কবিতা : সাধারণ বিভাগ
আমার কবিতা
যাঁরা মনে করেন আমি কবিতা লেখার জন্য স্বপ্নকে ব্যবহার করি
তাঁদের ভাবনার মধ্যে বসবাস করে গুটিকয় স্পটেড ডিয়ার
আসলে অধিকাংশ পাবলিক জানেন না বেশ অনেকগুলি রং-বেরঙের স্বপ্ন
আমাকে দিয়ে তাদের পছন্দসই কবিতাগুলি লিখিয়ে নেয়
এতে প্রমাণিত হয় অধিকাংশ পাবলিকের কবিতা এবং স্বপ্ন সম্পর্কিত
ধারণাগুলিতে বাচ্য ব্যবহারে অনেক অসঙ্গতি আছে
ফলে তাঁরা কর্মবাচ্য-কে কর্তৃবাচ্য বলে ভুল করে
আমার কোনো স্বপ্ন -ফোবিয়া নেই ,এটি একটি জানাবার মতো তথ্য
একারণে জানিয়ে রাখা জরুরি বলে জানাতে বাধ্য হলাম
******
আত্মজীবনীমূলক গদ্য (ধারাবাহিক)
সুন্দরের দিকে
(২৩)
মাঝেমধ্যে এমন কাজ পড়ে যায় যে লেখা থেকে উঠে যেতে হয়।কারণ সেফ করে রাখতে পারিনি ।
ধ্বংসকালীন নিয়ে আমার বিশ্লেষণে কোনো ফাঁক নেই ।আমি দলিলে যে কথা লিখেছিলাম তার মূল কথাগুলোই এখানে লিখছি ।
সাম্প্রতিক এর অষ্টম সংকলন প্রকাশিত হল ডিসেম্বর 1967. ওই সংখ্যায় পবিত্রদার ইবলিশের আত্মদর্শন, কাননকুমার ভৌমিকের প্রজাপতি বনামে খলিলুল্লার সৃজনবাদ আর আমার আমি মেফিসটোফেলিস শয়তানের দূত প্রকাশিত হয়। আর ছিল চণ্ডী মণ্ডলের গল্প ।সুকোমল রায়চৌধুরী সনৎকুমার গুহ অমলকান্তি সিংহ রাজশেখর গিরির কবিতা ।
এর শুরুটা হয়েছিল কবিতাটি মণীন্দ্র রায়ের বাড়িতে।পবিত্রদার সঙ্গে গিয়েছিলাম।কাননও সঙ্গে ছিল।মণিদা বলেছিলেন নতুন কবিতার কথা পুরোনো মূল্যবোধগুলিকে ভেঙে ফেলার কথা ফর্ম সর্বস্বতা নয় নতুন আত্মদর্শন প্রতিষ্ঠার কথা ।
সেটুকুই ছিল পুঁজি ।সেই নিয়েই যাত্রা হল শুরু । পরিণামে হইহই পড়ে গেল ।ওই সংখ্যাটা দুবার ছাপতে হয়েছিল ।এর পরেই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হল দীপেন রাইটার্সে অনন্ত দাশ শিবেন চট্টোপাধ্যায় রবীন্দ্র সুর হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় শিশির সামন্ত প্রমুখ যুক্ত হয় আন্দোলনে।তার পরে যুক্ত হয় অঞ্জন কর রণজিৎকুমার মজুমদার সত্য গুহ তরুণ সেন সত্যানন্দ মণ্ডল কল্যাণ চট্টোপাধ্যায় অনুপ চক্রবর্তী ।
দীপেনদের পত্রিকা ছিল বক্তব্য ।হৃষিকেশের অধুনা সাহিত্য ।অঞ্জন কর তার বক্তার বন্ধ করে ধ্বংসকালীন আন্দোলনে যোগ দেয়।শিবেন চট্টোপাধ্যায়ের দৃশ্যপট নামে একটি পত্রিকা ছিল ।
সাম্প্রতিক ছাড়াও ধ্বংসকালীন আন্দোলনের আর একটি পত্রিকাও ছিল ।কবিতা সংবাদ । যার সম্পাদক হিসেবে আমার নাম ছাপা হত। একটা কথা খুবই স্পষ্ট করে জানিয়ে রাখতে চাই তাহল সম্পাদক হিসেবে যার নামই ছাপা হোক না কেন আমরা তিনজন যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিতাম।পবিত্রদা কাননকুমার আর আমি এই তিনজন ছিল কোরকমিটির।
বাকিটা আগামীকাল ।
মাঝেমধ্যে এমন কাজ পড়ে যায় যে লেখা থেকে উঠে যেতে হয়।কারণ সেফ করে রাখতে পারিনি ।
ধ্বংসকালীন নিয়ে আমার বিশ্লেষণে কোনো ফাঁক নেই ।আমি দলিলে যে কথা লিখেছিলাম তার মূল কথাগুলোই এখানে লিখছি ।
সাম্প্রতিক এর অষ্টম সংকলন প্রকাশিত হল ডিসেম্বর 1967. ওই সংখ্যায় পবিত্রদার ইবলিশের আত্মদর্শন, কাননকুমার ভৌমিকের প্রজাপতি বনামে খলিলুল্লার সৃজনবাদ আর আমার আমি মেফিসটোফেলিস শয়তানের দূত প্রকাশিত হয়। আর ছিল চণ্ডী মণ্ডলের গল্প ।সুকোমল রায়চৌধুরী সনৎকুমার গুহ অমলকান্তি সিংহ রাজশেখর গিরির কবিতা ।
এর শুরুটা হয়েছিল কবিতাটি মণীন্দ্র রায়ের বাড়িতে।পবিত্রদার সঙ্গে গিয়েছিলাম।কাননও সঙ্গে ছিল।মণিদা বলেছিলেন নতুন কবিতার কথা পুরোনো মূল্যবোধগুলিকে ভেঙে ফেলার কথা ফর্ম সর্বস্বতা নয় নতুন আত্মদর্শন প্রতিষ্ঠার কথা ।
সেটুকুই ছিল পুঁজি ।সেই নিয়েই যাত্রা হল শুরু । পরিণামে হইহই পড়ে গেল ।ওই সংখ্যাটা দুবার ছাপতে হয়েছিল ।এর পরেই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হল দীপেন রাইটার্সে অনন্ত দাশ শিবেন চট্টোপাধ্যায় রবীন্দ্র সুর হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় শিশির সামন্ত প্রমুখ যুক্ত হয় আন্দোলনে।তার পরে যুক্ত হয় অঞ্জন কর রণজিৎকুমার মজুমদার সত্য গুহ তরুণ সেন সত্যানন্দ মণ্ডল কল্যাণ চট্টোপাধ্যায় অনুপ চক্রবর্তী ।
দীপেনদের পত্রিকা ছিল বক্তব্য ।হৃষিকেশের অধুনা সাহিত্য ।অঞ্জন কর তার বক্তার বন্ধ করে ধ্বংসকালীন আন্দোলনে যোগ দেয়।শিবেন চট্টোপাধ্যায়ের দৃশ্যপট নামে একটি পত্রিকা ছিল ।
সাম্প্রতিক ছাড়াও ধ্বংসকালীন আন্দোলনের আর একটি পত্রিকাও ছিল ।কবিতা সংবাদ । যার সম্পাদক হিসেবে আমার নাম ছাপা হত। একটা কথা খুবই স্পষ্ট করে জানিয়ে রাখতে চাই তাহল সম্পাদক হিসেবে যার নামই ছাপা হোক না কেন আমরা তিনজন যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিতাম।পবিত্রদা কাননকুমার আর আমি এই তিনজন ছিল কোরকমিটির।
বাকিটা আগামীকাল ।
(২৪)
গতকাল লেখা হয়নি । একদিন এগিয়ে ছিলাম ।সেটা আর থাকল না ।কথা চলছিল ধ্বংসকালীন নিয়ে।আমি ধ্বংসকালীন নিয়ে খুব বেশি হইচই পছন্দ করি না ।কারণ আমি এখন সাহিত্যের আন্দোলনে বিশ্বাস করি না । আরো একটা স্বীকারোক্তি হল , তুলনায় হাংরি কিংবা শাস্ত্রবিরোধী অনেকটাই দীর্ঘ ছিল, গঠনমূলক ছিল ।পবিত্রদা কিংবা কানন হয়ত এটা মেনে নেবেন না, কিন্তু আমার কথা তো আমাকেই বলতে হবে।
তবে একটা কথা বলতে হবেই ।তা হল, ধ্বংসকালীন যখন গবেষণার বিষয় হয়ে উঠল তখন সর্বত্রই ভুল তথ্য পরিবেশিত হয়েছে । এমনকি লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের প্রাণপুরুষ সন্দীপ দত্তও সঠিক তথ্য পরিবেশন করেননি ।বর্ধমানের এক অধ্যাপিকা, নাম মনে নেই তাঁর বইতেও পবিত্রদার ভুল তথ্য সমৃদ্ধ কোটেশন ব্যবহার করা হয়েছিল ।
জানি না, কেন এসব হয়েছিল ।শেষে বাধ্য হয়েছিলাম ধ্বংসকালীন কবিতা আন্দোলনের দলিল প্রকাশ করতে ।সম্পাদনা করেছিল শান্তিময় মুখোপাধ্যায়। প্রথম সংস্করণ এর পর দ্বিতীয় সংস্করণও প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছিলাম । কাজেই এটিই প্রামাণ্য বলতে দ্বিধা করছি না ।
এখানে আরো দু চার কথা বলে রাখি ।কবিপত্র কখনোই তার বৈশিষ্ট্যকে সরিয়ে রেখে ধ্বংসকালীনে যুক্ত হয়নি। আর বাকিরা সবাই ধ্বংসকালীনে পার্টটাইমার ছিলেন ।ব্যতিক্রম কানন এবং আমি ।ধ্বংসকালীন চলার সময়ে কবিপত্র এ প্রকাশিত হয়েছে চল্লিশের কবিদের কবিতার গুণগান ।কিন্ত এটা অস্বীকার করা যাবে না যে পবিত্রদার ইবলিশের আত্মদর্শন সেই সময়ে মাইলফলকের মর্যাদা পেয়েছিল।
হালিশহরের হৃষিকেশ কিংবা বারুইপুরের রণজিৎকুমার মজুমদারের অংশগ্রহণ ছিল আন্দোলনের বিশেষ লক্ষণ। রণজিৎবাবু ছিলেন আমার সহকর্মী সনৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশেষ আত্মীয়।যাঁর পেশা ছিল শিক্ষক তা । কবিতাও লিখতেন ।তিনি নিজস্ব আগ্রহ থেকেই এসে গিয়েছিলেন আন্দোলনে ।
আরো একটা ছবি দেখতে পেলাম, যা না লিখলে বোঝানো যাবে না কী ভীষণ প্রভাব পড়েছিল আমাদের বন্ধুমহলে। আমার মতো বন্ধু ভাগ্য নিয়ে খুব কমজনই এই ভূখণ্ডে আসে।আমার সহকর্মী রুইদাস সাহারায় বিমান মুখোপাধ্যায় সনৎ বন্দ্যোপাধ্যায় মৃণাল ঘোষ মহম্মদ জিন্নুর কাশীনাথ সাধুখাঁ যেভাবে আমার পাশে থেকেছে, তার নজির ও খুব বেশি চোখে পড়ে না । আমার এই বন্ধুরা শহিদ মিনার বা মনুমেন্টের নীচে এবং ধর্মতলার আরো কয়েকটি পয়েন্টে সাম্প্রতিক এ সদ্য প্রকাশিত আমার আমি মেফিসটোফেলিস শয়তানের দূত কবিতাটি গলা ফাটিয়ে পাঠ করেছিল ।রীতিমত লোক জমে গিয়েছিল । এখনো আমি সেই দৃশ্য দেখতে পাই ।
এর প্রতিদানে আমি আমার সহকর্মীদের জন্য কিছুই করতে পারিনি ।
আমার মনে হয় ধ্বংসকালীন কবিতা আন্দোলনের তখন হয়তো প্রয়োজন ছিল, কিন্তু আমার সময় কমে গেল। আমার রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ওই আন্দোলন । এর জন্য একমাত্র আমিই দায়ী ।কানন সম্ভবত সঙ্গীহীন হয়ে পড়েছিল।
তবে এই ধ্বংসকালীন থেকেই আমি পেয়েছিলাম দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে।অথবা সত্য কথাটা হল দীপেনদা আমাকে তুলে নিয়েছিলেন ধ্বংসকালীন থেকেই ।আমার সুযোগ এসেছিল পরিচয় পত্রিকার দপ্তরের একটি বসার জায়গায় বসার।
এই সুযোগ সকলের ভাগ্যে জোটে না ।
পরিচয় বা দীপেনদা আমাকে দেখিয়ে দিয়েছিলেন একজন প্রকৃত সম্পাদকের কাজ কী। পরিচয় আমাকে বড়ো পরিসরে কাজ করার দিক দেখিয়েছিল।
সেই ঋণ হয়ত আমি মনে রাখিনি, কিন্তু এটা একতরফা ছিল না ।পরিচয়ও চায়নি আমাকে সঙ্গে রাখতে ।
আমি কিন্তু পরিচয় থেকে শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের সৌজন্যে অমৃত যুগান্তর এ যাইনি ।গিয়েছিলাম কবিপত্র থেকে বা পবিত্রদার ঘর থেকে ।
সেকথা পরে আসবে । আবার কালও এসে যেতে পারে ।
