এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

পারমিতা চক্রবর্ত্তী



বই আলোচনা

বইয়ের নাম : ব্রহ্মকমল
লেখিকা : জয়তী রায়
প্রকাশক : পারুল বই প্রকাশন
দাম : ৭০ টাকা



আমার চোখে

আমি যে বইটি নিয়ে দু চার কথা বলব, বইটি'র লেখিকা জয়তী রায় ৷প্রথমেই বলি বইটির প্রচ্ছদের কথা ৷ এক অনবদ্য প্রচ্ছদ যা দেখলেই বইটির প্রতি তীব্র আকর্ষণ জন্মায় ৷ " ব্রহ্মকমল " বইটি অনবদ্য ছোটগল্প সংকলন ৷  বইটিতে  মোট ১০ টি গল্প আছে ৷ জীবনের প্রতি দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা গল্পগুলি ৷  ব্রহ্মকমল গল্পটি শুরু এক অদ্ভুত টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে ৷ গল্পটির মূল চরিত্রটির নাম ভগীরথ ৷ চরিত্রটিকে  লেখিকা এত সুচারুভাবে বর্ণনা  করেছেন যে চরিত্রটি'র নামকরণ সার্থক হয়েছে ৷ এই গল্পের কিছু লাইন উদ্ধৃত করলাম -
" খাওয়া শেষ করে পাগলি উঠে দাঁড়ায় ৷ তারপর কাপড়ের পুঁটলি থেকে একটা লোহার রড বার করে ভগীরথকে শাসায় ," খেতে দিলি বলে তোর সঙ্গে শুতে বলবি না ৷ মেরে মাথা ভেঙে দেব , হারামির বাচ্চা ৷ দশদিন অন্তর এসে হাজির হয় ৷ খেতে চায় ৷ খেয়ে আবার চলে যায় ৷ পুঁটলি বগলদাবা করে জ্যোৎস্নাভরা মাঠ দিয়ে পাগলি চলে যায় ৷ সেদিকে তাকিয়ে আজ চোখে জল আসে  ভগীরথের । মা কে সে চোখে দেখেনি ৷ শুনেছে তার মাও নাকি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো পাগলি ছিল । তার মাকে নিশ্চয় কেউ কেউ খেতে দিয়ে শরীর হামলে পড়ত ।"
কোন বিষাদ বৃষ্টির মত ঝড়ে পড়ে ৷ কখনও  ছুঁয়ে ছুটে চলে যায় বসন্তের কোকিল হয়ে ৷ জীবনে এমন অনেক কথা থাকে যাকে উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করা যায় না ৷ অনুভব করতে হয় ! এমন কিছু অনুভব তুলে রাখা এই ছোটগল্প সংকলনটিতে ৷


আর কিছু লাইন উদ্ধৃতি করলাম এই বইয়ের আর একটি গল্প "দুপুরের গল্প"  থেকে -
" প্রেমিক কেমন হয় জানো , মল্লিদি ? যে এক ভালোবাসা'র দ্বীপ বানায় , নিজের কল্পনায় ৷ সেখানে সেই নারীকে সে চায় যে হবে তার আশ্রয় ।  তার সমস্ত আবেগকে ধারণ করবে সে ৷ প্রতিদিনের তুচ্ছ ঘটনাগুলিও সেই নারী মহার্ঘ রত্নের মত নিজের কাছে রাখবে সযত্নে ৷ রাবণ সব পেয়েও এক অতৃপ্ত প্রেমিকের মত ছিল ৷ সীতা তার কাছে ওই ভালোবাসার দ্বীপের মতো নরম সুন্দর পবিত্র ৷ "

প্রেম  মুহূর্তকে খনন করে ৷ নারী ও পুরুষের মাঝে এক আশ্চর্য পর্দার মত এসে ধরা দেয় ।লেখিকা'র কিছু লাইন দেখুন হৃদয়ের কাছাকাছি পৌছে দেয় ৷

ইতি সুমন গল্পে -

"আজকাল কেউ চিঠি লেখে না। ডাক পিয়নের চাকরি আর নেই মনে হয়। তবু , চিঠি লিখলাম তোকে। খাম খুললে অক্ষরের সঙ্গে পাবি আমার দেশের কুয়াশা, পাইনের গন্ধ, জঙ্গলের ধার ঘেঁষে ছোট নদীর কুল কুল শব্দ, জলের নীচে রঙ্গীন নুড়ি আর পাহাড়ের একাকিত্ব। সব তোর কাছে পৌঁছে যাবে এক অচেনা ডাকপিয়নের হাত বেয়ে। তুই যদি সেই ষোলোর মেঘ হতি, তবে তো খাম হাতে ধরে ঘুরে ঘুরে নেচে উঠতি। ''
চিঠি ! সে এক অদৃশ্য মেলবন্ধন মেঘ ও রোদের । হৃদয়ে'র গোপন কথা মেলে ধরে কিছু শব্দে'র প্রলেপে ৷ আবার কখনও লেখিকা লিখেছেন ধর্মীয় অনুশাসনের কাহিনী ।

পীর বাবার দাওয়াই গল্পের কিছু লাইন _
"ঝিনুক ঘুমোচ্ছে। তার গালে শুকনো জলের দাগ। দিদির বিয়ের বেনারসী ধরে ফেলেছিল মাসিকের সময়, তাই ঠাকুমা মেরেছে খুব। গতকাল রুই মাছের হয়ে দরবার করতে গিয়ে বাবার কাছে গাল শুনেছে। চামার দাদা ছলছল চোখে একলা দাঁড়িয়ে থাকে সাহেব কুঠিতে। সে বলতে গিয়েছিলো দিদিকে। দিদি তার গলা টিপে দেবে বলেছে  সে তাই পাতার বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুমোলে দুঃখ আর থাকেনা সে দেখেছে।"

শেষে বলি পাঠক হিসাবে বইটিকে অনায়াসে ভালোবাসা যায় ৷সুহৃদ পাঠকের স্পর্শে বইটি অনেক বেশী সংখ্যক মানুষের কাছে পৌছবে এ আমার বিশ্বাস ।


****

1 comment:

  1. আভাসটুকু অনবদ্য !!

    ReplyDelete