এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

ছড়াক্কা তরঙ্গ (নির্বাচিত সংকলন)


প্রচ্ছদ : বাসুদেব মন্ডল


সংকলক : শাল‍্যদানী

ছড়াক্কা।
আমার চোখে নতুন পর্ব। তার উপরে সেই ছড়াক্কা নিয়ে নাকি সংকলন করতে হবে। আমার পত্রিকা বিভাগের সম্পাদক জ্যোতির্ময় আমাকে প্রস্তাবটা দেয়। মাননীয় কবি সতীশ বিশ্বাস মহাশয় সাহস ও সাহায্য করেছেন।

সংকলন কেমন করে করতে হয়, কি করতে হয় জানি না। তার উপরে যাদের লেখা পেলাম, তাদের দেখে আমি অবাক। যাইহোক যে কাজেরধারা তরঙ্গ শুরু করছে তাতে নতুন যোগ এই ছড়াক্কা তরঙ্গ।

পাঠক গ্রহন করলে ধন্য হব।

*শাল্যদানী*

*****

ভূমিকা : সতীশ বিশ্বাস

দু-এক কথা
ভালবাসায় কী না হয়? ভালোবাসা পেলে দুর্বলও সবল হয়ে ওঠার চেষ্টা করে। ১৯৯৫ এর ২৭ মে, প্রথম যেদিন ছড়াক্কা পথচলা শুরু করে, সেদিন সে ছিল একা, দুর্বল। ধীরে ধীরে,ভালোবেসে তার পাশে এসে দাঁড়ালেন জেলার ছড়াকার বন্ধুরা। ফোল্ডার থেকে ছড়াক্কা পত্রিকা হয়ে উঠল। বিভিন্ন বিশিষ্ট কবির হাতে ছড়াক্কা পৌঁছতেই তাঁরা ছড়াক্কা লিখতে শুরু করলেন। এই সময়ের প্রায় সব যশস্বী কবিরা ছড়াক্কা লিখতে শুরু করার জন্যেই বোধহয়, ছড়াক্কাকে মিডিয়া কিঞ্চিৎ গুরুত্ব দিতে শুরু করে। ফেসবুকে ছড়াক্কার একটি গ্রুপ খুলতেই প্রচুর লিখিয়ে বন্ধু এসে সদস্য হলেন এবং ছড়াক্কা লেখার চর্চা শুরু করলেন। ওপারের বন্ধুরাও এগিয়ে এসে তাঁদের ছড়ার প্রতি ভালোবাসা উপুড় করে ঢেলে দিলেন। তাতে এই চর্চার মধ্যে একটা চঞ্চলতা সৃষ্টি হল।


এই চঞ্চলতায় আকৃষ্ট হয়েই সম্ভবত, হাসিমুখে এসে ছড়াক্কার হাতে হাত মেলালেন ‘এখন তরঙ্গ ’ সংস্থার তিন সাহিত্যপ্রেমী ও উদ্যোমী যুবক। এই ছড়াক্কা-চর্চাকে আরো শক্তিশালী ও বেগবান করে তোলার উদ্দেশ্যেই তাঁদের এই সংকলন,‘ছড়াক্কা তরঙ্গ’ প্রকাশ।

তাঁদের এই সংকলন-প্রকাশ আশাকরি,বাংলা ভাষার ঝিমিয়ে পড়া ছড়াসাহিত্যেকে কিছুটা হলেও উজ্জীবিত করে তুলবে।
(১৭ জানুয়ারি’১৮)

সতীশ বিশ্বাস

একটুকু বাসা
৬/৫ ডিরোজিও পথ
দুর্গাপুর-৭১৩২১৬
পশ্চিম বর্ধমান
পশ্চিমবঙ্গ
ভারত
চলভাষঃ৯৪৭৪৫৫৭১৩৫


******



নবনীতা দেব সেন

এক

ধরে গেছে আলোতে আঁধারে
মরণ বাঁচন
দড়ির নাচন
চড়ক মেলা
পেরেক খেলা
উই ছেয়ে গেছে আকাশে পাথারে


দুই

নতুন বছরে নতুন রিদয়
দীর্ণ জীর্ণ
কীটে আকীর্ণ
নেই কিছু নেই
সামনে পিছনে
নতুন বছরে রিদয় নিদয়

নবনীতা দেবসেন

*****

যশোধরা রায় চৌধুরী

হিমেল হাওয়ার ইমেল লিখে সেন্ড টিপে শেষটা
জমাট বাঁধা ইনবক্সে বরফ ভরার চেষ্টা
বিপিন বাবু ঘোচাতে চান
ক্লেশটা মা রয়েছেন দেশে
বিপিন তো ইউ-এস-এ
কম্পু বিকল বরফ জলে! ঘুচল না মা-র তেষ্টা

যশোধরা রায় চৌধুরী

******

মন্দাক্রান্তা সেন

১.
আজ আর চিঠি নয়,মোবাইল কানে
কেউ করে ফিসফিস
কারও গলা চড়া
সে কথাটি ‘চিঠি দিস’
শেষ হল পড়া
চিঠিগুলো কাঁদে আজ বুকে অভিমানে

২.

বৃষ্টি হয়েছে শেষ আকাশের তোরণে
জেগেছে শিল্পকলা
যা বেনিয়াসহকলা
ঘরমুখো পাখি
বলে যায় ডাকি--
আমার উড়ান আর রামধনু তোরও নে!


মন্দ্রাক্রান্তা সেন

******



মৃণালকান্তি দাশ

'দিয়েছ আতপ চাল'- রেগে যান বৃদ্ধ ।
হেসে বলে সনাতন,
'নিয়ে গেল কতজন !
তা ধরুন দশ মন ।
পড়েন নি ব্যাকরণ ?
স্বভাবে আতপ ঠিক, নিপাতনে সিদ্ধ ।'

******

প্রণবকুমার মুখোপাধ্যায়


আজকের জামানায় আমাদের ঠাঁই নেই।
একে কম মাইনে
তায় ডি-এ পাইনে
হিসেবে কত যে ফাঁক
প্রতি মাসে হতবাক
গোলমাল,গরমিল বাঁয়ে আর ডাইনে।

*******

শ্যামলকান্তি দাশ


এক

কেউ পড়ছেন মহাভারত কেউ-বা রামায়ণ
কেউ পড়ছেন ছাতার মাথা
জগন্নাথের খেয়ালখাতা
কে পড়ছেন হোমার-টোমার
সে-সব জেনে লাভ কী তোমার?
বাৎস্যায়নের ‘কামসূত্র’ পড়ে পাশের জন।



দুই


ঝিংকুমাসির মেয়ে পাঞ্চালী সেন
মেয়েটির কত গুণ
নাচে গানে নিদারুণ
তৃষাতুর দুটি আঁখি
দিবানিশি ডাকাডাকি
পথিমাঝে একা পেয়ে ঠোঁট চুমিলেন।



তিন



হাসতে গেলাম বসিরহাটে, ভাসতে গেলাম টাকি
নাইতে গেলাম বেলেপুকুর
এখান থেকে পাঁচ কিমি দূর
গাইতে গেলাম চম্পাহাটি
সুর এলো না,আসর মাটি
পদ্যে লেখা গল্পগাছার সমস্তটাই ফাঁকি।


চার

বাড়ি আনিলাম রাক্ষসটারে—এনে রাখিলাম লুকায়ে।
অতি সাবধানে আলমারি খুলি
দেখি তার গায়ে আভরণগুলি
দেখিতে দেখিতে লংকানগরে
সাড়া পড়ে যায় প্রতি ঘরে ঘরে
একদিন তারে বাহির করিয়া সিগারেট দিনু ফুঁকায়ে।

******

মতি মুখোপাধ্যায়

গরিবের দেশ তবু,গাড়ি ছোটে হরদম
নেতাদের রাজনীতি
সাপে ব্যাঙে সমপ্রীতি
আখের গোছাতে ঘোঁট
ভোট এলে মহাজোট
পার্টি-তহবিলে চাঁদা,খায় লুচি আলুরদম।

*****

ঈশিতা ভাদুড়ী

নোটের চোট ধুত্তেরি ছাই,হচ্ছেটা কী? পুড়ছে কাগজ
পাঁচশো হাজার নোটের পাহাড়।
কীসের ক্ষতি তোমার আমার?
কীসের সাদা কীসের কালো?
আলোয় মাখা সবই ভালো?
একেক জনের একেক রকম চলছে মগজ।

******

রাণা চট্টোপাধ্যায়

এক

ভেতোগন তেতো খাও,দেঁতো হাসি হেসো না
নিম ফুলে মধু হলে
চেখে দেখো কুতূহলে
শর্করা আছে ভেবে
পস্তালে দোষ দেবে?
অকারণ কাকে বলো একটুও ফেঁসো না


দুই

অমাবস্যায় কাতলামারি পূর্ণিমাতে পাতলাখাওয়া
উঠতে পারো ইচ্ছে হলে
কোচবিহারের বনাঞ্চলে
গন্ডার না চিতাবাঘ
কার উপরে করবে রাগ
বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা ,গন্ডার হলে ধাওয়া

******

শঙ্খশুভ্র পাত্র

স্পোকেন ইংলিশ

ইংরেজিতে কথা বলতে চান খূড়া
বর্ধমানকে বার্ডোয়ান;
একটা পাখি বার্ড ওয়ান,
বাঁকুড়াকে বানকুড়া।


গাঁয়ের ছবি

বাগান জুড়ে আম-জাম-বট-অশ্বত্থ...
পাখির ডাক
সুর-বাহারি
মাথা দোলায়
তাল-সুপারি
গাঁয়ের ছবি হয় কখনও অসত্য।

******

বিকাশ গায়েন

আশা

টাকাটারই আজ খুব দরকার হায়রে
হাতে ছিল পাঁচশো ও হাজারের
কিছু নোট দাম নেই বাজারে
ভুলে গেলে চলবে না হাসতে
দেরি নেই ভাল দিন আসতে
কোথা পাই এ টি এম খোলা-- বল ভাইরে।

ভরসা

এবার আমি পে টি এম—এ যাব
অনেক হল রেজগি গোনা
ছিঁড়ল জামার পকেট সোনা
হাত থেকে যায় কেবল পড়ে
লাগত ঝোলা রাখতে ধরে
বোতাম টিপেই চপ ফুলুরি খাবো

সাদাকালো

কয়লাই জানি কালো হত,ভাই,এখন যে শুনি টাকা রে
কমোডে কাবার্ডে তোশকে বালিশে
ছিল রে যা-কিছু নিমেষে খালি সে
কিছু গেল জলে,কিছু হল ছাই
জনে জনে ধন কত বা বিলাই
কী করে বোঝাই কত কষ্ট যে সাদাসিধে বেঁচে থাকারে।



খরচ

বোকা লোক অতশত ছাই কিছু জানি
শুনলাম কাল থেকে
নগদের দিন যাবে
খুচরোর হ্যাপা নেই
যা যা চাও তাই পাবে
কাগজের টাকা হবে প্লাস্টিক মানি


******


মৃণাল বসু চৌধুরী

ভাবছি

ভাবছি এবার কোন কিছুই ভাববো না
তোমরা যারা মেখেছ শীত
বিপরীতেই খুঁজেছ হিত
মধুমাসের চাঁদকে নিয়ে
পালাতে চাও খিড়কি দিয়ে
তাদের জান্য নতুন কোন কাব্য না।

কেন যে

একটা ছেলে দাঁড়িয়ে ছিল একটা ছেলে ছুটছে
একটা মেয়ে ছাদের কোণে
দাঁড়িয়েছিল আপন মনে
মেঘ পেরিয়ে স্বপনগুলো
হয়তো কারো শরীর ছুঁলো
কেউ জানে না অস্থিরতায় কেন যে ফুল ফুটছে


বন্ধুরা

ভুলে গেছে শকুণেরা ভুলে গেছে শেয়ালে
একা একা পড়ে আছি
এমন কি মশা মাছি
আশেপাশে কেউ নেই
চলে গেছে সকলেই
বন্ধুরা মজে আছে খুশি আর খেয়ালে।


সুর

আকাশ জুড়ে স্বর্গমাতাল সুর
কোথায় তুমি
দুঃখে গাঁথো মালা
কিংবা সাজাও
সুরের বরণডালা
বোঝার আগেই ভাসলো হৃদয়পুর 


******


চৈতালী চট্টোপাধ্যায়


মিথ্যে-ছড়া

তুমি কি জন্মে গেছ,তুমি ঠিক জানো সেই লজ্জার কথা?

নুনের হাঁড়িতে চেপে

ভাসতে ভাসতে ,

আলো ও অন্ধকার

ছাড়াতে ছাড়াতে,

আবার স্ত্রী-অঙ্গ পেলে,আবার কান্নার কথকতা



বিরহের মতো

ঘর ও বারান্দা পার হয়ে গেল চলে
আমি রোজ রোজ

সুখ দুঃখের খোঁজ

খুঁটে নিচ্ছি

ডানাও লাগাচ্ছি

ওর কাছে উড়ে যাব বলে...



জটিলতা

কিছুটা স্বপ্ন,কিছুটা গল্পে গড়া এই বাস্তবতা।
ব্যাকড্রপের মতো সূর্যমন্দির,আর,

বাদুড়ের মতো অন্ধকার-

সামনে আলোর ফেনা-

নেশা ধরে...নেশা ধরে

যৌন-অযোনিসম্ভব,বাদ্য ও গীতময় মুদ্রা,জটিলতা।



বসন্ত বিলাপ

বসন্তবাতাসে আহা বসন্তবাতাসে
রক্তধরা বোনের ওড়না

তোমার হাসি বাঁধে

আমার দিদির ছেঁড়া যৌবন

পলাশ হয়ে কাঁদে

বসন্তবাতাসে হায় রে শেষের নিশ্বাসে



বিরহ নামের মনকেমনগুলি

নববর্ষের গান ছিল স্মৃতির নানা তান ছিল
গানের ডগায় ফুল ছিল

ফুল দোলে আর সুর তোলে

হৃদয় নামের অঞ্চলে

চৈত্রশেষের বীজতলা-

মনকেমনের মন ছিল বিরহরাগ ভাঁজছিল

চৈতালী চট্টোপাধ্যায়
পরিচিতিঃ
বিষয় পদার্থবিদ্যা হলেও বিষয়ান্তর সাহিত্য।মূলত কবিতায় বসবাস।কিন্তু,কোলকাতার সব বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রে,একের পর এক লিখে চলেছেন উত্তরসম্পাদকীয় নিবন্ধ,ফিচার আর্টিকল কিংবা রবিবাসরীয়র পাতায় গল্প।এছাড়া বিদেশি কিংবা প্রতিবেশী সাহিত্য থেকে অনুবাদ করেছেন।ছোটদের জন্য অজস্র গল্প লিখেছেন।এখনও রর্যন্ত প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ১৮টি।এ বাদে দে'জ থেকে প্কাশ পেয়েছে শ্রেষ্ঠ কবিতা,তার পুনর্বর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণও ইতোমধ্যে প্রকাশ পেয়ে গেছে।বই প্রকাশ পেয়েছে আনন্দ,সিগনেট,সপ্তর্ষি,প্রতিভাস ইত্যাদি প্রকাশনা থেকে।গল্পের বই প্রকাশ পেয়েছে দে'জ থেকে।ছোটদের জন্য লেখা গল্পবই প্রকাশ পেয়েছে প্রতিক্ষণ থেকে,যেটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী পুরস্কার পেয়ে গেছে। পেয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের উদয়ভারতী জাতীয় পুরস্কার,মীরাবাঈ,শক্তি চট্টোপাধ্যায়,বিষ্ণু দে পুরস্কার ও শারদ সম্মাননা।প্রসারভারতী কর্তৃক জাতীয় কবি নির্বাচিত হয়েছেন।খুব শীঘ্রই প্রকাশ পেতে চলেছে ওঁর কবিতাসংগ্রহ।সাংস্কৃতিক আমন্ত্রণে কখনও সাহিত্য আকাদেমি,কখনও-বা ন্যাশনাল বুকট্রাস্ট,কিংবা অন্যান্য আমন্ত্রণ পেয়ে গোয়া থেকে আগরতলা পর্যন্ত ভ্রমণ করেছেন।একাধিকবার বাংলাদেশে আমন্ত্রিত হয়ে গেছেন।ভালোবাসেন সঙ্গীত,ভ্রমণ,বন্ধুতা।

*******

অরুনিমা রায় চৌধুরী


রাঙামাটির বিদেশঘরে

শুকনো হেসে বাবা বলেন ,পূজোর ছুটি ক’মাস পরে।
আমরা আবার সবাই মিলেই,
আসব ছুটে এই বাড়িতেই,
তোমরাও সব তৈরি থেকো
সঙ্গে নিয়েই যাব, দেখো;
একসাথে ফের থাকব সবাই রাঙামাটির দেশের ঘরে।


ঢাকার বাড়ি

ঢাকায় আমার ঠাকুরদাদার মস্ত ছিল বড়ি
জন্ম আমার সেই বাড়িতেই
সে দিনটিকে ঠিক মনে নেই
নেহাৎ ছোট, তখন আমার
মনে থাকার কথা কি আর?
বড় হয়ে জেনেছিলাম-- পাড়ার নাম উয়াড়ি।

প্রথম জন্মদিন

আঁধার আঁধার বৈশাখী ভোর জাগেনি কাক পক্ষী।
ঠিক সে সময় মায়ের কোলে
হঠাৎ আমি এলেম চলে,
ঠামির কাছেই শুনেছিলাম,
"কান্না শুইন্যাই ছুইট্যা আইলাম,
চেঁচাইয়া কই , শঙ্খ বাজা,ঘরে আইলেন লক্ষ্মী’!

