এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

শাল্যদানী


বিন্দুতে সিন্ধু (দ্বিতীয় পর্ব)


প্রথম পর্ব লেখার পর অনেকেই ভেবেছেন আমি কবিতায় এক্সপেরিমেন্ট করাকে নিরুৎসাহ করেছি। সত্যিইতো আগের পর্বে স্পষ্ট বলেছি পাবলিক খাবে না। এবার নিজের বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করি।
আচ্ছা একজন কবি যখন লেখেন তখন তিনি কি লেখেন আর কার জন্য লেখেন?
প্রথম প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখলাম, কবি লেখার সময় সমাধিস্থ হন। সারাটা দিন একটা ঘোরের মধ্যে থেকে দিনের শেষে একটা কবিতা ওগরান। আমি মনে করি সেই সারাদিনের ঘোরটা হল সাধনার সিদ্ধি আর ওগরানোটা হল সমাধিলব্ধ আস্বাদের চিহ্ন। কবিতা নিয়ে ভাবনা চিন্তা বা কবিতায় ডুবে থাকার নাম কবিতাযাপন। আমি বলি সাধনা। সেই সাধনার ফলে আসে কবিতাঘোর, মানে প্রেগনেন্সি- কবিতা আসছে। আমি বলি সিদ্ধি লাভ। কবিতা লেখার আগেই সিদ্ধি লাভ? হয় নাকি? হয় হয়। কারন কবিতা আমরা কেউ লিখিনা। কবিতা আঁকি। কেমন? ওইযে সারাদিনের কবিতাঘোরে মননে কবিতা আসে। তার প্রথম দর্শক আর স্রোতা কবি নিজে। এইবার যখন সে কবিতাটা লিখছে সে মননের ওই ছবিটাকে দেখে আঁকতে চায় বা কপি পেষ্ট করতে চায়। কেউ হুবুহু পারে না। আসলে কবিতার জন্ম হৃদয়ে থেকে হৃদয়েই বিলীন হয়। তাই ইহাই সিদ্ধি। সেই সিদ্ধির চরম রূপে সমাধি। কপি পেস্ট করার চেষ্টা। তাহাই কবিতা বলে সামনে আসে। সাধন চিহ্ন দিয়ে যায়।
দ্বিতীয় প্রশ্ন কার জন্য কবিতা লেখা? অবশ্যই প্রথমত নিজের জন্য। কিন্তু তা না লিখলেও চলে। কবিতাতো মনে জন্ম নিয়ে মনেই মিলিয়ে গেল। তাহলে কার জন্য। উত্তর হল স্বাভাবিক স্বভাব। নিজেকে প্রকাশ করতে চাওয়া।
ওই যে রবিঠাকুর বলেছিলেন, ' আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল...!'
কার কাছে প্রকাশ করতে চাওয়া? অন্তত একজন পাঠক।
এইবার বক্তব্যটা প্রথম পর্যায়ে টেনে নিয়ে যাই এক্সপেরিমেন্ট কবিতার ক্ষেত্রে। একজন কবি তার সমাহিত অবস্থার অনুভূতি প্রকাশ দুভাবে করতে পারে। প্রথমটি অবশ্যই সাজিয়েগুজিয়ে কিছু কাব্যরসে চুবিয়ে। উদাহরণ হিসাবে বন্ধু কবি তুলি রায়ের একটা কবিতা দিচ্ছি

#অবচেতন


মাঝরাতে হঠাৎ রিঙটোন
চাপা দীর্ঘশ্বাস

বিনীদ্র রজনীর
ক্লান্তিভারে

খুঁজে পাওয়া পুরোনো ডায়েরী
খাঁজে শুকনো গোলাপ
মৃত ক্লোরোফিল

মুছে যাওয়া বিবর্ন সংলাপ
লিখে চলে কলম

এক একটা শব্দ এসে জমে ফুসফুসে

গ্রীবাতে হিম-পরশ

খুলে পড়ে চুল
শিহরন  বেয়ে
শুষুম্নকান্ডে

অশরীরি গন্ধ অবচেতনে

জেগে ওঠা জমা অসুখ
বুকের গভীরে

একটা অস্ফুষ্ট গোঙ্গানী
কিছু বলতে চায় …

                        ||তুলি||

অদ্ভুতভাবে কাব্যরসে ভেজানো অনুভূতির প্রকাশ। কিন্তু যদি কেউ মনে করেন যে তিনি কাব্যরস দিয়ে রঞ্জিত না করে অকপটে মননের শব্দ সামনে আনবেন তাতে ক্ষতি কি? তাতে যদি কেউ মনে করেন তিনি চিহ্ন ব্যবহার করেই নিজেকে প্রকাশ করতে পারছেন তাতে অসুবিধা কেন? কবিতা নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট কথাটা না বলে নিজ প্রকাশ ভঙ্গিমার এক্সপেরিমেন্ট বলিনা, ক্ষতি কি? যেমন এই মহুর্তেই মনে আসছে রাহুলদার কবিতা। দেখুন জোর করে কিছু না

বুনোঘাস।হেকেটি ক্ষমা নয়
ওটুকুরও আমিই বা কে
নৈরত্ বাগানে দেখি
নিউটন = পতন্ সেমিকোলস্
হুহু মন্ডপ : গলা বৃষ্টি পেতে চায় খিদে

উফঃ : ঢোকাও গর্তসাপ আকরিকে

শব্দরূপ : রাহুল

এইবার প্রশ্ন আসবে একটা। এটাকি কবিতা? আমি বলবো, কেন নয়? উত্তর আসবে, কিছুই বুঝলাম না যে।
'মেঘলা নিশিভোরে, মন যে কেমন করে।'
কেমন করে? এই কেমন করে তা প্রকাশ করতে না পারাটাই 'কেমন করে' বলে পাশ কাটানোর চেষ্টা না করে কবি যদি চিহ্নাদি দিয়েও প্রকাশ করতে চান, তাতে আপত্তি কিসের। প্রকাশ ভঙ্গিমায় এক্সপেরিমেন্ট আগেও হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে। এখন তাহলে নয় কেন?

কবি, চিন্তাবিদ আফজল আলি তার জিরো বাউন্ডারি কনসেপ্টে বলেছেন মুক্ত হওয়ার কথা। তার ভাষায়, ' যত জন কবি তত রকমের কবিতা ।  তাই কবিতার নির্দিষ্ট ইজমে বাঁধা থাকে না । আমরা জোর করে বেঁধে রাখতে চাই । কবিতা কষ্ট পায় । জিরো বাউন্ডারি কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো ইজম নয় । এটা কবিতাকে মুক্ত করার ধারণাগুচ্ছ।'

আসলে তাই। কবিতাকে মুক্ত হতে দিতে হবে। তার পরতো পাঠককূল আছেই। নিতে হলে নেবে, নইলে ফেলে দেবে। আগে নিজের জন্য নিজেকে খুশী করা দরকার। তারপরতো পাঠক। যে নিজেকে খুশী করতে পারলো না সে অন্যকে কি খুশী করবে?

ইজমের কথা পরের পর্বে। আধুনিক, উত্তরাধুনিক না পুনরাধুনিক নাকি অত্যাধুনিক দেখা যাবে। ভাবতে সময় লাগবে আমারো।

শাল‍্যদানী

*******

No comments:

Post a Comment