এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

বিশ্বরূপ চক্রবর্তি


গল্প : ছোট গল্প


#বন্ধুত্বের_উপহার

"ওই আমি আগে ব্যাট করব। তুই বল কর!"
"আমি আবার!ঠিক আছে তুই ই আগে ব্যাট কর। আমি বল করি!"
দুই প্রিয় বন্ধুর কথোপকথন। একই ক্লাসে পড়া, একই পাড়ায় পাশাপাশি থাকা দুই বন্ধু তারা ।ছেলেবেলায় একসাথে বেড়ে ওঠা যাদের।
  "অয়ন! কিরে আমাকে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠিয়ে নিজে ঘুমাচ্ছিস"
এক গাল হাসি নিয়ে বেরিয়ে আসে অয়ন। "বেস্ট ফ্রেন্ড এর জন্য দশ মিনিট না হয় দাঁড়ালি! "
"এটা তোর দশমিনিট!! "
অয়ন মজুমদার, বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। চিরকাল একরোখা,জেদি। যেটা করবে বলে সেটাই করে। এইচ এস পরিক্ষা দিয়েছে, রেজাল্ট সপ্তাহখানেক বাদেই বেরবে। তাই নিলাদ্রিকে আজ বাড়ি ডেকেছে। ঘুরতে যাবে এদিকওদিক।
নিলাদ্রি বেরা, বাড়ির এক মাত্র ছেলে।পড়াশোনায় দারুন। খুব রেগুলার,  টাইম টু টাইম কাজ করতে ভালোবাসে। অয়ন আবার একটু ফাঁকিবাজ, ফুটবল পাগল। বেলানগরের এই হল দুই বন্ধু অয়ন আর নিলাদ্রী, যাদের কাছে বন্ধু ছাড়া একটা দিন ও অচল। এইচ এস রেজাল্ট বেরল, অয়ন ৩৮২ আর নিলাদ্রী ৪৫০। নিলাদ্রী ম্যাথ অনার্স নিয়ে ভর্তি হল প্রেসিডেন্সি তে, আর অয়ন বিদ্যাসাগর কলেজে ভর্তি হল বাইলোজি অনার্স নিয়ে।
                নিলাদ্রী বেশ মনোযোগী ছাত্র,কিছু বন্ধু আছে কলেজে ঠিক ই, তবে ক্লাস চলাকালীন কথা বলে না। আজ দেরি হয়ে গেছে,তার ক্লাসে ঢুকতে। পছন্দ মত জায়গা না পেয়ে,অচেনা এক মেয়ের পাশেই বসতে হল। চুপ চাপ নিলাদ্রী কে দেখে,মেয়েটি বলে উঠল, "আপনি দেখছি খুব চুপচাপ! কারুর সাথে তেমন..."
"আরে না তেমন ব্যাপার না। কথা বলার তেমন কাউকে পাই নি এখন ও।"
"আচ্ছা, তুই বলছি  সেম ক্লাস তো। অয়ন ?"
"হুম,তোর নাম?"
"সায়ান্তিকা।"
বন্ধুত্বের সূচনা সেখান থেকেই।অফ ক্লাসে বসে গল্প করা কিংবা একই সাথে প্রোজেক্ট করে সন্ধ্যাবেলায় গঙ্গাঘাটে বসে থাকা সবই একসাথে। নিলাদ্রীর বেশ লাগে সায়ান্তিকাকে। কি যেন ভালোলাগা কাজ করে,বুঝতে পারে না নিলাদ্রী!
    নিলাদ্রীর সুবাদে একদি ন দেখা হয় অয়ন আর সায়ান্তিকার কফি হাউসে। কফি হাউসে আড্ডায় মত্ত যখন, নিলাদ্রীর একটা গুরুত্বপূর্ন  কল আসে।  বেরিয়ে যায় কিছুক্ষনের জন্য।
" অয়ন, তুমি পুরো তোমার বন্ধুর মত। "
" হুম,তোমার সাথে কথা বলে বেশ লাগল। নিলাদ্রী বলেই নি আমাকে ওর এত সুন্দর বান্ধবি আছে।আমার কপাল টাই..."শেষ  করার আগেই সায়ান্তিকা বলে,"তোমার নাম্বার টা পেতে পারি?"
