এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

শুভংকর পাল



ছোটগল্প


মৈথুন

'কপাল' ব'লে আপাত অদৃশ্য হ'লেও কিছু যে একটা আছে, এই কথাটা কিছুতেই মানতো না রিয়ান। ও যখন ক্লাস টেন্-এ পড়ে, কোচিং-এ যাতায়াতের সূত্রে ওই কোচিংয়েরই ক্লাস নাইনের একটি মেয়েকে ভালো লেগে গেছিলো ওর। কিছু কিছু খবর হাওয়ায় ওড়ে। এই খবরটিও তেমনই ছড়িয়ে পড়েছিলো সারা পাড়ায়। নিমেষেই। মেয়েটির দাদা একদিন রিয়ানকে রাস্তায় পেয়ে রীতিমতো শাসিয়ে দিয়ে গেলো — ওর বোনের সঙ্গে যেন ও আর কোনোদিনও না মেশে।

সবই কি মামাবাড়ির আবদার নাকি? তোর বোনওতো আমাকে ভালোবাসে। কথাগুলো ওর দাদাকে ব'লেই ফেলেছিলো রিয়ান। ওর দাদা জবাবে ব'লেছিল — ঠিক আছে, বোন তোকে 'না' ব'লে দেবে।

তখন বিশ্বাস হয়নি ওর এই কথা। কিন্তু সত্যিসত্যিই একদিন এক বন্ধু-মারফত রিয়ানের ডাক প'ড়লো ওর প্রেমিকার বাড়িতে। রিয়ানকে চেয়ারে বসিয়ে সঞ্জয়, ওর দিদি ও মা দাঁড়িয়ে আছে ড্রয়িং রুমে। সঞ্জয় ডাক দিলো দোলা-কে। গুটিসুটি পায় দোলা ওর বেডরুম থেকে বেরিয়ে এলো। এসে রিয়ানের সামনেই কিছুটা দূরত্বে দাঁড়ালো। সঞ্জয় ওকে নির্দেশ দিলো — বল্।

দোলা মুখে কিছুই ব'ললো না। চুপটি ক'রেই দাঁড়িয়ে আছে। ওর দাদা চিৎকার পারলো — কি রে? বল্।

দোলা তবুও কিছু না বলায় সঞ্জয় একটা খাতা আর পেন এগিয়ে দিলো ওর কাছে। ব'ললো — মুখে না ব'লতে পারলে এখানে লিখে দে।

দোলা এবার মুখ খুললো। মুখ দিয়ে যতো কম ভলিয়্যুম বের করা যায়, তেমন ক'রেই ব'ললো — বাড়ির তরফ থেকে কেউ যেহেতু রাজি নয়, আমি আর এ সম্পর্ক চাই না।

রিয়ান ওদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিলো। ও আন্দাজ ক'রলো — যে কোনো সম্পর্কের জন্য আর্থিক স্বচ্ছন্দতাটাই আসল। ওদের বাড়িটা দোলাদের বাড়ির চেয়েও আরেকটু বাহাদুরি রকমের হ'লে বোধহয় এমনটি না-ও ঘ'টতে পারতো।

কিন্তু কি অদ্ভুত ! কলেজে পড়ার সময়েও কিন্তু রিয়ান কোনো বান্ধবীই জোগাড় ক'রতে পারলো না ওর প্রেমিকা হিসেবে। অথচ ওর কোনো বড়লোক বান্ধবীও যে সে তুলনায় অসচ্ছল বন্ধুর প্রেমে পড়েনি — এমনটা নয়।

চারপাশের এই বিষয়ক ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায় — এই বড়োলোক মেয়েটিও একদিন কেটে পড়বে। মাঝখান থেকে কিছুদিন ওই ছেলেটির সঙ্গে জাস্ট এনজয় ক'রে যাচ্ছে ! সেক্সুয়াল এনজয়মেন্ট! ইয়েস্। যাস্ট্ এনজয়মেন্ট। অথবা বলা যায় — টাইম্ পাস্।

