এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

গৌতম সমাজদার



কবিতা (সাধারণ বিভাগ)



সান্ধ্য 

চোখে চালসের চশমা।

দিগন্তে মিলিয়ে যাওয়া অস্তরাগ,

সঙ্গীতের মূর্ছণায় ভেসে যাওয়া গোধূলি।   

এপার ওপার ঝাপসা হয়ে আসা লুটপাট-  

শরীরের প্রতিটি অঙ্গে লুকিয়ে  থাকা লজ্জা!

গাছের সবুজ পাতায় ঢেকে  যাওয়া অবয়ব,

মাদলের তালে নেমে আসা আলগোছ সন্ধ্যা।

তোমায় ছুঁয়ে যাওয়া কৃত্রিম  আলোর রোশনাই,

মেলাতে না পারা হিজিবিজি অংকের খাতা-

এলোমেলো রঙ পেন্সিলে ব্যর্থ চেষ্টা!

তবুও অকারণ ভালোবাসার  আবেশ,

অকারণই বোধহয় ভালোবাসার  প্রাথমিক শর্ত।




গল্প



ইচ্ছা

শুভঙ্কর সান্যাল, সবে চাকুরী থেকে অবসর নিয়েছেন। সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী থাকলেও ভীষন আধ্যাত্মিক। স্ত্রী নিতান্তই  গৃহবধু। সুখী সংসার। এক ছেলে, এক মেয়ে। একমাত্র মেয়েকে ভালো জায়গায় পাত্রস্থ  করেছেন। স্ত্রী সুজাতা সুখী গৃহকোণ সামলান নিপুণ দক্ষতায়। একমাত্র ছেলে অর্ক, অর্কপ্রভ MBBS পাশ করে MD পড়তে North Bengal Medical College এ গিয়েছে। ছেলে এই প্রথম মায়ের চোখের আড়ালে এত দূরে চলে যাওয়ায় সুজাতা চিন্তায় পড়ে গেলেন। ছেলেও মা বলতে অজ্ঞান। এতো বয়স হলেও জামা, প্যাণ্ট, জুতো সবই বাবা-মা কিনেছেন। ওঁদের পছন্দই ওর পছন্দ। অর্ক বাইরে চলে যাওয়ায় দুজনেই খুব মনমরা হয়ে পড়েছেন। ভীষণ নিঃসঙ্গ লাগে ওদের। অর্ক 25000 টাকা করে Stipend পায়। ভালোমতোই চলে যায়। নিঃসঙ্গতা কাটানোর জন্য একটা ভালো মোবাইল ও কিনে ফেলে। ক্রমশ: পড়াশোনার বইএর থেকে Facebook, whatsapp ওর বেশী আপন হয়ে উঠলো। মায়ের স্নেহচ্ছায়ায় বড় হওয়ায় বান্ধবীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকলো। আর নিঃসঙ্গতা কাটানোর জন্য ঘনঘন  প্রেমেও পড়তে লাগলো। যদিও সবটাই Messenger, whatsapp এই, গভীর রাত পর্যন্ত  chatting চলতে থাকলো। এরই মধ্যে chat করতে করতে গড়িয়াহাটের একটি মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলো। ঐশী গড়িয়াহাটের এক নামজাদা প্রোমোটারের একমাত্র মেয়ে। খুব Modern। latest সমস্ত জামাকাপড় পড়ে। এত Shopping করে যে আলমারিতে আর রাখার জায়গা নেই। গাড়ী ছাড়া বেরোয় না। হাতখরচের পরিমাণ ও বিপুল। অর্ক বেশ কয়েকবার কলেজে ক্লাস নষ্ট করে কলকাতায় এসে ঐশীর সাথে দেখাও করেছে। অনেক সময় মা-বাবার সাথে দেখা না করে আবার উত্তরবঙ্গ ফিরে গেছে। হঠাৎ সুজাতা লক্ষ্য করলেন অর্ক যেন কেমন পাল্টে গেছে। প্রতিদিন যে ছেলে তিন থেকে চারবার ফোন করতো, এখন দু-তিন দিন বাদে বাদে ফোন করে। কলকাতায় এলে মাকে সব আধুনিক পোশাক দেখায় আর টাকা চায়। মাকে বলে তোমরা আমার জন্য জামাকাপড় কিনো না। আমি আমার প্রয়োজন মতো কিনে নেবো। এইসব আধুনিক জামাকাপড়, জুতো মা দেখে আর ভাবে এসব পড়ার মানসিকতা কিভাবে তৈরী হলো ওর!

সুজাতা আকাশকুসুম ভাবেন। সবকিছু অর্কর বাবাকে বলতেও পারেন না। আর এদিকে  এই ধরনের জীবনযাত্রায় অনভ্যস্ত অর্ক ঐশীর সাথে দেখা করে দার্জিলিং মেলে ফেরার সময়  Toilet এ ওর দামী মোবাইল টা হারিয়ে ফেলে। hostel এর চাবিও হারায়। ফলে অর্কর মন খুব খারাপ হয়ে যায়। এর প্রায় দিন পনেরো বাদে মা-বাবার সাথে দেখা করতে আসে অর্ক। সুজাতা সেইসময় অর্কর পকেট থেকে রেস্তোরাঁর বিল, সিনেমার টিকিট, shopping mall এর বিল ইত্যাদি আবিষ্কার করে। ভীষণ বিস্মিত সুজাতা ভাবেন তাহলে কি অর্ক কারো পাল্লায় পড়েছে? সেদিন রাতে মায়ের হাতের বানানো দারুন দারুন খাবার খেতে খেতে বললো, মা আমি ঐশী বলে একটি মেয়েকে ভালোবাসি। ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না। তাই ঠিক করেছি খুব তাড়াতাড়ি ওকে বিয়ে করবো। বাবাকে কিন্তু তোমাকেই ম্যানেজ করতে হবে! হতবাক সুজাতা বলেন, তোর MD টাও শেষ করবি না?  না এটা হতে পারে না- বলে পাগলের প্রলাপ ভেবে উড়িয়ে দিলেন।

কিন্তু এর ঠিক দুদিন বাদে নিজেদের বাড়ীর দরজায় ঐশীর বাবা মা কে দেখে সুজাতা প্রকৃতই হতভম্ব হলেন। সঙ্গে ঐশীও এসেছে। সুজাতার মেজাজ বেশ খারাপ হলো কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে চা, মিষ্টি দিলেন। অর্কর বাবা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন, অর্ক তো মাত্র ২৫০০০ টাকা রোজগার করে। এতে সংসার চলবে তো? ঐশীর বাবা বললেন, পয়সা, রোজগার এইসব নিয়ে ভাববেন না। আমার যা আছে তা ওরা দুজন বসে খেলেও শেষ করতে পারবে না।

অর্কর বাবা একটু থেমে বললেন, তাহলে আপনি আমার অর্ক কে কিনতে চাইছেন, তাই তো? ঐশীর বাবা বললেন, একটা সম্পর্কের শুরুতেই এই রকম কথাটা বলা বোধহয় ঠিক হচ্ছেনা। যাইহোক আমার মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে আমি প্রস্তাব দিয়ে গেলাম। সিদ্ধান্ত অর্ক আর আপনাদের ওপর। উঠি- বলে হাত তুলে নমস্কার করে ওরা বেরিয়ে গেলেন।  এইবার সুজাতা অর্ক কে বললেন, ঐ টাকায়

...


No comments:

Post a Comment