এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

জ্যোতির্ময় রায়


উপন্যাস (ধারাবাহিক)


এবং তারপর আমি

(প্রথম পর্ব )
নীহারিকা তোমায়

                              এক

"I love you "
কথাটা খুব ছোট্ট না  ? আচ্ছা ভালোবাসাটা কি ওতো সহজ ?
এমনি এমনি কি ভালো বাসা হয় .... চাইলেই ?
একটা space চাই ....  খোলা উৎমুক্ত একটা আকাশ ,খাঁচার পাখি মেলবে ডানা ,অবাধ ঢেউ আছড়ে পড়বে তীরে ... হিমালয় বেঁয়ে গঙ্গোত্রী নামবে ,সবুজ ফসলে ভরে যাবে মনের প্রান্তর ।
কই সেই সেই যায়গা ... "নীহারিকা " যাও তোমার নাম নীহারিকা দিলাম ।
উল্কা পাত না হয় হলো ... না হয় আমার পৃথ্বীর বুকে ক্ষত চিহ্নে প্রেম আঁকা হলো .... তাতে ক্ষতি নেই কোনো  ॥
ভালোবাসা শব্দটা সত্যি সহজ , সরল ,  বলো ?
হয়তো সহজ ,সরল রেখা একটা ... বক্ররেখা হয়ে বৃত্ত বানায় তারপর কেন্দ্রে  থাকে হিসাব ... কে কতোটা আকাশ পেল ,কে কতো টা মাটি ? চাওয়া পাওয়া এন্টি log এ ... সমাকলন  সাজায় শূন্য থেকে ইনফিনিটি... ॥
তবুও প্রেমে পরে  ,প্রেম হয়... ভালো বাসে ... ঘর সাজায় ,স্বপ্ন  সাজায় মনের ব্যালকনিতে গল্প হয় কথা ... ।
আচ্ছা নীহারিকা তুমি বলো কোন দিকে যাবো আমি ... বাম অলিন্দে  না ডান  অলিন্দে  ... কোন সেই পথ ? যে পথ এভারেস্ট এর গায়ে লিখে বেনামী চিঠি ... রক্তে চাপ বাড়ে , কিছু ... বারুদ আছে কি বলো তাতে ... আগুন ?
হৃদয় জ্বলবে ... ভালোবাসা কি পাবে  ধর্ষিত মন ... ॥

                               ( দুই)
       
" তুই কি পাগল হলি নাকি ? কি সব বলছিস ? কিছুই তো  বুঝতে পারছি না  ,সত্যি তোর মাথা গেছে ডাক্তার দেখা গিয়ে  ... ।
ঠিক বলেছো নীহারিকা মাথা গেছে হয়তো আমার ,হয়তো আমি আমি এই পৃথিবীর কেউ নই ,এই বদ্ধ খাঁচায় আমার জায়গা হবে কি ? আমি তো উড়তে চেয়েছি ,ভালো বাসতে... কাছে আসতে ,শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে যেমন বাক্য হয় আর তাতে দিয়ে কবিতা ... সমুদ্র ... পাহাড় ,নীল আকাশ
মেঘ ,বৃষ্টি ... হ্যাঁ আমি বৃষ্টিতে ভিজতে চেয়েছি আরও আমার শরীরে প্রতিটি লোম কূপ জানবে তার ছোঁয়া ,সুড়সুড়ি দেবে ,আর আমার লোম খিল খিল করে হেসে উঠবে ... ।
"বুঝলাম না কিছু  ,যা তো  আমার অনেক কাজ আছে ,তোর ভাট বোকা এবার একটু থামা please কাল  আবার অ্যাসাইমেন্ট জমা দিতে হবে ,তোর তো সব কমপ্লিট তাই না রে ? "
" জানি তুই বুঝবি না আমার কথা ,আমার নামের সামনে যে কবি শব্দটা যুক্ত হয়ে গেছে ,কবিরা কখনো সহজ কথা কঠিন করে বলে ,আবার কখন কঠিন কথা সহজ করে বলে যে ,আমি সহজ কথা গুলো না হয় কঠিন করে বললাম।  এই কবি শব্দটা যে কতো ওজন আগে জানতাম না ,জানলে কোনো দিন কবিতা লিখতাম না ... আসলে কি জানিস আমি হয়তো লিখছি না কবিতা গুলো ,মনের মধ্যে যখন কথা জমে ,প্রশ্ন জন্মায় ,উত্তর মেলে না বেশির ভাগ সময় ... ঠিক তখনি ভূমিকম্প হয় ,ঝড় উঠে ,ডিপ্রেষণ ,শব্দ মালা বলে ভাষা দাও ,থেটিস থেকে হিমালয় জেগে উঠে তখন ,কেউ যেন লিখিয়ে নেয় কথা ,আর আমি লিখতে থাকি । আসলে যে আমি মনের কথা সবার মতো সহজ করে বলতে পরি না ,তাই কবিতা হয়ে যায় কথা ... ॥ "
"আমি যে বললাম অ্যাসাইমেন্ট লেখা হয়েছে  ? "
রোজ তো লিখছি আমি ,জীবন নিয়ে ,ব্যর্থতা নিয়ে
'আরে পাগলা seminer আছে যে ,তার ?'
"নাহ !"
আমি বলেছি না আমি এই পৃথিবী বন্দী খাঁচায় ,একটা মুক্ত আকাশ চাই ,একটা স্পেস কথা বলার ? কই সে জায়গা ? আমি তারই খোঁজ করি শুধু “