গতকাল লেখা হয়নি । একদিন এগিয়ে ছিলাম ।সেটা আর থাকল না ।কথা চলছিল ধ্বংসকালীন নিয়ে।আমি ধ্বংসকালীন নিয়ে খুব বেশি হইচই পছন্দ করি না ।কারণ আমি এখন সাহিত্যের আন্দোলনে বিশ্বাস করি না । আরো একটা স্বীকারোক্তি হল , তুলনায় হাংরি কিংবা শাস্ত্রবিরোধী অনেকটাই দীর্ঘ ছিল, গঠনমূলক ছিল ।পবিত্রদা কিংবা কানন হয়ত এটা মেনে নেবেন না, কিন্তু আমার কথা তো আমাকেই বলতে হবে।
তবে একটা কথা বলতে হবেই ।তা হল, ধ্বংসকালীন যখন গবেষণার বিষয় হয়ে উঠল তখন সর্বত্রই ভুল তথ্য পরিবেশিত হয়েছে । এমনকি লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের প্রাণপুরুষ সন্দীপ দত্তও সঠিক তথ্য পরিবেশন করেননি ।বর্ধমানের এক অধ্যাপিকা, নাম মনে নেই তাঁর বইতেও পবিত্রদার ভুল তথ্য সমৃদ্ধ কোটেশন ব্যবহার করা হয়েছিল ।
জানি না, কেন এসব হয়েছিল ।শেষে বাধ্য হয়েছিলাম ধ্বংসকালীন কবিতা আন্দোলনের দলিল প্রকাশ করতে ।সম্পাদনা করেছিল শান্তিময় মুখোপাধ্যায়। প্রথম সংস্করণ এর পর দ্বিতীয় সংস্করণও প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছিলাম । কাজেই এটিই প্রামাণ্য বলতে দ্বিধা করছি না ।
এখানে আরো দু চার কথা বলে রাখি ।কবিপত্র কখনোই তার বৈশিষ্ট্যকে সরিয়ে রেখে ধ্বংসকালীনে যুক্ত হয়নি। আর বাকিরা সবাই ধ্বংসকালীনে পার্টটাইমার ছিলেন ।ব্যতিক্রম কানন এবং আমি ।ধ্বংসকালীন চলার সময়ে কবিপত্র এ প্রকাশিত হয়েছে চল্লিশের কবিদের কবিতার গুণগান ।কিন্ত এটা অস্বীকার করা যাবে না যে পবিত্রদার ইবলিশের আত্মদর্শন সেই সময়ে মাইলফলকের মর্যাদা পেয়েছিল।
হালিশহরের হৃষিকেশ কিংবা বারুইপুরের রণজিৎকুমার মজুমদারের অংশগ্রহণ ছিল আন্দোলনের বিশেষ লক্ষণ। রণজিৎবাবু ছিলেন আমার সহকর্মী সনৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশেষ আত্মীয়।যাঁর পেশা ছিল শিক্ষক তা । কবিতাও লিখতেন ।তিনি নিজস্ব আগ্রহ থেকেই এসে গিয়েছিলেন আন্দোলনে ।
আরো একটা ছবি দেখতে পেলাম, যা না লিখলে বোঝানো যাবে না কী ভীষণ প্রভাব পড়েছিল আমাদের বন্ধুমহলে। আমার মতো বন্ধু ভাগ্য নিয়ে খুব কমজনই এই ভূখণ্ডে আসে।আমার সহকর্মী রুইদাস সাহারায় বিমান মুখোপাধ্যায় সনৎ বন্দ্যোপাধ্যায় মৃণাল ঘোষ মহম্মদ জিন্নুর কাশীনাথ সাধুখাঁ যেভাবে আমার পাশে থেকেছে, তার নজির ও খুব বেশি চোখে পড়ে না । আমার এই বন্ধুরা শহিদ মিনার বা মনুমেন্টের নীচে এবং ধর্মতলার আরো কয়েকটি পয়েন্টে সাম্প্রতিক এ সদ্য প্রকাশিত আমার আমি মেফিসটোফেলিস শয়তানের দূত কবিতাটি গলা ফাটিয়ে পাঠ করেছিল ।রীতিমত লোক জমে গিয়েছিল । এখনো আমি সেই দৃশ্য দেখতে পাই ।
এর প্রতিদানে আমি আমার সহকর্মীদের জন্য কিছুই করতে পারিনি ।
আমার মনে হয় ধ্বংসকালীন কবিতা আন্দোলনের তখন হয়তো প্রয়োজন ছিল, কিন্তু আমার সময় কমে গেল। আমার রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ওই আন্দোলন । এর জন্য একমাত্র আমিই দায়ী ।কানন সম্ভবত সঙ্গীহীন হয়ে পড়েছিল।
তবে এই ধ্বংসকালীন থেকেই আমি পেয়েছিলাম দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে।অথবা সত্য কথাটা হল দীপেনদা আমাকে তুলে নিয়েছিলেন ধ্বংসকালীন থেকেই ।আমার সুযোগ এসেছিল পরিচয় পত্রিকার দপ্তরের একটি বসার জায়গায় বসার।
এই সুযোগ সকলের ভাগ্যে জোটে না ।
পরিচয় বা দীপেনদা আমাকে দেখিয়ে দিয়েছিলেন একজন প্রকৃত সম্পাদকের কাজ কী। পরিচয় আমাকে বড়ো পরিসরে কাজ করার দিক দেখিয়েছিল।
সেই ঋণ হয়ত আমি মনে রাখিনি, কিন্তু এটা একতরফা ছিল না ।পরিচয়ও চায়নি আমাকে সঙ্গে রাখতে ।
আমি কিন্তু পরিচয় থেকে শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের সৌজন্যে অমৃত যুগান্তর এ যাইনি ।গিয়েছিলাম কবিপত্র থেকে বা পবিত্রদার ঘর থেকে ।
সেকথা পরে আসবে । আবার কালও এসে যেতে পারে ।
(২৫)
গতকালের লেখার ওপর শিব চৌধুরীর পোস্টটিকে মান্যতা দিতেই হচ্ছে ।শিবু মনে করিয়ে দিয়েছে এক শিবরাত্রির কথা । আমি অনেক ভেবেও ওই রাতটিকে খুঁজে পেলাম না । দীপংকর সরকারকে ফোন লাগালাম ।দীপংকর শিবুর বক্তব্যকে সমর্থন করে স্মৃতি থেকে পুরো কবিতাটি মুখস্থ বলে গেল না হোঁচট না খেয়ে । তাহলে আর অবিশ্বাসের জায়গা রইল না । অতএব আমারও বাল্যপ্রতিভা ছিল ।
দীপংকর এবং আমরা তিন ভাই দীপক শিবু এবং আমি . মোট চারজন মিলে লিখেছিলাম কবিতাটি ।তাহলে তো বাংলাভাষায় প্রথম সমবায় কবিতা তো আমরাই লিখেছিলাম ।
বাংলাভাষায় বারোয়ারি উপন্যাস লেখা হয়েছে অনেক আগেই ।সেখবর সকলেই জানি ।কিন্তু কবিতা ।
বাংলাভাষায় সমবায় কবিতা লেখার পথিকৃৎ রুদ্র কিংশুকের অজান্তে এমন একটা অপকর্ম করে ফেলেছিলাম আমরা চারজন অর্বাচীন কিশোর।যদিও আমি এখনো মনে আনতে পারছি না ঘটনাটি । কিন্তু জনমতের বিরুদ্ধে যেতে চাইছি না । কুইনাইন গেলার মতো গিলে নিলাম ।
কথা হচ্ছিল ধ্বংসকালীন নিয়ে । অতনু অভিযোগ করেছে আমি নাকি ধ্বংসকালীন নিয়ে কিছুই মন খুলে বলছি না । কী বা কীভাবে বললে অতনুকে তৃপ্ত করা যাবে, আমি জানি না ।তবে এই আন্দোলন সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত মত কী ছিল সেটুকুই লিখি।আমি লিখেছিলাম --
কবি পরিভ্রমণ করেন সময় এবং পারিপার্শ্বিকতাকে বৃত্ত করে।এবং এই বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দু থেকে উপলব্ধিজাত চেতনাই হল কবিতা ।... ... ...
আমি সেই মুহূর্তে প্রচণ্ড ক্ষোভে এবং ঘৃণায় সময় এবং পারিপার্শ্বিকতালব্ধ অভিজ্ঞতায় ধ্বংস করতে চাই বর্তমানের বিকৃত অভিসন্ধিমূলক শিল্পকে।এক মহান শিল্প সৃষ্টির প্রেরণা হল ধ্বংসকালীন কবিতা ।
পবিত্রদা বলেছিলেন --
ধ্বংসকালীন কবিতা মানবসভ্যতার রক্তমোক্ষণ।
কাননকুমার ভৌমিক লিখেছিলেন ---
কবি ---তার দায়িত্ব কোন বিষয়ে কীভাবে জড়িত---
ধ্বংসকালীন তারই পরিমাপ করে।
এসব কিন্তু আমাদের কথার কথা ছিল না, আমরা যা বিশ্বাস করেছিলাম, তা-ই লিখেছিলাম ।
আরো একটা কথা বলি একটা সময় আমাদের আন্দোলন অনেককে ভাবিয়ে তুলেছিল। অনেকেই বেশ গুরুত্ব দিয়েছিলেন এই ক্ষুদ্র আন্দোলনকে।আমার বিশ্বাস এই ধ্বংসকালীন আন্দোলনের প্রত্যক্ষ প্রভাবেই শ্রদ্ধেয় দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরতে সক্ষম হয়েছিলাম ।সেকথা তো আগেই বলেছি ।
আসলে তখন একটা দোলাচলে ছিলাম ।কী লিখবো তা ধরতে পারছিলাম না ।তবে অন্য কিছু অন্যভাবে যে লিখতেই হবে সে ব্যাপারে কোনো সংশয় ছিল না ।মূলত চিরাচরিত লেখা থেকে দূরে থাকতে হবে এটা শিরোধার্য ছিল ।ছাঁচ ভেঙে ফেলতে চেয়েছিলাম আমরা ।
এই ছাঁচ ভাঙার কথা আরো স্পষ্ট করে বলেছিলেন শাস্ত্রবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম গল্পকার অমল চন্দ
তার একটি পুস্তিকার নাম ছিল ছাঁচ ভেঙে ফেল। আমার বিশ্বাস অমল চন্দ ই শাস্ত্রবিরোধী আন্দোলনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ লেখক ।এনিয়ে আমি যেকোনো তর্কে যেতে রাজি ।
আমাদের সময়ের দুজন গল্পকার ঔপন্যাসিক --
চণ্ডী মণ্ডল এবং অমল চন্দ ।গত শতকের কোনো দশকে তার তুলনা নেই । এই কথাটা লিখে নতুন বিতর্ক তৈরি করলাম হয়তবা।
গতকালের লেখার ওপর শিব চৌধুরীর পোস্টটিকে মান্যতা দিতেই হচ্ছে ।শিবু মনে করিয়ে দিয়েছে এক শিবরাত্রির কথা । আমি অনেক ভেবেও ওই রাতটিকে খুঁজে পেলাম না । দীপংকর সরকারকে ফোন লাগালাম ।দীপংকর শিবুর বক্তব্যকে সমর্থন করে স্মৃতি থেকে পুরো কবিতাটি মুখস্থ বলে গেল না হোঁচট না খেয়ে । তাহলে আর অবিশ্বাসের জায়গা রইল না । অতএব আমারও বাল্যপ্রতিভা ছিল ।
দীপংকর এবং আমরা তিন ভাই দীপক শিবু এবং আমি . মোট চারজন মিলে লিখেছিলাম কবিতাটি ।তাহলে তো বাংলাভাষায় প্রথম সমবায় কবিতা তো আমরাই লিখেছিলাম ।
বাংলাভাষায় বারোয়ারি উপন্যাস লেখা হয়েছে অনেক আগেই ।সেখবর সকলেই জানি ।কিন্তু কবিতা ।
বাংলাভাষায় সমবায় কবিতা লেখার পথিকৃৎ রুদ্র কিংশুকের অজান্তে এমন একটা অপকর্ম করে ফেলেছিলাম আমরা চারজন অর্বাচীন কিশোর।যদিও আমি এখনো মনে আনতে পারছি না ঘটনাটি । কিন্তু জনমতের বিরুদ্ধে যেতে চাইছি না । কুইনাইন গেলার মতো গিলে নিলাম ।
কথা হচ্ছিল ধ্বংসকালীন নিয়ে । অতনু অভিযোগ করেছে আমি নাকি ধ্বংসকালীন নিয়ে কিছুই মন খুলে বলছি না । কী বা কীভাবে বললে অতনুকে তৃপ্ত করা যাবে, আমি জানি না ।তবে এই আন্দোলন সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত মত কী ছিল সেটুকুই লিখি।আমি লিখেছিলাম --
কবি পরিভ্রমণ করেন সময় এবং পারিপার্শ্বিকতাকে বৃত্ত করে।এবং এই বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দু থেকে উপলব্ধিজাত চেতনাই হল কবিতা ।... ... ...