খেলাঘর

আমার ছিল সাত পিসিমা, কাকু ছিলেন দুজন।
সবার সঙ্গে হাসি খেলা
কেটে যেত সারাবেলা,
মা'র বকুনি,কান্নাকাটি,
খেলাঘর আর রান্নাবাটি,
এমনি করেই কাটিয়ে দিতাম ছোট্ট ভাই আর দু’বোন।


******

তৃষ্ণা বসাক

এক

জুড়াল আমার জুড়াল হৃদয় জুড়াল
ছিলএতদিন
বর্ষণহীন
এখন শরীর
ডানায় পরীর
ক্লান্ত যাত্রা হঠাৎ কখন ফুরাল!

দুই

আমি বললাম,বলে ফেললাম শেষমেষ
তুমি ভাবছ
আরো নাবছ
চিন্তার কূপ
জল টুপটুপ
আরো অপেক্ষা,গাঢ় অপেক্ষা? বেশ,বেশ!

তিন
কালকে নাহয় ঘুরে এসো তুমি বাজারে
চালে ডালে আজ
করছি তোয়াজ
সঙ্গে আচার
জিভে আনে তার
নতুন আমরা পুরনো পাঁচশো হাজারে।

চার
কথা কম নয়, বেশি বেশি কথা বলো
চারদিকে বড়
চুপচাপ জড়ো
ঠান্ডা পেয়ালা
ঢেকে রাখে জ্বালা
আগুন জ্বালাও,সে আগুনে নিজে গলো।

পাঁচ
ভয়,বড় ভয় চেনা চেনা মুখ দেখে
ওরা সব জানে
ভুল ছিল দানে
চাপা ফিসফাস
এও সন্ত্রাস!
বলতে পারবে ছুরি মেরে গেল কে? কে?

ছয়
ছোঁয়াচে আগুন, তাই তো তোমাকে ছুঁই।
যদি জ্বলে ওঠো,
টগবগ ফোটো
যদি গান হও
যদি জোরে বও
যদি ভেঙে দাও এক যোগ এক দুই।

সাত
কালকে কী হবে কাল পরশুর চিন্তা
আজকে তো বাঁচি
আরো কাছাকাছি
গালে গালে ছুঁয়ে
পাশাপাশি শুয়ে
ভালবাসাবাসি হোক আজকের দিনটা।

আট

তুমি যাই করো কেউ খতিয়ান রাখছে।
গাছের আড়ালে
আন্তর্জালে
পর্দার পারে
আলোয় আঁধারে
তোমার পেছনে কেউ একজন থাকছে।

তৃষ্ণা বসাক

*********

রানা জামান


আসতি যদি জানতি

হিমেল সন্ধ্যা নয় তো মন্দা হৃদয় পায় যে শান্তি
পেজা তূলা উড়ে ঐ কুয়াশা

একটু খানি নামে শীত

সবার মনে নতুন একটু আশা

গড়ে তুলে দৃঢ় ভিত

শ্যামল গাঁয়ে মৃদু পায়ে আসতি যদি জানতি।

কিচ্ছু লাগবে না যদি

অতি শীতে গোসল জমে জলটা থাকলে উষ্ণ
খালি গায়ে রোদটা নিয়ে

গা-টা ডলে খাঁটি ঘিয়ে

উঠবস হলে কয়েক জোড়া

সাহস পায় যে পায়ের গোড়া

কিচ্ছু লাগবে না যদি প্রিয়া দেয় তাপ কবোষ্ণ।

সস্তা তেলে উল্টো ফল

তেল দিয়েছি উপরে যেতে বেশ
ভাগ্যে শিকে ছিড়লো না

নৌকা ঘাটে ভিড়লো না

সস্তা তেলে উল্টো ফল

উল্টে গেলো ঘটির জল

সাজা পেয়ে উঠছে মাথার কেশ!

ভাবনাগুলো ছত্রবন্দি

ভাবনাগুলি ছত্রবন্দি হয়ে গদ্য পদ্য
দিনে দিনে বাড়ে কলেবরে

ছত্রে ছত্রে দোলে ছন্দ

মলাটবন্দি করে শেষে নেবো

নতুন বই-এর পাতার গন্ধ

পাঠকপ্রিয় হবে যদি সৃষ্টি অনবদ্য।


রানা জামান

******

অর্পিতা বন্দ্যোপাধ্যায়


ঘরে বাইরে

ঘরে আমার মন টেকেনা কী করি বল ভাইরে
মন ছুটে যায় বাহির পানে
অসীম আকাশ আমায় টানে
খোলা মাঠের পাগল হাওয়া
তুচ্ছ করে সকল চাওয়া
ঘরের ভিতর  ঘর করি আর বসত করি বাইরে ।


ক্ষুদ্র বৃহৎ

বিরাট সাগর বলে ঝর্নাকে একটুকু তুই শুধরো
সমস্তক্ষণ ক্ষীণ চিক্কন
জলরাশি নিয়ে তোর এ চলন
আমার মতন হয়ে যা বিশাল
ঝর্ণাটি বলে হেসে ক্ষণকাল
তৃষ্ণা মেটাতে আমাকেই লাগে যত হই ভাই ক্ষুদ্র ।

টানাপোড়েন

জীবনে তো আছেরে ভাই হরেকরকম টানাপোড়েন
জন্ম মৃত্যু দিয়ে গড়া
সত্য এবং মিথ্যে ভরা
জীবনের এই হিসেবখানি
তুমিও জানো আমিও জানি
যোগ বিয়োগের শেষে সবাই শূন্য হাতে শূন্য জোড়েন ।

কান্না হাসি

কান্নাকাটি খুব জুড়েছেন টিপুর ছোটমাসি
বরের বাড়ি ফর্সা সবাই
তিনিই শুধু কালো
হোথায় গেলে থাকবে কি মান?
বলবে কি কেউ ভাল?
যেই দেখলেন ননদ কালো অমনি মুখে হাসি।

অর্পিতা বন্দ্যোপাধ্যায়
বারাসাত নিবাসি। কবিতা ও গল্প দুটিতেই স্বচ্ছন্দ বিচরণ। বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন ও বাণিজ্যিক পত্র পত্রিকায় নিয়মিত লেখা প্রকাশিত হচ্ছে।
প্রকাশিত গল্প গ্রন্থের নাম ___ পারুলফুলের গন্ধ ।
গানবাজনার চর্চা প্রিয় বিষয়।

*******

দেবাশিস মুখোপাধ্যায়


১.

ছড়া লেখে রাম বাবু ভাদু বাবু শোনে 

মাথা নাড়ে বেশ বেশ 

উড়ে যায় পাকা কেশ 

রাম বলে থাম থাম

এখনও মেলা কাম

ছড়া ছড়াতে হবে বুড়ো শিশু মনে

২.

দাদু বলে চাঁদু রে নিয়ে আয় ছাতাখান 

কানে শুধু ঝরঝর 

মেঘ ডাকে গরগর 

পড়ে শুধু ঝমঝম 

কিছু বেশি কিছু কম

দাদু বলে তবুও মরা দেশে ক্ষ্যাপা বান



৩ .

ঝরে যায় ঝরে যায় যতো জলধারা 
বান এসেছে শ্রাবণে 
কারো বাড়ি যাবো নে
হয়ে আছি জলবন্দী 
নেই কাজ কিসে মন দি
কড়া পাকে ছড়া লিখি শোনে সারা পাড়া

৪ 

হাসি চাই হাসি চাই মুখে চোখে বাহারে 

দেঁতো হাসি কেঠো হাসি 

হাসি হোক ফাটা কাঁসি 

প্রাণ খুলে মন খুলে 

হাসি হোক দুলে দুলে 

চাপা হাসি দেখে যেন সব বলে আহা রে !



৫..

পলিথিন শোলাতে নালা গেল আটকে 
বিটকেল কি মাইক
হর্ণে ছি লরি বাইক 
কলেও ধোঁয়া কালো 
জঞ্জালে থমকালো 
বোমাবাজি করে কারা সোজা গেল ফাটকে

দেবাশিস মুখোপাধ্যায়

কবি দেবাশিস মুখোপাধ্যায় এর জন্ম কুলটিতে এবং বর্তমান তিনি হাওড়ার বাগনানে বাস করেন।তার কবি জীবন শিশুকাল থেকে । কলকাতার ইন্দ্রাণী পত্রিকায় যখন কবিতা প্রকাশ হয় তখন কবি দশম শ্রেণি 1983. এরপর প্রথম কবিতার বই 1997ক" কবিতার একখন্ড মুখ" । এরপর কর্মসূত্রে বাগনানে এবং দ্বিতীয় কবিতার বই "আজকাল পরশুর গল্প ", এরপর এখন বাংলা কবিতার কাগজ প্রকাশ করে " শূন্য কিন্তু শূন্য নয় " , পত্রলেখা থেকে " ভূমিকা প্রেমের কবিতার " , কবিতা ক্যাম্পাস থেকে " বিষন্ন রেখার পারে " এবং সুতরাং থেকে " ভেনাস বিউটি পার্লার " এবং নতুন পাতার গন্ধ " ।

কবি কবিতায় বাঁচতে চান


********

সুপ্রকাশ আচার্য্য



শীতের বিকেল ডাকে "বই পড়, বই পড়"

বইমেলা মেলা বই

আড্ডা ও হইচই,

বই ছোঁয়া শিহরন

ভরে যায় প্রানমন,

কেনা কাটা কম, তবে ঘাঁটাঘাঁটি বিস্তর




খোঁপায় পলাশফুল, মহূলিয়া গরবে

ঝর্নার কলহাসে
বন জ্যোৎস্নায় ভেসে
ছৌ ঝুমুরের সুর
পাড়ি দেয় বহুদূর
অযোধ্যা পাহাড়ের ফুলফোটা পরবে।

নিঃঝুম নির্জন আঁধারের অভিসার
দীপ দীপ জোনাকির ভীরু মন
মিটিমিটি তারাদের কম্পন,
অরন্য পাহাড়ের দোলাচল
উচাটন নদীটিও চঞ্চল,
তুমি কি গো বনলতা নিশি প্রীয়া বিদিশার।

ছড়া আর ছন্দের ভাবঘরে ওম্ দে
ছন্দ তুলিতে আঁকা
ছড়ারা মেলুক পাখা,
স্বপ্নিল কল্লোল
প্রানে যেন দেয় দোল
ছোটদের হাত ধরে ছড়া গড়া শিখে নে।

সুপ্রকাশ আচার্য্য
পরিচিতি:  প্রাক্তন সহ সচিব
শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তর
এখন পুরুলিয়া শহরের রেনী রোডে থাকি।
পৈতৃক বাড়ী, পাড়া,পুরুলিয়া জেলার একটি গ্রাম।


*********

কপোতাক্ষী ব্রহ্মচারী (চক্রবর্তী)



ছড়াক্কা লিখতেই ভরে যায় খাতা,

যা মগজে আসে তাই,

মন খুলে লিখে যাই,

নিয়ম মাথায় রেখে,

হাত চলে এঁকেবেঁকে

কী ভাবছ? যা লিখি তা সবই ছাতা-মাথা?


ছড়াক্কা ভেবে দিন কেটে যায় বেশ!

কিছু লিখি, কিছু পড়ি,

সময় কি মানে ঘড়ি?

সম্পাদকের কড়া-

হুকুম হয়েছে ছড়া

নয়, হবে ছড়াক্কা,তাই করি পেশ!


যা ভাবি তা কিছু লিখি, কিছু রাখি মাথাতে,

ভুলে যাই কিছু পরে,

মগজ ধোলাই করে,

আবার নবোদ্যমে,

যা কিছু ভাবনা জমে,

তুলে রাখি যথারীতি, ছড়াক্কা পাতাতে!


অনেক হয়েছে, আর নয়, এইবারে-

যা লিখেছি দিনেরাতে,

সম্পাদকের হাতে,

তুলে দিলে তবে ছুটি

তাতে খাই লুটোপুটি,

যে পারেনা পারেনা যে, পারে সেই পারে!

কপোতাক্ষী ব্রহ্মচারী (চক্রবর্তী)
জন্মস্থান- শিলচর, আসাম
বাবা- কবি শক্তিপদ ব্রহ্মচারী
মা- বেলা ব্রহ্মচারী
পড়াশোনা- এম.এ (ইংলিশ)
গানবাজনা- নিপুণ(ক্লাসিকাল ও নজরুলগীতি)
বর্তমান নিবাস- কলকাতা

******

শ‍্যামশ্রী রায় কর্মকার


মন

আমার যেসব ভাবনা আছে গহীন মনের কোণে
কাকেই বলি
কমল কলি
আলুক শালুক
আপন তালুক
সহজ তো নয় বিলিয়ে দেয়া পরস্ব পর জনে

দেখেছি সে রাতে

ইছামতী চরে তাকে দেখেছি সে রাতে
মায়াবী আঙুল তার
মরে আসা জোছনার
শোকে অবনত চোখ
আভূমি ও অপলক
কপালে চুলের গোছা  সরাল দুহাতে।

নদী

চলেছ সবুজ নীল বেলোয়ারি ঢঙে
ছন্দিত গতিপথে
এঁকেবেঁকে কোনমতে
চলার ছলাৎছল
গেঁথে নিল প্রতিপল
শ্রবণ আমার এই জলবতী রঙে।


অবলার ফুল

কিশোরী গাছের ডালে এক দুখী ফুল
ডেকেছে বারংবার
আমি কার আমি কার
পাতকুড়ানির মেয়ে
অবলা সবার চেয়ে
মনঢালা ভালবেসে বাড়াল আঙুল।


হাওয়ার টানে

তিনটি মেয়ে প্রদীপ হাতে যাচ্ছিল একরাতে
ঠমক ঠমক হাওয়ায়
দুলছিল কার দাওয়ায়
সুর ঝরানো কলাবতী
অতি মৃদু মন্দগতি
তেলের প্রদীপ জবাব দিল বায়ুর ছন্দাঘাতে।


শীতের দিনে

দেদার পড়ার ছুটি জানুয়ারি মাসে
পাড়াময় হইচই
ব্যাট কই বল কই
কি ছেলে কি মাস্টার
মাঠে সব একাকার
মিঠেকড়া রোদ মেখে ইশকুল হাসে।


শপথ

একদিন মুছে দেব পৃথিবীর সুকরুণ চোখ
মৃত্যু ধূসর দিন
অক্ষর ক্ষমাহীন
মানুষের আদি ভাষা
ঘৃণা নয় ভালবাসা
শিখে যাবে দুনিয়ার প্রত্যেক শিশু ও বালক। 


