এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

তাপসকিরণ রায়


গল্প : ছোট গল্প



রমাকান্ত নামা - না পাওয়া   
                                                               
রাতগুলি প্রায়ই নিষ্ফলা যায়। রমাকান্ত মানসিক অতৃপ্তিতে ভুগতে থাকেন। স্ত্রী কমলিকা তাঁকে বয়সের খোঁটা দেন, বুড়ো বয়সে এত ইচ্ছে আসে কোথা থেকে ?
রমাকান্ত জানেন না, কোথা থেকে শারীরিক ইচ্ছেগুলি জেগে উঠতে থাকে ! বয়স মেনেই রাতের শরীরে এসে তারা কুটকুট করতে থাকে। ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান নিয়ে এক আর্টিকেল বহুবছর আগে তিনি পড়েছিলেন। তাতে একটা চার্ট দেওয়া ছিল, বয়েস ক্ষমতার সঙ্গে তাল রেখে। আজও সেই চার্ট যেন তাঁর চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে ওঠে। তিনি তাই স্ত্রীর প্রশ্নের জবাবে বলে ওঠেন, আমার বয়স আমি জানি, আমি এখনও গবেষণার চার্ট অনুযায়ী পুরো দমে সক্ষম।
এবার যেন কমলিকা বেঁকে বসেন, কিন্তু আমি অক্ষম--আমার ইচ্ছে অনিচ্ছের মূল্য তো তোমার কাছে নেই !
ব্যাস, রমাকান্তর আর বলার কিছু নেই। ওদিকে ওই কথার পর কয়েক মুহূর্ত ব্যতীত হতে না হতে কমলিকা ঘুমে কাদা হয়ে গেলেন--দস্তুর মত তাঁর নাক ডাকা শুরু হয়ে গেলো। রমাকান্ত জানেন, আর কিছু করার নেই। তিনি ঘরের লাইট নিবিয়ে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালেন। তার আগে পাশের টেবিলে রাখা পেন ডাইরী নিতে তিনি ভুললেন না। পাশের ঘরে গিয়ে তিনি লাইট জ্বালিয়ে বসলেন। না, নিজের জীবনী বা গল্প লিখতে না, বরং বলা যায় জীবনের ভাঙা ভাঙা টুকরোগুলি ভাব-ভাষায় জুড়িয়ে নিয়ে কবিতার মত কিছু লিখতে। কবিতা লেখার মধ্যে দিয়ে রমাকান্ত দেখেন, এক সময় তাঁর মনের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়। তিনি লিখে চলেন--

সমস্ত কিছুর পর যেটুকু তলানি
তাই নিয়ে রাত জাগি আমি।  
জীবনটা দেখো কত তাৎক্ষনিক, তবু সেটুকু পেতে হলে
প্রেমিকার ঘুমমুখ চেয়ে থেকে দেখি।  
বয়সের স্বপ্নালু সাঁতার আর আসে না--
পালঙ্কের ভেসে যাওয়া আর আপ্লুত হয় না,  
শুকনো শরীরে তবু যেটুকু ক্ষীণ চাওয়া পাওয়া
তাকে জন্ম নিতে দাও, কমলিকা,
তুমি জানো ব্যথার উৎস, তবু কেন বিরহ ভরে দূরে সরে যাও ?
আমার ব্যর্থতার পাশ ফিরে দেখি,
মাঝখানে পড়ে থাকা পাশবালিশ,
স্বপ্ন শুধু ডানা মেলে, অযাচিত এক ক্ষণ-যন্ত্রণা
আমি বিরহীর রাত জাগি--

