এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

পদ্মাবতী রায় চৌধুরী


মুক্তগদ‍্য



চাঁদরাত গুনছে সময়...

আদিবাসীরা সময় গুনতে জানতো না...ঝুড়িনামা বটের নিচে চাঁদরাত গুনে গুনে সুচাঁদবুড়ি অপেক্ষা সার শেখাতো...

সারাটা রাত আলোয়-কালোয় মহাযুদ্ধের পরে যখন ঘুমঘুম নীলচে কুয়াশা রাতের কালোর চুলে আলতো করে আশা জড়িয়ে দিচ্ছে জুঁই জুঁই ভোর,আমার সে সময়ে ঘুম ভাঙতো হাজার চাঁদরাত আগে ৷ বিছানায় বালিশে ছড়িয়ে পড়তো আশমানী কাঁচভাঙা আলেয়া আর প্রথম আজানের সুর ৷ একছুটে কম্বল সরিয়ে
হূ-হূ শহুরে জঙ্গলে খোলা বারান্দা তখন ফেনার আঁচল জড়িয়ে বাসি আঁচড় ঢাকছে আলগোছে৷ ব্রাম্ভমুহূর্তের সময়ঘন্টা জড়াজড়ি শীতে শেষরাতের আদর সেরে নেয় ৷ বহু যুগান্তর আমি ভেবেছি ...আজানের রং আসমানী নীল ৷

জলন্ত রাত মোবাইলের নীলে তাকিয়ে তাকিয়ে আবার ভোর হয়ে এলো ৷ টার্কিশ কফিতে ঘন উষ্ণতার স্তর ঠান্ডা হাওয়ায় দুলছে, ফার্স্ট প্যাসেঞ্জারের জাফরি গলে যেমন শিরশিরে আদরে কেঁপে ওঠে নদী ৷ ঘুমন্ত বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখছি, রাস্তার মোড়ে বাসগুমটিতে চায়ের উনুনে আগুনের ফুলকি বাতাসে মিশে যাচ্ছে...জনশূন্য রাস্তার চোখে ঘুম লেগে আছে ৷ আর সেই সুযোগে সারারাত তোমার আদরে ক্লান্ত ঘাসের বুক থেকে ঝরে যায় টুপটুপে শীত ৷

তোমার মাপে উল বুনছি,ছুঁতে চাইছি তপ্ত শীত ৷ বুকের ভিতরে জমা দুধের মত টনটন করে কবিতা ৷ টোকা মারলেই লিখে ফেলতে পারি আনমনে ৷ অথচ তোমার বুকের মাপে মায়াপশম বুনতে গেলেই বারবার ঘর পড়ে যায় আর জেগে ওঠে বড় বড় ব-দ্বীপ ৷ একসমুদ্র হিমশীতল স্রোতে দূরত্বটুকু চেটে খায় রোদ...মনে পড়ে,পাঁচটা হিমেল শীত আগে পোস্টার সাঁটানো এলোমেলো চুল তোমাকে ৷ মানুষ আর বইয়ের কালো অক্ষরের ভিড় আড়াল করে চোখের মণিতে দেখা হলে চকিতে ঘটে যায় বিস্ফোরণ ৷ সেই সব মাঠে মেলা আর বসবে না...আমাদের ঘরের তালাচাবি হারিয়েছে কবেই...একা মেহেদি হাসান গুমরে ওঠে...

"এইসব সান্ধ্য চায়ের দোকানে ক্যালিগ্রাফির
মত আত্মহত্যাপ্রবণতা,
তোমাকে বাড়ি না পেয়ে ভুলে যায়;
পৃথিবীতে চিরকাল যুদ্ধ ছিল নাকি শীতকাল ৷"

আজ আবার শূণ্য মাঠের আনাচে-কানাচে বাতাস গুঁড়োগুঁড়ো হয়ে ঝরছে,তোমার-আমার জলন্ত আত্মার থেকে ক-ফার্লং দূরত্বে ৷ প্রতি নিঃশব্দ মিলি সেকেন্ডে আমাদের মনে মনে দেখা হয়...রাতের শেষ মেট্রো ছুটে চলে গরম চায়ের ভাঁড়ের ধোঁয়া কেটে ৷ আমাদের বোবা মুখের দিকে চেয়ে খিলখিল করে হেসে ওঠে রাতভাঙা শীতল চাঁদ ৷ জন্মান্তর ধরে মুখোমুখি বসে আছি,গাঁওবুড়ো বলেছে...দশহাজার চাঁদরাত পেরোলে আমাকে ছুঁয়ে যাবে তোমার নিঃশ্বাস ৷

আমরা চাঁদরাত গুনে চলি...উষ্ণ গঙ্গায় আঙ্গুল ছোঁয়াবো বলে...আলাদা বিছানায়...একই চাঁদভাঙা রাতের নিচে৷

পদ্মাবতী রায় চৌধুরী 

সম্পাদক : "সময়...23:59"সাহিত্য পত্রিকা
দীর্ঘ দশবছর ধরে লেখালেখির নানা ফর্মের চাতালে চারাগাছ বোনা আমার নেশা,বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনই চারণক্ষেত্র ৷ ঝুলিতে দেড়খানা স্নাতকোত্তর ডিগ্রীও আছে যদিও ৷ আপনারা আমার লেখা পড়ে মন্তব্য জানালে ভালো লাগবে ৷


No comments:

Post a Comment