শ‍্যামশ্রী রায় কর্মকার
ইংরাজি সাহিত্যে এবং শিক্ষাবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর, শ্যামশ্রী রায় কর্মকার পেশা হিসাবে শিক্ষকতাকে বেছে নিয়েছেন। কবিতা লেখার পাশাপাশি গল্প এবং প্রবন্ধেও তাঁর সমান রুচি।ছড়া ও ছড়াক্কা রচনা তাঁর অন্যতম নেশা।প্রকাশিত বইঃ 'বব ডিলান,অন্তহীন যাত্রা'। বইমেলা ২০১৮ তে প্রকাশিত হচ্ছে তাঁর নতুন বই 'বিটলসঃ বদলের তালে তালে'।


******

দিশারী মুখোপাধ্যায়


১)

আপনি কেবল দেশপ্রেমিক আপনি অদ্বিতীয় 

বাকি যত লোক আমরা সবাই 

করজোড়ে সব জানাবো বধাই 

আপনি মহান আপনি উজির 

ইতিহাসে নেই এমন নজীর 

আপনিই দেশ আপনিই প্রভু আপনি সম্মানীয় 


২)
এ বসুন্ধরা ছিল একদিন ধনধানেফুলে ভরা 
চোর ও ডাকাত খুনি ধর্ষক মিলে 
ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেল তাকেই শকুন ও চিলে 
সকল দেশের সেরা যে দেশটি ছিল 
তার সম্মান কৌরব কুলে নিল 
এখন সেদেশে পথেঘাটে শুধু ছড়িয়ে ছিটিয়ে মরা 

৩)
মেরুদণ্ডে ছিল কিছুটা সহন 
প্রেমের চক্ষু উঠল রেঙে 
লাঠির ঘায়ে দিলেন ভেঙে 
কোমর ভেঙে এখন উবু 
শীতগ্রীষ্মে জবুথুবু 
বাকি রয়েছে কেবল ঘাটের দহন 

৪)
বইমেলা বইখেলা বড় বেশি বাড়াবাড়ি 
বইতো ধর্ম নয় কাগজের বস্তা 
বই নিয়ে হুল্লোড় বড় দুরবস্থা 
বই বড় বেমানান বস্তু 
ভোটেও সে নয় শুভমস্তু 
বইখেলা ছেলেখেলা গুটাও তো পাততাড়ি 


****

মমতা দাস

(১)

বিকাশ সামন্ত দেখি বিকশিত দন্ত
আমি ভাবি এইরে
মতলব কি করে
নিশ্চয় মনে তার
শয়তানি অনন্ত
তাই তো চেহারা তার আজ ভরভরন্ত

(২)

মরিচীকা



কোথা গেছে বোঝাবুঝি টন টন !

দুনিয়া একি দেখি,

মায়াবৎ মিলালো কি ?

স্বপ্ন রোজ হারায়

মরীচিকা ফিকে হয়

বিশ্বাস গেলে হাতে লন্ঠন

(৩)

তুমি-আমি  কিছু নয় ,রাজনীতি সব

কাজ করা

ছেড়ে দিয়ে

বসে থাকি

পা ছড়িয়ে

সরকার না করলে করি কলরব



(৪)

এটা তো হতেই পারে  বলে ছিল বুদ্ধ

দিনকাল নয় ভালো

পিলেটাই চমকালো

বুকে হয় ধক ধক

কেসে যায় খক খক

মানে মানে হয়ে যাবে বাকটাও রুদ্ধ।


****

টুম্পা মিত্র সরকার

পিকনিক

চল্  ভাই চল্  যাই এই শীতে পিকনিক ৷

রেল গাড়ি ঝিকঝিক্ ,

হাসে ভাই ফিকফিক্ ,

লোকে ভীড় থিকথিক্ ,

বুকে ভয় ধিকধিক্  ৷

কেউ যদি মাগে ভিক,দিয়ে দাও ঠিক্ ঠিক্।

পিঠেপুলি

হরেক রকম আকার যে তার হরেক রকম স্বাদ ৷

শীতের কোলে জন্ম তারি,

চালের গুঁড়োয় গড়া,

গড়ন খানি হোক না বাঁকা,

হৃদয় রসে ভরা ৷

আহামরি স্বাদে মজে পোলাও কোপ্তা বাদ ৷

নেশার চোটে

ভুরুক ভুরুক না টানলে তার উধাও চোখের ঘুম ৷

হঠাৎই মাঝ রাতে,

নেশার তুফান ছোটে,

হুকো কল্কে হাতে,

আগুন তো নেই মোটে ৷

লণ্ঠণ হাতে পাড়ায় পাড়ায় আগুন চাওয়ার ধুম ৷

মাতৃস্নেহ

এমন ধরন ভালোবাসার দিতে পারে কি দাম ?

তুচ্ছ করে আপন জীবন,

শত ব্যাথা করে সহন,

হেরিয়া তার বাছার বদন,

উথোলিয়া যায় মন ও প্রাণ ৷

জগতের যা মণি মুক্ত সবি তার কাছে কম ৷

সিক্তহৃদয়

অনেক দিন পর তোমায় দেখে উঠলো নেচে মন ৷

কথা ছিল হবে দেখা,

দু জনেতে বসে থাকা ,

হাতে হাত ধরে রাখা,

প্রেম রঙেতে ছবি আঁকা,

আজকে তোমার চোখের জলে সিক্ত হৃদয় সারাক্ষণ ৷


*****


পঞ্চমী গোল

বই ফেরি

হত যদি এমনটা ফেরিওলা যেত হেঁকে

বই পাবে বই
যত চাও সই
পুরানো কাগজ দরে

নিয়ে যাও ঝুড়ি ভরে

আমার ঝুড়ির থেকে বই একে একে।

বইমেলা

বই মেলা -- মেলা বই

যা - চাবে

তা পাবে

বই বন্ধু

মহান সিন্ধু

জ্ঞান সাগর সামনে অথই।

মেলা মুখী

তাক - ধিনা - ধিন - তাক- ধিনা - ধিন

নাচছে খোকা 

নাচছে খুকু

কথাটা পাকা

নেইকো দুঃখু

বই মেলাতে আজকে তাদের যাবার দিন।

বই পসরা

কে নেবে---কে নেবে গো কিনে

পসরা সাজিয়ে

বিকাতে বসেছি

তোমরা পা বাড়িয়ে

বলে যাও এসেছি

পেরেছো কি কিনতে ঠিক বই চিনে?


******

মৃদুল দাশগুপ্ত

এক

নাসিকের প্রেস ছাপে যত টাকা প্রতিদিন
তার চেয়ে ঢের বেশি
ভারত-বাংলাদেশি
কবিরা কবিতা ছাপে
তাতেই ধরণী কাঁপে
প’ড়ে কেউ ভাল বলে, কেউ বলে-কী কঠিন!


দুই

পালাবে কোথায় তুমি টুকি দিয়ে হরি হে ?
তোমাকে নদীর ধারে
ধরবোই বারে বারে
অথবা হাটের মাঝে
যখন বারোটা বাজে
ঝুলি থেকে বের করে ছড়া নেবো পড়িয়ে।


*******

অসীম সরকার


এলো যে শীতের বেলা, কাঁপি ঠক ঠক
ঘাসেতে শিশির বিন্দু
সমবেতে মহাসিন্ধু
পশমে মুড়িয়ে দেহ
নড়াচড়া করে কেহ
কুয়াশা কাটলেই ফের লাগে ঝক ঝর


মুখে নেই অহমিকা, সদা আছ সুখে
আঁচলে বাঁধনি তুমি
না ফেরা দেশেকে স্বামী
দিন গত পাপ ক্ষয়
হা হুতাশ আর নয়
দুঃখী জনের মা হয়ে টানো গো বুকে।


বানর হনুমান কেবল খায় ডিগবাজি
ওরা করে খুশির তরে
দেখে সবার মন ভরে
নেতারাও পাল্টি খায়
প্রাপ্তি যেথা সেথা যায়
পারিষদরা নেতার চেয়ে ততোধিক পাজি

পুজো আসে পুজো যায় এটাই কালের গতি
হাজার হাজার টাকা উড়ে
খুশির জোয়ার ঘরে ঘরে
গ্রামের চড়ায় নিরাশ্রয়ে
ক্ষুধা পেটে উদোম গায়ে
বাজেট ছেঁটে, তাদের কিছু দিলেই বা কি ক্ষতি?


অসীম সরকার

রহড়া, কলকাতা-৭০০১১৮

০৬/০১/২০১৮
লেখক পরিচিতিঃ- অসীম সরকার, বালিগঞ্জ কসবায় জন্ম...ছাত্রাবস্থা কসবা, তালদি, ঘোলা, নবব্যারাকপুর এ.পি.সি কলেজ। ১৯৭৬- সনে সরকারি চাকরিতে যোগদান। ২০১৫ সালে অবসর গ্রহণ। ছাত্রাবস্থা থেকেই গল্প ছড়া কবিতা ভ্রমণ কাহিনী লেখা শুরু, আনন্দবাজার পত্রিকায় রবিবারে শ্রদ্ধেয় শিব্রাম চক্রবর্তীর 'অল্পবিস্তর' বিভাগে কৌতুক লেখা বহুবার প্রকাশিত হয়। অবসরের পর আবার পুরোদমে লেখার চর্চা শুরু ও বহবার নান

*******

শ্যামল শীল


স্বপ্ন


স্বপ্ন নিয়ে জীবন যাপন, স্বপ্ন নিয়ে বাঁচি
অন্নের খোঁজে দিনগুলো যায়
নুন আনতে পান্তা ফুরায়
কাজ কারবার ঝুটঝামেলার
অর্থহীনের বড় সংসার
সবকিছু ঠিক সামলে-সুমলে কোনোরকমে আছি


আশা


ওই যে সুদিন যায়, ধরা ছোঁয়ার বাইরে
বুকে বেঁধে আশা
কথা শুনি খাসা
বড় বড় আশ্বাস
কাটে দিন বছর মাস
ঝুটমুট শপথ, তাই রে আমি নাই রে, চিন্তা হয় ভাইরে


চামচা


একে তাকে তেল দিয়ে তেল গেল ফুরিয়ে
এটাতো তেলের যুগ
আমি এক উজবুক
তেল মারবনা শুনে
নেতা রেগে তেলেবেগুনে
ঘাড়ে দিয়ে ধাক্কা, দূরে দিলেন ভাগিয়ে


জানা


তুমি জানো কচুঘেঁচু, আমি সব জানি
তুমি তো নিরেট
বিরাট গবেট
এলেম তোমার
জানা বাকি নেই আর
তুমি বিশাল মূর্খ, আমিই একমাত্র জ্ঞানী


*******

হরেকৃষ্ণ দে


মোটা মুটির সংলাপ



মোটা কয় মুটি'রে "এবার থেকে উপোস দিও রাতে"৷

শুনে মুটির মন খারাপ,

লুকিয়ে খায় ভাত এককাপ৷

হঠাৎ মোটার চক্ষু চড়কগাছ,

মুটিকে বলে,"থাকবো না তোর কাছ "৷

মুটি কয় মোটা'রে,"তোমায় ছাড়া মিলবো আমি কার সাথে"৷৷


নেট ব্যাঙ্কিং



বিল পেমেন্ট করতে গিয়ে হাবু কুপোকাত ৷

ব্যাঙ্ক এ হচ্ছে লিংক ফেল,

হাবুর জীবন হচ্ছে হেল৷

নানান প্রশ্ন করছে ভীড়,

তার ধরলো পায়ে চিড়৷

নেট ব্যাঙ্কিং শিখেই হাবু করলো এবার বাজিমাত৷


ভাইভ্রেশন মুড


প্রথম যেদিন হাতে নতুন ফোন নিয়ে কাজের মাসি এলো৷

কইবে কথা মনের লোকের সাথে,

তাইতো মাসি সর্বদা রাখে হাতে হাতে৷

সবুজ বোতাম, লাল বোতামই চেনে,

পড়েছে মাসি ফ্যাসাদে চালাতে না জেনে৷

হঠাৎ উঠলো কেঁপে ফোন,ভয়ে মাসির জীবন গেলো গেলো ৷৷


ফেসবুক



সখ ছিল খুব গবা'র মনে খুলবে সে ফেসবুক৷

ফেসটা তার বৌ'য়ের বুকে,

বৌ তার দিলো নাকটা ঠুকে৷

উঠল গবা'র নাক ঝনঝন করে,

গবা তখন নাক ফো ফো করে৷

গবা'র বৌ নাকটা টেনে বলল তাকে 'একটা উজবুক'


হরেকৃষ্ণ দে,
জন্ম-০৬/০৭/১৯৭২।

পিতা-ক্ষুদিরাম দে,মাতা-কল্যাণী দে।বাঁকুড়া জেলার প্রত্যন্ত পিড়রাবনী গ্রামে জন্ম । পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক৷


********


মানবেন্দ্র ব‍্যানার্জী



কান্না-হাসি

কান্না ভেজা বাতাস বাজায় বিষন্নতার বাঁশি
এই যে আকাশ নীল নীলিমা
দিগন্ত যে-- তার নেই সীমা
ওই অসীমে যেতেই হবে
নিজের ভাবা ছেড়ে সবে
থাকবে না হায়! পড়ে কোথাও বোতাম খোলা হাসি।

ধোঁয়া

আগুনটিকে আড়াল করে কুণ্ডলিত ধোঁয়া৷
ঢেকে রাখে রাজনীতি --
বাজনা ঢাকে নাট-গীতি--
মানুষ নিজের চারপাশে
যেন ঢাকে নাগ-পাশে
থাকে যদি আচ্ছন্ন সে যায় কি তাকে ছোঁয়া!

সেল্ফি

সেল্ফি তুলছি মোবাইলে হচ্ছি খুশি হবি তে
দেখে বাইরের প্রতিকৃতি
সুন্দর বলে দি স্বীকৃতি
লাইক আসে কমেন্ট পাচ্ছি
এসব নিয়েই আমরা নাচছি
অন্তরসেল্ফি তুলে নিয়ে সেটাই সাঁটো ছবিতে!

আগুন

আগ্নেয়গিরির মনের মাঝে ঘুমিয়ে থাকে আগুন!
হঠাৎ করে উঠে জেগে
ছড়িয়ে যায় দিগ্বিদিকে
সমাজ যেন আগ্নেয় গিরি
বুকের মাঝে জ্বলে ধীরে
বিপ্লব এসে বলবে, মানুষ---জাগুন এবার জাগুন!



মানবেন্দ্র ব‍্যানার্জী
রামকৃষ্ণ পল্লী, অরবিন্দ নগর,বাঁকুড়া ৭২২১০১

******

অর্ঘ্য দে


হাসাহাসি

আমরা সবাই হেব্বি খুশি
রোগ-জ্বালা সয়ে
খরস্রোত বয়ে
ছুটছি দু’চোখ বুজে
কল্পতরুর খোঁজে
করছে নসিব হাসাহাসি

ম্যাজিকপাথর

অনেক খুঁজে ক’য়েক লিটার ঘাম ঝরিয়ে
পেলাম এমন ম্যাজিকপাথর
করছি সাদা অন্ধপ্রহর
দুষ্টুগুলো জব্দ হবে
গেরুয়া রঙে গা ঢাকবে
আচ্ছে দিন এল ‘বলে ডাইনে বাঁয়ে


অঙ্কের জুজু

এ স্কয়ার আর বি স্কয়ারের সূত্রগুলো গোলমেলে
সিঁড়িভাঙা সরল
হয় না মোটেই তরল
লাভ ক্ষতির পাটিগণিত
কষতে গিয়ে জর্জরিত
সাইন আর কস থিটা ভূত হয়ে ঘরের কোণে দোলে

অর্ঘ্য দে
ঠিকানা- ১ নম্বর ফার্ম সাইড রোড
ডাক- চুঁচুড়া আর.এস.
হুগলি
সূচক- ৭১২১০২
পরিচিতি- পিতা- শিবনাথ দে
মাতা- স্বর্গীয়া শ্যামলী দে
পেশা- ফিজিওথেরাপি
শখ- গান, লেখালেখি, ফটোগ্রাফি।

সম্পাদিত পত্রিকা- মহাজনপদ


*****



নিখিল পান্ডে


বৃক্ষধন


জীবন জেনো দুর্মূল্য অক্সিজেন ফ্রি
দিচ্ছে ওই গাছ
জলে বাঁচে মাছ
মাছে-ভাতে আলুপোস্ত
বেঁচে-বর্তে ঘর-গেরস্থ
এই জীবনে যত পারো লাগাও শুধু ট্রি


ছড়াক্কা


ছড়াক্কা লিখে করবো কি, গরম ভাতে নেইকো ঘি
দাদা রেগে আগুন
কোথায় পাবো বেগুন
সবজিক্ষেত জলের তলে
ভাত খাব কি গাছের ফলে
হ‍্যাঁচো হ‍্যাঁচো করছে দাদা, ঘি ছাড়া ভাত ছিঃ

*******

সৈকত গোস্বামী

জীবন

শৈশবের অরুনোদয় থেকে বার্ধক্যের সূর্যাস্ত
মাঝের সময়টুকু
খরস্রোতার প্রবাহ
বিদ্যুতের চমক কিম্বা
মাঙ্গলিকের বিবাহ
ঈশ্বরীয় নিয়মাধীন মানবজীবন-সুবিন্যস্ত নাকি অবিন্যস্ত?



