

উফ, এই কদিনে কিন্তু প্রচুর ধকল গেল আমাদের ওপর দিয়ে। যাই বলুন হবে নাই বা কেন !! একের পর এক স্বাধীনতা দিবস, মাতৃদিবস, পিতৃদিবস, নারীদিবস, পুরুষদিবস, শিশুদিবস ইত্যাদি ইত্যাদি আরও কত দিবস পালন নিয়ে আমরা ব্যস্ত ছিলাম। তাই এককথায় বলা যায় এসব উৎসব পালনের পর আমরা এখন একেবারে শ্রান্ত-ক্লান্ত-বিধ্বস্ত। এরপর তো "ভ্যালেন্টাইন'স ডে" এর সাথে সাথে আরও দিবস আসতে চলেছে আমাদের ক্যালেণ্ডারে। সত্যি বলতে কি আমাদের চারপাশের সকলের মধ্যে যে এত সুন্দর অনুভূতি বিদ্যমান তা হয়তো জানতেও পারতাম না এই দিবসগুলো না এলে। সবটাই অবশ্য ঐ ভার্চুয়াল জগতের কৃপায় সম্ভবপর হয়েছে। তা যাক, সেসব কথা। যাই হোক, দিবস পালন শেষে এবারে চলুন এক ঝলকে দেখে নেই আমাদের সেই রোজকার মার্কামারা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলোর লিস্টি যা আদতে আমরা কখনোই পরিবর্তন করার চেষ্টাটুকুও হয়তো করি না। হ্যাঁ, অবশ্য ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত সর্বক্ষেত্রেই থাকে কিন্তু তা দিয়ে কি আর সমাজ-সংসার চলে মশাই ??

         এই যেমন ধরুন, আবার প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যে খবরের চ্যানেলে বা সংবাদপত্রে দেখবেন শিশু থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত সকলেই ধর্ষিত হচ্ছে কিছু হিংস্র অমানুষের দ্বারা। অমনি পায়ের ওপর পা তুলে মন্তব্য শুরু করবেন, "কি দরকার ছিল অমন খোলামেলা পোশাক পড়ার?? অত রাতে বাইরে বেরনোর কোন দরকার ছিল শুনি?? ছেলে বন্ধুদের সাথে এত ঢলাঢলি করলে তো এসব হবেই??"... আবার এসবে হস্তক্ষেপ করলে আর একদল সাথে সাথেই বলবেন, "মেয়েদের স্বাধীনতার দরকার নেই বুঝি?? সবসময় অনুমতি নিতে হবেই বা কেন??"... আচ্ছা যে ছেলেটা বা লোকটা এই ঘৃণ্যতম কাজটি করল, তারও চরিত্র গঠনের সময় মা-বাবারা কোথায় ছিলেন??

            আজকাল মা-বাবারা উভয়েই চাকুরিরত হোন বা না হোন, নিজের ছেলে-মেয়েরা না চাইতেও অঢেল জিনিসপত্র দিয়ে তাদের সন্তুষ্ট করে তুলতে চাইছেন যেন তেন প্রকারেণ কিংবা অপত্যস্নেহে অন্ধ হয়ে শাসন পর্যন্ত করেন না। ফলত কিছু বছর পর ছেলে-মেয়েরা বেপরোয়া-অবাধ্য-উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠে নিজের বাবা-মায়ের ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রম করে দেয়। অথচ তখন কিন্তু আপনারাই তা মেনে নিতে পারেন না।

        এছাড়াও দেখুন, ভীড় বাসে-ট্রেনে যখন কোনও বৃদ্ধা বা প্রেগন্যান্ট মহিলা ওঠেন তখন খুব সহজেই একজন পুরুষ তার সীট ছেড়ে দেন। অথচ মহিলা সীটের সামনে যদি ভুল করেও কোনও বয়স্ক বা প্রতিবন্ধী লোক গিয়ে দাঁড়ান তখন কিন্তু কোনও মহিলাকে সীট ছাড়তে দেখি না আমরা। উল্টে মহিলাদের সীটে কোনও বাচ্চা ছেলেকে বসতে দেখলেই কেউ না কেউ ঠিক উঠিয়েই দেন অথবা সামনে দাঁড়ানো মা'কে বলেন "নিজের বাচ্চাকে কোলে নিয়েই তো বসতে পারেন।".. আর যদি সেখানে কোনও হিজড়া বা প্রস্টিটিউট এসে দাঁড়ায় কোথাও যাওয়ার উদ্দেশ্যে, তাহলে তো আর কথাই নেই।