"সৌভাগ্য আমার" বিস্মিত কন্ঠে উত্তর দেয় অয়ন। কিছু ক্ষন পর ফিরে এলে তারা কিছু বলে না নিলাদ্রীকে। ফোনে কথা,মাঝে মাঝে দেখা করতে থাকে দুজনে আই মিন অয়ন আর সায়ান্তিকা। অয়ন প্রোপজ করে সায়ান্তিকাকে আর হ্যা বলে দেয় সে। অয়ন নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড কে সারপ্রাইজ দেবে বলে কিছু জানাই নি। ভেবেছিল একদিন ট্রিট দিয়ে চমকে দেবে,প্রথমে রাগ করলেও খুশি হবে নিলাদ্রী! আর সায়ান্তিকা, তার কাছে নিলাদ্রী ছিল এক নিছক বন্ধু। প্রজেক্ট এ কিছু দরকার, আর পরিক্ষায় সাজেশন এর জন্য ই তাকে বেশি করে মনে পরত।আজকাল আর নিলাদ্রীকে দরকার পরে না তার।
  নিলাদ্রী আজকাল সায়ান্তিকাকে বেশ মিস করে। আগের মত আর ফোন আসে না ওর। সে ঠিক করে নেয় আজকে মনের কথা বলে দেবে ওকে।
"ওই খবর কি?শোন না একটা কথা ছিল।"
" আমার একটা ফোন আসছে,কি বলবি তাড়াতাড়ি বল!"
"আজকে দেখা করতে পারবি?"
"না রে! কি দরকার বলবি তো!"
"বড্ড ব্যস্ত আজকাল তুই!ছাড় রাখলাম"
কেটে দেয় সে। অন্য সময় হলে সাথে সাথে কল ব্যাক করে সায়ান্তিকা, কিন্তু আজকে আর কল এল না। বেশ মনমরা লাগছে নিলাদ্রীর। তখনি ফোন বেজে উঠল।
"হুম বল অয়ন। পাত্তাই নেই আজকাল!"
" ভাই,আজকে রাতে ফ্লাওয়ার ভ্যালি রেস্টুরেন্ট।  রাত ৯টা। দেরি করবি না!"
"না ভাই,আজ শরীরটা ভাল নেই রে!"
"না তোকে আস্তেই হবে আমি কিছু জানি না। তুই না আসলে দেখ!"
"আচ্ছা তোর সাথে পারব না,পৌছে যাব। "
              ৯টাই পৌছে যায়  টাইমে নিলাদ্রী। আজ অয়ন টাইমে এসেছে,কিন্তু এ কি দেখছে সে। পাশে হাতে হাত রেখে বসে সায়ান্তিকা।
"কিরে সায়ান্তিকা,১টা ফোন..."
"উফ তোদের ঝগড়া বাদ দে। আসল কথা শোন আমরা দুজন দুজন কে খুব ভালবাসি। তোকে প্রথম জানালাম। পাশে থাকিস তুই!" হাসতে হাসতে বলে অয়ন।
নিলাদ্রী চোখের জল চিক চিক করে। নাটক করে বলে,"উফ আবার কি পরলো চোখে!আর পাশে থাকার কথা কাকে বলছিস,নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড কে বলতে লজ্জা করে না" মেকি হাসি হাসে নিলাদ্রী।"শোন,তুই বললি বলে এলাম শরীর বড্ড খারাপ।তোরা এনজয় কর। চলি"
বেরিয়ে যায় অয়ন।  সামনেই একটা ঘাট। অঝোরে কাঁদতে থাকে নিলাদ্রী। আজকেই নিজের মনের কথা বলবে ভেবেছিল সে। নিজের বেষ্ট ফ্রেন্ডের জন্য আজ পর্যন্ত সব জায়গায় কম্প্রোমাইজ করেছে সে। আজ না হয় প্রথম ভালবাসা কেও বিসর্জন দিল সে। চোখের জল মুছে ফেলে সে। মনে করে অয়নের মুখটা। নিজের বন্ধুকে বড্ড ভালবাসে নিলাদ্রী। উঠে পড়ে সে,আজ যেন তার মনে হচ্ছে, অয়নের খুশিতেই তার খুশি।ফোনটা বেজে ওঠে....
" ভাই, শরীর ঠিক আছে?এখন ই চো ডাক্টার দেখাবি? তোর শরীর খারাপ হলে ভাই বড্ড খারাপ লাগে। তুই আরাম কর কাল সকালেই তোর বাড়ি যাচ্ছি। "
মুখে হালকা হাসি নিয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ায় সে,নিলাদ্রী যেন আজ আবার হেরে গেল অয়নের কাছে।হ্যা অয়ন জিতে নিয়েছে নিলাদ্রীর মন। এরকম বন্ধুত্বের কাছে কোনো কিছুই বড় হতে পারে না,হ্যা প্রথম ভালোবাসাও নয়!
বিশ্বরূপ চক্রবর্তী
বালি,হাওড়া

No comments:

Post a Comment