এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

নূপুর সেনগুপ্ত



ছোট গল্প



ফিরে পাওয়া

ঘরে ফেরার সময় বুঝি হল। দিনান্তের আকাশ বলে, এবার এসো আমরা মিলি। সন্ধ্যা বলে - স্নিগ্ধ হও, আমার কাছে এসো, অতল স্নেহে ডুবিয়ে রাখি। সত্যিই কী বলে! 'আমি বলে মিলাই আমি, আর কিছু না চাই'। হ্যাঁ, জীবন যখন ফিরিয়ে দেয়, মনে হয় বৈকী - 'ঘরেও নহে পারেও নহে, যে জন আছে মাঝখানে' এক কৃত্রিম অধিকারের ভাবনায়, যা নিঃস্ব শূন্য, অস্তিত্বহীন অধিকার একমাত্র সাথী। হাহাকার করে ওঠে দিগন্ত।

পার্থ ভালবাসত অতসীকে। প্রথম যেদিন অতসীকে দেখে পার্থ, কোন এক অজানা কারণে ওর মনে হয়, অনেক ছোটবেলায় হারানো মায়ের ছবি যেন অতসীর মুখে জেগে আছে। পার্থর অন্যরকম অনুভূতি হয়। প্রেম শুধু নয়, গোপন এক স্নেহের পরশ লাগে। অতসী পার্থর থেকে পাঁচ বছরের ছোট। ওর স্নিগ্ধ কোমল দৃষ্টি, এবং গভীর উপস্থিতির সুবাস পার্থকে উচ্ছল করেনি কোনদিন, করেছিল ব্যাকুল। আর এই ব্যাকুলতা ভরিয়ে রাখত পার্থর প্রতি অনুক্ষণ। একদিনও অতসীকে না দেখে পার্থ থাকতে পারে না। দৃষ্টির দুরত্ব থাকলেও থাক, তবু দেখা যেন হয়। অতসী তার হৃদয় ভরা ভাললাগার অনুভূতি নিয়ে পার্থর প্রতীক্ষায়।

অতসী পার্থর প্রথম প্রেম নয়। একাধিক নারী তার জীবনে আসে। কিন্তু পার্থ প্রথম খুঁজে পায় প্রেমের অতল অনন্ত অতসীর মধ্যে। ভালবাসে, ভাললাগে। যা পূর্বে অনুভব করে নি। কেটে যায় দিন, কেটে যায় বছর। দুজনের কেউ পারে না ঘনিষ্ঠ হতে পরস্পরের। অথবা অভিভাবকের শরণাপন্ন হতে। কোথায় যেন বাধা! এমনভাবে একদিন অতসীর অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়। পার্থ হৃদয় নিংড়ে সহ্য করে বেদনা। অধিকার তো ছিলই না, তাই ত্যাগের কোন ভাষা নেই। অতসী চলে যায় দূর দেশে। পার্থ একাকীত্ব বোধ করে না, সে ভাবে - আমি তো পরাজিত নই, ভালবাসায় কোন পরাজয় থাকতে পারে না, থাকতে নেই।

চাকরি পরিবর্তন করে পার্থ পৌঁছে যায় অতসীর দেশে। দেখা হয়। আবার সেই একইরকম পরিস্থিতি, উভয়ের অপেক্ষা, শুধুই নীরবতা। অতসী সংসার সামলায় মন দিয়ে। দাম্পত্যেও কোন দ্বিধা নেই। শুধু দিনান্তের একটি সময় প্রতীক্ষার ছোটো একটু অবসর চাই। পার্থ একা। জীবন কাটে। ভালবাসা, ভাললাগা। অতসীকে তো দেখতে পাচ্ছে। দিনের শেষে ঘরে ফেরে, অন্ধকার ঘরে আলো জ্বালে। অধিকারহীনতা আঁকড়ে ধরে। তবু বাঁচতে চায়, যতদিন অতসী বাঁচবে।

নূপুর সেনগুপ্ত

No comments:

Post a Comment