পূর্ণিমা

রাতের আকাশ ছিদ্র করেছে রজত-গোলোক
দুধসাদা আলোয়
উদ্ভাসিত ধরাতল
শুভ্রতা যেন
উথলিছে ছলছল
যেন রতিলিপ্সায় রত বুভুক্ষু ভূলোক।


দিনচর্যা

অ্যলার্ম আঁটা সকাল ছটা, উঠতে উঠতে প্রায় আটটা
বেসিন থেকে ফ্ল্যাশ
আর টুথব্রাশ
আনন্দবাজার
আর চায়ের গ্লাস
খেলার পাতায় পৌঁছতেই,সমকোনে ঘড়ির কাঁটা


যোগাভ্যাসের বদভ্যাসে কাটলো মিনিট খানেক
সরকারি চাকরি চাই
জিকে তে নজর তাই
ইতিহাস,বিজ্ঞান
ভুগোল,সংবিধান
মনোযোগ থেকে জলযোগ,আমার টেবিলঘড়ি জানে


স্নানটা নির্ভর করে,ঋতুর ওপর
শাওয়ার না গিজার
সাবান, না তেল
দেশি গামছা, নাকি
বিলিতি টাওয়েল
সবশেষে ধুতি পরে সোজা ঠাকুরঘর


এবারেরটা নির্ভর করে আবার দিনের উপর
আমিষ না নিরামিষ
সঙ্গে ঘি না আচার
ক্যালেন্ডারে আজ
বৃহস্পতি না শনিবার
থালা শূন্য হতেই বিছানা বালিশ জড়িয়ে ধর


'হালকা' ভাতঘুমটা কাটতে প্রায় চারটা পাঁচটা বাজে
ফেসবুক-টুইটার
মেলচেক-চা পান
হয় ছবি,কবিতা
কিম্বা গান
অথবা নিউজটা শুনে নেওয়া এ সব কিছুর মাঝে


সন্ধ্যারতির শাঁখ বাজতেই ফের গতানুগতিকতা
ফিরে যাই প্রতিযোগিতায়
রিজনিং বা জিকের খাতায়
জেই ঢুকি সংবিধানে
কাঁটা ফের সমকোনে
ঘন্টাখানেকের ব্যাবধানে-শয্যাবিলাসিতা
সৈকত গোস্বামী
দূুর্গাপুর নিবাসি,কাব্যরসিক,ভোজনরসিক। বর্ধ্মান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর। প্রিয় অবসরবিনোদন অবশ্যই  কবিতা। প্রিয় কবিঃ- জয় গোস্বামী এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। প্রিয় কাব্যঃ- বিকেলবেলার কবিতা(জয় গোস্বামী) এবং ক্যলাইডোস্কোপ (সৌমিত্র চট্টোপাধায়)।


******


সবিতা বিশ্বাস


ভুতুম সোনা  কই
-----------------------
ভূত বলল ভূতনিকে,"আমার ভুতুম সোনা কই?"
ভূতনি বলল ,"শোন ভূতো
ভুতুম আমার তোরও তো
আমি একাই রাখবো খোঁজ
চলবে না আর রোজ রোজ
ভালো করে দেখগে খুঁজে ঘুরছে কোথায় টই টই"।

পিকনিক
-------------
এই শীতে চল যাই বকখালি পিকনিকে
বেগুন ভাজা মুগের ডাল
কষা মাংস একটু ঝাল
হিং কচুরি মটর শুঁটি
লুকোচুরি ছোটাছুটি
কড়া কফি খেতে হবে চাই তাই নিমকিকে।

সাতকাহন
--------------
পেঁচা কয় ইদুঁরকে,"শোন রে ভুঁড়ো গণেশ বাহন
তুই হলি সিঁদ কাঁটা চোর
উচ্ছিষ্ট তেই নজর তোর
জানিস আমি বাহন কার
যার পুজো হয় গুরুবার"
ইঁদুর বলে,"দিনকানারে শোনাসনে সাতকাহন"।

বিসর্জন
----------
সিদুঁর খেলা সাঙ্গ হলো বুকে ব্যথার বীণ
শরৎ মেঘে কান্না ঝরে
মা চলেছেন নিজের ঘরে
বিসর্জনের বাজনা বাজে
মন বসে না কোনো কাজে
যাসনে মাগো শিবের কাছে থাক না দুটো দিন।
সবিতা বিশ্বাস।
মাজদিয়া নদীয়া 741507
এম এস সি (অঙ্ক) ।অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক কর্মী। গ্রন্থ -পাঁচ । বাচিক শিল্পী,নাটক পরিবেশন ও পরিচালনা , লেখা লিখি।সমাজসেবা।
কলতান সাংস্কৃতিক সংস্থার (29) প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক।ছড়াক্কা সদস্য।


*****

সুস্মিতা সেন






সুস্মিতা সেন

*****

উৎপলকুমার ধারা




*****

অমিয়কুমার সেনগুপ্ত

১)
এক ঢিলে দুই পাখি মারবে বলে বাসু
হনহনিয়ে যাচ্ছে বনে
করছে হিসাব মনে মনে--
একটি মেরে পুড়িয়ে খাব
একটি কেটে ঝোল বানাবো
এমন সময় মটকালো ঘাড় বন্ধু পাগলা দাশু ।
২)
টাকের ওপর ঘাস গজালো হাবুর মেজো দাদুর
কাস্তে নিয়ে হাবু গিয়ে
বললো- দাদু তোমার ইয়ে
কাটবো। ঘরে গরু বাঁধা
শুনেই দাদুর সেকি কাঁদা
কেঁদেই বলেন- আজ উৎসব আমার ঘরে,ভাদুর ।

অমিয়কুমার সেনগুপ্ত 
সাতের দশকের বিশিষ্ট ব্যতিক্রমী ও প্রতিবাদী কবি।
পেশায় চিকিৎসক। অর্ধ শতাব্দীর বেশি সময় ধরে তাঁর কবিতা, ছড়া, প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে  অনধিক তিন হাজারেরও বেশি ছোট-বড় পত্রিকায়। প্রকাশিত কবিতার সংখ্যা দশ হাজারেরও বেশি । গদ্য-পদ্য মিলিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থ  সংখ্যা আশিরও বেশি । "লুব্ধক সাহিত্য " পত্রিকার সম্পাদক । বহু সম্মানে ভূষিত । থাকেন পুরুলিয়া শহরে।


*****


উমায়ের সাআদাত



আজকে পূজো সবাই অনেক সাজ করেছে সাজ
পূজোর দিনে সবাই হাসে
আনন্দে মন হাওয়ায় ভাসে
আম্মু দিদি মাসির সাথে
সেলফি তুলি হাসির সাথে
সবার মাঝে সেলফি তোলার ধুম পড়েছে আজ।

সময়

সময় যদি বিক্রি হতো সবাই সময় কিনতো
থাকতে সময় জীবন গড়ো
পাপ ছেড়ে ভাই পূণ্য করো
বলছি কথা সাদামাটা
জীবন দিতে পারেই টা টা
হয় তো তুমি আর পাবে না একটি নতুন দিন তো।।

চাপাবাজ

লেখেন যদি একটি ছড়া,নিজেই বলেন, 'দারুণ তো'!
ছড়ায় কোন তাল গতি নেই
ছন্দ কোথাও এক রতি নেই
আসল ছড়া হয় না কভু
নিজের ঢোলক পেটান তবু
সবার সাথেই ফালতো রকম চাপাবাজি ছাড়ুন তো!


*****


শংকর দেবনাথ



এক/

ছন্দ নিয়ে ধন্দ শুধু- স'ন্দ শুধু মনে-
দ্বন্দ্ব- ভুল ও মন্দগুলো
চতুর্দিকে ওড়ায় ধুলো।
ফুলের হৃদয় গন্ধহারা
বন্ধ প্রাণের 'নন্দধারা।
চলার পথে খন্দ-খানা - ছন্নছাড়া ক্ষণ এ'।

দুই/

মশার এখন পসার ভারি- শোয়ার বসার নাই উপায়-
গানের সুরে তোষণ করে
রক্ত খাবে শোষণ করে।
রক্তবীজের বংশ ওরা
হয়না বুঝি ধ্বংস ওরা।
যতই রাগো- কামান দাগো- ততই ওরা আয়ু পায়।

তিন/

হরিণ যদি লিঙ্গভেদে হতেই পারে হরিণী-
কাককে কাকি - মাছকে মাছি
লিখলে কেন বলবে- আঃ ছিঃ?
হাঁসকে হাঁসি- মাসকে মাসি
বাঁশের পাশে বসিয়ে বাঁশি
ব্যাকরণে- ছ্যাঁ করনের মতন তো ভুল করিনি!

চার/

গড়তে জীবন ছোট্ট সোনার পড়তে হবে ইস্কুলে,
অ-য় অজগর যতই আসুক
আ-য় আমটি খাবেই পেড়ে।
দীঘলডানায় ঈগল ভাসুক
ঊষার আলো আনবে কেড়ে।
মুক্ত-হাওয়ার মুখ তো হাসুক- সব দরজা দিস্ খুলে!



*****


বাসুদেব দাস



স্বপন

রাত্রিবেলা ঘুমের ঘোরে মন যে খোঁজে
হারিয়ে যাওয়া দিন গুলো হায়
ছড়িয়ে আছে কোন কোণে ছাই
কেমন করে পাইযে চাবি
ভোরের দিকে খুলবে  ভাবি
ছোট্ট বেলার খেলার সাথী গল্প ভাঁজে।



ছোটবেলার

আয়রে খোকন উজলভরা দেখাই ছবি
তেল মাখানো তোর  গায়ে
নরম হাতের মালিশ দিয়ে
সাজাই তোকে যতন করে
মায়ের মাখন আদর সুরে
হাসতে ছড়িয়ে গর্ব মুক্ত ছড়ার রবি।

নবান্ন


বাতাসে ভাসা নূতন ধানের মরম ঘ্রানে
অবাক চোখের উদাসী মাঠে ছায়া
শূন্য বুকে হারানো স্বপনের মায়া
খামার ভরা নবান্নের সুরে
মকর সংক্রান্তি নয় বহু দূরে
পিঠে পুলির জন্য মনটাকে কেবলি টানে।

শীতে

শীত এসেছে তাপের ক্ষয়ে সূয্যি মামার
নলেন গুড়ের গন্ধ হাওয়ায় ভাসে
গরম জামা লেপ মুড়ি ঘুম আসে
মাঘের ঝাড়ে বাঘটা কি শীত মাপে
জুবোতুবো দিন গুলো যে কাঁপে
চড়ুইভাতি ও বেড়ানোর আনন্দ মজার।

বাসুদেব দাস
পরিচিতিঃ-
সরকারী কর্মচারী, নেশা- কবিতা,গল্প,উপন্যাস,
ভ্রমন কাহিনী পড়া-লেখার চেষ্টা এবং মানুষের সাথে মেলামেশা বাড়ানোর ও বনের মোষ তাড়ানো।
নিবাস-
পুরোন ঝাড়গ্রাম,ওয়ার্ড নং-১১,ঝাড়গ্রামে,পিন-৭২১৫০৭,
মোঃ নং-৯৬৭৯২৩৯৫৮৬



*******

সুবীর ঘোষ

স্থানবিভ্রাট

আগ্রা যেতে মগরা গেল ভোলা চক্রবর্তী
করাচি যেতে ঘুমের ঘোরে
চলল রাঁচি শীতের ভোরে ।
বদ্দমানের ভাতার
ভাবল ভোলা কাতার
তৎক্ষণাৎ সে পাসপোর্টের ফরম করল ভর্তি  ।

খুল যা সিম সিম

কিনেই নেবে মোবাইল ফোন জেলেপাড়ার মিন্টে ।
তার দিকে চোখ চেয়ে
ডেস্কে বসা মেয়ে
সিমটা দিতে বলে ।
মিন্টে দেখায় থলেঃ
“বাজার ঘুরে সিম পাইনি বেগুন আছে তিনটে’’।

বায়না

বাড়ির ভেতর চারটে লোকের তেরো রকম বায়না
কর্তার চাই পায়েস
বৌমা করে আয়েস ।
বাইরে ঘন্টি , খুলবে কে
ছেলে টোয়েন্টি টোয়েন্টিতে ।
রাগ করে তাই গিন্নি গেল বাপের বাড়ি রায়না ।

ছড়াক্কা

স্যার বললেন-----কি রে ছেলে, হল তোদের পড়াক্কা ?
ধরব আমি
খপাৎ করে ;
না পারলে
আঁধার- ঘরে
সব ক’টাকে খাইয়ে দেবো কাঁচালংকার বড়াক্কা ।

সুবীর ঘোষ
৩০১  আশ্রয় অ্যাপার্টমেন্ট // বিধাননগর // দুর্গাপুর—৭১৩২১২ // চলভাষ =৯৯৩২৬৪০৯৪৯
সুবীর ঘোষ ১৯৬২ খৃ প্রথম লেখালিখি শুরু করেন । এ পর্যন্ত বহু পত্রিকায়  তাঁর কবিতা গল্প উপন্যাস প্রবন্ধ ও গ্রন্থ-আলোচনা প্রকাশ পেয়েছে । তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ১৮ টি এর মধ্যে কবিতার বই ১৪ টি। তাঁর জন্মসাল ১৯৫৩ খৃ । অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর । কর্মজীবনে ইস্পাতশিল্পের উচ্চ আধিকারিক ছিলেন ।

*****

অরিতা চ্যাটার্জী

শীতের কথা

শীত পড়েছে খুব জাঁকিয়ে, পিঠে পুলি, পিকনিক।
বড়দিন আর নানান মেলা
'জার লাইগছে আগুন জ্বালা'
নিউ ইয়ার্সে আলো ঝক ঝক
পথের শিশু কাঁপে ঠক ঠক।
হে ভগবান, শীতের পোশাক সবাই যেন পায় ঠিক।

মিনির চাওয়া

সান্তাক্লজ লুকিয়ে আসে ছোট্ট মিনির ঘরে।
মিনির তখন ঘুম ভেঙে যায়
মনে ভীষন আনন্দ পায়
চাইবে সে যে এমন জিনিস
দুষ্টু মানুষ হবেই ফিনিস
কেউ যেন না কোথায় তাদের ভয় দেখাতে পারে।

নির্ভয়া

নির্ভয়া তার নাম দিয়েছে সকল লোকে
বাসের ভেতর একলা পেয়ে
পশুর ক্ষুধা লোলুপ হয়ে
ছিন্নভিন্ন নগ্ন শরীর
সঙ্গী হলো পথের ধুলির
ভয়-আতঙ্কে শুভ বুদ্ধি চমকে ওঠে।

জল

জল ছলছল, চঞ্চল, উত্তাল, উচ্ছল।
বয়ে চলে কলকল
করে তোলে নির্মল
প্রাণে আনে শত বল
হয়ে ওঠে কভু খল
বাঁচাও, বাঁচাও তারে পৃথ্বীর অমূল্য সম্বল।

