উপন্যাস (ধারাবাহিক)
এবং তারপর আমি …...
(৬)
“একটা ফ্লায়িং কিসস ……”
“যা তো ঘুমো ,ওটা তোকে অনামিকা দেবে । ওকে বল”
“ওকে বললেও দেবে ,না বললেও দেবে ,আমি যে তোর কাছে চাইছি ,ফ্লায়িং not রিয়াল”
“আমার দেওয়ার লোক আছে ,বুঝলি”
“তাই ! তো ? একটু extrarnal এনার্জি , you know na, to start a reaction need a minimum energy ,i.e the activation energy ,I just nee the activation energy from you baby”
“ থাপ্পড় খাবি কিন্তু ,চল হট ,ঘুমো তুই ,বুঝছি আজ পেটে পড়েছে ,দাড়া বলছি অনামিকাকে”
“ওয়ান থাপ্পড় = 100 চুমু”
“ তুই না বড্ড পাঁজি হয়ে গেছিস আগের থেকে”
“তাই ? সময় বদলে দিয়েছে বুঝলি , সময় সব বদলে দেয়”
“হমম ,না বদলে গিয়েই তো ভালো ছিলি ,আজকাল তো তোর দেখাই পাওয়া যায় না ,কথাও তো বলিস না আজ কাল ,আজ আট দিন পর মনে পড়লো আমাকে ?”
“আসলে কি জানিস মনে তো সব সময় পরে ,মাথার মধ্যে গিজ গিজ করে ,শব্দের কোড গুলো sometimes it gives 0 or 1 ,when it's 0 then I think it's not right but when it's 1 it Will be right or may be able to make it right”
“পাগল একটা! অনামিকার খবর কি”
“অনামিকার খবর কেন ? আমার খবর নয় কেন ?”
“ না….ও ভালো থাকলেই তো তুই ভালো থাকবি ?”
“ ওহঃ তাই ? আগে জানতাম না তো, এই প্রথম জানালাম”
“জেনে রাখা তবে …”
“জ্বলন হচ্ছে তোর ? নাঃ ….ভাবছিস যে …”
“ আচ্ছা তো ,কেন জ্বলন হবে ? বরং এইটাই ভালো লাগছে যে তুই at লাস্ট একটা প্রেম করছিস …”
“তাই ! এত সহজে বলে দিলি তুই কথা গুলো ,এতো তা সহজ ভাবে , I am very proud of you ,that you can bear it ,”
“ যেটা সত্যি তাই বলছি……,যা ঘুমো ,আমার ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমালাম ,good নাইট …...টেক কেয়ার”
“হ্যালো ….,হ্যালো ….”
নো রিপ্লাই ,জানালা খুলে প্রিয়ম দেখলো ,বাইরে সারি সারি ল্যাম্পপোস্ট ,নির্জন একটা চলমান গলির রাস্তায় ….শুধুই শব্দহীন শব্দে ভেঙে পড়ছে এক একটা ইট পাথরের ঘর বাড়ি ,মিশে যাচ্ছে তারপর ধুলোয় । নাঃ ঘুম নেই ,লাস্ট কবে ঘুমিয়েছে সে মনে নেই ।
ডাইরিটা রেখে দিল টেবিলের এক কোনে ,ঈপ্সিতা । ছাদে গিয়েই দেখে মাথার উপর চাঁদ মুচকি হেসে মেঘের আড়ালে লুকোচুরি খেলছে । দু একটা তারাও দেখা যাচ্ছে মাঝে মাঝে ,কাল হয়তো বৃষ্টি হবে না , আজ তিন ধরে শুধু বৃষ্টি হচ্ছে মসুল ধারে ,ওদিকে বাবা তিন ধরে কোমায় , শুধু ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে ,চোখের দিকে তাকালেই মনে হয় কিছু একটা বলবে ….কিন্তু বলতে পারে না ,আর কাকে যেন খোঁজে ,দেখতে না পেয়ে আবার চোখ বন্ধ করে দেয় ,আবার হঠাৎ জেগে জেগে ওঠে শুধু ।
কাল বৃষ্টি না হলে অফিসে যাবে একবার ঈপ্সিতা ,অনেক দিন যায়নি বাবার শরীর খারাপ বলে ….।।
(৭)
আজ বৃষ্টি নেই । আকাশ পরিষ্কার ,ঝক ঝকে একটা সূর্য উঠেছে আকাশে । তবে রাস্তায় কিন্তু জল জমে আছে অনেক । জল কাঁদা পেরিয়ে ঈপ্সিতা ,কাপড় বাঁচিয়ে চলছে মেইন রাস্তায় । তারপর বাস ধরে অফিস । অফিসে এসে দেখে আজ রিতম আসেনি । অনেক কথা বলা ছিল ওকে । ওহঃ তো রোজ দেরি করেই আসে । আজ হয়তো আসবে দেরি করে ।
নাহ আসেনি আজ রিতম । সন্ধ্যায় ,হসপিটালে গেল বাবাকে দেখতে । নাঃ কোনো উন্নতি নেই । সেই এক ,কাকে যেন খুঁজে চলেছে এখনো ,খুঁজে না পেয়ে ,একটা হতাশার ছাপ যেন চোখে । আর কত প্রতীক্ষা ? আর কত ….?