আমি সেই মুহূর্তে প্রচণ্ড ক্ষোভে এবং ঘৃণায় সময় এবং পারিপার্শ্বিকতালব্ধ অভিজ্ঞতায় ধ্বংস করতে চাই বর্তমানের বিকৃত অভিসন্ধিমূলক শিল্পকে।এক মহান শিল্প সৃষ্টির প্রেরণা হল ধ্বংসকালীন কবিতা ।
পবিত্রদা বলেছিলেন --
ধ্বংসকালীন কবিতা মানবসভ্যতার রক্তমোক্ষণ।
কাননকুমার ভৌমিক লিখেছিলেন ---
কবি ---তার দায়িত্ব কোন বিষয়ে কীভাবে জড়িত---
ধ্বংসকালীন তারই পরিমাপ করে।
এসব কিন্তু আমাদের কথার কথা ছিল না, আমরা যা বিশ্বাস করেছিলাম, তা-ই লিখেছিলাম ।
আরো একটা কথা বলি একটা সময় আমাদের আন্দোলন অনেককে ভাবিয়ে তুলেছিল। অনেকেই বেশ গুরুত্ব দিয়েছিলেন এই ক্ষুদ্র আন্দোলনকে।আমার বিশ্বাস এই ধ্বংসকালীন আন্দোলনের প্রত্যক্ষ প্রভাবেই শ্রদ্ধেয় দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরতে সক্ষম হয়েছিলাম ।সেকথা তো আগেই বলেছি ।
আসলে তখন একটা দোলাচলে ছিলাম ।কী লিখবো তা ধরতে পারছিলাম না ।তবে অন্য কিছু অন্যভাবে যে লিখতেই হবে সে ব্যাপারে কোনো সংশয় ছিল না ।মূলত চিরাচরিত লেখা থেকে দূরে থাকতে হবে এটা শিরোধার্য ছিল ।ছাঁচ ভেঙে ফেলতে চেয়েছিলাম আমরা ।
এই ছাঁচ ভাঙার কথা আরো স্পষ্ট করে বলেছিলেন শাস্ত্রবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম গল্পকার অমল চন্দ
তার একটি পুস্তিকার নাম ছিল ছাঁচ ভেঙে ফেল। আমার বিশ্বাস অমল চন্দ ই শাস্ত্রবিরোধী আন্দোলনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ লেখক ।এনিয়ে আমি যেকোনো তর্কে যেতে রাজি ।
আমাদের সময়ের দুজন গল্পকার ঔপন্যাসিক --
চণ্ডী মণ্ডল এবং অমল চন্দ ।গত শতকের কোনো দশকে তার তুলনা নেই । এই কথাটা লিখে নতুন বিতর্ক তৈরি করলাম হয়তবা।
(২৬)
কয়েকটা উপলব্ধির কথা বলা হয়নি।আমরা সকলেই সেসময় নিজেদের প্রতিষ্ঠান বিরোধী তকমা লাগিয়ে নিয়েছিলাম, নামের আগে । এবং প্রতিষ্ঠান বিরোধী কবিতা লেখকদের বিশেষ মর্যাদা সহকারে দেখতাম । আসলে কোন প্রতিষ্ঠান, তার বিরোধিতা কেন, সেসব ভালো করে না জেনে, না বুঝে ই আমরা প্রতিষ্ঠান বিরোধী সেজেছিলাম । আসলে এর থেকে আমরা আলাদা একটা মুনাফা তুলতে চেয়েছিলাম হয়তবা। এখন মনে হয় এসব চিন্তা ভাবনা ঠিক ছিল না । আসলে লেখালেখির সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই । লেখাটা তো পাঠকের কাছে পৌঁছাতে হবে, তার জন্য প্রতিষ্ঠানের কোনো স্বায়ী ভূমিকা নেই । প্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে কোনো কোনো কবি -লেখককে জনমানসে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, কিন্তু কাউকেই চিরস্থায়ী কবি-লেখক করতে পারে না । আর প্রতিষ্ঠান একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর নতুন কোনো কবির প্রতি তাদের সমর্থনের চিহ্ন লাগিয়ে দেয়।
তখন এতকিছু বুঝতাম না ।সেকারণে বোকার মতো প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা চালিয়ে গিয়েছিলাম।
তখন আরো জানতাম না প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা একটা প্রচারের অস্ত্র ।প্রতিষ্ঠান বিরোধীদের সংখ্যাও নেহাত কম নয়।ভোটাভুটি করলে কাদের দিকে পাল্লা ভারী হবে তা নির্ধারণ করা বেশ কঠিন ।
যেমন ধরুন গল্পকার সুবিমল মিশ্র র জনপ্রিয়তা আমাদের সময়ে কারো থেকে কম ছিল না । বইমেলা কিংবা অন্যত্র সুবিমলের বইয়ের বিক্রি ঈর্ষণীয় ছিল ।গল্পকার সুবিমল মিশ্র অনেক লেখক এবং পাঠকের পছন্দের তালিকায় ছিল ।
এই সুবিমল আমাদের সাম্প্রতিক এর লেখক। আমার সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব ছিল । ওটা বসাও একসঙ্গে ছিল । এবং এটা বলতে আমার কোনো দ্বিধা নেই যে হারাণ মাঝির বিধবা বউয়ের মড়া বা সোনার গান্ধী মূর্তি গল্প টি যে হইচই ফেলেছিল তা অভাবনীয় ছিল ।সেই সময়ের এমন একজন লেখক -পাঠকের নাম জানানো যাবে না যিনি হারাণ মাঝি গল্পটি পড়েননি । আমাদের সুতৃপ্তির আড্ডার সঙ্গী ছিল সুবিমল। আমি এখনো সুবিমলের জন্য গর্ব বোধ করি ।
সুবিমলের মতোই আর একজন গল্পকার জ্যোৎস্নাময় ঘোষ।থাকতেন নৈহাটি হালিসহর অঞ্চলে ।ওনার লেখা বিদ্যাসাগরের সার্ধ শতাব্দী এবং গ্রাম মধুবনির পরান মণ্ডল গল্পটি বাংলা গল্প সাহিত্যের হীরকখণ্ড।হৃষিকেশের সৌজন্যে জ্যোৎস্নাময় এর সঙ্গে আমার প্রগাঢ় বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল ।তখন নৈহাটি হালিশহরকে আমার নিজের জায়গা মনে হত।জ্যোৎস্নাময় র মতো মহৎ লেখকের সান্নিধ্য আমাকে সমৃদ্ধ করেছে ।
ঠিক একই মাপের লেখক ছিলেন বাসুদেব দাশগুপ্ত ।বাসুদেবের রন্ধনশালা পড়েননি এমন মানুষ ও খুঁজে পাওয়া যাবে না ।
বাসুদেব ছিলেন হাংরি আন্দোলনের পুরোধা ।এবং তাঁর রন্ধনশালা বাংলাসাহিত্যের সম্পদ ।
হাংরি সম্পর্কে তেমন কিছুই আগে বলা হয়নি।আমি যতটুকু জানি তা না বলা অন্যান্য হবে। আমাদের হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাড়িতে ডাকযোগে মলয় রায়চৌধুরী প্রেরিত বইপত্র আসতো পাটনাতে থেকে ।বইপত্র অর্থাৎ বই এবং পত্রিকা ।মলয়রা তখন পাটনাতে থাকতেন। হাংরি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন শৈলেশ্বর ঘোষ, বাসুদেব দাশগুপ্ত সুবিমল বসাক, সুবো আচার্য, প্রদীপ চৌধুরী, ফাল্গুনী রায় সহ আরো অনেকে।মলয় এবং সমীরদা তো ছিলেনই।
সুবোধ তখন ব্যাঙ্কে কাজ করতেন।পোস্টিং বিষ্ণুপুরে ।প্রদীপ থাকতেন আগরতলা য়। তাহলে ভেবে দেখুন হাংরি আন্দোলনের প্রভাব কতটা বিস্তৃত ছিল । হাংরি দের মধ্যে যে একতা ছিল তা সকলের ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ।
হাংরি নিয়ে আইন আদালত পর্ব সকলেই আমার থেকে বেশি জানেন ।সেকারণে সেসব প্রসঙ্গ আনলাম না ।
আমার মনে হয় হাংরি আন্দোলনের সাফল্য যে এতটা পাওয়া যাবে তা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কেউই অনুমানই করতে পারেননি ।ফলে লভ্যাংশ ভাগাভাগির সময় কেউই এক শতাংশও অন্য কাউকে দিতে চাননি । মলয় চেয়েছিলেন হাংরি তাঁর একক প্রচেষ্টা ।দেশবিদেশ এ এমনটাই প্রচার করেছিলেন, এমনকি এখনো সেরকমই করে চলেছেন ।
এরকমটা না হওয়াই বাঞ্ছনীয় ছিল ।
তখন এতকিছু বুঝতাম না ।সেকারণে বোকার মতো প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা চালিয়ে গিয়েছিলাম।
তখন আরো জানতাম না প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা একটা প্রচারের অস্ত্র ।প্রতিষ্ঠান বিরোধীদের সংখ্যাও নেহাত কম নয়।ভোটাভুটি করলে কাদের দিকে পাল্লা ভারী হবে তা নির্ধারণ করা বেশ কঠিন ।
যেমন ধরুন গল্পকার সুবিমল মিশ্র র জনপ্রিয়তা আমাদের সময়ে কারো থেকে কম ছিল না । বইমেলা কিংবা অন্যত্র সুবিমলের বইয়ের বিক্রি ঈর্ষণীয় ছিল ।গল্পকার সুবিমল মিশ্র অনেক লেখক এবং পাঠকের পছন্দের তালিকায় ছিল ।
এই সুবিমল আমাদের সাম্প্রতিক এর লেখক। আমার সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব ছিল । ওটা বসাও একসঙ্গে ছিল । এবং এটা বলতে আমার কোনো দ্বিধা নেই যে হারাণ মাঝির বিধবা বউয়ের মড়া বা সোনার গান্ধী মূর্তি গল্প টি যে হইচই ফেলেছিল তা অভাবনীয় ছিল ।সেই সময়ের এমন একজন লেখক -পাঠকের নাম জানানো যাবে না যিনি হারাণ মাঝি গল্পটি পড়েননি । আমাদের সুতৃপ্তির আড্ডার সঙ্গী ছিল সুবিমল। আমি এখনো সুবিমলের জন্য গর্ব বোধ করি ।
সুবিমলের মতোই আর একজন গল্পকার জ্যোৎস্নাময় ঘোষ।থাকতেন নৈহাটি হালিসহর অঞ্চলে ।ওনার লেখা বিদ্যাসাগরের সার্ধ শতাব্দী এবং গ্রাম মধুবনির পরান মণ্ডল গল্পটি বাংলা গল্প সাহিত্যের হীরকখণ্ড।হৃষিকেশের সৌজন্যে জ্যোৎস্নাময় এর সঙ্গে আমার প্রগাঢ় বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল ।তখন নৈহাটি হালিশহরকে আমার নিজের জায়গা মনে হত।জ্যোৎস্নাময় র মতো মহৎ লেখকের সান্নিধ্য আমাকে সমৃদ্ধ করেছে ।
ঠিক একই মাপের লেখক ছিলেন বাসুদেব দাশগুপ্ত ।বাসুদেবের রন্ধনশালা পড়েননি এমন মানুষ ও খুঁজে পাওয়া যাবে না ।
বাসুদেব ছিলেন হাংরি আন্দোলনের পুরোধা ।এবং তাঁর রন্ধনশালা বাংলাসাহিত্যের সম্পদ ।
হাংরি সম্পর্কে তেমন কিছুই আগে বলা হয়নি।আমি যতটুকু জানি তা না বলা অন্যান্য হবে। আমাদের হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাড়িতে ডাকযোগে মলয় রায়চৌধুরী প্রেরিত বইপত্র আসতো পাটনাতে থেকে ।বইপত্র অর্থাৎ বই এবং পত্রিকা ।মলয়রা তখন পাটনাতে থাকতেন। হাংরি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন শৈলেশ্বর ঘোষ, বাসুদেব দাশগুপ্ত সুবিমল বসাক, সুবো আচার্য, প্রদীপ চৌধুরী, ফাল্গুনী রায় সহ আরো অনেকে।মলয় এবং সমীরদা তো ছিলেনই।
