এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

পায়েল পাসোয়ান


কবিতা : সাধারণ বিভাগ


প্রত্যাশা

প্রত্যাশার আজ পরিচয় পাল্টানোর দিন
চারিদিকে ব্যস্ততা,
হুড়োহুড়ি- আনন্দে মেতেছে বাড়ি
আত্মীয়-সজনে আপনে-আপনে
কতই যে উল্লাস।
আনন্দের এই প্লাবনে যেখানে গা ভাসিয়ে দেওয়ার কথা প্রত্যাশার
সে কেন উপরের ঘরে যেখানে মিষ্টি রাখা
ঠিক তার পিছনের বেল্কুনিতে
দেওয়াল ঘেঁসে বসে?
ওর কি তবে শরীর ভালো নেই,
না শেষ বারের মতো
নিজেকে সময় দিতে বসেছে
কাছ থেকে গিয়ে দেখি একি অবাক কাণ্ড
হাতে যেখানে গাছকৌটো থাকার কথা
সেখানে নাকি এল লালরঙের ছেঁড়া সুতো!
এও এক ইতিহাস,
অনেক ভালোবেসে তার গলায়
মানত করে পড়িয়ে দিয়েছিল প্রজ্জ্বল।
প্রতিজ্ঞা গুলো যখন উচ্চারিত হয়েছিল
তখন তাতে প্রানের কোন অভাব ছিলনা
দুজনে গড়ে ছিল নীড়,
একজন ছিল ঘুম অপরজন তার স্বপ্নরাজ্য
প্রত্যাশার সমস্ত আশাও ছিল
সব পেয়েছি আসর এর মত প্রজ্জলিত।
কিন্তু আজ ডাক পরে যায়,
মা তুই এবার নিছে নেমে আয়
গলায় পরতে হবে আকন্দের মালা।
গালে অশ্রূর শুস্কদাগ নিয়ে,
সুতোখানি মুঠোয় চিপে ধরে
উঠে দাঁড়ায় প্রত্যাশা।
আজ এই পরিচয় পাল্টানোর দিনে
সিঁড়ি বেয়ে নামা এক একটি পদক্ষেপ যেন
তাঁর আঁকড়ে থাকা মুহূর্ত গুলোকে উপড়ে ফেলে আসা
গতি বড়ই ধীর-শান্ত এক ঝড়
শিরায় বাড়ে রক্তচাপ, গভীর নিশ্বাস
বড় আদরে বাবা তারে নাম দিয়েছিল প্রত্যাশা
তাই স্মৃতির চাদর গায়ে মুড়ে সামনে দাঁড়ায় বাবার
বাবা জিজ্ঞেস করে এতো বিলম্ব কেন মা?
আয়, আয় কাছে আয় শেষবারের মতো আগলেনি তোকে
বুকে মাথা রেখে,
আত্মস্থের স্তব্ধতায় বলে ওঠে,
ঠিক আছি আমি তোমাদের প্রত্যাশা।




ফিরে দেখো

ফিরে এসো। না একথা আর বলবনা
তবে ফিরে দেখো আমারে একবার
আমাদেরই স্মৃতির মাঝে
জানি আজ ঝাপসা সব, নীরব ইতিহাস
পিছুটান গুলোও আর পিছু-টানেনা
সময় পাখিতো আর থেমে নেই
উড়ে গেছে কোন অচেনা ঠিকানায়

তবু ফিরে দেখো
কিভাবে দাগ পড়ে গেছে ঠোঁটের ওপর
না বলা কথা গুলোর
কিভাবে বসা বসা এই চোখের
দৃষ্টিরা আজও তোমাকেই খোঁজে
কি নির্বোধ অরা , চেয়ে থাকে মানুষের ভিড়ে
হয়তো সেই প্রথম বারের মতো
হয়তো আবার সেই মুখখানির
দেখা যদি পায় একবার
বিরাম নেই বিরাম নেই, ব্যর্থ এই প্রচেষ্টার।
তবু ফিরে দেখো
কি ভাবে চিৎকার করে, আমার নিঃশব্দের শব্দগুলো
অনুভুতি গুলো আজ কতো অসহায়
শুধু তুমি গেছো বলে
তবে আরও বলি শোনো
দিয়েছ যখন সাড়া কারোর উষ্ণদেহের উষ্ণতায়
একলা ঘরে, নিশ্চুপরাতে ঘিরেছে আমায় বিষাদ
ঝরেছি আমি, হ্যাঁ আমিও ঝরেছি
তুষারের মতো ঝরেছি আমি,
আমাদেরই স্মৃতির চারপাশে
অট্টহাস! একেই বলে নিয়তির অট্টহাস
তবে এখানেই শেষ নয়,
দেখো তুমি ফিরে
বাকি আছে এক উপসংহার
ভাঙ্গাগড়ার মাঝে, স্মৃতি দিয়ে ঘেরা
ভাসছে এক তরী, নিশ্চিত বিশ্বাসে
ফিরে দেখা তোমার, গড়বে আমার
ত্রিভুবন জুড়ে ভালোবাসার পরিচয়।

পায়েল পাসোয়ান
ছাত্রী- স্নাতকোত্তর, তৃতীয় সেমেস্টার

No comments:

Post a Comment