বাড়ি এসেই আবার ডাইরী খুলে বসলো ঈপ্সিতা ।
মেঘ করেছে এবার ,আকাশে ,ঘন কালো মেঘ ….আর বাতাস ।
“ পড়েছিস আজকের লেখাটা ? কথা গুলো চেনা চেনা লাগছে না ? “
“এই অপুটাকে রে”
“একটা ছেলে ,দীপশিখা এর বাবা”
“ পুরো লেখাটি পড়বি ,অনেক কথা হয়তো চেনা লাগবে তোর”
“দে”
“পাঠিয়েছি দেখ ইমেইল এ”
হঠাৎ ফোন বেঁজে উঠলো ঈপ্সিতার , “হ্যালো !”
ওপর দিক থেকে একটা অতি চেনা ,অথচ পুরোনো একটা গলা , চোখ বুঝেই ঈপ্সিতা
বলল “কি মনে করে আজ ? ,এত দিন কোথায় ছিলে”
অপর দিকে থেকে একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ,একটা শব্দহীন শব্দে যেন বিস্ফোরণ হওয়ার আওয়াজ ।
“একি কাঁদছো কেন ? কি হয়েছে ,তুমি যে বলেছিলে ,তোমার হৃদয়ে আমাদের জন্য পাথর হয়ে গেছে …”
ফোনটা কেটে গেল । ঈপ্সিতা ফোন করলো ,কিন্তু উত্তর আর এলো না । নিঃস্তব্ধ হয়ে ঈপ্সিতা তখন বাবার ও মায়ের তোলা আজ থেকে কুড়ি বছর আগের তোলা ছবিতে হাত বোলাতে লাগলো ।তখন ঈপ্সিতা পাঁচ । আজ কত বড় সে ।
“আমার কথাই তো তুই লিখেছিস ,এগুলো ঠিক না কিন্তু”
“কি আর করবো ,এতো কিছু লিখছি ,তোর জন্য না হয় এটা লিখলাম ,এ ছাড়া তো কিছু দেওয়ার মতো আর কিছু নেই আমার তোকে”
“ইস আমি যদি পারতাম ,খুব ভালো হতো ,অনেকটা কথা জমে আছে রে ।”
“ লিখে ফেল ,ডাইরিতে ,নিজেই পড়বি ,নিজেই লিখবি ,আর পরে না হয় চিড়ে ফেলবি”
“ঠিক বলছিস ,তোর অনামিকার খবর বল ? ভালো তো সে?”দেখা করে আয় এক বার”
“কিছু কিছু জিনিসের ভার্চুলাটি থাকা জুরুরী ,রিয়ালিটির থেকে ,অস্তিত্বহীন এই ভার্চুয়ালিটিই সস্তার কিছু স্বপ্ন আঁকে রিয়ালিটিতে” বুঝলি”
“সেটা ঠিক ,তবে এসব ক্ষেত্রে কিন্তু রিয়ালিটিটা জুরুরী বুঝলি”
“হয়তো ,কিন্তু রিয়ালিটিতে এর সম্ভাবনা অন্য কিছু হয়ে যায় সব সময় ,তাই এবার একটু অন্য রকম ,যার বাস্তবতা নেই ,কিন্তু অস্তিত্ব আছে ।”
“তুই সত্যি …..পাগল একটা”
“আসলে কি জানিস ,আমি আর বাস্তবতাকে লিখি না ,এটা কঠিন ,রিয়াল এবং হিসাবের নিয়মানুবর্তীত , আর এতে চাওয়া পাওয়া নিয়ে প্রতি নিয়ত ,জমি দখলের লড়াই ,কে কতটা মাটি পেল ,কি কতটা ভিটে । তুই তো জানিস ,আমি এসব এখন আর পছন্দ করি না ,আমি চাই হয়তো ঠিকই কিন্তু পাওয়া ? নাঃ কোনো দিন ভাবি না আমি পাবো ,এখন অনেকটা পাথর দিয়ে তৈরি হয়ে গেছে প্রাচীর আমার ভিতরে ,আমি রোজ একটু একটু তাতে নিজেকে প্রস্তুত করি এক একটা সাইক্লোনের ,জানি সাইক্লোন আসবে ,হয়তো আমি ভেঙে পড়বো ফের ,তবুও নিজে স্বপ্ন দেখি বাঁচার ,না হলে যে কেউ আর আমার লেখা পড়বে না রে ,নীহারিকা। যাহঃ । আবার ডাকলাম তোমায় নীহারিকা বলে ,অন্তহীন একটা সুরেলা অনুভূতিতে সাজানো থাক আমার আকাশের এক কোণ ।”