                    (তিন)

"হলো তোর ভাট বোকা ,আমাকে বিরিয়ানী খাওয়াবি কবে বল ? "
"খাওয়াবো তবে শর্ত আছে "
"কি শর্ত শুনি"
"কিছুই না শুধু তুই আমার পাশে বসে আমার সামনে খেতে হবে ,আমি তোর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকবো শুধু ,আর নিজের পৃথিবীটা খুঁজবো "
"যা তো এখান থেকে ,তোর গলা টিপবো আমি ,আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার লোক আছে ,আর তোর তো আছে ডেকে নে ওকে ,ও জানলে কিন্তু... "
"জানবে জানবে কি হবে ,break up ,তা তো রোজ হয় ,আবার ঠিক হয় ,"
"বাহবা !এতো প্রেম ? "
"হম্ম ! এতো টাই ,তবে সেই জায়গাটা নেই ... একটা মুক্ত আকাশ ,একটা প্রান্তর ,একটা সমুদ্র নেই ... একটা ছক কাটা সাদা কাগজে আটকে গেছে কথা গুলো ,ভালো লাগা গুলো কিন্তু গোলাপ ফোটায় ,ভালোবাসাও আছে একটু টুকরো বরফ নীল কাঁচের গ্লাসে ভাসছে ,টাইটানিক কিন্তু এখনো ডুবে যায়নি ... অন্তরীপ খুঁজছে ... একটা প্রবাল প্রাচীর ডিঙিয়ে ॥ "
"কি যে বলিস কিছুই বুঝি না !"
"বুঝবি না ... আচ্ছা কবিরা কি সত্যিই পাগল ? সত্যি কি আবোল তাবোল বকে ? যুক্তিহীন ... নাকি আবেগে ? শুনেছি কবিরা প্রেমিক হয় ? তবে আমি কি কবি নই ? নাকি প্রেমিক নই ? ... তবে কেন চশমা খুললেই দেখি বদ্ধ খাঁচায় ইঁদুর দৌড় ... হারিয়ে যাচ্ছে ভালোবাসা রোজ ,চারিদিকে শুধু যন্ত্রনা ,কান্না আর ধ্বংসের প্রতিচ্ছবি ... তার মাঝেই শুকনো গোলাপের পাপড়িতে ইতিহাস লিখছি ..... । আর হৃদয়টা জমে হিমালয় । তবে এই নয় যে ভালোবাসতে জানি না  ... ভালো তো রোজ বাসি তাকে ,রোজ প্রেমে পড়ি ,তার চোখে পৃথিবী আঁকি ... কিন্তু মুক্ত আকাশ পাই না । "
"তোর মাথা সত্যি গেছে ... । চল কাল viva আছে, পড় গিয়ে ,আমার কিছুই পড়া হয়নি ,আমাকে পড়তে হবে ,বাই টাটা "

"টাটা "



##
হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠলো প্রিয়মের ।
১১ .৩০ এই যা !অফিসে যেতে হবে তো  । আজও লেট । কালকে পেটে পড়েছিলো তো ঘুমের সঙ্গে ,স্বপ্নটাও বেশ জমে উঠেছিলো ... ।
একি  একটা অতি চেনা অথচ পুরোনো একটা নাম্বার  ,দুটো misscall
লাস্ট কত বছর আগে কথা হয়ে ছিলো মনে নেই হবে পাঁচ-ছয় বছর ,তারপর ইতিহাস ,কতো চেনা এই নাম্বারটা  ... অথচ আজ পুরোনো অনেক ,তবে হঠাৎ কি মনে করে বেঁচে আছি না নেই সেইটাই জানতে কি ,তবে ?
নাকি ..... ।
            

                         (চার )


"ফের বলবে কি রে তোর প্রেম কেমন চলছে ,কেমন আছে অনামিকা ,আর শ্রেয়সী এর খবর কি ,ফোন করে ? "
আর আমার সেই এক উত্তর ..." সব ভালো আছে ,শুধু পৃথিবীতে আকাশটা  নেই উড়ার মতো "
" তুই না ... সত্যিই  ,দেখ ভালো বাসা ও ভাবে হয় না ,যে কোনো এক জন কে ভালো বাসতে হয় , ও ভাবে কোনো সম্পর্ক টিকে না । তুই ডিসাই কর কাকে তুই চাস ? শ্রেয়সী নাকি অনামিকা ? শ্রেয়সী তো চলে গিয়েছিলো তোকে ছেড়ে। এখন তোর নাম হয়েছে ,অনেক পরিচিতি । আর এসে সে এসে আবার চলে যাবে না তার কোনো গ্যারান্টি কি আছে । আর অনামিকা খুব ভালো মেয়ে ,তোকে ভালো বাসে খুব । দেখ তুই কি করবি ? "
"আমি একটা নিজেস্ব পৃথিবী চাই,একটা নিজেস্ব আকাশ ,উড়বো বলে ... । "