সুবোধ তখন ব্যাঙ্কে কাজ করতেন।পোস্টিং বিষ্ণুপুরে ।প্রদীপ থাকতেন আগরতলা য়। তাহলে ভেবে দেখুন হাংরি আন্দোলনের প্রভাব কতটা বিস্তৃত ছিল । হাংরি দের মধ্যে যে একতা ছিল তা সকলের ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ।
হাংরি নিয়ে আইন আদালত পর্ব সকলেই আমার থেকে বেশি জানেন ।সেকারণে সেসব প্রসঙ্গ আনলাম না ।
আমার মনে হয় হাংরি আন্দোলনের সাফল্য যে এতটা পাওয়া যাবে তা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কেউই অনুমানই করতে পারেননি ।ফলে লভ্যাংশ ভাগাভাগির সময় কেউই এক শতাংশও অন্য কাউকে দিতে চাননি । মলয় চেয়েছিলেন হাংরি তাঁর একক প্রচেষ্টা ।দেশবিদেশ এ এমনটাই প্রচার করেছিলেন, এমনকি এখনো সেরকমই করে চলেছেন ।
এরকমটা না হওয়াই বাঞ্ছনীয় ছিল ।
(২৭)
ঠিক করেছিলাম আজই পরিচয় এরআড্ডায় ঢুকে যাবো।হল না।কেননা এখনো বলা হয়নি এমন কয়েকটি পত্রিকার কথা, যেগুলি আমার কবিতা প্রকাশ না করলে আমি পরিচয় এ ঢোকার সাহসই পেতাম না ।
তখনকার একটি উল্লেখযোগ্য পত্রিকা উত্তরসূরী ।সম্পাদনা করতেন কবি অরুণ ভট্টাচার্য ।থাকতেন সিঁথির দিকে । আমাকে লেখা জমা দেওয়ার জন্য এতদূর যেতে হত না, যেতাম অরুণদার অফিসে ।জিও জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ায়। পার্ক স্ট্রিট মোড়ে।মিউজিয়াম এর পাশে। লেখা নিয়ে গেলে উনি খুশি হতেন । বুঝতে পারতাম ।লেখা দিয়ে অপেক্ষায় থাকতাম । অরুণদা শুধু কবিই ছিলেন না, গানের ব্যাপারে তাঁর পণ্ডিতের কোনো তুলনা ছিল না । রবীন্দ্রগানের স্বরবিন্যাস সম্পর্কে তাঁর বিশ্লেষণ ছিল খুবই যুক্তি গ্রাহ্য। স্বামী প্রজ্ঞানানন্দও তাঁর পাণ্ডিত্যকে স্বীকার করতেন। এরকম একজন মানুষের সামনে কীভাবে যে আমার মতো একজন সাধারণ কবিতালেখক বসে থাকার সাহস পেয়েছিল তা ভেবে আজও কুণ্ঠিত হচ্ছি।এখন মনে হচ্ছে উত্তরসূরী রয়াল সাইজের পত্রিকা ছিল ।কবিতা ছাপা হলে আমার মাটিতে পা পড়ত না ।পড়লেও সেই পা টলমল করতো, অর্থাৎ সেই পা-দুটি বারদুয়ারিতে ঘুরে আসা পা।
তখন আরো একটি পত্রিকা ছিল ধ্রুপদী ।সম্পাদনা করতেন কবি সুশীল রায়। থাকতেন সম্ভবত কাঁকুলিয়া রোডে।আমি কখনো ধ্রুপদী দপ্তরে যাইনি ।তবে ওনার বাড়িতে বেশ ভিড় লেগে থাকত।পঞ্চাশের প্রায় সকলেই যেতেন । আমার না যাওয়ার কারণে সুশীল রায় কীভাবে আপ্যায়ন করতেন তা আমি বলতে পারলাম না
তবে ডাকে লেখা পাঠালেও সেই লেখা ছাপা হত। ধ্রুপদী মাসিক কবিতা পত্রিকা ছিল । আমি একসময়ে এই পত্রিকার প্রায় নিয়মিত কবি ছিলাম ।কিন্তু কোনোদিনই তাঁর মুখোমুখি হইনি।
এই সুশীল রায় সেই হট্টমালার দিনে কবিতা ঘণ্টিকী বের করেছিলেন ।ঘণ্টায় ঘণ্টায় কবিতা, বা নতুন সংখ্যা । কীভাবে পারতেন জানি না ।তবে এমনটাই হয়েছিল ।
হট্টমালার দিন বললাম না, একটু বিশদে বলি।1966 সালটা ঠিক লিখলাম কি। তখন পঞ্চাশের কবিরা শুরু করলেন কবিতা দৈনিক বা দৈনিক কবিতা । ট্যাবলয়েড সাইজে।দু-চার দিন পর থেকেই আমরা শুরু করলাম সান্ধ্য কবিতা দৈনিক । প্রতিদিন বিকেল বেলায় ছাপা হয়ে যেত ।তারপর পত্রিকা নিয়ে যে যার মতো বেরিয়ে পরতাম ।আমার দায়িত্ব ছিল আনন্দ বাজার এ পত্রিকা পৌঁছে দেওয়া । ওপরের রিশেপসনে বসতেন শান্তিদা, সম্ভবত শান্তি সেনগুপ্ত ।খেলাধুলোর লেখা লিখতেন ।তাঁর অনুমতি নিয়ে সকলের টেবিলে পৌঁছে দিতাম সান্ধ্য কবিতা দৈনিক । অনেক পরে আনন্দবাজার পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠা য় একটা বক্স নিউজ ছাপা হয়েছিল ।লেখা ছিল পৃথিবীর সর্বপ্রেক্ষা দীর্ঘস্থায়ী দৈনিক কবিতা পত্রিকা --সান্ধ্য কবিতা দৈনিক ।
শুনলে অবাক হয়ে যাবেন এই দৈনিক পত্রিকায় একজনও কর্মচারী ছিল না ।পত্রিকার সব কাজকর্ম করতাম আমরা কয়েকজন ।মূলত কাননকুমার ভৌমিক চঞ্চল ভট্টাচার্য জয়ন্ত দত্ত দীপংকর সরকার বিমান ভট্টাচার্য অনিল চক্রবর্তী অরবিন্দ গঙ্গোপাধ্যায় এবং আমি ।
এই সান্ধ্য কবিতা দৈনিক ছাপার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ল্যান্সডাউন রোডের এক প্রেসে।কবি শংকর চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির কাছাকাছি, তবে রাস্তার উল্টো দিকে কিছুটা উত্তরে ।প্রেসের মালিক বলেছিলেন এই বাড়িতেই জীবনানন্দ বসবাস করতেন ।সত্য মিথ্যা বিচার করিনি।আমরা সত্য বলেই ধরে নিয়েছিলাম ।
এখন কিছুটা বোঝাতে পারলাম তো আমি উড়ে গিয়ে জুড়ে যাইনি পরিচয় এর সঙ্গে ।জুড়ে বসার কথা আগামীকাল ।
ঠিক করেছিলাম আজই পরিচয় এরআড্ডায় ঢুকে যাবো।হল না।কেননা এখনো বলা হয়নি এমন কয়েকটি পত্রিকার কথা, যেগুলি আমার কবিতা প্রকাশ না করলে আমি পরিচয় এ ঢোকার সাহসই পেতাম না ।
তখনকার একটি উল্লেখযোগ্য পত্রিকা উত্তরসূরী ।সম্পাদনা করতেন কবি অরুণ ভট্টাচার্য ।থাকতেন সিঁথির দিকে । আমাকে লেখা জমা দেওয়ার জন্য এতদূর যেতে হত না, যেতাম অরুণদার অফিসে ।জিও জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ায়। পার্ক স্ট্রিট মোড়ে।মিউজিয়াম এর পাশে। লেখা নিয়ে গেলে উনি খুশি হতেন । বুঝতে পারতাম ।লেখা দিয়ে অপেক্ষায় থাকতাম । অরুণদা শুধু কবিই ছিলেন না, গানের ব্যাপারে তাঁর পণ্ডিতের কোনো তুলনা ছিল না । রবীন্দ্রগানের স্বরবিন্যাস সম্পর্কে তাঁর বিশ্লেষণ ছিল খুবই যুক্তি গ্রাহ্য। স্বামী প্রজ্ঞানানন্দও তাঁর পাণ্ডিত্যকে স্বীকার করতেন। এরকম একজন মানুষের সামনে কীভাবে যে আমার মতো একজন সাধারণ কবিতালেখক বসে থাকার সাহস পেয়েছিল তা ভেবে আজও কুণ্ঠিত হচ্ছি।এখন মনে হচ্ছে উত্তরসূরী রয়াল সাইজের পত্রিকা ছিল ।কবিতা ছাপা হলে আমার মাটিতে পা পড়ত না ।পড়লেও সেই পা টলমল করতো, অর্থাৎ সেই পা-দুটি বারদুয়ারিতে ঘুরে আসা পা।
তখন আরো একটি পত্রিকা ছিল ধ্রুপদী ।সম্পাদনা করতেন কবি সুশীল রায়। থাকতেন সম্ভবত কাঁকুলিয়া রোডে।আমি কখনো ধ্রুপদী দপ্তরে যাইনি ।তবে ওনার বাড়িতে বেশ ভিড় লেগে থাকত।পঞ্চাশের প্রায় সকলেই যেতেন । আমার না যাওয়ার কারণে সুশীল রায় কীভাবে আপ্যায়ন করতেন তা আমি বলতে পারলাম না
তবে ডাকে লেখা পাঠালেও সেই লেখা ছাপা হত। ধ্রুপদী মাসিক কবিতা পত্রিকা ছিল । আমি একসময়ে এই পত্রিকার প্রায় নিয়মিত কবি ছিলাম ।কিন্তু কোনোদিনই তাঁর মুখোমুখি হইনি।
এই সুশীল রায় সেই হট্টমালার দিনে কবিতা ঘণ্টিকী বের করেছিলেন ।ঘণ্টায় ঘণ্টায় কবিতা, বা নতুন সংখ্যা । কীভাবে পারতেন জানি না ।তবে এমনটাই হয়েছিল ।
হট্টমালার দিন বললাম না, একটু বিশদে বলি।1966 সালটা ঠিক লিখলাম কি। তখন পঞ্চাশের কবিরা শুরু করলেন কবিতা দৈনিক বা দৈনিক কবিতা । ট্যাবলয়েড সাইজে।দু-চার দিন পর থেকেই আমরা শুরু করলাম সান্ধ্য কবিতা দৈনিক । প্রতিদিন বিকেল বেলায় ছাপা হয়ে যেত ।তারপর পত্রিকা নিয়ে যে যার মতো বেরিয়ে পরতাম ।আমার দায়িত্ব ছিল আনন্দ বাজার এ পত্রিকা পৌঁছে দেওয়া । ওপরের রিশেপসনে বসতেন শান্তিদা, সম্ভবত শান্তি সেনগুপ্ত ।খেলাধুলোর লেখা লিখতেন ।তাঁর অনুমতি নিয়ে সকলের টেবিলে পৌঁছে দিতাম সান্ধ্য কবিতা দৈনিক । অনেক পরে আনন্দবাজার পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠা য় একটা বক্স নিউজ ছাপা হয়েছিল ।লেখা ছিল পৃথিবীর সর্বপ্রেক্ষা দীর্ঘস্থায়ী দৈনিক কবিতা পত্রিকা --সান্ধ্য কবিতা দৈনিক ।
শুনলে অবাক হয়ে যাবেন এই দৈনিক পত্রিকায় একজনও কর্মচারী ছিল না ।পত্রিকার সব কাজকর্ম করতাম আমরা কয়েকজন ।মূলত কাননকুমার ভৌমিক চঞ্চল ভট্টাচার্য জয়ন্ত দত্ত দীপংকর সরকার বিমান ভট্টাচার্য অনিল চক্রবর্তী অরবিন্দ গঙ্গোপাধ্যায় এবং আমি ।
এই সান্ধ্য কবিতা দৈনিক ছাপার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ল্যান্সডাউন রোডের এক প্রেসে।কবি শংকর চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির কাছাকাছি, তবে রাস্তার উল্টো দিকে কিছুটা উত্তরে ।প্রেসের মালিক বলেছিলেন এই বাড়িতেই জীবনানন্দ বসবাস করতেন ।সত্য মিথ্যা বিচার করিনি।আমরা সত্য বলেই ধরে নিয়েছিলাম ।
এখন কিছুটা বোঝাতে পারলাম তো আমি উড়ে গিয়ে জুড়ে যাইনি পরিচয় এর সঙ্গে ।জুড়ে বসার কথা আগামীকাল ।
(২৮)