“নীহারিকা ,ও নীহারিকা ….কোথায় তুমি ,তুই ….কৈ ,আজ আকাশে যে মেঘ করেছে ঘন কালো ,বৃষ্টি হবে ? দাও ...হতে দাও ,আরো বৃষ্টি আসুক ,আরো ,ভিজাক আমায় ,আমার সারা শরীরে শুধু নিঃস্তব্ধ দাবানল ,আমি ভিজতে চাই আজ ,আরো ,আরো একটু ভাসিয়ে দিতে চাই আমাকে ,বৃষ্টি কণা ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাক লোমকূপ ,ঘাম মিশে যাক বন্যায় …অশ্রু হয়ে যাক সমুদ্র ,নাহ ,কৈ অশ্রু ….আমি কিন্তু আর কাঁদি না রে ,পারি না ? কাঁদলেও বৃষ্টি হয় না জানিস ,তাই তো গাঁ ভাসিয়ে দিয়েছি আজ ….ভিজবো বলে”
(৮)
“হ্যালো ! হ্যালো ....মিস রোয় বলছেন ? আপনার ডেড আপনাকে খুঁজছে ।জলদি আসুন”
সূর্যের আলো তখনও জানালার কাঁচ ছুঁয়ে যায়নি ।সবে নারকেল গাছের পাতার ফাঁকে উঁকি দিয়েছে। কাল রাত হয়ে গিয়েছিল ঘুমাতে ঈপ্সিতার ।আসলে রাতটাই যে প্রিয় ।ঘন গাঢ় অন্ধকারে আলো গুলো ফাঁকি দিতে পারে না কখনো ,দিনের মতো ।হসপিটালের বেডে বাবা আজ ছয় দিন । কালকেই তো একটু ভালো হয়েছিল আজ হঠাৎ আবার কি হোল । ঘুম ভাঙতে না ভাঙতেই হসপিটাল থেকে ফোন । না কোনো মতে ব্রাশট্রাস ,জামাকাপড় ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল সে । বাবা ছাড়া আর কেউ নেই যে তার । নাঃ ভুল বললাম ,শুনেছে তার মা আছে ,ভাই আছে ,পিসিমনি আছে কিন্তু কোথায় তারা ? সব আলোর নিচে কাঁপতে থাকা ছায়া ।
“ইসু ...ইসু ..মা আমার কোথায় ? মা দেখো ঝড় আসছে ,বিরাট বড় ঝড় সাইক্লোন” আঙুল নেড়ে প্রিয়ম বাইরে ওই যে জানালায় রোদ ছুঁয়ে গেছে ওদিকে আঙুল দিয়ে দিখিয়ে পাগলের মত বলে যাচ্ছে ,একটা আতঙ্ক যেন চোখে মুখে। মুখ শুকিয়ে গেছে যেন সব শেষ হয়ে গেছে ,সব শেষ হয়ে যাবে এমন ।
“না বাবু কিছু ঝড় আসবে না ,আমি তো আছি তোমার সাথে ,ওটা তো আলো ,তুমি তো ওই আলোকেই বেশি ভালোবাসো ,ওই আলোতেই যে মিশে যেতে চাও ।ওটা ঝড় নয় ,তুমি একটু ঘুমাও এখন সোনা বাবা আমার” সাত দিন পর এই প্রথম কথা বলল ,নাহলে শুধু দেওয়ালে কি যেন খুঁজে যায় ,কাকে যেন খুঁজে খুঁজে দেখে বার বার ,না পেলে আবার মুখ লুকিয়ে নেয় ফের ।ঈপ্সিতা আজ চোখে জল ধরে রাখতে পারছিল না ,তবুও বাবাকে শান্ত করেতে চোখ লুকাচ্ছিল বারবার ।এটা তো আনন্দের কান্না এর থেকে কত অশ্রু যে রোজ নিভৃতে ঝরে তার হিসাব কেউ রাখে না । আর এই নিথর পরে থাকা মানুষটার উপর দিয়ে যে কত নদী বয়ে গেছে ,সেটা শুধু সেই জানে । যখন থেকে বুঝতে শিখেছে তখন থেকে কত মিথ্যে বলে বলে নিজেকে সামলিয়েছে ,গোপনে কত অশ্রু ঝরছে ঈপ্সিতা ভালো করেই জানে । কত বার নিজে না খেয়ে খাইয়েছে হিসাব নেই ।। মা নেই তো কি হয়েছে ,তার বাবা আছে তো “সুপার হিরো” । আজ সে শয্যাগত ।।
