এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

চন্দ্রাবলী ব্যানার্জী


গল্প : ছোট গল্প


ভগ্নাংশ

খুব ক্লান্ত লাগছে নীরাকে, আজ সাড়ে চারটে তেই বাড়ি ফিরে এলো। ফ্যানের স্পিডটা বাড়িয়ে, ব্যাগটা বিছানার একপাশে ছুড়ে ফেলে দিয়ে ধপাস করে বিছানার উপর বসে পড়লো। কপালের চূর্ণ চুল গুলো ঘামে আটকে আছে কপালে। আঁচল দিয়ে কপালটা মুছে নিয়ে, উঠে গিয়ে ড্রেসিংটেবিলের আয়নাতে অনেক্ষন ধরে নিজেকে দেখলো। সত্যি কি সে আগের মতই দেখতে আছে ?
কপালের ঘেটে যাওয়া টিপটা মুছে ফেললো। আবার এসে বিছানায় বসে পড়লো।
সব কিছু এলো মেলো লাগছে, সেটা শারীরিক না মানুষিক উৎপীড়ন বুঝে উঠতে পারেনা। অভয়ের অফিস থেকে আসতে অনেক দেরী, অন্যদিন অভয় আগে ফেরে বাড়ি। নীরাই আজ তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এসেছে।
নীরা উঠে গিয়ে জানলার শার্শীর পর্দাগুলো টেনে দিলো। পড়ন্ত বেলার রোদ এসে পড়ছে ঘরের ভিতর । চেঞ্জ করতে ইছা করছে না, অন্যদিন অফিস থেকে এসেই স্নান করতে ঢুকে যায়, বাইরের সব ধুলো,নোংরা শরীরে আটকে থাকে ।কিন্তু আজ বিছানার উপর বসে আছে অলস ভাবে। অভয় বলে শুচিবাই নাকি নীরার।
আজ অফিসে কাজের চাপ একটু কম ছিল নীরার,  তাই কাজের ফাঁকে ফেসবুক করছিল  নীরা, কাজের চাপ কম থাকলে প্রায় করে নীরা । তার খুব ভালো একজন ফেসবুক বন্ধু আছে, হয়তো তার জন্য বা তার  সাথে কথা বলার জন্যই করে । খুব মায়া হয় তার ওই  বন্ধুর জন্য ।
মানুষটা প্রতিবন্ধী, ট্রেন দুর্ঘটনায় দুপা হারিয়েছে, হুইল চেয়ারটা তার সারা দুনিয়া, আর আছে এই ফেসবুক।
মানুষটা কে কোনো দিন দেখেনি নীরা,  তার নামও জানেনা, প্রফাইলে আছে একটা উড়ন্ত চিলের ছবি আর নাম আছে শঙ্খচিল। নীরা কোনোদিন জিজ্ঞাসাও করেনি তার নাম । মনে মনে ভাবে পা নেই বলেই হয়তো ওই মানুষটা উড়ন্ত চিলের ডানায় ভর করে পুরো দুনিয়া ঘুরতে চায় । হায়রে ভাগ্যের বিরম্বনা, কত অতৃপ্ত বাসনা তার !!!
নীরাও কোনো ছবি দেয়নি ফেসবুকে শুধু নামটাই দিয়েছে । নীরা সেই মানুষটিকে শঙ্খ বলেই কথা বলে । শঙ্খ অনেক দিন ধরেই একটা ছবি চাইছিল নীরার,  দেবো দেবো করেও দেওয়া হয়ে ওঠেনি নীরার। ফোনে কোনো ভালো ছবি ছিলোনা, ভর্তি হয়ে আছে অফিসের নানা রকম ডকুমেন্টসে । আজ নীরা ঠোঁটে হাল্কা করে লিপস্টিক দিয়ে খুব সুন্দর করে একটা সেলফি তুলে শঙ্খকে পাঠিয়ে ছিল । অনেক্ষন পর শঙ্খ একটাই  উত্তর দিয়েছিল, তুমি একই রকম আছো  তাথৈ, একটুও পাল্টাওনি। শুনে অবাক হয়ে গিয়েছিল নীরা,  কে ও, কি করে জানলো এ নাম টা  ?
এখন কেউতো এ নামে আর ডাকে না, নীরা তরিঘরি ম্যাসেজ করলো, কে তুমি ? তোমার নাম কি  ?
কিছুটা সময় পড়ে পালটা জবাবে নীরা একটা ছবি পেলো, গোলাপী ফ্রক পড়া একটা মেয়ের ছবি  ।কিছুটা ঝাপসা,  একটা গ্রুপ ছবি থেকে তোলা ছবি সেটা বোঝা যাচ্ছে। একি !!!! এতো নীরারই ছোটো বেলার ছবি ।  এটা কবে তুলেছিল নীরা ?
এটা কোথায় তোলা ? কে তুলেছিল  ?
ব্যাস্ত হয়ে নীরা আবার ম্যাসেজ করলো,
তোমার নাম কি? তোমার ছবি আমাকে পাঠাও, কোনো উত্তর এলো না,  নীরা ব্যাকুল হয়ে বার বার ম্যাসেজ করলো,  কে তুমি ? তোমার নাম কি ? তোমার ছবি পাঠাও?  যথারীতি কোনো উত্তর এলো না । কিছু মুহুর্ত পরেই ফেসবুক আইডি টা নিস্ক্রিয়  হয়ে গেলো । নীরা স্তম্ভিত হয়ে গেল। একটা প্রশ্ন তার মনে, এ কে ছিলো যে নিজেকে নীরার থেকে আড়াল করলো  ?

চন্দ্রাবলী ব্যানার্জী
কলকাতা-৬০, বেহালা

1 comment:

  1. খুব ভালোলাগল... এক নিশ্বাসে পড়ার মতো গল্প। সব শঙ্খ বোধহয় এমন কোন এক নীরাকে সযত্নে রাখে মনের গভীর থেকে গভীরতম প্রাসাদে...!

    ReplyDelete