তখন সদ্য নতুন সম্পাদক হয়ে এলেন দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তরুণ সান্যাল । আমি তখন শুধুমাত্র কবিতা লিখতাম, গদ্য -টদ্য লেখার কথা মাথার মধ্যে ঢোকেনি। তবু কী করে যেন আমি জুড়ে গেলাম দীপেনদার সঙ্গে ।
দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন আমাদের কাছে মিথের মতো। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের পত্রিকা একতা -র একদা সম্পাদক ।
আমার সঙ্গে পরিচয়ের অনেক আগেই দীপেনদা লিখে ফেলেছিলেন চর্যাপদের হরিণ এবং অশ্বমেধের ঘোড়া-র মতো যুগান্তকারী ছোটো গল্প ।
দীপেনদা দের আগে সম্পাদক ছিলেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়।সেই সময়ে সহযোগী সম্পাদক ছিলেন দীপেনদা এবং মতি নন্দী ।
আরো একটা কথা আমি যে সময়ে পরিচয় দপ্তরে বসার জায়গা পেয়েছিলাম ঠিক সেই সময়েই দীপেন রায় শিশির সামন্ত সনৎ বন্দ্যোপাধ্যায় কাননকুমার ভৌমিক সহ আরো বেশ কয়েকজন নতুন মুখও বসার জায়গা পেয়েছিল ।
প্রবীণদের মধ্যে সিদ্ধেশ্বর সেন ধনঞ্জয় দাস চিত্ত ঘোষ সহ আরো অনেক বিশিষ্টজন প্রায় নিয়মিত আসতেন। আর হঠাৎই উদয় হতেন গ্রেট হাবুলদা।কেজি খানেক চানাচুর হাতে নিয়ে ।সেদিন আমাদের আনন্দের সীমা পরিসীমা দেখে কে।
হাবুলদার গল্পের ভাণ্ডার কখনোই শেষ হবার নয়।
আমাদের কবিপত্রর অনন্ত দাশও আসতেন ।আরো আসতেন তরুণ সেন ।
দেবেশ রায় তখন জলপাইগুড়িতে।অমিতাভ দাশগুপ্ত ও তখন জলপাইগুড়ি ।তবে আমরা আসার কিছুদিনের মধ্যেই অমিতাভদা চলে এসেছিলেন কলকাতায়।যোগ দিয়েছিলেন সেন্ট পলস কলেজে ।
অমিতাভ দার মধ্যরাত ছুঁতে আর সাত মাইল
কাব্যগ্রন্থের তখন বেশ নামডাক হয়েছিল।তবু কেন যে সবসময়ই শক্তিদার তে মগ্ন থাকতেন তা আমি এখনো বুজে উঠতে পারিনি ।নকশাল আন্দোলনের সময়ে অমিতাভদা লিখেছিলেন ক্ষমা কাকে ক্ষমা নামে একটি দীর্ঘকবিতা।যা---।
যা লিখতে চেয়েছিলাম তা লিখলাম না, সৌজন্য বজায় থাকুক ।
শ্রদ্ধেয় গোপাল হালদারের লেখার পাণ্ডুলিপি স্পর্শ করার পুণ্য আমার হাতের আছে । যাঁরা জানেন না, তাঁরা জেনে রাখুন সেই পুণ্য ভাঙিয়ে এখনো চালিয়ে যাচ্ছি ।
সেই পাণ্ডুলিপি পড়ার ক্ষমতা ছিল একমাত্র দীপেনদার।পরে আমিও কিছুটা জেনে গিয়েছিলাম ।আর তার ফলে দীপেনদা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন প্রসিদ্ধ কমিউনিস্ট নেতা ভবানী সেনের পাণ্ডুলিপি উদ্ধারের কাজ ।আমাকে এজন্য বারাসতে যেতে হয়েছিল ।সেদিন আমি বারাসতে গিয়েছিলাম সনৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যে ।সনৎদার বাড়িতে না গেলে জানতেই পারতাম না সনৎদার চরিত্রের মহৎ গুণটি।এক সমুদ্র ভালোবাসা ছিল সনৎদার হৃদয়ের গভীরে ।
এখন কিছুই জানি না উনি কেমন আছেন ।এতটাই বিচ্ছিন্ন পরিচয় থেকে ।
তবে আমাদের এক তরুণ গল্পকার আমার অফিসে একটা তার লেখা একটা নতুন গল্প নিয়ে গিয়েছিল। আমি সেদিনই সেই গল্পটি গল্পকার সহ নিয়ে গিয়েছিলাম পরিচয়, দীপেনদার কাছে ।গল্পটি ছাপা হয়েছিল গল্পের গুণে, সুপারিশের জন্য নয়। ওই গল্পকার এখনো জীবিত ।সে কোনো লেখাতে এই তথ্য টি প্রকাশ করেনি, একারণে আমিও নাম লিখলাম না, কোনোদিন লিখবো না ।
তখন সদ্য নতুন সম্পাদক হয়ে এলেন দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তরুণ সান্যাল । আমি তখন শুধুমাত্র কবিতা লিখতাম, গদ্য -টদ্য লেখার কথা মাথার মধ্যে ঢোকেনি। তবু কী করে যেন আমি জুড়ে গেলাম দীপেনদার সঙ্গে ।
দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন আমাদের কাছে মিথের মতো। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের পত্রিকা একতা -র একদা সম্পাদক ।
আমার সঙ্গে পরিচয়ের অনেক আগেই দীপেনদা লিখে ফেলেছিলেন চর্যাপদের হরিণ এবং অশ্বমেধের ঘোড়া-র মতো যুগান্তকারী ছোটো গল্প ।
দীপেনদা দের আগে সম্পাদক ছিলেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়।সেই সময়ে সহযোগী সম্পাদক ছিলেন দীপেনদা এবং মতি নন্দী ।
আরো একটা কথা আমি যে সময়ে পরিচয় দপ্তরে বসার জায়গা পেয়েছিলাম ঠিক সেই সময়েই দীপেন রায় শিশির সামন্ত সনৎ বন্দ্যোপাধ্যায় কাননকুমার ভৌমিক সহ আরো বেশ কয়েকজন নতুন মুখও বসার জায়গা পেয়েছিল ।
প্রবীণদের মধ্যে সিদ্ধেশ্বর সেন ধনঞ্জয় দাস চিত্ত ঘোষ সহ আরো অনেক বিশিষ্টজন প্রায় নিয়মিত আসতেন। আর হঠাৎই উদয় হতেন গ্রেট হাবুলদা।কেজি খানেক চানাচুর হাতে নিয়ে ।সেদিন আমাদের আনন্দের সীমা পরিসীমা দেখে কে।
হাবুলদার গল্পের ভাণ্ডার কখনোই শেষ হবার নয়।
আমাদের কবিপত্রর অনন্ত দাশও আসতেন ।আরো আসতেন তরুণ সেন ।
দেবেশ রায় তখন জলপাইগুড়িতে।অমিতাভ দাশগুপ্ত ও তখন জলপাইগুড়ি ।তবে আমরা আসার কিছুদিনের মধ্যেই অমিতাভদা চলে এসেছিলেন কলকাতায়।যোগ দিয়েছিলেন সেন্ট পলস কলেজে ।
অমিতাভ দার মধ্যরাত ছুঁতে আর সাত মাইল
কাব্যগ্রন্থের তখন বেশ নামডাক হয়েছিল।তবু কেন যে সবসময়ই শক্তিদার তে মগ্ন থাকতেন তা আমি এখনো বুজে উঠতে পারিনি ।নকশাল আন্দোলনের সময়ে অমিতাভদা লিখেছিলেন ক্ষমা কাকে ক্ষমা নামে একটি দীর্ঘকবিতা।যা---।
যা লিখতে চেয়েছিলাম তা লিখলাম না, সৌজন্য বজায় থাকুক ।
শ্রদ্ধেয় গোপাল হালদারের লেখার পাণ্ডুলিপি স্পর্শ করার পুণ্য আমার হাতের আছে । যাঁরা জানেন না, তাঁরা জেনে রাখুন সেই পুণ্য ভাঙিয়ে এখনো চালিয়ে যাচ্ছি ।
সেই পাণ্ডুলিপি পড়ার ক্ষমতা ছিল একমাত্র দীপেনদার।পরে আমিও কিছুটা জেনে গিয়েছিলাম ।আর তার ফলে দীপেনদা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন প্রসিদ্ধ কমিউনিস্ট নেতা ভবানী সেনের পাণ্ডুলিপি উদ্ধারের কাজ ।আমাকে এজন্য বারাসতে যেতে হয়েছিল ।সেদিন আমি বারাসতে গিয়েছিলাম সনৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যে ।সনৎদার বাড়িতে না গেলে জানতেই পারতাম না সনৎদার চরিত্রের মহৎ গুণটি।এক সমুদ্র ভালোবাসা ছিল সনৎদার হৃদয়ের গভীরে ।
এখন কিছুই জানি না উনি কেমন আছেন ।এতটাই বিচ্ছিন্ন পরিচয় থেকে ।
তবে আমাদের এক তরুণ গল্পকার আমার অফিসে একটা তার লেখা একটা নতুন গল্প নিয়ে গিয়েছিল। আমি সেদিনই সেই গল্পটি গল্পকার সহ নিয়ে গিয়েছিলাম পরিচয়, দীপেনদার কাছে ।গল্পটি ছাপা হয়েছিল গল্পের গুণে, সুপারিশের জন্য নয়। ওই গল্পকার এখনো জীবিত ।সে কোনো লেখাতে এই তথ্য টি প্রকাশ করেনি, একারণে আমিও নাম লিখলাম না, কোনোদিন লিখবো না ।
(২৯)
প্রথমে একটা আনন্দ সংবাদ পরিবেশন করি।রাজীব সিংহ সম্পাদিত মাসিক কবিতাপত্র পত্রিকার শারদীয় সংখ্যাতে এই লেখাটি প্রকাশিত হচ্ছে । রাজীব-কে হাততালি দিতে আপনাদের দুটি হাতকেই ব্যবহার করুন ।
এখন তখনকার কয়েকটি প্রেসের কথা ।
প্রথমেই বলবো স্টাইলো প্রেসের কথা । এই প্রেসটি ছিল আমাদের পাড়ায়। হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে।মালিকের নাম পান্নালাল পাল।লম্বা রোগা ফরসা যুবক। বই বা পত্রিকা ছাপার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না, জবকাজের প্রেস। তবু সাহস আর উৎসাহের ওপর ভিত্তি করে ছেপেছিল আমাদের প্রথম এবং দ্বিতীয় পত্রিকা, মরাল এবং জোয়ার। আমার প্রথম বই শুধু প্রেমিকার জন্য বইটিও ওই প্রেস থেকে ছাপা হয়েছিল । একবারে দু-পৃষ্ঠা করে ট্রেডল মেশিনে ছাপা হয়েছিল ।
কাগজ কিনে ছিলাম বৈঠকখানা থেকে ।কেজি দরে।বাঁধিয়ে ছিল মির্জাপুরের খাতা বাঁধানোর এক বাইন্ডার।ছাপার টাকা উঠেছিল রথের দিনে পাঁপড় বিক্রি করে । আমাদের পারপিচ্যুয়াল ক্লাবের পুরো টিম অর্থাৎ বড়োরা এবং আমার বন্ধুরা সকলেই সমান ভাবে আমার পাশে ছিলেন /ছিলো ।বাসুদেবদা পতুদা শ্যামলদা জর্জদা ঝন্টুদা বুবুদা নিতাইদা তরুণদা বিভুদারা ছিলেন অভিভাবক । আর আমার বন্ধুরা সকলেই একত্রিত ছিল ।বাচ্চু বুগি নবারুণ অসিত অমিত মণি দীপংকর দীপক অসিত পাল এরা সকলেই জানেন লড়িয়ে দিয়েছিল।পাঁপড় ভাজার দায়িত্ব বর্তেছিল আমাদের রান্নাঘরের সর্বেসর্বা কাকু।
বাংলা কবিতার ইতিহাসে এই নজির আমার জানা নেই ।ছাপা এবং কাগজের খরচ উঠেছিল পাঁপড় বিক্রি করে ।কিন্তু দুশো বই বাঁধানোর খরচ পঁয়ত্রিশ করে মোট সত্তর টাকার অভাবে বইটির প্রকাশ করা হচ্ছিল না । একদিন বাবাকে কথাটা বলেই ফেললাম । কে বলেছিল, আমি না মেজভাই তা সঠিক ভাবে বলতে পারছি না । তবে বাবা বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে পুরো টাকাটা দিয়ে দিয়েছিল।বই প্রকাশের পর আমার ডানা গজিয়েছিল। আমি দেখতে পাচ্ছি আমি তখন উড়তে শুরু করলাম ।বন্ধুদের মধ্যে হীরক বা তাতুর নামটা আগে লেখা হয়নি। লেখা হয়নি টুকটুকি আর লালুর নাম। এখন আমি সবকিছু ভুলতে শুরু করেছি।আরো অনেক আগে লেখাটা লিখতে হত।