রমাকান্ত হঠাৎ পাশের ঘর থেকে স্ত্রীর গলা শুনতে পেলেন। ধড়ফড় করে উঠে বসলেন তিনি। ভয় উৎসুকতায় গিয়ে দেখলেন, কমলিকা জেগে উঠেছেন,  স্ত্রী প্রসন্ন গলায় বলে উঠলেন, কি  গো, তুমি এখনো ঘুমাও নি ?
চুপ থাকলেন রমাকান্ত।
--এস গো--কি করবো বলো--আমার যে ঘুম পেয়ে যায়--এসো--আবার কি স্ত্রীর গলা রমাকান্তর কাছে ঘুম জড়ানো মনে হলো !
ইতিমধ্যে মনের মাঝে তাঁর স্রোত বইতে শুরু হয়ে গিয়েছিল। ক্রমশ তা শরীরকে ঘিরে নিচ্ছিল, তিনি  জানেন, তিনি সরসর করে মশারি উঠিয়ে নিজের শরীর বিছানায় গলিয়ে দিলেন। এখনো স্তিমিত আশা বুঝি তাঁর মন ধরে আছে। প্রতিদিনের রোজ নামচার মাঝে মাসে একটি বারের সিঁকে ছেঁড়ার ভাগ্যের কথা মনে পড়ে যায় তাঁর। এই চার্টও বুঝি মনে থাকার মত। তাই স্বার্থ অথবা ব্যর্থ কথা এখনই বলা যাবে না।
অভিমানে মুহূর্ত কয় রমাকান্ত চুপচাপ শুয়ে থাকলেন। কিন্তু কৈ ? অন্য পক্ষ এত নীরব কেন ? পর মুহূর্তেই রমাকান্ত শুনতে পেলেন, তাঁর স্ত্রী কমলিকা কোমল নিদ্রার সুর ভাজছেন।
                                                         সমাপ্ত  
তাপসকিরণ রায়।
পিতার নাম : স্বর্গীয় শৈলেশ চন্দ্র রায়।  মাতাঃ শ্রীমতী বেলা রায়। জন্মস্থান : ঢাকা, বাংলা দেশ। জন্ম তারিখ : ১৫ই এপ্রিল, ১৯৫০

স্বর্গীয় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রকাশনায় কৃত্তিবাস প্রকাশনী থেকে লেখকের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : চৈত্রের খরায় নগ্ন বাঁশির আলাপ। উদার আকাশ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত লেখকের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থঃ তবু বগলে তোমার বুনো ঘ্রাণ। শিশু বিতান প্রকাশনী থেকে দুটি শিশু ও কিশোর গল্প গ্রন্থঃ (১) গোপাল ও অন্য গোপালেরা (২) রাতের ভূত ও ভূতুড়ে গল্প, প্রকাশিত হয়েছে। নান্দনিক থেকে প্রকাশিত লেখকের গল্প সঙ্কলন, গুলাবী তার নাম। এ ছাড়া প্রসাদ, সারাক্ষণ, পথের আলাপ, লং জার্নি, দৌড়, কালি কলম ও ইজেল, রেওয়া, কর্কট ক্রান্তি, দিগন্ত, নিরুক্ত, কবিতার সাত কাহন, অঙ্কুর, আত্মদ্রোহ, বেদুইন ইত্যাদি বেশ কিছু পত্রপত্রিকায় লেখকের গল্প, কবিতা ছাপা হয়েছে। ছাড়া ঐহিক, কলামটি, কৌরব, আদরের নৌকা, সৃষ্টি, পরবাস ইত্যাদি আরো কিছু  অন লাইন পত্রিকাতে তিনি লেখেন। শিশু-কিশোরদের পথের সুজন, কিচির মিচির, জয়ঢাক, ম্যাজিক ল্যাম্প,  ইচ্ছামতি, কচিকাঁচা ইত্যাদি পত্রিকায় লেখকের উপন্যাস, গল্প ও কবিতা প্রকাশিত হয়েছে।

বর্তমানে লেখক শিশুকিশোর উপন্যাস ধারাবাহিক ভাবে লিখে চলেছেন মানভূম সংবাদের বিশেষ পাতায়।

******

No comments:

Post a Comment