মুক্ত গদ্য
আমার স্বীকারোক্তি
নাম:— প্রনবেশ চক্রবর্ত্তী
(পুরুষ)
আমার বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হলদিয়াতে৷ কনফেসানের সময় ২০০৬ সালের ২৫ ডিশেম্বর৷ তখন আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি৷ হলদিয়ার টাউনশীপের কাছে একটা রামকৃষ্ণ মিশন আছে৷ যেখানে কল্পতরু উৎসব হয় এবং এই উৎসব উপলক্ষে পূর্ব মেদিনীপুরের সমস্ত স্কুলের ছাত্র/ছাত্রী এবং শিক্ষক/শিক্ষিকাদের আমন্ত্রণ করা হয় (এখনো হয়) এবং আগত স্কুলের ছাত্র/ছাত্রীদের দ্বারা বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়াএবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় এবং বিজবি দের পুরস্কারও দেওয়া হয়৷
এগুলো গেলো তথ্য। এবার আসল ঘটনাতে আসি:-
ফাইভ থেকেই আমি ওখানে যেতাম, স্কুলের হয়ে আবৃত্তি করা এবং বিবেকানন্দ সম্বন্ধে রচনা লেখা, এই বিভাগে অংশগ্রহন করতে ৷ আমার আরো কয়েক জন সহপাঠীও যেতো। তো সেবার রচনা লেখা শেষ হবার পর যখন আমি রুম থেকে বেরুচ্ছি সবাই তখন রুমের বাইরে চলে গেছে৷ (আমি সবার শেষে বসেছিলাম) যিনি পরীক্ষক ছিলেন তিনিও চলে গেছেন৷ আমার সামনে ঠিক দুটো বেঞ্চ, আগে একটা রোলেক্স(পরে জেনেছিলাম ওটা রোলেক্সের ঘড়ি এবং দাম অন্তত হাজার দশেক) এর ঘড়ি পড়ে আছে দেখলাম। আমি ঘড়িটা নিয়ে যখন বাইরে এলাম বেরিয়ে এলাম তখন কেউ ঘড়িটার খোজ করছেকিনা দেখার চেষ্টা করছিলাম, আমার পরিক্ষক কেও খুঁজছিলাম, একটু দাঁড়িয়ে আপেক্ষাও করলাম ঘড়ির মালিক/মালকিন এর জন্য৷ কেউ আসেনা অগত্যা সোজা ওয়াশ রুমে চলেযাই৷(প্রশ্ন করবেননা ওয়াস রুমে কেনো গেছিলাম)
এবং আমার ওই পরিক্ষা রুম থেকে বেরোনোর কয়েক মুহুর্ত পরেই যার ঘড়ি সে নাকি ঘড়িটা খুঁজতে রুমে আসে৷ সঙ্গে ওই পরিক্ষক৷ ওই রুমে আমায় নিয়ে ২৪জন ছিলো, তিনটি স্কুলের ছাত্র ছাত্রী। আমি বাদে সবাইকে নাকি ডাকা হয়েছিল এবং জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কেউ দেখেছে কিনা ঘড়িটা? (পরে বাসে শুনেছি) তো যদি আমার কাছে থাকে কেউ দেখবে কি ভাবে...