অতএব, রিয়ান বুঝে যায়, হস্তমৈথুনই শ্রেয়। এই বয়সের এই উত্তেজনাকে প্রশমিত করার জন্য একমাত্র হস্তমৈথুনই সহায়ক। বাথরুমে বেশিক্ষণ ধরে স্নান ক'রতে ভালোবাসতে শুরু করে রিয়ান। অন্যকে ভালবাসার ভিতর তেমন কিছু নেই। তেমন কিছু পাবারও নেই। নিজেকে ভালোবাসাই আসল। নিজেকে সুন্দর ক'রে গ'ড়ে তোলাটাই আসল। তখন অন্যরা এমনিতেই আকৃষ্ট হ'তে আসবে। মৌমাছিরা, প্রজাপতিরা মধু খেতে আসবে। কিন্তু ওরাওতো আত্মসাৎ ক'রতেই আসবে। তার মানে কী নিজেকে বা নিজের সবকিছুই অন্যকে উজাড় ক'রে দেবার জন্যই? এসব ভাবতে ভাবতেই রিয়ান গায় সাবান মাখে। ঝিঙের খোসা দিয়ে গা ঘসে। সারা গায়, মুখে, হাতে, পায়। শ্যাম্পু করে চুলে। গায় আর একটুও ময়লা নেই। সব পরিষ্কার। এবার বাম হাতের তালুতে একটু সাবান মাখিয়ে নিয়ে লিঙ্গে মাখায়। এতে হাত ও লিঙ্গের মাঝখানটা পিচ্ছিল হয়। রাস্তায় টাঙানো কোনো বিজ্ঞাপনের কোনো অর্ধনগ্ন মহিলার দৃশ্যটি মনে মনে কল্পনা করে। কনডমের বিজ্ঞাপন। বা ব্রেস্ট্ ম্যাসাজ্ অয়েলের বিজ্ঞাপন। খবরের কাগজেও ওই দৃশ্য থাকে। ওগুলো ভালো কামোদ্দীপক। ধীরে ধীরে লিঙ্গটি শক্ত হ'য়ে ওঠে। নরম পেশী কি সুন্দর কঠোর হ'য়ে যায়। হাতের তালুতে লিঙ্গটি রেখে আর কয়েকবার নাড়াতেই বীর্য ছিটকে বেরিয়ে এসে প'ড়লো দেয়ালে। আহ্। নিজেকে এবার হাল্কা লাগে রিয়ানের। কাম আর নেই। দোলাকে এখন আর মনে ক'রতে ইচ্ছে হয় না রিয়ানের। যা হ'য়েছে ভালোই হ'য়েছে। শুধু তো যৌনসুখের জন্যই মেয়েদেরকে দরকার হয়। ওরা আর কোনো কাজে লাগে? লাগে না। রান্না? সেও শিখে নেবো। ওরাওতো শুধু স্বামীর সবকিছু ভোগ করার জন্যই বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হয়। ব্যতিক্রম আর কজন? আর সন্তান? গর্ভ ভাড়া পাওয়া যায়। ও নিয়েও চিন্তা নেই।

কতো বিচিত্র হয় এই সম্পর্কগুলো। যতো ভাবতে যায় রিয়ান, ততোই জটিলতায় ঢুকে যায়। তাই এতো বেশি না ভাবাই ভালো। স্নানঘর থেকে বেরিয়ে আসে ও।

অবশ্য রিয়ানের এ সঙ্গিনীহীন জীবনের জন্য রিয়ান নিজেকেও কিছুটা দায়ী করে। ক'রবেই বা না কেনো? ও একটু লাজুকই। মেয়েদের সঙ্গে কিছুতেই এগিয়ে গিয়ে গায় পড়তে পারে না ও। কলেজের রঞ্জনকে দেখেও ও আজ অবদি কিচ্ছুটি শিখে উ'ঠতে পারলো না। প্রতিমার সঙ্গে রঞ্জন কী না ক'রেছে? প্রতিমাও রঞ্জনকে সাফ্ ব'লে দিয়েছে — ও রঞ্জনকে বিয়ে করবে না। অনার্স কমপ্লিট্ হ'য়ে গেলে কোনো প্রবাসী চাকুরিজীবী ছেলে জুটিয়ে দিব্বি ফরেনে গিয়ে উ'ঠবে। সেদিনই তো প্রতিমা কতো ক'রেই না অনুরোধ ক'রলো রঞ্জনকে। প্রতিমাদের বাড়িতে নিয়ে যাবার জন্য। প্রতিমার বাবা মা দু'জনই প্রফেসর। তাই বাড়ি তো ফাঁকাই প'ড়ে থাকে। এ সময় রঞ্জনকে পেলে তো ভালোই লাগে। রঞ্জনও দু'টো কনডম কিনে নিয়ে প্রতিমার হাত ধ'রে চ'লে গেছিলো ওদের বাড়ি। এ সুযোগ কেউ হাতছাড়া করে? পাগলেও করে না। যদি একে দোষ ব'লে আখ্যা দেয়া যায়, রিয়ানের এই একটাই দোষ — ও কিছুতেই এমন ক'রে কারো পেছনে লেগে প'ড়তে পারে না। যে সম্পর্কের কোনো স্থায়িত্ব নেই, এমন সম্পর্ক করে কী লাভ? রিয়ান ভাবে। আর এমন ভাবে ব'লেই ওর দ্বারা আজ অবদি কিছু হ'লো না।