        সারাবছর গরীব মানুষদের কিংবা বস্তিতে বড়ো হওয়া বা অনাথ শিশুগুলোকে নিয়ে বিশেষ দিবস গুলোতে মাতামাতি করলেও আদতে সারাবছর রাস্তাঘাটে ওদের জন্যে আমাদের কাছ থেকে প্রাপ্য বলতে বাজে ব্যবহার ও সাহায্যের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া। সত্যিই, অত সময় কোথায় আমাদের বলুন তো !! এতে তো আর আমাদের স্বার্থ চরিতার্থ হওয়া সম্ভব নয়। আমাদের উদ্দেশ্যই যে শুধুমাত্র বছরের নির্দিষ্ট কটা দিনে দেখানোর জন্যে কিছু কাজ করে সেলিব্রিটি হওয়া।

           আর 'স্বাধীনতা' নিয়ে তো আমাদের আবার হেব্বি মাথাব্যথা। তার ওপর যদি হয় বাক-স্বাধীনতার ব্যাপার, তাহলে তো আর কথাই নেই। যে করেই হোক আমাদের কোনও মিথ্যেকে সত্যি হিসেবে বলতে দিতেই হবে। হ্যাঁ তাই বলে ভাববেন না যেন, সত্যি কথা সক্কলের সামনে বলে দেবেন ইচ্ছেমতো। যদিও আমরা চোখ বুজে থাকারই পাব্লিক। কিন্তু যদিও বা প্রতিবাদী হতে মন চায় তাহলে চাইলেও আজকাল পারবেন না। নইলে আমাদের অবস্থাও শেষে ঐ সাংবাদিক 'গৌরী লঙ্কেশ' এর মতোই হবে। তাই চাপ নেওয়ার কি দরকার বলুন দেখি?? আমাদের পরিবারের সাথে তো আর খারাপ কিছু এখনও হয়নি, তাই নিশ্চিন্তে নাকে তেল দিয়ে ঘুমোতেই পারি।

         যথারীতি কেউ ভালো কিছু করলে আমাদের গায়ে ফোসকা পড়বে, প্রতিবাদ করলে ভোগান্তি জুটবে, খারাপ কোনওকিছু হতে দেখেও চোখ-কান-নাক বন্ধ করে থাকব, কাউকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেব না, গরীব-প্রতিবন্ধী-পাগল-হিজড়া-বেশ্যা-সমকামী এই জাতীয় মানুষদের দেখলে প্রকাশ্যে কিংবা পশ্চাতে হাসব, কাছের মানুষগুলোর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করব সুযোগ পেলেই, আমার থেকে অল্প শিক্ষায় শিক্ষিতদের পাত্তা দেব না ইত্যাদি আরও কত কি !! সবশেষে আবার একটি উৎসব ন্যায় দিবসের জন্যে হাপিত্যেশ করে বসে থাকব....।।


কেয়া রায়
লেখক পরিচিতি :
আমি কেয়া রায়। আমার জন্ম বাংলার ২৫শে বৈশাখ। পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলা আমার জন্মস্থান। আশুতোষ কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করি ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর। লেখালেখির জগতে স্থায়ীভাবে পা রেখেছি ২০১৬ সালে। বেশ কিছু ম্যাগাজিনে আমার লেখা গল্প-কবিতা বেরিয়েছে এখনও পর্যন্ত। প্রথম একক প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : "আড়চোখে প্রাক্তন", এছাড়াও "অমোঘ আকর্ষণ" (কাব্যগ্রন্থ), "টানাপোড়েন" (গল্পগ্রন্থ) প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি। যৌথভাবে প্রকাশিত গল্পগ্রন্থগুলো হল : "আনন্দধারা গল্প সংকলন", "অনুভবে অনুভূতি"। আশা করি, এভাবে আপনাদের সকলকে পাশে পেয়ে আরও বহুদূর এগিয়ে যেতে পারব সুদূর ভবিষ্যতে।


No comments:

Post a Comment