(৯)
“ নিরাহিকা ….শুনতে পাও আমার কথা ? পাওনা জানি ,নাকি পেয়েও মুখ বুজে থাকো শুধু ,আমায় একটু অন্ধকার দেবে বলো , যেখানে তারা নেই ,যেখানে হারিয়ে গেলে কেউ খুঁজে পাবে না আর ,সব কি ভুলে থাকা যায় বলো ,সব কিছুই ,আমার শহরে দুর্ভিক্ষে মহামারী হয়েছিল সেই কবেই ,প্রেমহীন পৃথিবীতে এখন শুধু রক্তের দাগ কাটা দেওয়াল জুড়ে । জানি সব বুঝে চুপ থাকো কিংবা নাহলে কেন এতো টা আস্পর্ধা দেখাই রোজ তোমায় ছুঁয়ে দেখার ? হয়তো আমার মনেরই ভুল ।” আচ্ছা সময়টাকে যদি আটকে দেওয়া যেত কেমন হত ,জানো আজকাল এই সময়ের পিছু পিছু আমি যেন রোজ হারিয়ে যেতে বসেছি । এই সময়ের গতিবেগে আমি যেন নিস্তব্ধ স্থাবক । আগন্তুকের মতো দু একটা স্মৃতির বৃষ্টিপাতে আজকাল বড্ড মিশে যেতে ইচ্ছে করে মাটির গন্ধে ,জল কাঁদায় পা টিপে টিপে চলার মুহূর্তরা কম দামি গল্পের মতো হারিয়ে গেছে আমার বিজ্ঞাপনী কবিতার চোখে ।
বারবার ভুল করি, বারবার হেরে যেতে যেতে হেরে যাওয়াটা যেন এখন অভ্যেস হয়ে গেছে ডাল ভাতের মত ।ছেঁড়া কাঁথায় রাজত্ব করা পৃথিবীর মানচিত্রে আমার সূর্য খোঁয়া গেছে অভিমানের অক্ষাংশে । সেই তো বড্ড প্রেমিক আমিও ছিলাম একদিন ,আজ শুধু আগুনের রঙে ছবিতে আঁকি বুঁকি কাটি ।
হয়তো একদিন আমিও সিগারেটের মতো শেষ হয়ে যাবো ।ছাইয়ের দাম কি আর আছে বলো ।
নীহারিকা ! ওহঃ নীহারিকা তোমার বুকে ওই তারাদের ভিড়ে আমি কত খুজলাম তোমায় মতো একটা মুক্ত আকাশ কৈ পেলাম বলো ।তোমার ব্যাপ্তিকে কোনোদিন না মেনে নেওয়াটা হয়তো আজও বেঁচে থেকেও আমি মৃত । তুমিও অন্য আকাশে গল্প পাত অন্য কোনো স্বপ্নের বাস্তবতার । আমি হয়তো চাইলে তোমার গল্প হতে পারতাম ,কিন্তু আমার হারিয়ে যাওয়ার নেশা গুলো সত্যি দূর থেকে অনেক দূরে করে দিল আমাকে । ভালোবাসি না হয়তো তোমায় ,তবুও জানি এই পৃথিবীর সব চেয়ে আপন তুমি ,কাঁদতে পারি ,আবার হাসতেও ,আর আমার ভাট বোকা ,তোমায় জ্বালানো ইত্যাদি ইত্যাদি গুলো হয়তো একদিন মরেও যাবে ।”
"আজকাল আবছায়া চলে যায় দূরে ,গৌধূলিতে দেখি মৃত্যুমুখী পরোয়ানা ,কংক্রিটে আটকে গেছে মন । রং মশালে আমি পুড়ছি রোজ ।।”
(ক্রমশ)
জ্যোতির্ময় রায় |
হৃদয়পুর ,বারাসাত ,
কলকাতা-700127
No comments:
Post a Comment