অরিতা চ্যাটার্জী
পেশায় শিক্ষিকা, শিক্ষাজীবনের প্রথমাংশ এবং কর্মজীবন সবই দুর্গাপুরে।আমার ঠিকানা 68, বি বি ডি সরনী, সিটি সেন্টার। আমি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম.এ পাস করেছি।আমার হবি বাচিক শিল্প।

******

মিতালি রায়


শীতের আমোদ

শীতের সকালে মিঠে রোদ্দুর, বাতাসের হিম ছোঁওয়া,
বনভোজনের মাতাল গন্ধে!!
মন হারানোর ডাক মেলে যেই,
দল বেঁধে চল সবাই হারাই
নদীর তীরের বালুচরে আজ,
দিনভর শুধু হাসি আর গান, প্রাণ খুলে কথা কওয়া।

গোপন ব্যাথা

মনের কত গোপন ব্যথা প্রকাশ করা হয় না সহজ,
লুকিয়ে রাখি বুকের মাঝে
নইলে সে যে সকাল সাঁঝে
সকল কাজ অচল ক’রে,
হৃদয়টাকে নেয় যে হ’রে,
জীবন তখন এলোমেলো হদিস হারা নিজের গরজ।

প্রভাত সঙ্গীত

প্রভাত আলোর প্রথম পরশ, কোকিলের কুহুতান —
বাতায়ন পাশে
অলিদল আসে
গুঞ্জন তোলে
প্রতি পলেপলে
প্রজাপতি ওড়ে কুসুমে কুসুমে ঘাসে ঘাসে জাগে প্রাণ।

নববর্ষ

ফেলে আসা বছরের যত সঞ্চয়
হৃদয়ের মাঝে রেখে
হৃদয় আকুল হয়,
নতুন বছর আসে
নবারুণ সাথে নিয়ে,
আবার নতুন পথ চলা শুরু হয়।

মিতালি রায়
(ফেসবুকে শুভাপ্রিয়া রায়)
সল্টলেকে থাকি। বাংলা সাহিত্যে এম এ করেছি সাহিত্যকে ভালবেসে। আমার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ১৯৯৭ সালে সাহিত্যরূপা পত্রিকায়। ইতিমধ্যে আমার দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে বার্তা প্রকাশন থেকে। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে চলেছে আমার লেখা। বেশ কিছু ওয়েবম্যাগাজিনেও কবিতা গল্প প্রকাশিত হয়েছে এবং হচ্ছে। গত বছর ছড়াক্কার উৎসব সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে আমার লেখা ছড়াক্কা। প্রকাশের অপেক্ষায় আছে আরও বেশকিছু লেখা.....

*****

স্বপনকুমার বিজলী

একটা শালিক

একটা শালিক আজকে দেখি খুঁজছে যেন কাকে
রোজ দুটোতে সকালবেলা
মাঝ উঠোনে করত খেলা,
সেদিন হঠাৎ ঝড়ের পরে
আর ফেরেনি একটা ঘরে
চিরদিন কি সঙ্গী কারও পাশে পাশে থাকে ?

বৃদ্ধা মায়ের আর্তি

আমার কোলে খোকা যখন এল ন'মাস পরে
চেয়েছি সে সূর্য হবে
এই জীবনে শান্তি তবে,
বউ ছেলে আজ দূর প্রবাসে
আমি থাকি বৃদ্ধাবাসে
শখের গড়া ঘরবাড়ি আজ বড্ড খাঁ খাঁ করে ।


*****

বাসুদেব খাস্তগীর


আমার চাচায়

আমার চাচায় জানটা বাঁচায় খোলস শুধু পাল্টায়
বলন তিনি
সবি চিনি
নিজেই ঘেঁটে
কেনো কেটে
নিজের ঘরে আপন করে আনবো কুমির খালটায় ?

এই আঠরো সালটায়

আমার চাচা এখন খাঁচায় এই আঠারো সালটায়
পড়েই ফাঁদে
শুধুই কাঁদে
বুদ্ধি তার লোপ
কে দিলো কোপ
সুখের ক্ষণে আপন মনে ধরা গাছের ডালটায় ?

প্রশ্ন ?

এই দুনিয়ার সব মাপা যায় মাপার কতো  যন্ত্ররে
তরল মাপে লিটারে
দৈঘ্য মাপে মিটারে
গ্রামে ওজন মাপা হয়
মন যে মাপবো আছে কোন যন্ত্র কিংবা মন্ত্ররে ?

উত্তর

মনে মনে হলেইতো মিল, তখনতো যায় মাপা
দৃশ্যমান তা হয় না কভু
মন মেপেছি বলি তবু
টাকার অংকে হয় না মূল্য
মনটাই হলো মনের তুল্য
মনের মাঝেই মনের ভাষা মনের বর্ণে হয় ছাপা।

বাসুদেব খাস্তগীর

পরিচিতি-
বাসুদেব খাস্তগীর বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলার পাঁচপুকুরিয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জম্মগ্রহন করেন। বাবা প্রয়াত বিজয় ভূষণ খাস্তগীর,মা মিনতি রানী সরকার। বাবা মা দুজনেই শিক্ষক ছিলেন।লেখালেখির অভ্যাস সেই ছোটবেলা থেকেই। গ্রামের সুনিবিড় আলো বাতাসে তিনি বেড়ে উঠেছেন। জীবনকে উপলব্ধি করেছেন প্রকৃতির সান্নিধ্যে।১৯৮৪ সালে কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পড়াকালীন সময়ে চট্টগ্রামের তৎকালীন দৈনিক নয়াবাংলার শিশু কিশোর পাতা ‘ছোটদের মজলিশ’ এ তাঁর প্রথম ছড়া প্রকাশিত হয়।বেশ কিছু সময় তৎকালীন নয়াবাংলা পত্রিকায় ছড়া, নিবন্ধ লেখালেখির মাধ্যমে লেখালেখির জগতে প্রবেশ হলেও পরে গানের প্রতি এক ধরণের ভালোবাসায় গান লেখালেখিতেই মনোনিবেশ করেন। গান লেখালেখির এই ধারাবাহিকতায় তিনি ২০০৭ সালে বাংলাদেশ বেতার ও  ২০১০ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত গীতিকারের মর্যাদা লাভ করেন।প্রকৃতি, শিশুতোষ ভাবনা , সমাজে বিদ্যমান নানা অসংগতি,কুসংস্কার,কূপমন্ডুকতা ও  হাসি-কান্নার বিষয়গুলো ছড়ার ছন্দে তাঁর কলমে শিল্প হয়ে ধরা দেয়। শিশুতোষ ছড়া,গল্প, কিশোর কবিতা ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লেখালেখি করছেন পত্রিকায়। বাংলাদেশের জাতীয় পত্রপত্রিকায় সমকালীন নানা বিষয় নিয়ে ছড়াও লিখছেন নিয়মিত। ’ছন্দে আনন্দে’,’ঋতুর রঙে বাংলার রূপ’ ও ’ছড়ায় ছড়ায় হাসি ছড়া ভালোবাসি’ ’ছড়ায় ছক্কা ছড়াক্কা’ নামের তাঁর ৪টি ভিন্ন ধরণের ছড়াগ্রন্থসহ ’স্মৃতিময় গীতিময়’নামে গানের একটি বইও প্রকাশিত হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা বিয়য়ে অনার্স ও মাস্টার্স করার পর পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন অধ্যাপনাকে। বর্তমানে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার  বি,এম,সি ডিগ্রি কলেজে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অধ্যাপনায় নিয়োজিত আছেন।। পাশাপাশি জড়িত আছেন বিভিন্ন সামাজিক,সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী  সংগঠনের সাথে।

*****

চন্দনকৃষ্ণ পাল

১.
বুকের গভীরে থাকে তোমার এই নাম
কষ্টের নীল বিষে পুড়ি
ছুড়ে দাও স্মৃতি মাখা নুড়ি
তামাবিল রোড আজ স্থির
জীবন হয়েছে আজ ধীর
তোমার স্মৃতিতে এই লেখা রাখলাম।

২.
আকাশের নীল নিয়ে আঁকি এই ছবি
সমুদ্র দিয়ে গেছে তার ভালোবাসা
এই ছবি ভালো হবে এইটুকু আশা
বনের সবুজ আছে নেই কোন ভয়
লাল দিয়ে সূর্যকে করবোই জয়
এই সব ভালোবাসা নাও তুমি সবই।

৩.
ভুলভাল কথা লেখ ফেসবুকের পেজে
ভ্রান্তি ছড়াও সারাদেশে
গান গাও খুব হেসে হেসে
জ্বলে পুড়ে দেশ হলো ছাই
তোমার কোন ভাবনা তো নাই
ঘুরে বেড়াও পাড়ায় পাড়ায় ভালো মানুষ সেজে।

৪.
শীতের রেকর্ড নতুন রেকর্ড দেশে
তুমি নিজে পুটলি হয়ে আছো
শীতকে নিয়ে আরাম করে বাঁচো
লক্ষ মানুষ কাঁপে শীতে
কেউ আসেনি বস্ত্র দিতে
আনন্দে আজ মাতো হেসে হেসে।


*****


মারজানা সাবিহা শুচি


বোধ
টাকা টাকা করে কেন কাঁদিস রে মন!
সব সুখ দুনিয়ায়,
টাকা দিয়ে কেনা যায়?
খাঁটি সুখ থাকে মনে,
পরিবার পরিজনে
যদি থাকে ভালবাসা, মায়ার বাঁধন!


মা-বাবা
মা-বাবার ভালোবাসা পাহাড় সমান,
যত বিঘ্ন যত দায়,
বুক দিয়ে আগলায়;
নিঃস্বার্থ শুভেচ্ছায়
ঘিরে রাখে মমতায়,
তাদের বার্ধ্যকে যেন রাখি তার মান!


ছড়াকারের পরিচিতি
মারজানা সাবিহা শুচি। ১৯৮১ সালে রাজশাহীতে জন্ম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলে এসএসসি ও এইচএসসি পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে বিএসএস ও এমএসএস ডিগ্রি অর্জন। বাবা মুহম্মদ নূরুল্লাহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। মা নার্গিস আফরোজ বানু একসময় বগুড়ার বিখ্যাত পত্রিকা দৈনিক করতোয়ার সাহিত্য বিভাগের সম্পাদক ছিলেন, নিজেও লিখেছেন অসংখ্য গল্প ও ছড়া। মায়ের অনুপ্রেরণাতেই শুচির লেখালেখি শুরু। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে শিশু একাডেমী থেকে প্রকাশিত শিশু পত্রিকায় ছাপা হয়েছিলো তার প্রথম ছড়া। এরপর বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিনে লেখা প্রকাশিত হয়েছে। যুক্ত থেকেছেন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনেও। বিভিন্ন অনলাইন গ্রুপে লিখছেন এখন।

বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ (আইবিএস)-এ তিনি পিএইচডি গবেষক হিসাবে কর্মরত। ব্যক্তি জীবনে তিনি এক কন্যা বৈশালীর মা, ড. মো. বাবুল ইসলামের স্ত্রী। বসবাস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকায়।

****


সুশীল পান্ডে


পিঠে পুলি

পৌষ শেষের পিঠে পুলি চেঁটেপুটে খাই
দুধ নারকেল মিষ্টি রসে
মায়ের কথা মনে আসে
বাঙালীর এই রসনা
ভূভারতে পাবে না
ঘরে তৈরি এই খাবারের তুলনা তো নাই ।


মেলা


ছোটবেলায় দল বেঁধে যেতাম বেলোয়র মেলায়
শীত সকালে হেঁটেহেঁটে
নদীপাড় মেঠোপথে
ইতিউতি ঘোরা
সন্ধা হলে ফেরা
আজ সকলে বহুদূরে পরিস্থির ঠেলায় ।

সুশীল পান্ডে
বয়স ৫৯বছর।১৯৮০সালে বর্ধমান ইউনিভারসিটি থেকে বাংলা বিভাগে স্নাতোওর ।বেড়ে উঠা দামোদর পাড়ের রিফিউজি কলোীতে ।চাকুরি ,lic র d.o .বর্তমানে খড়্গপুরে বসবাস।

******


আসলাম প্রধান


আমার পাওয়ার


এমন আমার পাওয়ার-
মৃদুচাপে
হাঁটু কাঁপে
ভয়ে থাকি
মুখটা ঢাকি
টোয়েনটি ফোর আওয়ার!

ফুপুর বাড়ি


তোমরা জানো, কোথায় বাড়ি আমার ফুপুর ?
বাড়িটা খুব দূরেতে নয়-
যেতে লাগে মিনিট সময়
সকালে যাই- বিকেলে যাই
যাওয়া-আসার হিসেবই নাই
আমার বাড়ি- ফুপুর বাড়ির মাঝে পুকুর ।

ফুপু বাসায় কি কি রাঁধে- খবর রাখি-
রান্না হলে ভালো খাবার
সময় হবে আমার যাবার
পাশে গিয়ে খাতির জমাই
এটা-সেটা যা খুশি খাই
চলে মধুর স্নেহমায়ার মাখামাখি !

ফুপু আমার- মারা গেছে সেই যে কবে,
ঘাস হয়েছে তার কবরে;
আমি আছি দূর শহরে
অনেকটা পথ মধ্যিখানে-
আমার খবর সে কি জানে?
আর কোনোদিন তার সাথে কী দেখা হবে ?

মা-বর্ণনা


মাকে নিয়ে ছয় চরণে লিখছি একী যা-তা !
এই আমি, যে মায়ের ছেলে
তাকে নিয়ে লিখতে গেলে
জনমব্যাপি লেখা যাবে
কলম-কালি সব ফুরাবে-
শেষ হবে কী মা-বর্ণনা, আমার কাব্য গাঁথা !

চামুচে বাঙালি

বন্ধু রে, তুই কোন হোটেলে আমাকে রাঙালি ?
সকল খাবার ধরতে চামুচ
কাটাছেঁড়া করতে চামুচ
মুখের ভেতর দিতে চামুচ
হাতের বিপরীতে চামুচ-
চামুচ দিয়ে খেয়ে হলাম চামুচে বাঙালি !


আসলাম প্রধান
লেখক পরিচিতি;
আসলাম প্রধান ১৯৬৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন! পৈতৃক নিবাস গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলাধীন কালপানি নামক গ্রামে! পিতা মো: আব্দুল গনি প্রধান, মাতা নাজমা বেগম!
তিনি ঢাকা ওয়াসাতে কর্মরত । তার প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা তেরটি ।
ছন্দপ্রলাপ, পদ্যবিলাপ,খামখেয়ালি, হাওয়াই মিঠাই, হরেক রকম কাণ্ড, ছড়ার ভেতর গল্প প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ।
তিনি বাংলা একাডেমীর সদস্য এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত গীতিকার! এছাড়াও বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ।


******

ছড়াক্কা নিয়ে বিভিন্ন কবিদের অমূল্য মতামত



প্রশ্নঃ বাংলাসাহিত্যে ‘ছড়াক্কা’-র কি প্রয়োজন আছে?