এর পরের প্রেসটির কথা সান্ধ্য কবিতা দৈনিক প্রসঙ্গে লিখেছিলাম ।
এরপর কলেজ স্ট্রিট পাড়ায় ঢুকে পড়লাম ।কবিপত্র ছাপার সূত্রে ।ব্যবসা বাণিজ্য প্রেসে।ইউনিভার্সসিটি ইন্সটিটিউট এর পেছনের দিকে ।রমানাথ মজুমদার স্ট্রিটে।মালকিন ছিলেন সখীসংবাদ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত । ওখানে শক্তি দা যেতেন।মীনাক্ষী ও যেতেন ।তখনো বিবাহসূত্রে বাঁধা পড়েননি দুজনে।মীনাক্ষী ছিলেন সখীসংবাদ এর সম্পাদিকা।
এই প্রেসের ম্যানেজারের মুখ এখনো স্মৃতি থেকে মুছে যায়নি।যাবেও না । এখনো ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের সময় ম্যানেজারকে দ্যাখার চেষ্টা করি ।প্রেসটি উঠে গেছে ।কষ্ট হয় খুব ।
এই ব্যবসা বাণিজ্য প্রেসে ছাপা হত এক্ষণ। আমাদের কালের শ্রেষ্ঠ পত্রিকা । নির্মাল্য বাবু আসতেন ।নিজের নিয়মে কাজকর্ম করতেন।কাজ শেষ হলেই বেরিয়ে যেতেন । আমার দিকে কোনোদিনই তাকিয়ে দেখেননি ।কিন্তু আমি ওনার প্রতিটি কাজ খুব মনোযোগ দিয়ে দেখতাম ।তা প্রুফ দেখাই হোক বা পেজ মেকাপ।খুবই নিষ্ঠার সঙ্গে দেখেছিলাম বলে কবিপত্র-র গল্প সংখ্যা কিংবা শিল্প সংখ্যার প্রডাক্টশন এতটা নিপুণ হয়েছিল।
আমি যতদিন কবিপত্র-র সঙ্গে যুক্ত ছিলাম ততদিন পবিত্রদা নিশ্চিন্তে আমার ওপর সব দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন।
ওখানে বহুরূপী পত্রিকাও ছাপা হত।
সেকথা আগামীকাল ।
প্রথমে একটা আনন্দ সংবাদ পরিবেশন করি।রাজীব সিংহ সম্পাদিত মাসিক কবিতাপত্র পত্রিকার শারদীয় সংখ্যাতে এই লেখাটি প্রকাশিত হচ্ছে । রাজীব-কে হাততালি দিতে আপনাদের দুটি হাতকেই ব্যবহার করুন ।
এখন তখনকার কয়েকটি প্রেসের কথা ।
প্রথমেই বলবো স্টাইলো প্রেসের কথা । এই প্রেসটি ছিল আমাদের পাড়ায়। হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে।মালিকের নাম পান্নালাল পাল।লম্বা রোগা ফরসা যুবক। বই বা পত্রিকা ছাপার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না, জবকাজের প্রেস। তবু সাহস আর উৎসাহের ওপর ভিত্তি করে ছেপেছিল আমাদের প্রথম এবং দ্বিতীয় পত্রিকা, মরাল এবং জোয়ার। আমার প্রথম বই শুধু প্রেমিকার জন্য বইটিও ওই প্রেস থেকে ছাপা হয়েছিল । একবারে দু-পৃষ্ঠা করে ট্রেডল মেশিনে ছাপা হয়েছিল ।
কাগজ কিনে ছিলাম বৈঠকখানা থেকে ।কেজি দরে।বাঁধিয়ে ছিল মির্জাপুরের খাতা বাঁধানোর এক বাইন্ডার।ছাপার টাকা উঠেছিল রথের দিনে পাঁপড় বিক্রি করে । আমাদের পারপিচ্যুয়াল ক্লাবের পুরো টিম অর্থাৎ বড়োরা এবং আমার বন্ধুরা সকলেই সমান ভাবে আমার পাশে ছিলেন /ছিলো ।বাসুদেবদা পতুদা শ্যামলদা জর্জদা ঝন্টুদা বুবুদা নিতাইদা তরুণদা বিভুদারা ছিলেন অভিভাবক । আর আমার বন্ধুরা সকলেই একত্রিত ছিল ।বাচ্চু বুগি নবারুণ অসিত অমিত মণি দীপংকর দীপক অসিত পাল এরা সকলেই জানেন লড়িয়ে দিয়েছিল।পাঁপড় ভাজার দায়িত্ব বর্তেছিল আমাদের রান্নাঘরের সর্বেসর্বা কাকু।
বাংলা কবিতার ইতিহাসে এই নজির আমার জানা নেই ।ছাপা এবং কাগজের খরচ উঠেছিল পাঁপড় বিক্রি করে ।কিন্তু দুশো বই বাঁধানোর খরচ পঁয়ত্রিশ করে মোট সত্তর টাকার অভাবে বইটির প্রকাশ করা হচ্ছিল না । একদিন বাবাকে কথাটা বলেই ফেললাম । কে বলেছিল, আমি না মেজভাই তা সঠিক ভাবে বলতে পারছি না । তবে বাবা বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে পুরো টাকাটা দিয়ে দিয়েছিল।বই প্রকাশের পর আমার ডানা গজিয়েছিল। আমি দেখতে পাচ্ছি আমি তখন উড়তে শুরু করলাম ।বন্ধুদের মধ্যে হীরক বা তাতুর নামটা আগে লেখা হয়নি। লেখা হয়নি টুকটুকি আর লালুর নাম। এখন আমি সবকিছু ভুলতে শুরু করেছি।আরো অনেক আগে লেখাটা লিখতে হত।
এর পরের প্রেসটির কথা সান্ধ্য কবিতা দৈনিক প্রসঙ্গে লিখেছিলাম ।
এরপর কলেজ স্ট্রিট পাড়ায় ঢুকে পড়লাম ।কবিপত্র ছাপার সূত্রে ।ব্যবসা বাণিজ্য প্রেসে।ইউনিভার্সসিটি ইন্সটিটিউট এর পেছনের দিকে ।রমানাথ মজুমদার স্ট্রিটে।মালকিন ছিলেন সখীসংবাদ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত । ওখানে শক্তি দা যেতেন।মীনাক্ষী ও যেতেন ।তখনো বিবাহসূত্রে বাঁধা পড়েননি দুজনে।মীনাক্ষী ছিলেন সখীসংবাদ এর সম্পাদিকা।
এই প্রেসের ম্যানেজারের মুখ এখনো স্মৃতি থেকে মুছে যায়নি।যাবেও না । এখনো ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের সময় ম্যানেজারকে দ্যাখার চেষ্টা করি ।প্রেসটি উঠে গেছে ।কষ্ট হয় খুব ।
এই ব্যবসা বাণিজ্য প্রেসে ছাপা হত এক্ষণ। আমাদের কালের শ্রেষ্ঠ পত্রিকা । নির্মাল্য বাবু আসতেন ।নিজের নিয়মে কাজকর্ম করতেন।কাজ শেষ হলেই বেরিয়ে যেতেন । আমার দিকে কোনোদিনই তাকিয়ে দেখেননি ।কিন্তু আমি ওনার প্রতিটি কাজ খুব মনোযোগ দিয়ে দেখতাম ।তা প্রুফ দেখাই হোক বা পেজ মেকাপ।খুবই নিষ্ঠার সঙ্গে দেখেছিলাম বলে কবিপত্র-র গল্প সংখ্যা কিংবা শিল্প সংখ্যার প্রডাক্টশন এতটা নিপুণ হয়েছিল।
আমি যতদিন কবিপত্র-র সঙ্গে যুক্ত ছিলাম ততদিন পবিত্রদা নিশ্চিন্তে আমার ওপর সব দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন।
ওখানে বহুরূপী পত্রিকাও ছাপা হত।
সেকথা আগামীকাল ।
(৩০)
দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চর্যাপদের হরিণী র হরিণীটিকে আমি হরিণ লিখেছিলাম ।আমার সময়ের কবিদের মধ্যে একমাত্র কালীকৃষ্ণ গুহ-র সঙ্গে আমার এখনো বন্ধুত্ব বজায় আছে, সেই কালীকৃষ্ণ আমার ভুল ধরিয়ে দিয়ে প্রকৃতই বন্ধুকৃত্য করেছে।
এরপর কেউ যদি বলেন দীপেন্দ্রনাথকে নিয়ে আমার মাতামাতি করাটার কোনো অধিকার নেই, তাঁরা অন্যায্য কিছু বলবেন না । 73+ বয়সে ভুলের সাজা পেতে আমি রাজি আছি।
কিন্তু আমার অন্য একটা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে, তা হল এখানে কেউই কালীকৃষ্ণর আগে ভুলটা দেখিয়ে দিতে পারল না।তাহলে কি ধরে নেব দীপেন্দ্রনাথ নতুন প্রজন্মের পাঠকদের কাছে অনাবিষ্কৃত আছেন ।এই বিপদের কথা আসলেই লেখালেখির সমস্ত উদ্যোগ মিথ্যা বা নিষ্ফলা হয়ে যায়।
গতকাল ব্যবসা বাণিজ্য প্রেসে ছিলাম ।এক্ষণ কবিপত্র -র কথা বলেছি। শেষ করেছিলাম বহুরূপী পত্রিকার কথা দিয়ে। বহুরূপী নাটকের দলটির পক্ষ থেকে প্রকাশিত হত বহুরূপী নামের একটি পত্রিকা । মূলত নাটকের পত্রিকা । বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব কুমার রায় এবং চিত্ত দা পত্রিকাটির দেখভাল করতেন । এই দুই খ্যাতিমান মানুষকে খুব কাছ থেকে দেখেছি ।কবিতা পাক্ষিক পর্বে কাশীনাথ পাল মশাই -এর প্রিন্টিং সেন্টার প্রেসের একটা টেবিল ভাগ করে নিজের নিজের পত্রিকার কাজ করেছি দীর্ঘ দিন ।
প্রেসের কথা বলার কারণ হলো আমি ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন প্রেস থেকে বিভিন্ন গুণিজনের সংস্পর্শে আসার যেসব সুযোগ পেয়েছি, তা থেকে নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়েছি তার নজির খুব বেশি নেই ।
প্রেস থেকে যাবার বা প্রেসের কাজ শেষ করে যাবার মাত্র দুটি রাস্তা ছিল । একটি বারদুয়ারি অন্যটি প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিট ।
আজ বারদুয়ারিতে যাওয়া যাক । বারদুয়ারিতে আমরা দু-নম্বর টেবিলে বসতাম ।প্রথম টেবিলের দ্যাখা শোনার দায়িত্ব ছিল আনন্দ -র ।দ্বিতীয়টি অপুর। আনন্দকে আমি আনন্দ দা বলতাম । আর অপু তখন সদ্য কৈশোর পেরিয়ে আসা যুবক ।
প্রথম টেবিল দখলে থাকতো CESC র কর্মী দের।তাদের আলোচ্য ছিল একটি ছোটো বই-বিষয় কেন্দ্রিক। অর্থাৎ ঘোড়া ।ওরা ঘোড়াতেই মগ্ন থাকতো।
দু নম্বর টেবিল ছিল কবিদের।তাদের হাতে ও বিভিন্ন বাংলা পত্রিকা ।প্রথমে টেবিলের বই -এর থেকে দ্বিতীয় টেবিলের বই সাইজে বেশ কিছু টা বড়ো ছিল ।কবিপত্রর সঙ্গে যুক্ত প্রায় সকলেই আসতেন ।তুষার চৌধুরী পবিত্রদা এবং আমি মূলত এই টেবিলের শাসন করতাম ।পরের দিকে অমর মিত্র শচীন দাশ চণ্ডী মণ্ডল, আর মাঝে মধ্যে শান্তনু দাশও যোগ দিত বা সঙ্গ দিত আমাদের ।
অপুকে আমি পুজোর আগে নতুন গেঞ্জি কিনে দিতাম।বাকিরা সকলেই নগদে দিত। আমি তখন থেকেই নগদবিদায়ে পরিতৃপ্ত হতে পারিনি , এখনো পারি না ।
দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চর্যাপদের হরিণী র হরিণীটিকে আমি হরিণ লিখেছিলাম ।আমার সময়ের কবিদের মধ্যে একমাত্র কালীকৃষ্ণ গুহ-র সঙ্গে আমার এখনো বন্ধুত্ব বজায় আছে, সেই কালীকৃষ্ণ আমার ভুল ধরিয়ে দিয়ে প্রকৃতই বন্ধুকৃত্য করেছে।
এরপর কেউ যদি বলেন দীপেন্দ্রনাথকে নিয়ে আমার মাতামাতি করাটার কোনো অধিকার নেই, তাঁরা অন্যায্য কিছু বলবেন না । 73+ বয়সে ভুলের সাজা পেতে আমি রাজি আছি।
কিন্তু আমার অন্য একটা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে, তা হল এখানে কেউই কালীকৃষ্ণর আগে ভুলটা দেখিয়ে দিতে পারল না।তাহলে কি ধরে নেব দীপেন্দ্রনাথ নতুন প্রজন্মের পাঠকদের কাছে অনাবিষ্কৃত আছেন ।এই বিপদের কথা আসলেই লেখালেখির সমস্ত উদ্যোগ মিথ্যা বা নিষ্ফলা হয়ে যায়।
গতকাল ব্যবসা বাণিজ্য প্রেসে ছিলাম ।এক্ষণ কবিপত্র -র কথা বলেছি। শেষ করেছিলাম বহুরূপী পত্রিকার কথা দিয়ে। বহুরূপী নাটকের দলটির পক্ষ থেকে প্রকাশিত হত বহুরূপী নামের একটি পত্রিকা । মূলত নাটকের পত্রিকা । বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব কুমার রায় এবং চিত্ত দা পত্রিকাটির দেখভাল করতেন । এই দুই খ্যাতিমান মানুষকে খুব কাছ থেকে দেখেছি ।কবিতা পাক্ষিক পর্বে কাশীনাথ পাল মশাই -এর প্রিন্টিং সেন্টার প্রেসের একটা টেবিল ভাগ করে নিজের নিজের পত্রিকার কাজ করেছি দীর্ঘ দিন ।
প্রেসের কথা বলার কারণ হলো আমি ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন প্রেস থেকে বিভিন্ন গুণিজনের সংস্পর্শে আসার যেসব সুযোগ পেয়েছি, তা থেকে নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়েছি তার নজির খুব বেশি নেই ।
প্রেস থেকে যাবার বা প্রেসের কাজ শেষ করে যাবার মাত্র দুটি রাস্তা ছিল । একটি বারদুয়ারি অন্যটি প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিট ।
আজ বারদুয়ারিতে যাওয়া যাক । বারদুয়ারিতে আমরা দু-নম্বর টেবিলে বসতাম ।প্রথম টেবিলের দ্যাখা শোনার দায়িত্ব ছিল আনন্দ -র ।দ্বিতীয়টি অপুর। আনন্দকে আমি আনন্দ দা বলতাম । আর অপু তখন সদ্য কৈশোর পেরিয়ে আসা যুবক ।
প্রথম টেবিল দখলে থাকতো CESC র কর্মী দের।তাদের আলোচ্য ছিল একটি ছোটো বই-বিষয় কেন্দ্রিক। অর্থাৎ ঘোড়া ।ওরা ঘোড়াতেই মগ্ন থাকতো।
দু নম্বর টেবিল ছিল কবিদের।তাদের হাতে ও বিভিন্ন বাংলা পত্রিকা ।প্রথমে টেবিলের বই -এর থেকে দ্বিতীয় টেবিলের বই সাইজে বেশ কিছু টা বড়ো ছিল ।কবিপত্রর সঙ্গে যুক্ত প্রায় সকলেই আসতেন ।তুষার চৌধুরী পবিত্রদা এবং আমি মূলত এই টেবিলের শাসন করতাম ।পরের দিকে অমর মিত্র শচীন দাশ চণ্ডী মণ্ডল, আর মাঝে মধ্যে শান্তনু দাশও যোগ দিত বা সঙ্গ দিত আমাদের ।
অপুকে আমি পুজোর আগে নতুন গেঞ্জি কিনে দিতাম।বাকিরা সকলেই নগদে দিত। আমি তখন থেকেই নগদবিদায়ে পরিতৃপ্ত হতে পারিনি , এখনো পারি না ।
(৩১)
গতকাল বারদুয়ারিতে ছিলাম, আজও থাকতে চাইছি ।কেননা দশ-পনেরো বছরের কথামালা একদিনে শেষ করা যায় না ।
বন্ধু পিনাকী ঘোষ অনেক নাম জানিয়েছে।যা আমার না-লেখা বেশ অন্যায় হয়েছে । অশোক পোদ্দারের কথাবলার ধরণটা অন্যরকম ছিল ।ওর মতো রহস্যজনক হাসি আর কারো মধ্যেই দেখিনি । অপু বোতল নিয়ে আসার পর যাবতীয় দায়িত্ব ছিল অশোকের। আমরা কিছু করার সুযোগ পেতাম না । অশোক ছিল তুষারের রিক্রুট।সেকারণে ও নিজেকে অনেকের থেকে ওপরে দেখতে চাইতো। আমরা কেউ আপত্তি করতাম না । কেনই বা করবো।
তরুণ ভরদ্বাজ এবং সূর্য ঘোষ দুজন নবীন কবি । ওদের সঙ্গী হিসেবে পেয়ে আমাদের গড় বয়স কমে গিয়েছিল ।আর সেই সময়ে পেয়েছিলাম শৌণক লাহিড়ী -কে।লম্বা, স্বাস্থ্যবান সুদর্শন শৌণক আমাদের গ্রুপ -কে প্রেরণা জুগিয়েছিল। শৌণকের বাবা ছিলেন খ্যাতিমান যাত্রাশিল্পী ইন্দ্র লাহিড়ী । শৌণকের কবিতাপাঠ আমাকে মুগ্ধ করতো।
আর পিনাকী তো ছিলই । ওর মদ্যপ্রাশন-এর ঘটনাটা একটু ডিটেইল - এ বলছি ।
দুপুর এবং বিকেলের মধ্যবর্তী একটা সময়ে মেট্রো সিনেমার ব্যালকনির সামনে দিয়ে হাঁটছি ।সামনের দিকে দেখলাম একজনকে । আন্দাজ করে ভাবলাম পিনাকী হতে পারে । একটু জোরে ডাকলাম।পেছন ফিরে আমাকে দেখে কাছে চলে এল।বলল--- আপনি পেছন থেকে আমাকে চিনলেন কীভাবে ? আমি তখনো স্মার্ট কথাবার্তা বলতাম ।বললাম, আমি যাকে চিনি, তার সামনের দিক যেমন চিনি, তার পেছনের দিকটাও তেমনটাই চিনি ।
তারপর হাঁটতে শুরু করলাম । হাঁটার ব্যাপারে আমি পা-দুটি কে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি ।আমার পা দুটি পিনাকীর পা-দুটিকে পথ দেখিয়ে নিয়ে গেল বারদুয়ারিতে ।
তারপর অপু-র দায়িত্ব । গ্লাস এল, বোতল এল, লেবু এল।পাতিলেবু। এবং নবাগতকে নিজ হাতে বানিয়ে দিলাম পানীয়। সিনিয়র হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব ছিল, কর্তব্য ছিল । আমার যা করার তা-ই করেছিলাম ।এক মিলি গ্রামও বেশি করিনি ।
দ্বিতীয় দিনে পিনাকী আর নবাগত থাকেনি।
তখনকার তরুণ গল্পকার অমর মিত্র সেই সময়ে আমাদের সঙ্গেই ওঠা বসা করতো।অমর বারদুয়ারি পর্বে আমাদের পানসঙ্গী ছিল, ওর উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য ।
পবিত্রদার কথা মনে হচ্ছে ঠিক বলিনি ।পবিত্রদা যেতেন ছোটো ব্রিস্টলে । মদ্যপান ছিল খুবই সীমিত, কিন্তু ছোলা এবং বাদামের প্রতি আগ্রহ ছিল মনে রাখার মতো ।বারদুয়ারিতে গেলেও খুবই কম ।
অনেক বছর পর ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে ঢুকে পড়েছিলাম বারদুয়ারিতে । অপু তখন কাউন্টারে।সেদিন আমার সঙ্গে ছিলেন আমাদের অফিসের কিরণদা।কিরণ গোস্বামী । তখন পুরোনো মালিকের ছেলে দায়িত্বে।আমাকে দেখে বললেন, আমাদের একদম ভুলে গেলেন ।শুনেছি ছোটো ব্রিস্টলে যান।মাঝে মাঝে দ্যাখা দিলে ভালো লাগবে ।
কথা দিয়েছিলাম, কিন্তু যাওয়া হয়ে ওঠেনি।তবে যেতে ইচ্ছে করে ।বহু তরুণকে বলেছি , একদিন বারদুয়ারি দ্যাখাতে নিয়ে যাবো।লোকে যেমন রবীন্দ্রসদন কিংবা নন্দন দেখানোর কথা বলে, আমিও সেভাবেই বলেছিলাম বারদুয়ারি দ্যাখানোর কথা । কিন্তু নিয়ে যাওয়া হয়নি।তবে এটুকু বলতে আমার দ্বিধা নেই যে আমার বারদুয়ারি -যাপনকে বাদ দিয়ে আমাকে চেনা যাবে না ।
বারদুয়ারি আমার কাছে তীর্থের মতো , সেই তীর্থে বারবার যেতে হত আমাকে ।
আমার আর এক তীর্থকথা আগামীকাল ।
গতকাল বারদুয়ারিতে ছিলাম, আজও থাকতে চাইছি ।কেননা দশ-পনেরো বছরের কথামালা একদিনে শেষ করা যায় না ।
বন্ধু পিনাকী ঘোষ অনেক নাম জানিয়েছে।যা আমার না-লেখা বেশ অন্যায় হয়েছে । অশোক পোদ্দারের কথাবলার ধরণটা অন্যরকম ছিল ।ওর মতো রহস্যজনক হাসি আর কারো মধ্যেই দেখিনি । অপু বোতল নিয়ে আসার পর যাবতীয় দায়িত্ব ছিল অশোকের। আমরা কিছু করার সুযোগ পেতাম না । অশোক ছিল তুষারের রিক্রুট।সেকারণে ও নিজেকে অনেকের থেকে ওপরে দেখতে চাইতো। আমরা কেউ আপত্তি করতাম না । কেনই বা করবো।
তরুণ ভরদ্বাজ এবং সূর্য ঘোষ দুজন নবীন কবি । ওদের সঙ্গী হিসেবে পেয়ে আমাদের গড় বয়স কমে গিয়েছিল ।আর সেই সময়ে পেয়েছিলাম শৌণক লাহিড়ী -কে।লম্বা, স্বাস্থ্যবান সুদর্শন শৌণক আমাদের গ্রুপ -কে প্রেরণা জুগিয়েছিল। শৌণকের বাবা ছিলেন খ্যাতিমান যাত্রাশিল্পী ইন্দ্র লাহিড়ী । শৌণকের কবিতাপাঠ আমাকে মুগ্ধ করতো।
আর পিনাকী তো ছিলই । ওর মদ্যপ্রাশন-এর ঘটনাটা একটু ডিটেইল - এ বলছি ।
দুপুর এবং বিকেলের মধ্যবর্তী একটা সময়ে মেট্রো সিনেমার ব্যালকনির সামনে দিয়ে হাঁটছি ।সামনের দিকে দেখলাম একজনকে । আন্দাজ করে ভাবলাম পিনাকী হতে পারে । একটু জোরে ডাকলাম।পেছন ফিরে আমাকে দেখে কাছে চলে এল।বলল--- আপনি পেছন থেকে আমাকে চিনলেন কীভাবে ? আমি তখনো স্মার্ট কথাবার্তা বলতাম ।বললাম, আমি যাকে চিনি, তার সামনের দিক যেমন চিনি, তার পেছনের দিকটাও তেমনটাই চিনি ।
তারপর হাঁটতে শুরু করলাম । হাঁটার ব্যাপারে আমি পা-দুটি কে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি ।আমার পা দুটি পিনাকীর পা-দুটিকে পথ দেখিয়ে নিয়ে গেল বারদুয়ারিতে ।
তারপর অপু-র দায়িত্ব । গ্লাস এল, বোতল এল, লেবু এল।পাতিলেবু। এবং নবাগতকে নিজ হাতে বানিয়ে দিলাম পানীয়। সিনিয়র হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব ছিল, কর্তব্য ছিল । আমার যা করার তা-ই করেছিলাম ।এক মিলি গ্রামও বেশি করিনি ।
দ্বিতীয় দিনে পিনাকী আর নবাগত থাকেনি।
তখনকার তরুণ গল্পকার অমর মিত্র সেই সময়ে আমাদের সঙ্গেই ওঠা বসা করতো।অমর বারদুয়ারি পর্বে আমাদের পানসঙ্গী ছিল, ওর উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য ।