আজ একটা ছোট্ট মেডিকিন কোম্পানীতে চাকরি করে প্রিয়ম । হঠাৎ নীহারিকার নক্ষত্র পতন হবে কে জানত ? হঠাৎ ৬ বছর পর  কি মনে করে ?
নাহ ,ফোন করেনি ঘুরে তাকে ।
একটা নিজেস্ব পৃথিবী চেয়েছিলাম ,পাইনি  ,আবার সেই এক ঘেয়েমী জীবন ,অফিস ,বাড়ি ... ট্রাম বাসে পিসে যাওয়া জীবন । নাহ আর কবিতা পায় না ,না আর জোর জবরদস্তি করে লিখে না কবিতার আজ মৃত অনুভূতির সাথে সাথে । আজ শুধু রক্ত উঠে মুখে কথার পাহাড় হিমালয় হয় ,বরফ জমে ,গঙ্গোত্রী ... ভাসিয়ে নিয়ে যায় বুক রোজ ,বৃষ্টি কিন্তু হয় না  আর ,মেঘ জমে ,জমাট কালো মেঘের আড়ালে নীহারিকা ,বা শ্রেয়সী বা অনামিকা এক একটা বিদ্যুৎ এর ঝলকানিতে হারিয়ে যায় মুখ ... । আর আমি নৌকা বানাই ফের ,আবার বেনামী চিঠি ... আর গোলাপ সিগন্যাল ……।


                 (পাঁচ )


আজ একটা সত্যি কথা বলবো তোমায় । নীহারিকা ... ও নীহারিকা ? শুনতে পাচ্ছো কি ? হয়তো না। তুমি তো অন্য পৃথিবীর মানুষ এখন । আমি ভিন দেশী তারা । তোমায় আমি ভালো হয়তো বাসি না ,প্রিয় বন্ধু যে তুমি ,সেই যে প্রেম বলে লোকে ন্যাকু ন্যাকু কথা ,এসবের উর্দ্ধে তোমার অবস্থান । এভারেস্টের চূড়ায়  টাইটানিক পোজ তোমাতে মানায়  ॥ খাঁচার পাখি আকাশ পায় ,কথা গুলো ভাষা পায় । অথচ সত্যি বলছি তোমায় ভালো বাসি না আমি  ,সেই ক্ষমতা হয়তো আমার নেই । তবে তোমার চোখে তাকিয়ে থাকতে হয়তো বারণ নেই ,তোমার শরীরের গন্ধটা গোলাপের গন্ধকে হার মানায় । তাই রহস্য আমার কাছে তোমার শরীর ,তোমার মন ,তোমার সব কিছুতেই ॥ তোমার ঘামের গন্ধে পারফিউম হতেও ইচ্ছে করে আমার । তোমার হৃদয়ে মাথা রেখে ইচ্ছে করে তোমার পাহাড়ে হেঁটে বেড়াই  । তোমার নাভি পদ্মে হয়ে ফুটতে ইচ্ছে হয় মাঝে মাঝে ,নদীতে সাঁতার কাটি
আমার ঘাম বৃষ্টি হয়ে যায় ... রহস্য সমাধান হয় না । দূর্বা ঘাসের সুড়সুড়িতে খিলখিল করে উঠা শরীরের বিষাক্ত লাভায় .... শেষ চিঠি লেখা । নীহারিকা তুমি থেকো ভালো আকাশে ,তুমি বলতে না  মেঘ সরিয়ে সূর্য উঠবে
উঠছে ... ঘন গাঢ় লাল রঙ্গা একটা সূর্য আমার আকাশের  বুকে ,রাতের তারারা সেই সূর্যের আড়ালে হারিয়ে যাবে একদিন ॥
রহস্য তবুও থেকে যাবে হয়তো .... । ।


(ক্রমশ)

********
চিত্রাঙ্কন
আমার জীবনের প্রথম স্কেচ ।
পেন্সিলের টানে আজ  এঁকেছি
আজ তোমায় আমি ।
তোমার চোখ আঁকতে এক আকাশ মেঘ
 লাগবে আরও ,বুঝে নিও সস্তা কিছু
সত্যি মিথ্যের থেকে কতটা তুমি দামি ?।।

********

জ‍্যোতির্ময় রায়

লোহাগঞ্জ, কুশমুন্ডি
দক্ষিণ দিনাজপুর
জন্ম - ১৯৯৬
বর্তমানে মেডিসিন নিয়ে পাঠরত
BCDA College of Pharmacy and Technology তে।

No comments:

Post a Comment