কাউকে ঠকানো ওর ধাতে নেই। সৌম্যদর্শন সুমনকে সবাই কানাঘুসোয় মেয়েবাজ ব'লেই জানে। ও হলো গিয়ে বড়োলোকের ব্যাটা। ও যে ওই গরীব মেয়েটাকে পটিয়েছে, ও কি ওকে কোনোদিনও বিয়ে ক'রবে? ক'রবে না। রিয়াকে ও কখনোই বিয়ে ক'রবে না। রিয়া টেরও পায় না। রিয়ার মধুর হাঁড়ি চেটেপুটে সাফ্ ক'রে তবেই ও ওকে ছাড়বে।

সে যাই হোক, খেয়ে দেয়ে কলেজে বেরোয় রিয়ান। যেতে যেতে ভাবে, প্রসূনেরও তো ওর মতোই অবস্থা। যে মেয়েটিকে সে ভালোবাসতো, মেয়েটি এখন অন্য একটি ছেলের সঙ্গ নিয়েছে। বাইকের পিছনে বসে পিছন থেকে ছেলেটিকে জড়িয়ে ধ'রে যাচ্ছে — এমন অবস্থায় কতোবার দেখেছে প্রসূন! এতোসব দেখে রিয়ানের আর সাধ হয় না - ও এমনই কোনো এক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। সম্পর্ক গড়ে তোলা মানেই সেটা তাগিদ ফুরোলে ভেঙে প'ড়বেই, সেই অনিচ্ছা দু’জনের মধ্যে যে কোনো একজনের তরফ থেকেই আসতে পারে। আর এই ভাঙনের মূলে মাপকাঠি হ'লো এই টাকা! টাকার প্রয়োজনেই একজন আরেকজনের কাছে হস্তান্তরিত হয়। আর যার এ রকমের কোনো উপায়ান্তর থাকে না, সেই একমাত্র ওই সম্পর্কে আজীবন কাটিয়ে দেয়। কাটাতে বাধ্যও হয়।

টিফিন টাইমে রিয়ান প্রসূনকে ডেকে নিয়ে যায় ক্যান্টিনের পিছনে। কলেজ ক্যাম্পাসে ওদের এই একমাত্র আবিস্কৃত জায়গা, যেখানে অন্য আর কেউ এসে ভিড় বাড়ায় না এবং নিরালায় ক্ষণিক কাটিয়ে দেয়া যায়। দু’জনে লুকিয়ে সিগারেট ধরায়। লম্বা সুখটান দেয় আর দুটো ঠোঁট সরু ক'রে ওই ফাঁক দিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ে — আকাশের দিকে। মনে প'ড়ে যায়, এখানেই একদিন রিয়ান ও প্রসূন এরকমই এক টিফিনের সময় দু’জন মিলেই হস্তমৈথুন ক'রেছিলো। বাজি রেখেছিলো — যার বীর্য তুলনায় বেশি দূরে যাবে, সে জিতবে এবং হেরো-কে সেদিন দু’জনেরই ক্যান্টিনে টিফিনের খরচ দিতে হবে।

জিতেছিলো প্রসূন। রিয়ান সেদিন প্রসূনকে পেট ভরে পরোটা আর কষা আলুর দম খাইয়েছিলো। নিজেও খেয়েছিলো। মজাও পেয়েছিলো। দারুণ।

