এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

কাজল দাস



কবিতা (সাধারণ বিভাগ)




একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে

তারপর!
ফুল না ফুটলে আমায় যেন ব'লো না_
বসন্তে রক্তের ছোঁয়া ছিল,
মাটিতে লাশের গন্ধ,  আগুনে আগুন ছিল বাংলায়।
মরা ফুল ঝরে গেলে
ব‍্যতিব‍্যস্ত বাতাসে তাঁর অস্তিত্ব হাতিয়ে নিয়ে-
ব'লো না ফিরিয়ে দিয়ে যাও, হে মানুষ!
কারণ তোমার বা তোমাদের তা শোভা পায়না।

অস্তের কোলাহল থেমে গেলে, দায়িত্ব বুঝি এড়িয়ে যাবে?
একটি মুখের হাসি- ধরে রাখার জন্যে
এক সাগর রক্ত ধুয়েছে তোমার পা,
তুমি ভুলতে ভুলতে সব ভুলেছো জানি।
শ্রমিকের- কৃষকের- সমাজের ছবি
গোবিন্দ হালদার আর রক্তের রঙই শুধু জানে।

বার বার আসা যাওয়ার বুকে
আরশোলা রঙের ক্ষত দেখতে দেখতে,
দেখি কোনো বসন্তই আজ আর নিশ্চিত নয়।
তাই শিকড়ে পুরনো আঁশটে গন্ধ খুঁজি,
আর অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ- এর ওপরে
সমাধীস্ত হই পত্রিবার, প্রতিবারই-
"একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি,
নতুন একটি কবিতা লিখতে অস্ত্র ধরি।"



মাতৃভাষা

ঐ পাখিটির ভাষা ছিল কথা বলার,
পাখিটির ভাষা ছিল ভালবাসার.
এ দেশ থেকে ওদেশ ঘুরতে ঘুরতে,
নরম জোছনায় উড়তে উড়তে-
কখনো আমার দেশ,কখনো তোমার দেশ.
কখনো আবার ডানা মেলে অন্য  কারো দেশ.
একটাই ভাষা তার নিজের আপনার.
সকলেই বোঝে যেন সব কথা তার.

সকালের পৃথিবী শোনে কান পেতে প্রভাতির সুর.
আর বিকেলের গোধূলী শোনে  কাকলির রব সুমধুর.

ভাবি! এমন মধুর ভাষা সে কোন খানে পেল?
যে ভাষায় সব কথা হার মেনে গেলো.
আমাদের ভাষা কম,তাই কম কথা বলি,
এর ভাষা ওর ভাষা ধার করে চলি.
আপন মাতৃভাষায় কথা বলা দায়,
বুঝি অন্যের ভাষা-বিনে নেইকো উপায়.

তবে কি মিছে ছিলো শহীদের দান!
এতোটা রক্ত ক্ষয় এতো অপমান.
যে ভাষার বিপ্লব ইতিহাস গড়ে,
সে কি আজ পড়ে রবে শুধু অনাদরে.
আপনার ভাষা ভুলে অপরের ভাষায়-
কথা বলি, গান গাই, ভীনদেশী আশায়.

পাখিটাই বোঝে শুধু আপনার সুরে,
মায়ের মুখের ভাষা গান হয়ে ঝরে.
তার কাছে আমি তাই মাথা নত করি,
তার নামে লিখে যাই-
                      একুশে ফেব্রুয়ারী.

                         


যারা মিছিলে হেঁটে ছিল

একটি মানুষের পেছনে, ছিল-
নিষ্পাপ চেতনার ভিড়।
উদ্ধত হাত আর প্রতিবাদের গান,
দেখতে দেখতে রাজপথ লাল হয়ে গেল,
অনতি দূরে জলে উঠেছে ধানের গোলা।
এখন রঙটা খয়েড়ি,
তারপর ঠিক দেখা গেল না।
ভাবলাম যুদ্ধ বুঝি শেষ,
শ্মশানে বাজার বসেছে, আর-
কবরস্থানে বসতি,  শিকড়ে রক্ত পেয়ে ফুটেছে রক্ত গোলাপ,
যায়গায় যায়গায় শহীদ বেদী।
ব‍্যস্ত শহরে কাকবর্ণ বেদী গুলো
মাঝে মাঝে বাঁচতে চেয়ে ঝলসে ওঠে।
বোধহয় যুদ্ধ এবার শেষ,
যুদ্ধ এবার........

তার কয়েক শতক পর,
তুমি বলবে- এতো আগুন কিসের?
আমি বলবো- স্বাধীনতার।
তুমি বলবে- দরজাটা খুলে দাও,
রাস্তার মোড়ে তুমি কে,
বলবো- আমি নেই, এখনো যুদ্ধ থামেনি জেনো।
এবার তোমার পালা,
বড় কঠিন সময়!
শক্ত হও!

"পথে এবার নামো সাথী পথে হবে এ পথ চেনা"


কাজল দাস

সমাজের কথা সাধারণ মানুষের কথা লিখি,

অন্ধকার কেটে যাওয়ার আশায় লিখি, লিখি আবৃত্তি যোগ‍্য কবিতা।
প্রকাশিত বই "বোবা সংলাপ", অঙ্কুর সাহিত্য সন্মান, কাব্যভারতী, কাব‍্যশ্রী উপাধি পেয়েছি।


No comments:

Post a Comment