কবিদের উত্তর



চৈতালী চট্টোপাধ্যায়ঃ যেমন সনেট,যেমন লিমেরিক,বাংলা সাহিত্যে ছড়াক্কারও অন্য স্বাদ,তেমন!ছ-লাইন মাত্র,কিন্তু হয়তো-বা ধরে আছে ছশো লাইনের ভার!তবে হ্যাঁ,নির্মাণে বেশি মনোযোগী হলে কাব্য উধাও হয় যদি!এই আশঙ্কাও থেকে যায়।



বিকাশ গায়েনঃ  ছড়ার আবেদন সর্বকালিক এবং সর্বজনীন।ছড়াক্কা যেহেতু ছড়ারই একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্বতন্ত্র ফর্ম,সেহেতু ছড়াক্কারও আবেদন আছে।বিশেষ করে বিদ্রুপাত্মক রচনার ভার বহনে ছড়াক্কা অনেকাংশেই সক্ষম।অবশ্য কোন ফর্মের সার্থকতা নির্ভর করে লেখকের নিজস্ব মুন্সিয়ানার উপর ।সর্বোপরি ছন্দ , অন্ত্যমিল এবং বিষয়ের সঠিক মিশেলই পারে ছড়াক্কাকে অনন্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে।



মণিদীপা নন্দী বিশ্বাসঃ  ছড়া নিয়ে সাতকাহন না হোক পাঁচকাহনত হয়,এই ছড়াক্কা চর্চায়।বাঠ্ হয় এই ছড়াক্কা চর্চায়।বাংলা সাহিত্যের বিপুল সম্ভারে কতনা ধারা...সেখানে ছড়াও ছড়িয়ে বসুক তার আসন নানা ভঙ্গীতে নানা রকমে।গদ্যধারার রকমারি সমৃদ্ধির পাশে কবিতাও পেয়ে যাক ছড়াক্কার মত বন্ধুকে।আর মজা লুটে নিক পাঠক।



দীপশিখা পোদ্দারঃ ছড়াক্কা এক বিশেষ ধরনের কবিতা।খুব পাকা হাত ছাড়া এ লেখা সম্ভব নয়। আমার তো বেশ লাগে এর দোলা।তবে শুধু ছন্দ তো নয়।ভেতরের বক্তব্য আকর্ষনীয় না হলে কোনো কবিতাই টানে না। বংলা সাহিত্যে ছড়াক্কার প্রয়োজন অবশ্যই আছে ।থাকবে।



অরুণ চক্রবর্তীঃ একটা নতুন ধারা, ক্ষতি কী? শার্প ছড়াক্কা ভালো লাগে যদিও।



উত্তরণ চৌধুরীঃ  'ছড়াক্কা' একটি মগ্নতার রঙ। এই রঙটি নতুন। এবং আধুনিক। উপন্যাস রচনা করতে গেলে ঠাকুর্দার পুরনো ছাতাটির মতন গাঢ় রঙের প্রয়োজন হয়। আবার ছোট গল্পের চপল গতির জন্য পড়ে যায় অন্য রঙের খোঁজ। যেমন ট্রামের-সীটে-পড়ে-থাকা অচেনা রুমালের সুগন্ধি রঙ। অথবা সেলাইয়ের ছুঁচ-সুতোর নিশ্চিন্ত স্থবিরতার রঙ। আর বাংলা সাহিত্যও এমন নানা রঙে গর্বিত সেই সৌম্যকান্তি বয়স্ক মানুষটি, যাঁর ঠোঁটে লেগে থাকে এক টুকরো হীরক-হাস্য, কারণ বয়স না-মেনেই তাঁর সাদা পাঞ্জাবিতে কচিকাঁচারা দোলের দিন ছুঁড়ে দিয়েছে লাল আবীর, সেই সুগন্ধে আজ তাঁর প্রান নতুন সূর্যের মতন জাগরুক। এমন নানা রঙের মধ্যে 'ছড়াক্কা' একটি নতুন প্রানচঞ্চলতার রঙ। এতে হাল্কা ছড়ার তালের মতন নতুন কাঠচাঁপার সাদা-হলুদ চপলতা আছে, আবার গভীর চিন্তার মগ্নতার ঘোর আছে। আর আছে মণিমুক্তোর দ্যুতিময়তা। নতুন সাহিত্যে এর প্রয়োজন আছে বইকী!



রামকিশোর ভট্টাচার্যঃ  যে কোনো নতুনকেই আমি স্বাগত জানাই, অবস্যই তা যদি সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করবে বলে মনে হয়..ছড়াক্কা যে একটা নতুন পদ্ধতি তা বলার অপেক্ষা রাখেনা, তবে তা সবার পছন্দ হবেই তা জোর দিয়ে বলা যাবে না।



প্রগতি মাইতিঃ ছড়া চিরকাল সুখপাঠ্য। একটা কবিতা যতদিন না মনে গেঁথে থাকে, তার চেয়েও অনেক বেশি স্মরণে থাকে ছড়া। ছন্দময়তার মধ্যে দিয়ে যে রস ছড়ায় থাকে , তা আর কোথায় পাবো। ছড়া মানে তা শুধু শিশুদের - এই ধারণাটা আধুনিক নয়। ছড়াই একমাত্র সাহিত্য মাধ্যম যা সব বয়সের মানুষের মধ্যে অনাবিল তৃপ্তি এনে দেয়। ছড়া না থাকলে বাংলা সাহিত্য নিরস কাঠ হয়ে যাবে। সময়কে সম্মান জানিয়ে আপনারা ছড়া নিয়ে যে কাজ করছেন তাতে কোনো প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। শুধু এটুকুই বলতে পারি, আপনাদের এই মহতী উদ্যোগকে আমি সেলাম জানাই।



অর্থিতা মন্ডলঃ  সাহিত্য এগিয়ে চলে গ্রহণ এবং বর্জনের মধ্য দিয়ে। তার কত ভাগ,কত রূপ,কত রীতি! আর তারই মধ্যে চিহ্নিত হয়ে চলেছে কত নতুন ধারা।এ যেন বহমানতার বুকে খোদাই হয়ে চলা চিত্ররূপ। অজস্র শিল্পীর অজস্র শিল্পের মূর্তকথা ‘ছড়াক্কা’ সাহিত্যের এরকমই রূপকল্প। একটি নিয়মের মধ্য দিয়ে এখানে উঠে আসে ছরাক্কা স্রষ্টার সৃষ্টির ব্যঞ্জনা। এখানে রয়রছে কবির আবেদন,বিষয়ের অভিনবত্ব,মিলের সৌন্দর্য আর প্রকাশভঙ্গির নতুনত্ব। স্বভাবতই ‘ছড়াক্কা’ পুষ্ট করেছে সাহিত্যকে। বাংলাসাহিত্য তার প্রবহমান স্রোতে ‘ছড়াক্কা’কে গ্রহণ করেছে। তাই সে অপ্রয়োজনীয় নয়। আর ভবিষ্যৎ পাঠক যদি তাকে স্থান দেয় হৃদয়ে,তবে সেও হয়ে উঠবে স্রোতস্বিনী। সে কথা আগামীর।



তৈমুর খানঃ ছড়াক্কা কবিতা ও ছড়ার অপূর্ব এক সাহিত্য প্রয়াস। লঘু গুরু দুটি ধারাতেই এটি প্রবহমান। উশৃঙ্খল কাব্যচর্চাকে পরিশীলিত বাঁধনে প্রকাশ করার মাধ্যম। ছন্দে বেশ নতুনত্বও আছে। সুতরাং এটি অবশ্যই কবিদের কাছে সমাদর পাওয়ার যোগ্য। বাংলা কাব্য জগতে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা আবহমান কাল হতেই চলে আসছে। যার ফল আমরা পেয়েছি। অমিত্রাক্ষর ছন্দ, সনেট, মন্দাক্রান্তা, মুক্তক ছন্দ প্রভৃতি। সাম্প্রতিক কালে কবিতার বিনির্মাণ তত্ত্বেও আঙ্গিকগত নানা বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। "ছড়াক্কা" এই পরিবর্তন এবং পরীক্ষা নিরীক্ষার সাহসী এক যুক্তিপূর্ণ পদক্ষেপ। একদিকে ছন্দোবদ্ধ রূপ অপর দিকে ছড়া এবং কবিতার মেলবন্ধন। যখন কবিতা প্রসঙ্গচ্যুতি আর গিমিক সর্বস্ব কতকগুলি word - play হয়ে দাঁড়ায়, তখন মাঝে মাঝে ছড়াক্কা লিখেও কবির সামর্থ্য প্রকাশ করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। অর্থাৎ ভাবের ও ভাষার বিশৃঙ্খল প্রয়োগ থেকে কিছুটা পরিপাটি মেধাবী লিরিকের দ্বারস্থ হতে হয়। তাছাড়া ছড়াক্কায় গভীর বিষয় থেকে সাম্প্রতিক কবিতা চর্চায় নানা কৌশলও সেখানে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। কবিতা চর্চার একঘেঁয়েমি আসে না। প্রত্যেক যশস্বী কবিই তাই "ছড়াক্কা" লিখে প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, বাংলা সাহিত্যে এর গুরুত্ব কতখানি। মধুমিতা ভট্টাচার্য "ছড়াক্কা-কাব্য" লিখে কেমন ছন্দোরশ্মির দোলায় শব্দকুসুম ফুটিয়েছেন তারই কিছুটা অংশ — "ঘুমিয়ে ছিল লজ্জাবতী লতাটি একান্তে সঙ্গে ছিল কদম সুবাস এই টুকুতেই মেটে কি আশ কয়েক ফোঁটা চুমলো দু'গাল, কেউ পারেনি জানতে। " অনুপ্রাসের সঙ্গে ছন্দ এবং শব্দ ব্যবহারের দক্ষতা চোখে পড়ার মতো। মাঝের পংক্তিগুলি ভেঙে ভেঙে আঙ্গিক বৈশিষ্ট্য নির্মাণ এবং " চুমলো" শব্দটির প্রয়োগ যে চিত্রকল্পের সৃষ্টি করেছে তার ধ্বনিময় মাধুর্য অনেকক্ষণ বাজতে থাকে মনে মনে। সুতরাং ছড়াক্কা বাংলা সাহিত্যের একটি নতুন দিগন্ত।



দুর্গাদাস মিদ্যাঃ বাংলা সাহিত্য একটি খোলা জানালা।নানা দিক থেকে নানা রকমের বাতাস ঢুকছে। ফলে সমৃদ্ধ হচ্ছে বাংলাসাহিত্য। সাত ব্যঞ্জনে সেজে উঠছে বলেই এত রঙিন তার স্বভাব।নবতম সংযোজন ছড়াক্কা।বেশ মজার একটা খেলা।এই খেলার মত্ততায় মজেছেন অনেকেই।সতীশ বিশ্বাস মহাশয়ের এই প্রচেষ্টা যথেষ্ট প্রণিধানযোগ্য।মুক্তপথ হয়তো নয়, তবু কোথায় যেন মুক্তির স্বাদ আছে।তাই,ছড়াক্কাও চলছে ছড়-ছড়িয়ে।শুধু এপার বাংলায় নয়,ওপার বাংলাতেও অর্থাৎ বাংলাসাহিত্যে একটা মজাদার জায়গা করে নিতে পেরেছে ছড়াক্কা।এর রস থেকে বঞ্চিত হওয়া বেশ কঠিন।অতএব বাংলাসাহিত্যে ছড়াক্কা-র স্থান যে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে—এ কথা অস্বীকার করা যায় না।



শ্যামল শীলঃ  বাংলা সাহিত্য ‘ছড়াক্কা’র প্রয়োজন অবশ্যই আছে। পাঠকের মন সবসময় নতুনের সন্ধানী।গল্প,উপন্যাস,কবিতায় নতুন কোন বিষয় ভাবনা আঙ্গিক থাকলে একজন পাঠক আগ্রহ বোধ করেন এবং সহজেই পাঠে বুঁদ হয়ে যান। কত বিবিধ বিষয় নিয়ে ছড়াক্কা রচিত হয়। যেন একটি বাগানে বিভিন্ন রং-এর ফুল ফুটে আছে। সুন্দর ও বৈচিত্রময়। ছড়াক্কার অন্যতম আকর্ষণ এর ছন্দ ও গতি যা পাঠককে অত্যন্ত পাঠতৃপ্তি দেয়। ছরাক্কা নতুন ভাবনা ও বিষয়-বিভিন্নতায় সবার মনে পাঠতৃপ্তিও উদ্দীপনা এনে দেয়। বাংলাসাহিত্যে নবতম সংযোজন ছড়াক্কার প্রসারে ছড়াক্কা সম্পাদকের মগ্ন উদ্যোগ বাংলাসাহিত্যের ইতিহাসে স্থায়ীরূপে লিপিবদ্ধ হবে।



গৌতম সাহাঃ  ‘ছড়াক্কা’ নিয়ে কথা বলতে গেলে বলতে হয় সাহিত্যে নতুন ভাবনা সবসময় স্বাগত। সতীশবাবু দীর্ঘদিন এই বিষয় নিয়ে ভাবেছেন,ভাবাচ্ছেন এবং বাংলা ভাষার সবাইকে দিয়ে লিখিয়েছেন। নতুন ডিকশন তৈরি করেছেন। আমি এই ছড়াক্কার প্রসার কামনা করি। সতীশবাবুর দীর্ঘ পরিশ্রম মান্যতা পাক। তিনি হোন পায়োনিয়ার। মনে পড়ে মাইকেলকে। তিনি আমাদের কাছের মধুসূদন।



উৎস রায়চৌধুরীঃ বাংলা সাহিত্যে ছড়াক্কা একটি নতুন চিত্রকল্প। এর ভেতরে বাংলা রিদমিক নেস ফিরে পায়। কবিতা সাহিত্যে অদল বদল ঘটলেও একটা মাত্রাতিরিক্ত নতুন প্রবাহ কে অভিবাদন জানায় ছড়াক্কা, ছড়াক্কা সুকুমার রীতির আরেক আংগিক। এখানে প্রাণ ও স্পন্দন জড়িয়ে থাকে। এর বিলুপ্তি কিসের?



সুকুমার রুজঃ হ্যাঁ, অবশ্যই প্রয়োজন আছে। বাংলা সাহিত্যকে যদি রত্নভাণ্ডার ভাবা হয়, সে ভাণ্ডারে কবিতা, ছড়া, গল্প, নাটক ইত্যাদি প্রকোষ্ঠে অনেক মনিরত্ন জমা হয়েছে। সেই ভাণ্ডারে যদি ছড়াক্কা নামের নতুন একটা প্রকোষ্ঠ তৈরি হয় এবং কিছু মনিমুক্তো জমা হয়; তাতে তো বাংলা সাহিত্য ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হবে। বাংলা ভাষার পাঠক লাভবান হবে। তাই আমার মনে হয়, ছড়ার এই নতুন ধারার বেশি বেশি চর্চা ও বহুল প্রচারের প্রয়োজন ।



অশোক মজুমদারঃ অবশ্যই আছে . সাহিত্যের ক্ষেত্রে পরীক্ষা নিরীক্ষা বরাবরই হয়ে আসছে আর এভাবেই সাহিত্যের অগ্রগতি হচ্ছে. ছড়াক্কাও এরকমই একটি প্রচেষ্টা যা ক্রমে জনপ্রিয় হচ্ছে. অনেক ছড়াকারের অংশ গ্রহণই তার প্রমাণ অনাদিরঞ্জন বিশ্বাসঃ আছে বৈকি ! যুগ পরিবর্তনের সঙ্গে সাহিত্য-সংস্কৃতিও নতুনত্ব’র দাবি করে। সেই বিদ্যাসাগরের আমল থেকে আজ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য ভাবে বাংলা গল্প উপন্যাসের আঙ্গিক, বাংলা কবিতার আঙ্গিক বদলেছে। বাংলা ছড়ার আঙ্গিক কিন্তু সেভাবে খুব একটা পরিবর্তিত হয়নি। সেই স্বরবৃত্ত/দলবৃত্ত/ছড়ার ছন্দ বজায় রয়েছে; বদল যা হয়েছে তা ওই ছড়ার শব্দনির্মাণ/টেক্সট ইত্যাদির সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই, যদি নতুন একটি ধারার ছড়া, যাকে ‘ছড়াক্কা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিতে চাইছেন সতীশ বিশ্বাস, বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করে, ক্ষতি কীসের ? রেদ্বওয়ান মাহমুদঃ অবশ্যই, বাংলা সাহিত্যে ছড়াক্কার প্রয়োজন আছে। একজন ছড়াকার হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি ' আমি ছড়াক্কা লিখতে যতটা আনন্দবোধ করি, অন্য কোথাও এমন আনন্দ পাই না। তাছাড়া ছড়াক্কা পাঠক সমাজে যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, তা চোখে পড়ার মত। অতএব লেখক এবং পাঠকের ভালো লাগার দিকে লক্ষ্য রেখেই বাংলা সাহিত্যে ছড়াক্কার প্রয়োজন।