মনে পড়ে, ওকে নিয়েই একদিন কলেজ কাট্ ক'রে দক্ষিণ কলকাতার যুবকমহলের সেই সুপরিচিত সিনেমা হলটিতে গিয়েছিলো। পিঠে বইখাতার ব্যাগ নিয়েই। সিনেমা হলটা বেশ নিচু রাস্তার চেয়ে। বেশি বৃষ্টি হ'লে পাশের খালের জলও ঢুকে যায় ভেতরে। তখন মেঝে থেকে পা দুটো ওপরে তুলে নিতে হয়। সে এক হ্যাপা। যাই হোক, ওরা যখন হলে ঢুকেছে, সিনেমা শুরু হ'য়ে গেছে। একজন ওদের টিকিট চেক্ ক'রলে দরজাটা ফাঁক ক'রে ঢোকার সময়ই দেখলো, শুধুমাত্র সামনের সারিতেই চারটে সিট্ খালি পড়ে আছে। দরজা বন্ধ হ'য়ে গেলে ঘুটঘুটে অন্ধকার। পর্দায় হিন্দি ছবির ডায়ালগ। ওই আলো অনুসরণ ক'রেই সিটে ব'সতে গিয়ে রিয়ান দেখে — প্লাসটিকের চেয়ারের ওপর একদলা শাদা বীর্যের মতো কি যেন পড়ে আছে। ঘেন্না ঘেন্না ক'রে ওরা পাশের চেয়ারে ব'সলো। একটু পরেই পর্দায় লীলাখেলা শুরু হ'য়ে গেছে। বিবস্ত্র তরুণ তরুণীর রমণের দৃশ্য। বিশেষ সিনেমা চলাকালীন মাঝেমধ্যে ওই রকম কোনো কোনো ভিডিও-ক্লিপ্ ঢুকিয়ে দেয়া হয়। দর্শক তৃপ্ত হয়। সিটের ওপর বীর্য তো পড়ারই কথা!

রিয়ানের মাথায় পোকাটা ঢুকেছে এখান থেকেই। ওর এরকমই একটা বড়ো হলঘর চাই। হস্তমৈথুনের জন্য।

এই যে প্রতিদিন খবরের কাগজ খু'ললেই রেপ্-এর ছড়াছড়ি, পরকীয়া সম্পর্কের জেরে খুনোখুনি — কারো কি হেলদোল আছে এসবের প্রশমনে? রথী মহারথীদের কিছু শুধু বাতেলাই আছে। তারপর যে কে সেই। চ'লছে। আর এরপরেও কারো কোনো ভ্রূক্ষেপ না থাকলে এ তো চ'লতেই থাকবে। উঠতি বয়সে কাম উদ্দীপনা লাঘবের জন্য এই ছেলেরা যদি এই মৈথুনে নিজেদেরকে চালনা করার চেষ্টা করে — সেন্ট্ পারসেন্ট্ না হ'লেও এই ধর্ষণ অনেকটাই কমে যেতে পারে। ব্রিটেন ও অস্ট্রলিয়াতে ২৮শে মে ইন্টারন্যাশনাল মাস্টারবেসন ডে পালন করা হয় এবং জেনারেল সার্জন জয়সেলিন এল্ডার্স-এর সম্মানে ১৯৯৫ এর ১৪ই মে দিনটিকে প্রথম মাস্টারবেসন দিবস হিসেবে দেখা গিয়েছিলো। তিনি স্কুলে ছাত্রদের সেক্স এডুকেশনে এই মাস্টারবেসনকেই অন্তর্ভুক্তির জন্য মত জানিয়েছিলেন এবং সেজন্য বিল ক্লিনটন তাঁকে গুলি করে মেরে ফেলে। এই কথাগুলো ভুলে যায় নি রিয়ান। আমরা এটাকে ফলো আপ্ ক'রে এগিয়েই নিয়ে যেতে পারি না। কি আর করা যাবে! রিয়ান ভাবতেই থাকে। কিছু একটা ক'রতেই হবে। যে ক'রেই হোক।

ছেলে মেয়ের সাংখ্যিক অনুপাত সমান না হ'লে এ বৈষম্য থাকবেই। আর যেহেতু মুষ্টিমেয় কয়েকটা জায়গা বাদ দিলে সবখানেই পুরুষের জনসংখ্যার হার বেশি, তাই এই বাড়তি পুরুষের যৌন-তৃষ্ণা কে মেটাবে? নিঃস্ব কখন চুরি করে? অভাবে। তাই ছেলেমানুষ কামের বাসনায় মেয়েমানুষকে প্রত্যাশা ক'রে যদি তাকে না পায় — তারা কোথায় যাবে? অতএব ধর্ষণই শ্রেয়। অন্তত তাদের কাছে।

