বুক রিভিউ
বই : ধুলোবালির লেখা
লেখক : সায়ান্ন্যা দাশদত্ত
প্রচ্ছদ : সেঁজুতি বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রকাশনা : ধানসিড়ি ( সৌজন্য )
মূল্য : ১০০/-
'ধুলোবালি লেখা ' কেন পড়বো ? কি অাছে এতে??
তাহলে উত্তরটা হবে : শুনুন মশাই দেহের যেমন বয়স হয়! তার যেমন শরীরে কাঁটা ছেড়ার দাগ থাকে, দেহের যেমন মৃত্যু হয়, ঠিক তেমনই মনের কোণে লুকিয়ে থাকে তার কষ্ট ,চাহিদা, আশা, আকাঙ্ক্ষা, খিদে, রূপ, রস, গন্ধ------যাদের বয়স বাড়ে না কেবল তাদের রঙ হলদেটে সবুজ বর্ণ হয়।
কবি যেখানে বলছেন : এই দু কলম লিখব বলে যেইমাত্র ঢুকে পড়েছি পাতায়... এই নদী... ওই দোকান... ঘুরপথ!
চারফর্মার বইটি কে প্রকাশক দুটো পর্বে ভাগ করেছেন । ব্যক্তিগত তৃণ আর বক্তিগত মনোক্রম।
ব্যক্তিগত তৃণ তে দেখতে পাই 'আমি' অর্থাৎ কবি সত্ত্বার মনস্তত্ত্বের বিশ্লেষণ খানিকটা এলোমেলো 'আমি' কে পাঠকের কাছে তুলে ধরার প্রয়াস।
যেমন : তৃণ নং ১৭ : জীবাত্মার খোলশ ফেলে রেখে পাঠকের তখন সূক্ষ্মগামী শরীর। অসমাপ্ত গল্পগুলি শূন্যযুগে ঐশ্বরিক কলম প্রাপ্ত হবে সেইটুকুই একা এবং কেবলমাত্র খোয়াইশ!
আবার
তৃণনং ২৩ : এই ধুলোবালি জীবন। এই বিরহপূর্ণ জীবন। এই জরা নির্ভর জীবন সহস্রজন্মে ভালোবাসায় পরিতৃপ্ত হোক।
তবে পাঠকের চোখ দিয়ে দেখলে দ্বিতীয় ভাগ মানে ব্যক্তিগত মনোক্রম আমার মন কে ছুঁয়ে গেছে। মা কে উৎসর্গ করা লেখায় যে এত উপাদান এত সহজ সরল ভাষায় ভালোবাসা, হাসি, কান্না, সুখ ,দুঃখের কথা বলা যেতে পারে তা 'ধুলোবালির লেখায় ' সায়ান্ন্যা দাশ দত্ত বুঝিয়ে দিয়েছেন।
মনোক্রম নং ১৪ : অসুখের বদলে একবার রোদ হবে মা ? আমি বেশ পিঠ লাগিয়ে বসতাম।
মনোক্রম নং ১৯ : মাঝেমধ্যে বিক্রি হতে ইচ্ছে করে খুব। বিক্রি হবে বৃক্ক। বিক্রি হবে হৃদয় অথবা চোখ। বিক্রি হবে রেচন থলির বিষ। তোমার জন্য বিক্রি হলে বলো; লোকে আমায় মন্দ বলবে মা?
কবি আবার নিজের লেখার প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই নিজেই একটি মনমতো গদ্য তুলে ধরেছেন ।
মনোক্রম নং ৪৪ : আমার ইচ্ছে করে পাতার পর পাতা জুড়ে কেবল 'মা' শব্দ লিখি। পাতার পর পাতা জুড়ে কেবল 'কান্না ' লিখে রাখি। অথবা পাতার পর পাতা ভরতি করে লিখে রাখি 'ভালোবাসি জেনো'!
সে সব লেখার বই হবে না কোনদিন ।পাঠকও না। তবুও লিখব... কারণ তোমায় কিছু বলার ছিল মা।
এই রকম টুকরো টুকরো স্মৃতিকথা, সাময়িক মুহূর্তেরা কল্পনা ও বাস্তবের মিশেলে মুক্তগদ্যের আকারে ধরা দিয়েছে কবির কলমে।
কবিকে ধন্যবাদ জানাই তার এই নতুন ধরণের প্রয়াস কে আমাদের সামনে তুলে ধরার জন্য।
আমার যে কারণে বইটিকে ভালো লেগেছে তা হলো বইটির প্রচ্ছদ অসাধারণ। বইয়ের ভিতরের চিত্রন সেগুলিও খুব ভালো। আর ভালো লেগেছে বানান সম্পর্কে সম্পাদক মহাশয়ের যত্নশীল রুচি এবং বইটির পৃষ্ঠা গুলি। যা আমাকে সবচেয়ে বেশী আকর্ষণ করেছে।
কবির কাছে একটা অনুরোধ আরোও চাই এই ধরণের মুক্তগদ্য। যাতে লেখা থাকবে প্রান্তিক মানুষদের কথা, নিত্য যাপন।
কবিতা (সাধারণ বিভাগ)
অভ্যাস
অপেক্ষার প্রতিটি রাত
আরো গভীর প্রতীক্ষার রাতে মেশে
কিছু চেনা গল্পের অভ্যেস
নিকোটিনের গন্ধ খুঁজে চলে
নৈঃশব্দের দুপুর কিম্বা রাতে
তোর উপস্থিতি চেনা ডিওর সাথে
হুইল চেয়ারে বসা দীর্ঘ সময়
তোর আসার পথ চেয়েই যে কাটে
এভাবেই অনেকটা পথ ফেলে এসেছি
হাত বাড়ালেই বন্ধু হয় জানি !
বিশ্বাস অবিশ্বাসের যুক্তি তর্ক ভেঙে
গোলাপ বিহীন অশরীরী প্রেমিকও বেঁচে থাকতে জানে
সিলভিয়া ঘোষ |
সুখী গৃহকোণের কেয়ারটেকারের গণ্ডীছাড়াও লেখালেখিতে কিছুটা ছাপ ফেলতে চাওয়াই জীবনের উদ্দেশ্য।
No comments:
Post a Comment