এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

মৌসুমী রায় ঘোষ


গদ‍্যকবিতা



রসুই কথা

সরষের ঝাঁঝে ভরা রান্নাঘরটা, আগুনতাতে তিতো। প্রতিদিন নানা রকম পরিপাকস্বাদে জিহ্বা গেয়েছিলো আগমনি গান। কোনো শুরুকাল থেকে। তারপরের যাত্রা শুধুই তারতম্যের বিস্তার। চমকের নানা রেসিপিতে লেগে থাকে লালা। স্বাদকোরকের ইঙ্গিতে ভেঙে যায় জারিত হয়ে। যখন বর্ণমালায় পড়েছিলাম জরায়ুর কথা, অন্ধকারে আলো জ্বলেছিলো। প্রাণোচ্ছল এক বাঙ্ময়তা পরিবেশিত হচ্ছিলো পলকে পলকে। আর উঠে আসছিলো রক্তস্রোত অনর্গল। কোলাহলমন্ডিত পরিবেশ।  বাকতারারা আকাশসংক্রমন এড়িয়ে বিশ্রামরত।



ক্লান্ত নাসারন্ধ্র

পেঁয়াজ ছাড়া রান্না আমিষ পুজোর কাজে লাগে। লাল গ্রেভি চাতালে ভেসে যায়। বিছানার পাশে মন খারাপের বাটনটা অন হয়ে গেছে। অলস পা বাড়িয়েও তাকে অফ করা যাচ্ছে না। ইতিহাস ফিরে আসে অভিমানী প্রিয়ার মতনই। বুক ভরা থাকে রক্তপাত যন্ত্রণা। পুজোর ড্রাম পার্টির ছোকরা গুলোর নাচের প্যাটার্নে গান গেয়ে যায় শীতের কোকিল। আমার বহুবছরের প্রয়াস আজ শুনেছে পুর্বপুরুষের দীর্ঘশ্বাস। তার সাথে নদীর টাটকা মাছের ঝোলের একটা ঝাঁঝালো মিষ্টি সুবাস মিশে আছে। বাংলা ক্লাশের পানসি বেয়ে প্রবেশ করছি ইতিহাসের প্রাচীন অধ্যায়ের শেষে। যেখানে কুরুবকের সাথে মিল হয় যমরাজের। আর মস্তকের পঞ্চত্ব প্রাপ্তির অনেক আগেই মাটি ধরে নেয় হাত। মুঠোর মধ্যে মাংসল অনুভুতির শিহরন সমুদ্রের লোনাস্বাদ বাড়াতে থাকে। ভাসমান জলের গভীরে লবনচাক দানা বাঁধে অসংখ্য জলজীবন। যেমন হঠাৎ শুরু হয় ধুকপুকুনি। নাসারন্ধ্রের ঝড়ে উড়ে যায় মাস্তুল ডুবো পাহাড়ের খোঁজে। বায়ুমন্থন সেরে ক্লান্ত মেঘ শুয়ে থাকে বৃষ্টি জড়িয়ে। নিঃসঙ্গতা ভেঙে একটা তরঙ্গ কখন যেন হাইওয়েতে মিশে যায়। সাইরেনে বিধ্বস্ত, অদৃশ্য রেলিং-এর ঘর্ষনের শব্দ প্রকৃতি শুষে নেয়। যে বীজ থেকে আমরা জীবন চেটে খাই, মাঝে সাঝে বদ হজমের দমক। হেঁচকি চেপে ঢোক গেলা প্রচেষ্টা।


ভাবের ঘোরে কেটেছিলো কাল

মাতৃপ্রহরগুলো একসময় কেটেছিলো আকাশ মুর্তির শীতলতা নিয়ে। স্মৃতিযান যখন চাঁদের স্লেজ বেয়ে পৃথিবীতে নেমে আসে, কোনও আওয়াজ শোনা যায় না। কেবল চলৎশক্তিহীন কিছু বোবা প্রাণী খরগোশের মতো সময়গর্ভ খুঁড়তে থাকে প্রাণপণ। রেণুর সাথে ধুলো যেভাবে মিশে থাকে জানান দিয়ে যায় আক্ষরিক বাৎসল্যের। আমায় ডাকবার ঠিক আগের পরিস্থিতিতে মগ্নকাল কেড়ে নেয় অপার্থিব প্রাণ। সুস্থ সুন্দর পরিস্থিতির চাপে ঘরঘর চলতে থাকে যন্ত্র। সুতো কেটে বেড়োয় রেশমগুটি জ্যোৎস্নাললাট সঙ্গে নিয়ে। ডানা মেলে দেয় উত্তাল ঢেউয়ের মাঝে। জলপরিরা শুনতে থাকে ডানা ঝাপটানো গান, অতীতের জঠর থেকে।


মৌসুমী রায় ঘোষ

পি-৬২, কালিন্দী হাউসিং স্কীম,
কলকাতা- ৭০০০৮৯

No comments:

Post a Comment