এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

পায়েল খাঁড়া


কবিতা : সাধারণ বিভাগ


ইতি উহ্য ৪

তোমার আবির্ভাব
আমার ধ্বংসের পূর্বাভাস ছিল
তবু
কী বিষম টান
কী নিষ্ঠুর বাসনা
তোমার প্রতি__অহরহ।
আমার পরাজয়গুলো
সঁপে দিই তোমার হেপাজতে
অকাতরে।
যাবতীয় যন্ত্রনা শুষে নাও
বিষাক্ত সুখটান।
ঠোঁটের কার্ণিশে ঝুলে থাক
সাদা কাফন
তুমি সিগারেট।
মৃত্যুর সৌখীন পরোয়ানা।


গল্প : ছোট গল্প


ছিনতাই


ঘরে ঢুকেই সোফায় উপর ধপ করে বসে পড়ল পরাগ।সামনের দিকে ঝুঁকে দু-হাতের তালুতে মুখটা চাপা দিয়ে চুপ করে বসে রইল।ভীষন আপসেট লাগছে তার। অফিস থেকে ফেরার পথে সন্তোসপুর স্টেশনে আজ ওর মোবাইলটা ছিনতাই হয়ে গেছে।সারাদিনের অফিসের ধকল তারউপর এরকম একটা ঘটনা__মনখারাপ ভাবটা ওর ক্লান্তিকে আরও দ্বিগুন করে তুলল।
সোফা ছেড়ে উঠে পড়ল পরাগ।একটা সিগারেট ধরিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো ব্যালকনিটায়।টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে।ল্যাম্পপোষ্টের আলোয় পিচ রাস্তাটা চকচক করছে।অ্যাপার্টমেন্টের এইদিকটা বেশ নিরিবিলি__লোকজন প্রায় নেই বললেই চলে।রাস্তার দু-ধার দিয়ে শুধু কৃষ্ণচূড়ার সারি।শহরের ভিড় থেকে খানিকটা আড়াল করা যেন। জায়গাটা ভীষন প্রিয় ছিল আহেলির।একটা সময় এখানেই ঘন্টার পর ঘন্টা তার সাথে গল্প করেছে পরাগ... কাটিয়েছে কত একান্ত অন্তরঙ্গ মুহুর্ত।এরকমই এক বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় আহেলির নরম ঠোঁটদুটো প্রথমবার ছুঁয়েছিল পরাগের ঠোঁট।
আহেলি পরাগের গার্লফ্রেন্ড ছিল,পাঁচবছর আগে একটা ভুল বোঝা-বুঝি নিয়ে ওদের ব্রেক-আপ হয়ে যায়।ব্যাপারটা খুবই সামান্য ছিল কিন্তু ওদের ইগোটাই সেদিন অনেক বড় হয়ে দাঁড়িয়েছিল দু-জনের মাঝখানে।সেই সব দিনের স্মৃতিগুলো আজ ভীষনভাবে ঘিরে ধরেছে পরাগের একাকিত্বকে।একদিন নিজের ভালোবাসার থেকে ইগোটাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল আর সেই ভুলের মাশুলও তাকে দিতে হয়েছে।পরাগ আজও ভুলতে পারেনি আহেলিকে।আর তাই এই পাঁচ বছরে দ্বিতীয় কেউ কখনও আসেনি তার জীবনে......আহেলির জায়গায় অন্য কাউকে আজও কল্পনা করতে পারে না সে।কিন্তু__কে জানে, আহেলির তাকে আদৌ মনে পড়ে কিনা?হয়ত না...তাইতো এতগুলো বছরে সে একবারও পরাগের সাথে যোগাযোগ করেনি।হয়ত সে এতেই সুখি...হয়ত আরও ভালো কাউকে জীবনে পেয়ে গেছে সে।আহেলি চলে গেছিল...শুধু তার সাথে কাটানো সুন্দর মুহুর্তগুলো কিছু ছবি আর ম্যাসেজের আকারে তার শেষ স্মৃতি হিসেবে থেকে গেছিল ওই মোবাইলটায়।কিন্তু আজ সেটাও গেল।পরাগের মনে হল আজ যেন আরও একবার নতুন করে সে আহেলিকে হারালো।ওর চোখদুটো ভিজে এল।পকেট থেকে ওয়ালেটটা বের করল__আহেলির একটা ছবি।সেদিকে তাকিয়ে আফসোশ জড়ানো গলায় নিজের মনেই বলতে থাকল—হুমম্‌! যে যেতে চায় হয়ত সত্যিই তাকে ধরে রাখা যায় না......কোনভাবেই না।
হটাৎ কলিংবেলটা বেজে উঠল।এমন সময় আবার কে? নীচে নেমে দরজা খুলেই স্তব্ধ হয়ে গেল পরাগ। দরজায় আহেলি দাঁড়িয়ে__হাতে তার ছিনতাই যাওয়া সেই মোবাইলটা।আহেলি কিছু একটা বলতে চাইছিল..পারলনা। পরাগকে জড়িয়ে ধরল।তার বুকে মুখ গুঁজে অঝোরে কাঁদতে লাগল সে।
ঘটনাচক্রে পরাগের ছিনতাই হওয়া মোবাইলটা এসে পড়েছিল আহেলির হাতে।মোবাইল দেখেই চিনতে পারে সে।ফোন খুলেই দেখতে পায় তাদের সেই সমস্ত ছবি আর ম্যাসেজ আজও কত যত্নে রেখেছে পরাগ।আর তার সাথে একটুকরো লেখা “তোকে আজও ভীষন মিস করি...শুধু ফেরার রাস্তাটা খুঁজে পাই না আর।” আহেলি নিজের ভুল বুঝতে পারে।বুঝতে পারে পরাগ আজও কতখানি ভালোবাসে তাকে।এরপর আর অভিমান করে থাকতে পারেনি সে।আসলে ওরা কোনদিনই একে-অপরকে ভুলতে পারেনি...শুধু ওদের মাঝের সেতুটা ভেঙে গেছিল মিথ্যে অভিমান আর অহংএর ঘায়। আজ হারানো মোবাইলের মেমোরিতে জমা কিছু অতীতের টুকরো সেই ভাঙনটায় আবার জোড়া লাগিয়ে গেল।  
পায়েল খাঁড়া/৩০.৯.১৬, শব্দ-৪৩৫

*********


PAYEL KHANRAH
B.SC MATH( HONS)
DATE OF BIRTH- 17/01/93
OCCUPATION- PRIVATE TUTOR
ADD- PAYEL KHANRAH
C/O- BARAM KHANRAH
AKRA DUTTA BAGAN
P.O- BARTALA
P.S- RABINDRANAGAR
KOL-18


No comments:

Post a Comment