যাই হোক
ফিরে এসে স্যার এবং বন্ধুদের খুঁজতে অনেক সময় লেগেছিল আর সবাই কে খোঁজার তাড়াহুড়োতে কুড়িয়ে পাওয়া ঘড়ির কথা বেমালুম ভুলে গেছি । এদিকের এতো ঘটনা আমি কিছুই জানি না। বাসে করে বাড়ি ফেরার সময় বাস ভাড়া দেয়ার জন্য পকেট থেকে টাকা বের করতেই
ঘড়িটা পড়ে যায়। তখন আমার কথা কেউ শোনার প্রয়োজন মনে না করেই ধরে নিল আমি চোর৷ ওরা একাধিক ব্যাখ্যা দ্বারা প্রমানও করে দিলো আমি চোর৷ যদিও ঘড়িটা তখনি আমার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হয়নি৷
ওই দিনটা ছিল সোমবার। এবং পর দিন সকালে স্যার, যিনি ওই দিন সঙ্গে ছিলেন। তিনি আমার বাড়িতে এসে সমস্ত ঘটনা বাড়ির সবাইকে জানান ।তারপর যা হওয়ার তাই হলো। কেউ আমার কথা বোঝার চেষ্টা করেনি৷ যাই হোক ওই দিন বাড়ি থেকে স্যার ঘড়িটা নিয়ে যান৷ আর সমস্ত ঘটনা সারা স্কুলে দায়িত্ব নিয়ে জানিয়েও দেন স্যার এবং আমারই পাশের বাড়ির বন্ধুরা৷ ভালোই করেছিল আসলে ওই দিন ওই শিক্ষাটা না পেলে হয়তো একই ভুল আমি আবারো করতাম৷ তবে যাই হোক ঘড়িটা একটা মেয়ের ছিলো, এটা স্যার বাড়িতে বলেছিলেন৷ তবে যার ঘড়ি ছিলো, তাকে আমার বলার ছিল সত্যিই আমি চুরি করিনি৷ পারলে আমার ক্ষমা করুন৷ জানি না সে বিশ্বাস করত কিনা? আর হ্যাঁ স্যার ঘড়িটা ঠিক কি ভাবে পৌঁছে দিয়েছিলেন আমি জানি না৷ জানতে চাওয়ার মত সাহস ছিলো না। কারন তত দিনে আমি মাত্রাতিরিক্ত অসন্মানিত হয়েই গিয়েছিলাম৷ মাথা তুলে কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলাম না৷ যাই হোক প্রতি বছর এই সময় এসে কথাটা খুব বেশি মনে পড়ে৷ আজ সবাইকে বলতে পেরে খুব হাল্কা লাগছে৷ তবে হ্যাঁ আর যার ঘড়ি সে যে এই কনফেসন কোনো দিনও দেখতে পাবে এমন আসাও আমি করি না। হ্যাঁ আমি সত্যিই আজ একটা বোঝা নামিয়ে ফেলতে পেরে খুব সুখি এবং খুশি৷
সবারই এরকম না বলতে পারা কিছু আনুভুতি থাকে সেগুলোকে একবার নাড়া দিলাম এই ঘটনায়৷
ধন্যবাদ ভালো থাকবেন সবাই
৮/১/১৮
প্রনবেশ চক্রবর্তী (কুমার প্রনবেশ) |
পিতা—প্রদীপ চক্রবর্তী
মাতা—কৃষ্ণা চক্রবর্তী
জন্মসাল—১২ই ফেব্রুয়ারী ১৯৯৪
জন্মস্থান—পূর্ব মেদিনী পুর জেলার
তমলুক মহকুমায়।।
মামার বাড়িতেই কেটেছে শৈশবের কিছুটা সময়৷
দ্বিতীয় শ্রেনীতে ভর্তি হওয়ার সময় চলে আসা।
নিজের বাড়ি পূর্বমেদিনী পুরের হলদিয়া মহকুমার শোলাট গ্রামে৷
মাতা—কৃষ্ণা চক্রবর্তী
জন্মসাল—১২ই ফেব্রুয়ারী ১৯৯৪
জন্মস্থান—পূর্ব মেদিনী পুর জেলার
তমলুক মহকুমায়।।
মামার বাড়িতেই কেটেছে শৈশবের কিছুটা সময়৷
দ্বিতীয় শ্রেনীতে ভর্তি হওয়ার সময় চলে আসা।
নিজের বাড়ি পূর্বমেদিনী পুরের হলদিয়া মহকুমার শোলাট গ্রামে৷
শিক্ষা—ভূগোল স্নাতক
সম্পাদক 'কল্পনা' পত্রিকা
No comments:
Post a Comment