পবিত্রদার কথা মনে হচ্ছে ঠিক বলিনি ।পবিত্রদা যেতেন ছোটো ব্রিস্টলে । মদ্যপান ছিল খুবই সীমিত, কিন্তু ছোলা এবং বাদামের প্রতি আগ্রহ ছিল মনে রাখার মতো ।বারদুয়ারিতে গেলেও খুবই কম ।
অনেক বছর পর ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে ঢুকে পড়েছিলাম বারদুয়ারিতে । অপু তখন কাউন্টারে।সেদিন আমার সঙ্গে ছিলেন আমাদের অফিসের কিরণদা।কিরণ গোস্বামী । তখন পুরোনো মালিকের ছেলে দায়িত্বে।আমাকে দেখে বললেন, আমাদের একদম ভুলে গেলেন ।শুনেছি ছোটো ব্রিস্টলে যান।মাঝে মাঝে দ্যাখা দিলে ভালো লাগবে ।
কথা দিয়েছিলাম, কিন্তু যাওয়া হয়ে ওঠেনি।তবে যেতে ইচ্ছে করে ।বহু তরুণকে বলেছি , একদিন বারদুয়ারি দ্যাখাতে নিয়ে যাবো।লোকে যেমন রবীন্দ্রসদন কিংবা নন্দন দেখানোর কথা বলে, আমিও সেভাবেই বলেছিলাম বারদুয়ারি দ্যাখানোর কথা । কিন্তু নিয়ে যাওয়া হয়নি।তবে এটুকু বলতে আমার দ্বিধা নেই যে আমার বারদুয়ারি -যাপনকে বাদ দিয়ে আমাকে চেনা যাবে না ।
বারদুয়ারি আমার কাছে তীর্থের মতো , সেই তীর্থে বারবার যেতে হত আমাকে ।
আমার আর এক তীর্থকথা আগামীকাল ।
(৩২)
গতকালের লেখা প্রসঙ্গে অমর মিত্র জানিয়েছে তখন ওর কর্মক্ষেত্রের কথা।আমি সেই কথার সূত্র ধরে একটু বিশদে জানাই-- অমরের কর্মস্থল ছিল বাংলা বিহার উড়িষ্যার সীমান্তবর্তী এলাকায়। সুবর্ণরেখা নদীও ছিল ।গ্রামটার নাম সম্ভবত মৌবনী।কিছুটা ভুল হতে পারে ।অমর কলকাতা আসতো মাসে এক-দুবার। অমর আসুক বা না-আসুক একটি ইনল্যান্ড খাম নিময় করে চলে আসতো 36/ডি, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের ঠিকানায়। প্রতিটি চিঠিতে একজন প্রকৃত কথাকারের চিহ্নগুলি ফুটে উঠতো।আমি অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতাম অমরের চিঠির ।
অমরের চিঠি থেকে যা জানতাম, পরে কোনো ছোটো গল্পের মধ্যে সেইসব চিঠিকথা পরিণত হয়েছে গল্পকথায়।
আমার এখনো মনে আছে সুবর্ণরেখা নদীর বালিতে স্বর্ণসন্ধানের কাজে লেগে থাকা মানুষজনের আকাঙ্ক্ষার দৈনন্দিনতাকে।কিংবা জমির দলিল দাগ নম্বর পরচা ইত্যাদি নিয়ে গ্রাম্য মানুষের সুলুক সন্ধানের কাহিনি । অমরের গল্পও এগিয়ে গেছে ওর কর্মক্ষেত্রের পাশাপাশি ।
অমরের খান পঞ্চাশেক চিঠি আমি খুব যত্ন করে রেখে দিয়েছিলাম বহুদিন পর্যন্ত । এখন খুজতে গিয়ে পেলাম না, কোথায় রেখেছি, কিছুতেই তার মনে করতে পারছি না । আছে কোথাও। পরে হয়তো খুঁজে পেয়ে যাবো। বেশি যত্ন নিলে পরিণামে এমনটাই হয়।
অমরের কথা একটু বেশি বলে ফেললাম তার অর্থ এই নয় যে অমরকে আমি শচীন দাশ কিংবা অসীম চক্রবর্তীর থেকে বেশি পছন্দ করতাম । হলফ করে লিখছি শচীন এবং অসীমকে একই রকম পছন্দ করতাম ।
শচীন থাকতো নেতাজিনগরের কাছাকাছি একটা বাড়িতে । ও বিয়ে করেছিল ওর এক পেনফ্রেন্ডকে।শচীন কথা বলতো ওজন করে। নিজের ওপর প্রবল আস্থা ছিল ।হাতের লেখাটা এখনো দেখতে পাই।চাকরি করতো ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের ফুডের বাড়িতে, কিন্তু ওর দপ্তর ছিল সম্ভবত ইরিগেশন কিংবা PWD.
এই দুজনের থেকে অসীম অনেকটাই ভিন্ন ছিল । অসীম থাকতো শচীনের কাছাকাছি । তখন কলোনি অঞ্চলের চেহারার বদল ঘটতে শুরু হয়েছে, কিন্তু আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম অসীমদের বাড়িটির কোনো পরিবর্তন দেখতে পাইনি । অসীমের পুরোনো গল্পের সন্ধান কেউ দিতে পারলে কৃতজ্ঞ থাকবো ।চেষ্টা করবো আজকের পাঠকদের কাছে অসীম চক্রবর্তী - র গল্প পৌঁছে দিতে ।
আমার বিশ্বাস ফর্মের দিকে বিচার করলে বলতে হয় অসীম তার সময় থেকে কিছুটা এগিয়ে ছিল । আমার বিশ্বাস ভুল হতে পারে, কিন্তু আমি আমার বিশ্বাসের কথাটাই বলতে চেয়েছিলাম, তার বেশি কিছু নয়।
সেই আর একজন গল্পকার ঝড়েশ্বর চট্টোপাধ্যায় ও আমার বেশ ঘনিষ্ঠ ছিল । আমরা একবার দল বেঁধে ওর ডায়মন্ডহারবারের বাড়িতে গিয়েছিলাম । আমরা মানে আমাদের কবিপত্রর টিম।পবিত্রদা অমর শচীন তুষার আমি ছাড়াও আরো দু একজন ছিল।ঝড়েশ্বর কি সেদিন ওর কোনো গল্প শুনিয়েছিল, নাকি কুচোনো উপন্যাসের অংশ । অমর বলতে পারবে, ওর স্মৃতি অনেকটা সবল।
বারদুয়ারি থেকে অমর ।শেষে ডায়মন্ডহারবার । অনেকটা পথ হাঁটা হল, এখন আবার বারদুয়ারিতে ফেরা সম্ভব নয়।ফিরতে ফিরতে বেশ রাতও হয়েছিল, বাড়িতেই ফিরে ছিলাম।
আজও এই লেখা থেকে ফিরতে চাইছি কবিতাপাক্ষিকের কাজে ।শারদীয় সংখ্যার বাইশ ফর্মা ছাপা হয়ে গেছে, বাকি বারো ফর্মা কাল প্রেসে যাবে।শনিবার ছাপা শেষ হবে।প্রচ্ছদ ও ছাপতে গেছে, শনিবার সকালেই ছাপা শেষ হবে। শনিবার কি এককপি ড্যামি শারদীয় সংখ্যা হাতে আসবে কিনা সেই চিন্তায় আছি, কিন্তু সুন্দরের দিকে চলা বন্ধ করিনি ।
গতকালের লেখা প্রসঙ্গে অমর মিত্র জানিয়েছে তখন ওর কর্মক্ষেত্রের কথা।আমি সেই কথার সূত্র ধরে একটু বিশদে জানাই-- অমরের কর্মস্থল ছিল বাংলা বিহার উড়িষ্যার সীমান্তবর্তী এলাকায়। সুবর্ণরেখা নদীও ছিল ।গ্রামটার নাম সম্ভবত মৌবনী।কিছুটা ভুল হতে পারে ।অমর কলকাতা আসতো মাসে এক-দুবার। অমর আসুক বা না-আসুক একটি ইনল্যান্ড খাম নিময় করে চলে আসতো 36/ডি, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের ঠিকানায়। প্রতিটি চিঠিতে একজন প্রকৃত কথাকারের চিহ্নগুলি ফুটে উঠতো।আমি অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতাম অমরের চিঠির ।
অমরের চিঠি থেকে যা জানতাম, পরে কোনো ছোটো গল্পের মধ্যে সেইসব চিঠিকথা পরিণত হয়েছে গল্পকথায়।
আমার এখনো মনে আছে সুবর্ণরেখা নদীর বালিতে স্বর্ণসন্ধানের কাজে লেগে থাকা মানুষজনের আকাঙ্ক্ষার দৈনন্দিনতাকে।কিংবা জমির দলিল দাগ নম্বর পরচা ইত্যাদি নিয়ে গ্রাম্য মানুষের সুলুক সন্ধানের কাহিনি । অমরের গল্পও এগিয়ে গেছে ওর কর্মক্ষেত্রের পাশাপাশি ।
অমরের খান পঞ্চাশেক চিঠি আমি খুব যত্ন করে রেখে দিয়েছিলাম বহুদিন পর্যন্ত । এখন খুজতে গিয়ে পেলাম না, কোথায় রেখেছি, কিছুতেই তার মনে করতে পারছি না । আছে কোথাও। পরে হয়তো খুঁজে পেয়ে যাবো। বেশি যত্ন নিলে পরিণামে এমনটাই হয়।
অমরের কথা একটু বেশি বলে ফেললাম তার অর্থ এই নয় যে অমরকে আমি শচীন দাশ কিংবা অসীম চক্রবর্তীর থেকে বেশি পছন্দ করতাম । হলফ করে লিখছি শচীন এবং অসীমকে একই রকম পছন্দ করতাম ।
শচীন থাকতো নেতাজিনগরের কাছাকাছি একটা বাড়িতে । ও বিয়ে করেছিল ওর এক পেনফ্রেন্ডকে।শচীন কথা বলতো ওজন করে। নিজের ওপর প্রবল আস্থা ছিল ।হাতের লেখাটা এখনো দেখতে পাই।চাকরি করতো ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের ফুডের বাড়িতে, কিন্তু ওর দপ্তর ছিল সম্ভবত ইরিগেশন কিংবা PWD.
এই দুজনের থেকে অসীম অনেকটাই ভিন্ন ছিল । অসীম থাকতো শচীনের কাছাকাছি । তখন কলোনি অঞ্চলের চেহারার বদল ঘটতে শুরু হয়েছে, কিন্তু আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম অসীমদের বাড়িটির কোনো পরিবর্তন দেখতে পাইনি । অসীমের পুরোনো গল্পের সন্ধান কেউ দিতে পারলে কৃতজ্ঞ থাকবো ।চেষ্টা করবো আজকের পাঠকদের কাছে অসীম চক্রবর্তী - র গল্প পৌঁছে দিতে ।
আমার বিশ্বাস ফর্মের দিকে বিচার করলে বলতে হয় অসীম তার সময় থেকে কিছুটা এগিয়ে ছিল । আমার বিশ্বাস ভুল হতে পারে, কিন্তু আমি আমার বিশ্বাসের কথাটাই বলতে চেয়েছিলাম, তার বেশি কিছু নয়।
সেই আর একজন গল্পকার ঝড়েশ্বর চট্টোপাধ্যায় ও আমার বেশ ঘনিষ্ঠ ছিল । আমরা একবার দল বেঁধে ওর ডায়মন্ডহারবারের বাড়িতে গিয়েছিলাম । আমরা মানে আমাদের কবিপত্রর টিম।পবিত্রদা অমর শচীন তুষার আমি ছাড়াও আরো দু একজন ছিল।ঝড়েশ্বর কি সেদিন ওর কোনো গল্প শুনিয়েছিল, নাকি কুচোনো উপন্যাসের অংশ । অমর বলতে পারবে, ওর স্মৃতি অনেকটা সবল।
বারদুয়ারি থেকে অমর ।শেষে ডায়মন্ডহারবার । অনেকটা পথ হাঁটা হল, এখন আবার বারদুয়ারিতে ফেরা সম্ভব নয়।ফিরতে ফিরতে বেশ রাতও হয়েছিল, বাড়িতেই ফিরে ছিলাম।
আজও এই লেখা থেকে ফিরতে চাইছি কবিতাপাক্ষিকের কাজে ।শারদীয় সংখ্যার বাইশ ফর্মা ছাপা হয়ে গেছে, বাকি বারো ফর্মা কাল প্রেসে যাবে।শনিবার ছাপা শেষ হবে।প্রচ্ছদ ও ছাপতে গেছে, শনিবার সকালেই ছাপা শেষ হবে। শনিবার কি এককপি ড্যামি শারদীয় সংখ্যা হাতে আসবে কিনা সেই চিন্তায় আছি, কিন্তু সুন্দরের দিকে চলা বন্ধ করিনি ।
(ক্রমশ)
No comments:
Post a Comment