চৈতন্য দাশঃ রবীন্দ্রনাথ জাপানি হাইকু পড়ে লেখার চেষ্টা করতে গিয়ে অণুকবিতা সৃষ্টি করেছেন হাইকু অর্থাৎ স্বকীয়তায় উত্তীর্ণ 5 লাইনের লিমেরিক লিয়র যাকে স্বকীয়তা দান করেছেন । বাংলার অন্ত্যমিল পদ্যেসাহিত্য সমৃদ্ধ হয়েছে । এবারে আসি 6 লাইনের ছড়াক্কায় । ইতোমধ্যে সে তার স্বকীয়তা ছন্দমাধুর্য ও সাহিত্য মূল্যে অদ্বিতীয় তাতে কোনো সন্দেসের অবকাশ নেই।



বিধুভূষণ ভট্টাচার্যঃ ছড়াক্কার প্রয়োজন অবশ্যই আছে। সাহিত্যচর্চায় নিত্যনতুন পরীক্ষানিরীক্ষা একটি অতি প্রয়োজনীয় কাজ। এমন পরীক্ষানিরীক্ষারই একটি সুন্দর ফসল ছড়াক্কা। ছন্দচর্চার চমৎকার এই ফরমেটে ছড়ার বক্তব্য জোরালোভাবে তুলে ধরা যায়। জয়তু ছড়াক্কা।



কমলেশ দাশগুপ্তঃ বাংলাসাহিত্যে ছড়াক্কা একটি নতুন মাত্রার ঢেউ! ছড়াক্কা র মনোযোগী অনেক লেখক,অনেক পাঠকও তৈরি হয়েছে। তাই,বাংলা সাহিত্যে ----ক্ষেত্রে এর প্রয়োজন ও স্বাভাবিকভাবেই অনুভূত হচ্ছে।



তপন বাগচীঃ  ছড়াক্কা তো ছড়াই বটে! মায়ের কোলে শুয়েছড়া শুনতে শুনতে কত যে ঘুমিয়ে পড়েছি। ছড়া শুনে-শুনেই বর্গী তাড়িয়েছি। ব্র্রিটিশ তাড়াতে, হানাদার হটাতে যেস্লোগান তুলেছি মুখে, তাতো ছড়া-ই। যতদিন মায়ের কোলেনতুন শিশুর জন্ম নেবে, যতদিন আমাদের মৌলিকঅধিকার পূরণ না হবে, ততদিন আমাদের মুখে প্রতিবাদেরউচ্চারণ হবে ছড়া। তাই ছড়ার মৃত্যু নেই সাহিত্য থেকে, আমাদের যাপিত জীবন থেকে। আরÑ ছড়াক্কা তো ছড়াইবটে! একটু পৃথক প্রকরণÑ দুয়ে-তিনে, চারে-পাঁচেঅন্ত্যমিলের নিয়ম আছে প্রথম-ষষ্ঠ চরণদ্বয়ে দীর্ঘ পর্বসমন্বয়ে ছড়াক্কাতে থাকতে হবে গুনে-গুনে ছ-চরণ। তাইনির্দ্বিধায় বলা যায়, সাহিত্য থাকলে ছড়া থাকবে, ছড়াথাকলে ছড়াক্কাও থাকবে। জয়তু ছড়া, জয়তু ছড়াক্কা। ড. তপন বাগচী কবি-ছড়াকার-গীতিকার-প্রাবন্ধিকউপপরিচালক, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, বাংলাদেশ।



বাসুদেব খাস্তগীরঃ প্রয়োজন আছে।কারণ যে কোন নতুন কে গ্রহন করার মধ্যে এক ধরণের আনন্দ আছে। আর ছড়াক্বার চর্চা ইতিমধ্যে বহুদূর এগিয়েছে।ছড়াক্কার ব্যাপক চর্চা ছড়া সাহিত্য বিকাশে ব্যাপক অবদান রাখতে পারে।



সুজন সাজু : ছড়াক্কা একটি নতুন সংযোজন বাংলাসাহিত্যে।নতুন মানে প্রাণের স্পন্দন,লালায়িত দোলা।আমি আশা করি ছড়াক্কা তেমনি সাহিত্যেকাশে এক টুকরো আশার সঞ্চারি মেঘের আর্বিভাব নিঃসন্দেহে।



শংকর দেবনাথঃ কার আছে প্রয়োজন-আর নেই কার?/ এইকথা বলবে কে?/তার মতে চলবে কে?/ বাঁচবে কে? মরবে কে?/ হাসি গানে ভরবে কে?/ কাল ধরে হাল কাকে নেবে কোন পার?/ছড়াদেশে ছড়াক্কা নবাগত ঠিকই-/তাই লিখে মজা পাই,/ ভিন্ স্বাদে গজা খাই-/গৎ থেকে সরে এসে/ ছকে ফেলে ভালবেসে-/ ছড়াদের পাশাপাশি ছড়াক্কা লিখি।/নানা সুরে উড়ে পাখি করে কলরব-/ সঙ্গীতে নানা রাগে/ গানগুলো তানে জাগে।/ ঝোলে নানা তরকারি-/ সাহিত্যে দরকার লিমেরিক ছড়াক্কা ষট্‌পদী সব।



কাব্যপ্রিয় জিয়াঃ বাংলা সাহিত্যে ছড়াক্কার প্রয়োজন অবশ্যই আছে। কোন জিনিস ছোট কি বড়,তার উপর তার মান নির্ভর করে না। নির্ভর করে তার (সাহিত্যতো নয়ই) ভেতরে কী আছে,তার উপর। বাংলা সাহিত্যে তেমনি একটি শাখা ‘ছড়াক্কা’। যা দেখতে ছোট হলেও প্রকৃতপক্ষে ছোট নয়। সাহিত্যের অন্যান্য শাখার মতো এটিও বিশেষ অর্থে তাৎপর্যপূর্ণ। বরং এটি লেখার মাঝে আলাদারকমের ভালোলাগা কাজ করে যা লিখিয়ের হাতকেই পোক্ত করে তোলে। তাই নিঃসন্দেহে মেনে নেওয়া যায়—যে বাংলা সাহিত্যে অবশ্যই ছড়াক্কার প্রয়োজন আছে।



কুনাল চৌধুরী : মাত্র ছ’টি লাইনে একটি বিষয়ের মনের ভাব প্রকাশ করবার জন্য “ছড়াক্কা”র কোন তুলনা হয় না। এর যে একটি অন্যরকম গঠনশৈলী সেটাও একটি আকর্ষণের বিষয়। যেন নিজেকে নিজের ৫৩ কাছে বেঁধে রাখা । মাত্র ছটি অসম মাপের পংক্তিতে একটি বিশেষ বিষয়কে প্রকাশ করার সাবলীলতা দেয় ছড়াক্কাই । সেই কারণে বাংলা সাহিত্যে“ছড়াক্কা”র প্রয়োজন অনস্বীকার্য ।



বংশীধর সাহুঃ বাংলা সাহিত্যে 'ছড়া'র যদি প্রয়োজন থাকে , তাহলে 'ছড়াক্কা'রও প্রয়োজন আছে ৷ ছড়াক্কার গঠনশৈলী একটু অন্যধরনের হলেও , আসলে তা ছড়াই —ছকে বাঁধা ছন্দবদ্ধ ছড়া ৷ অবশ্য ছড়াকে ছন্দে বাঁধতেই হবে , নইলে ছড়া হবে না ৷আর ছড়ার ছন্দেই ছড়াক্কা লেখা বাঞ্ছনীয় ৷কবিতা থেকে ছড়া বা ছড়াক্কা আলাদা ৷ ছড়া বা ছড়াক্কা হবে ইররেগুলার,হয়তো একটু আনইভেন ৷বাক্ পটুতা বা কারিকুরি থাকবে না ৷ভাব ,ছন্দ , ইমেজ ও মিল এগুলোও ছড়া বা ছড়াক্কার অপরিহার্য অঙ্গ ৷তবে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য থাকতেই পারে ৷ ছড়াক্কা তার নিজস্ব শৈলী ও স্বাতন্ত্র্য নিয়ে এগিয়ে চলুক —পদ্যের সাথে যেন একাত্ম না হয়ে যায়।



আলম মাহবুবঃ হ্যাঁ, আমি মনে করি বাংলাসাহিত্যের অন্যান্য শাখার মতো ছড়াক্কার ও গুরুপ্ত ব্যাপক।কারণ ছড়াক্কা একজন লেখক বা কবিকে তার লেখনিরস্পৃহা বাড়াতে সাহায্য যোগায়, যার বাস্তব উদাহারণ আমিনিজেও, এই ছোট পরিসরের সাহিত্য " ছড়াক্কা" দিয়েওসমাজ, রাষ্ট্র ও জাতির সর্বস্তরের ভাব কে সাধারণ মানুষেরমাঝে পৌছানো সম্ভব বলে আমি মনে করি। তাই সাহিত্যেরসকল শাখার মতো ছোট ছন্দে সাজানো ছড়াক্কা শাখাটিরগুরুপ্ত ও আমার মতে অপরিহার্য।



মধুমিতা ভট্টাচার্যঃ নদী বা ঝর্ণার মত সাহিত্য এবং সৃষ্টিও বহতা এবং 'চরৈবেতি' তার মন্ত্র। বাংলা ভাষার উদ্ভবের সময় থেকে এযাবত সাহিত্যের পরিসরে বহু পরীক্ষা নিরীক্ষা ও ভাঙা গড়া হয়েছে ও আজও হয়ে চলেছে। কবিতার বিভিন্ন আঙ্গিকের সাথে ছড়াক্কাও ক্রমশঃ তার স্থান পাকা করে নিচ্ছে। আমার বিশ্বাস আন্তরিক ও সস্নেহ প্রচেষ্টায় ছড়াক্কা দিনে দিনে আরও অনেক পাঠকের মনে ঠাঁই করে নেবে এবং বাংলা সাহিত্য কে একটি নতুন আঙ্গিকের মাধ্যমে আরও সমৃদ্ধ ও বৈচিত্রময় করতে সাহায্য করবে।



মো মণিরুল ইসলামমামুন :  বাংলা সাহিত্যে ছড়াক্কা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।ছড়াক্কা বাংলা সাহিত্যের ছড়া জগতে একটি ভিন্ন মাত্রা নিয়ে আসে,যাতে মজার ছলে ছয় লাইনের খুব সংক্ষেপে একটি বার্তা বিদ্যমান থাকে,যা লেখক ও পাঠকের মধ্যে ক্ষুদ্র পরিসরে একটি বৃহদাকার সম্পর্ক তৈরিতে সাহায্য করে।ছড়াক্কা লেখক ও পাঠকের মেধার বিকাশ ঘটায় এবং শিক্ষণীয় মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।



আবু ইউছুফ সুমনঃ ছড়াক্কা ছড়ার একটা অংশ হলে ও বাংলা সাহিত্যে ছড়াক্কা যোগ করেছে নতুন মাত্রা।সাহিত্য বিমুখ পাঠকদের জন্য এই ধরনের নতুন কিছু সত্যিই প্রয়োজন ছিল।আমি আশা করি অচিরেই এটি বাংলা সাহিত্যের অন্যান্য শাখার মত নিজের স্থান খুব দ্রুত দখল করে নিবে এবং সবার কাছে পরিচিত ও গ্রহণ যোগ্যতা পাবে।



মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ঃ ছড়া হোল মানুষ প্রাচীনতম সাহিত্য প্রয়াস |লোকসাহিত্যের এই ধারাটি গ্রামাঞ্চলে শিশুদেরঘুমপাড়ানোর সময় কখনো শিশুদের খেলার সময় কখনোমেয়েদের ব্রতকথায় এবং ছেলেভুলানোর সময় উচ্চারিতহয়ে আসছিলো | কবিগুরু প্রথম এই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকাছড়াগুলিকে পুস্তকাকারে প্রকাশের ব্যবস্থা করেন | তিনিইপ্রথম ছড়ার ছন্দে গুরুগম্ভীর ভাবনা প্রকাশ করেন | এরপরবহু কবি ও ছড়াকার সাহিত্যের এই আঙ্গিকের পরিবর্তনঘটিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে | বর্তমানে ছড়া কখনো দু'চারলাইনের অবয়বে লিমেরিক নামে,কখনো ছড়াক্কা নামেরবিশেষ আঙ্গিকে বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলা সাহিত্যেলেখা চলছে |ছড়াক্কা তো বর্তমানে পঃ বঙ্গে,বাংলাদেশে,ত্রিপুরা ও বাংলাভাষাভাষি বিভিন্ন দেশেসবিশেষ জনপ্রিয় একটি কাব্য আঙ্গিকরূপে সমাদৃত | এতেযেমন সমসাময়িক বিষয়ে বিশেষ ভেদন ক্ষমতা দেখা যায়তেমনি গুরুগম্ভীর ভাবকেও স্থাপত্যরূপ দেওয়া যায়অনায়াসে ; তাই ছড়ার এই বিশেষ আঙ্গিকটি অবশ্যইবাংলা সাহিত্যধারায় অভিনব সংযোজন সরাসরি লেখার জন্যদুএক জায়গায় আগোছালো রয়ে গেলো ,,,পছন্দ হলে একটুগুছিয়ে নেবেন ,,,,ধন্যবাদ ; পুজো সংখ্যা পাইনি ,,,দুচার কপিপাঠালেও পাঠক-ক্রেতা সংগ্রহ করে দেব।



অপূর্বকুমার কুন্ডুঃ  ছড়াক্কা " ছড়ার জগত একটা নতুন চলনতৈরী করেছে । আর বর্তমানে ছড়াক্কা ক্রম প্রসারমান ।বাংলাদেশেও পত্রপত্রিকায় ছড়াক্কা দেখছি । তাই বলছিমন্দ কী ? এগিয়ে চলুক ছড়াক্কা ।



অসীম মেহবুবঃ বাংলা সাহিত্যে ছড়াক্কার প্রয়োজনআছে কি না ? সেটা এখন বলা যাবে না। সময় সেটা বলে দেবে। তবে ছড়াক্কায় আপনার সাফল্য কামনা করছি।ভালো থাকুন দাদা। ধন্যবাদ।



সাহিত‌্যের জগতে কবিতা,ছড়ার মতো ছড়াক্কাও একটা স্বাধীন পরিনত অক্ষর শিল্প।ছন্দোবদ্ধ এই রচনায় মাত্রছয়টি পঙতির ব‌্যবহার হয়।প্রথম ও শেষ লাইন অন্ত‌্যমিলও মাঝের চারটি লাইনে অন্ত‌্যমিল সমৃদ্ধ ছড়ারইঅত‌্যাধুনিক বুনন ।এখানে ছন্দ অলংকরণ ,অন্ত‌্যমিল ও লেখকের মননের উতকর্ষ মিলেমিশে একাকার।



দেবযানী করসিংহঃ ছড়াক্কা পড়তে শুনতে সমানভাবেআকর্ষণীয় হয়ে ওঠার পিছনে মূল কারন হল একটা ফর্মূলা মেনে চলার নির্দেশ আছে যেখানে অক্ষরশিল্পী সজাগ থেকে রচনাকে প্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থহন।একদিকে ছন্দের কথা মাথায় রেখে অন্ত‌্যমিলঅন‌্যদিকে বিশুদ্ধ ভাবনার আরকে ছড়াক্কা হয়ে ওঠেসর্বাঙ্গীণ সুন্দর। এটাও অনস্বীকার্য যে কখনো অন্ত‌্যমিলঘটানোর চাপে কতগুলো নির্বোধ শব্দ ব‌্যবহার হয়ে যায়অঞ্জাতসারে তখন ছড়াক্কার আধুনিকতা আবিল হয়ে পড়ে ।এ ব‌্যাপারে স্রষ্টাকে আরো চিন্তাশীল আরো নতুনতমপয়ারের উন্মাদনা জোগায় বলা বাহুল‌্য।ছয়টি পঙতিরওঠানামা নামাওঠার মধ‌্যেও এতো বৈচিত্র যা আগে কোনোসাহিত‌্য অঙ্গনে দেখা যায়নি।দীর্ঘদিন অতিক্রম করেঅগিয়ে চলা ছড়াক্কা বৈশিষ্ট‌্যপূর্ণ ও ব‌্যতিক্রমী ধারা বলেমেনে নিতে পারি। সংক্ষিপ্ত জোরালো বক্তব‌্যের জোরেছড়াক্কা আগামীতে হয়ে উঠবে কবিতা ,ছড়ার সমকক্ষ,শিশুথেকে অশীতিপরের পাঠযোগ‌্,যা মূল‌্যবান সাহিত‌্যরচনার অংশীদার এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী সুদূরপ্রসারী সৃজনীধারা।



উৎপলকান্তি বড়ুয়াঃ বাংলাসাহিত্যে তো কবিতা, ছড়া’র বা বিভিন্ন কিছুরকত প্রকরণ আছে।সবটাইতো বহাল তবিয়তে যে যার স্থাননিয়ে দিব্যি আছে। আর এ রচনাগুলো যুগ যুগ ধরে জিইয়েআছে তার ক্ষমতাবলে। ছড়া্ক্কা’র বয়স প্রায় দুই যুগেরমতোই হলো। সে ও তার জায়গায় আমার মনে হয় বহালতবিয়তে আছে। মানে বাংলাসাহিত্যের প্রয়োজনেই তারমান-গুণ-আঙ্গিকতার ভিন্নতায় অবশ্যই যুগ যুগ বেঁচেথাকবে-এই আ্শা আমি রাখি।



অলক্তিকা চক্রবর্তীঃ বাংলাসাহিত্যে ছড়া যেমন অপরিহার্য,তেমনই ছড়াক্কাও একটা নতুন আঙ্গিক।ছড়াক্কা সেই ছড়ারই নতুন অন্য রূপ।


*****


একটা সমৃদ্ধ কাব্যপথ সৃষ্টির ব্যতিক্রমী উত্থান



                                 তৈমুর খান



ছড়া থেকেই ছড়াক্কার জন্ম এ কথাটা মানলেও ছড়াক্কার একটা বৈশিষ্ট্য আছে। সেই বৈশিষ্ট্যই ছড়াক্কাকে ব্যাপক অর্থ দান করেছে। অর্থাৎ ছড়াক্কায় ছড়ার লক্ষ্য ছাড়িয়ে কবিতার বহুস্বরে বহু ভাবনায় তা সামিল হতে পেরেছে। এখানেই ছড়াক্কার স্বার্থকতা।



১৪০২-এর ১২ জ্যৈষ্ঠ সতীশ বিশ্বাসের সম্পাদনায় প্রথম ছড়াক্কা ফোল্ডার প্রকাশিত-‘এক ডজন ছড়াক্কা’ নামে। সেই ছড়াক্কার প্রথমটিতেই লেখা হয়েছিল—



‘ নদীর ধারাটা কমছে,বাড়ছে চড়া।



নেই হাসাহাসি


ভালোবাসাবাসি;

আছে যন্তর,

নেই অন্তর;

বৃষ্টি কোথায়? সারা দেশ জুড়ে খরা। ‘

কবি সতীশ বিশ্বাস,ছ্রাক্কার সতীশ বিশ্বাস,সম্পাদক সতীশ বিশ্বাস সেদিন এক নতুন কাব্য সৃষ্টি করার কথা ভেবেছিলেন। দেশজ রীতিতে ছড়াকে কী ভাবে ছড়াক্কায় পরিণত করা যায়-এ ছিল তাঁরই প্রাথমিক পরিকল্পনা। সেই পরিকল্পনার দৌড় থেমে যায়নি। ‘ছড়াক্কা’ নামে পত্রিকাটি চারমাস অন্তর নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে।তাতে ছ্রাক্কা লিখেছেন বাংলা ভাষার প্রথিতযশা কবিরা।বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হয়েছে। অবশেষে ২০১৩র শারদীয়া সংখ্যায় আত্মস্থ হয়েছে ছড়াক্কার সংজ্ঞা। সম্পাদক সতীশ বিশ্বাসই তা জানিয়েছেন ‘আগে সংজ্ঞায় যেখানে ছিল ৬ পঙক্তির ছড়ায়’,পরে সেখানে সেটা বদলে হয়েছে ‘৬ পঙক্তির ছড়া বা কবিতায়’।

আগের ছড়াক্কা নিছক ছড়া,পরের ছড়াক্কা ব্যাপক অর্থে ছড়া ছাড়াও গুরুগম্ভীর কবিতা কিংবা দার্শনিক ভাবনার বিষয়ও। অর্থাৎ বহুমুখীনতায় এর রূপ পালটে গেছে। প্রাজ্ঞ কবিরাও তাঁদের কলম ধরেছেন ভাবনার বহুস্তর বিন্যাসে।এসেছে স্বাধীনতা। আট পঙক্তির ৬ পঙক্তিতে কেউ কেউ রদবদলও এনেছেন। মিলের ক্ষেত্রে পরম্পরা বজায় রেখেও নিজস্বতা এনেছেন।সতীশ বিশ্বাসের সম্পাদিত ‘নির্বাচিত ছড়াক্কা’ হাতে নিলেই বোঝা যায়-এর বৈচিত্র ও গঠনশৈলী।

ছড়ার চর্চা লোকসাহিত্যেই সীমাবদ্ধ।কিন্তু আধুনিক ছড়াতেও নানা বিষয় উপস্থিত হয়েছে। তবে সমস্তই তা শিশুসাহিত্যের বিষয়। শিশুকে ঘুম পাড়ানোর উদ্দেশ্য নিয়েই  কিংবা শিশুর মন ভোলানোর জন্যই ছড়াগুলি রচিত হয়েছে। রূপকথা থেকে কিম্ভূতকিমাকার ছবিসহ ছড়া পরিবেশন সুকুমার রায়ের হাতে নতুন রূপ লাভ করে। তারপর অন্নদাশংকর রায়, সুকান্ত ভট্টাচার্য,সুনির্মল বসু,ভবানীপ্রসাদ মজুমদার প্রমুখ সকলেই ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করেন।  কিন্তু ছড়া সেই ছড়ার গন্ডিতেই আবদ্ধ। হাস্যরস,বিদ্রূপ, নীতিকথা,কল্পনা বর্ণ্না,বিবৃতি  এবং শ্বাসাঘাত প্রধান ছন্দ---সমস্তই বজায় আছে। স্তবক-বিন্যাস,পঙক্তি-বিন্যাস বা পদবিন্যাসেও সমতা নাও থাকতে পারে। কিন্তু ছড়াক্কায় যে ৬ পঙক্তির বাঁধন,এবং অন্ত্যমিল বিন্যাস তার কোনো ব্যতিক্রম নেই। শ্বাসাঘাতের ব্যবহার থাকলেও ক্ষতি নেই। কারণ বাকধ্বণিতে চটুলতা  থাকলেও ছয় পঙক্তির বিন্যাসেই বোধের মাত্রা স্থিতি পায়। হাস্যরস,বিবৃতি, ব্যঙ্গ, কখনও কখনও ছড়াক্কাতে আমদানি হতে পারে যেমন, তেমনি কবিতার মতও বহুবিস্তৃত ব্যঞ্জনাও স্বাগত। বাংলা সাহিত্যে প্রথম যখন সনেট রচিত হয়,তখন কবিরা যেভাবে আসক্ত হয়ে লিখেছিলেন- ‘ভালোবাসি সনেটের কঠিন  বন্ধন/শিল্পী যাহে মুক্তি লভে,অপরে ক্রন্দন।‘ এই ছড়াক্কার ক্ষেত্রেও কথাটি প্রাসঙ্গিক। কারণ,৬ পঙক্তির কঠিন বন্ধনে কবিকে বিন্দুর মধ্যে সিন্ধুকে বন্দি করতে হয়। এটা করা সহজ নয়। পরিশীলিত হাত ছাড়া কল্পনাকে শব্দে শরক্ষেপ করা কঠিন। ছন্দের দিকটি লক্ষ রেখেই  এই প্রক্ষেপন, কারণ তা মর্মকেও আলোড়িত করতে পারবে। ছড়ার বাহ্যিক চটুলতা তার মধ্যে থাকলেও ভাবনার সুদূরপ্রসারী অবগাহন কিছুটা স্তব্ধতার অবকাশ এনে দিতে পারে। ‘নির্বাচিত ছড়াক্কা’র প্রথম ছড়াক্কাটির উদ্ধৃতি দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।

‘তিন তুড়ি দিয়ে আমি আকাশটাকে সাজালাম                                                                       পথভোলা পাখিকে                                                                                                                              ওই দুটি আঁখিকে                                                                                            আমিই বাগানে টেনে এনেছি                                                                                           তুলি ছাড়া দৃশ্যকে এঁকেছি                                                                                                                                                                             দৃশ্যকে আমিই শ্রাবণ বানালাম।‘

কবি সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত এই ছড়াক্কাটিতে তিন তুড়ি দিয়ে আকাশ সাজাবার কথা বলেছেন,যে আকাশটা কল্পনার হয়েও বাস্তব। পাখি শুধু ‘পাখি’ নয়,তা মানবীও হতে পারে। বাগানতো মানব০বসতির আষ্রিয়স্থলও।এইসব দৃশ্য তুলি নয়, শব্দের বৈভবেই কবি এঁকেছেন।যা শেষপর্যন্ত ‘শ্রাবণ’ মাসের বৃষ্টিদিন। একদিকে কল্পনা,শব্দবিন্যাস এবং ভাবের পরিবর্তনশীল রূপকার্থ এটিকে  ছড়ার পর্যায় থেকে উত্তরণ ঘটিয়েছে।   

এউ্তরণটি কবি কৃষ্ণ ধরও উপলব্ধি করেছিলেন বলেই ছড়াক্কাতে তা উল্লেখ করেছেন—

‘লিমেরিকের চাইতে দীঘল পঙ্‌ক্তিতে ষট্‌পদী                                                                         লম্বা খাটো আঁটোসাঁটো                                                                                   দেখনটিও সাচ্চা ডাঁটো                                                                                পঞ্চপদীর ইষ্টিকুটুম                                                                                           চোখে দেখুন চেখে দেখুন                                                                                         যাকে ভেবেছেন গানের পানি,আসলে সে নদী।‘

ছড়াক্কার বৈশিষ্ট্যে তা লিমেরিককেও ছাড়িয়ে গেছে।পঞ্চপদীর চটুলতাও তার নেই।বরং মূল কাব্যস্রোতেরই সমতুল্য যাকে কবি আসলে নদী বলেই উল্লেখ করেছেন। ছড়ায় ছড়ায় তাকে হাতড়ে বেড়ালেও আসলে তা ছড়া নয়-এখানেই তা স্পষ্ট।

উদাসী মনের সঞ্চারীতে প্রেম ও আবেগ,বিরহ ও শূণ্যতার নিরীক্ষণ যেমন ছড়াক্কাগুলিতে আছে,তেমনি আছে আত্মবোধের নানা ভাঙনও।সময়ের এবং সমাজের নানা অভিঘাতের ছায়া এর মধ্যে পড়েছে।কয়েকটি উল্লেখ করলে বিষয়টি পরিস্কার হবে।

মৃণাল বসুচৌধুরী--

‘কোথায় যেন বৃষ্টি পড়ছে অঝোর ঝরন                                                                          কোথায় যেন হৃদয় পুড়ছে                                                                                    একটু একটু ধোঁয়াও উড়ছে                                                                               আপন মনে ঝরছে বকুল                                                                                  ভাঙছে নদীর এ-কূল ও-কূল                                                                                    কোথায় যেন বাজছে বাঁশি হৃদয়হরণ‘

রাণা চট্টোপাধ্যায়--

‘স্নেহ ঝরছে প্রেম ঝরছে এবং কিছু ঘৃণা

এই নিয়েই বেঁচে আছি                                                                                   খেলছি যেন কানামাছি                                                                                         হৃদয়ঘরের দরজা খোলা                                                                               ছয় দশকের এ পথ চলা                                                                                         মন বলছে,প্রাণ বলছে—ডাকছে চিতা রাণা।‘

অনন্ত দাশ—

‘বড় অসহায় হয়ে যাবো তোমাকে হারালে                                                          মানুষেরা সত্যি কি হারায়?                                                                                   পৃথিবীর সব দেশে তাকে দেখা যায়                                                                         জীবন যে কতটা কঠিন                                                                                       মৃত্যু তাকে করে কি মলিন                                                                                           জীবনের সব স্রোত দেখা যায় মৃত্যুর আড়ালে।‘

উত্তরণ চৌধুরী—‘আমার দুটি হাতের মুঠোয় রাখি,আমলকি রোদ ক্লান্ত তিরও জল পিপাসা।বলবি আষাঢ়

উত্তরণ চৌধুরী—উল্লেখ্য ৪টি ছড়াক্কাতেই যে জীবনদর্শনের ব্যাপ্তি, কবিব্যক্তি হৃদয়ের দীর্ঘশ্বাস এবং সূক্ষ্ম আত্মক্ষরণের মীড় বেজে উঠেছে  তা গীতিকবিতা হিসেবেই সার্থকতা পেয়েছে। ছোড়ার বিবৃতি যেমন নেই, তেমনি বর্ণনার একঘেঁয়েমিও নেই। এক গীতল ভাববিন্যাসের উচ্ছলতায় দার্শনিকের অণ্বেষণ ফুটে উঠেছে। আত্মজিজ্ঞাসার স্তর থেকে ব্রক্ষ্মজীবনের শাশ্বতকালীন বোধেরও মাত্রা ধরা পড়েছে। উত্তরণ চৌধুরয় যে রূপক ও উপমায় তাঁর বোধের দরজা খুলতে চেয়েছেন তা সাম্প্রতিক কালের কবিতারই বৈশিষ্ট্যে সমণ্বিত। মহা কাব্য জুড়ে  শব্দভেদী পাখির উড়ান কালের চৈতণ্যে বিন্যস্ত অভিভবই বলতে হবে। ‘আমলকি রোদ’-এ নিজস্ব আরক্তিম লালিত স্বপ্নের মহিমা ব্যঞ্জিত। এভাবেই একটা সমৃদ্ধ কাব্যপথ সৃষ্টির ব্যতিক্রমী উপমান এই ছড়াক্কা।

সতীশ বিশ্বাস যে প্রতিভা থেকে এই কাব্যধারাটিকে বাংলা সাহিত্যে উজ্জীবিত করে একটা নতুন রূপ দান করেছেন,তাতে আজ সকলেই পদার্পণ করেছেন। কিন্তু প্রকৃত জনকের ভূমিকায় একমাত্র তিনিই বিরাজ করবেন। ছড়া নিয়ে বাংলা সাহিত্যে  ভাবনার তেমন অবকাশ লক্ষ করা যায়নি,যতখানি লক্ষ করা গেছে কবিতা নিয়ে। ছড়া নিয়ে যে ছড়াক্কার এই রূপ দেওয়া সম্ভব, তা সতীশ বিশ্বাসই দেখিয়ে দিয়েছেন। আজ তা ফুলে ফলে পূর্ণতা পেয়েছে। আঁটোসাঁটো বাঁধনে সে প্রজ্ঞাময়ী যুবতীর মতো। তার কামিনী-কাঞ্চনে যেমন উজ্জ্বিলতা,তেমনি তীক্ষ্ণতা;যেমন চাউনি,তেমনই পুষ্পবান  নিক্ষেপও। তাই সকল শ্রেণীর স্রষ্টাই তাকে পেতে ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন। সংযমী বা*ধনে গভীর রসধারাকে সঞ্চারিত করে বরং কাব্যেরই একটি নব রূপায়ন ঘটিয়েছেন। ছড়ার বিলক্ষণ সীমিত বিষয়ে বন্দি না থেকে শ্বাসাঘাতের সনাতন মাত্রা নিক্ষেপকে তোয়াক্কা না করেও যে ছড়াক্কা লেখা সম্ভব তা আজ আর কারো কাছেই অজানা নয়। মননশীল পাঠক,পরিবর্তনশীল সমাজ,অস্থির ভাঙনকালের নিরন্তর পর্যটনে এই ছড়াক্কা যে একটা যাদুকরী কৌশলী স্রষ্টার প্রতিভাকে স্থিতি দান করবে,তা বলাই বাহুল্য।











No comments:

Post a Comment