কিন্তু যে পোকাটা রিয়ানের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, ওটাকে বাস্তবায়িত করার জন্যও চাই টাকা। কিন্তু সবকিছুর জন্যই তো বাবার কাছে হাত পাতা যায় না, এ উদ্দেশ্য পূরণ রিয়ানকেই ক'রতে হবে। জোরকদমে পড়াশোনা করে ইংলিশে অনার্স উতরোল ও। তারপর বিএড। পিএসসি দিয়ে হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে চাকরিটাও হ'য়ে গেলো। পোস্টিং অবশ্য ক্যানিং-এ। সে হোক, ঢাকুরিয়া থেকে আরামসে ট্রেনে ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করাই যায়। প্রসূনের চাকরিটা হ'লো না, ভাইভা-তে আটকে গেছে। ওর ক্ষেত্রে আট লাখ টাকা চেয়েছিলো, ঘুষ হিসেবে। চাকরিটা পাইয়ে দেবে। কিন্তু এতো টাকা কোথায়? ও মনস্থির ক'রলো — পরেরবার আবার পরীক্ষায় ব'সবে।

এদিকে চাকরির ইনকাম্ দেখিয়ে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই এইচ্-ডি-এফ্-সি থেকে একটা হোম্ লোন পেয়ে গেলো রিয়ান। যাদবপুরের কাছেই একটা ফ্ল্যাট রিসেলে কিনলো। স্বপ্নপূরণ হ'তে চ'লেছে। সত্যিই।

ফ্ল্যাটটা গ্রাউন্ড ফ্লোরে হওয়াতে সুবিধেই হ'য়েছে একদিক থেকে। সিঁড়ি ভেঙে কাউকে ওপরে উ'ঠতে হবে না। রান্নাঘর বাদ দিয়ে ড্রয়িং রুম ও যে দু’খানা বেডরুম আছে, সেগুলোকে যোগ ক'রলে একটা আয়তাকার ক্ষেত্র। রিয়ান ঠিক ক'রলো, রান্নাঘর আর ড্রয়িং রুমটা যেমন আছে তেমনই থাক। বেডরুম দু’টোর কমন্ ওয়াল-টা ভেঙে দিলেই একটা বড়ো হলঘর হ'য়ে যাবে। আর ওখানকার মেঝের টাইল্ তুলে ও টয়লেটের টাইল্ তুলে কমন্ জলের লাইন ক'রতে হবে ইনলেট্ ও আউটলেটের জন্য। এই হলঘরের লম্বালম্বি মাঝ-বরাবর একটা পাঁচ ফুট্ হাইটের ডিভাইডার দিয়ে দিলেই ভালো হয়। ওই ডিভাইডারটা কোনো দেয়ালকেই স্পর্শ ক'রবে না। ফলে উভয় দিক থেকেই হলের যে কোনো জায়গায় যাওয়া সম্ভব। আর ডিভাইডার দেয়ালের ওপর দেয়ালের দুই পারেই পরপর ওয়াল হ্যাংগিং ইউরিনাল্ লাগিয়ে দিতে হবে পাবলিক শৌচালয়ের মতো। ব্যস্। খেল্ খতম্। কিন্তু এ কাজ যে মিস্ত্রীকে দিয়ে করাবে, সে তো সারা বিশ্বে এ খবর ছড়িয়ে দেবে! বেডরুমের ভিতর টয়লেট্! কেলেঙ্কারি হ'য়ে যাবে!

যাই হোক, সে মিস্ত্রীর মুখ বন্ধ করিয়েই শেষ পর্যন্ত সব কাজ সুসম্পন্ন হলো। এদিকে বাড়িতে বাবা বা মা-কে কিছুই জানায় নি এতো সবের খবর। বাবা-মাকে বলা যায় এসব? হস্তমৈথুনের জন্য হলঘর! জানলেই বাড়িছাড়া ক'রবে। অবশ্য একদিন তো জানবেই। তখনই দেখা যাবে।

ওর তো ক্যানিং-এ স্কুল। তাই প্রসূন যেহেতু ফ্রি আছে, ওকেই এসবের তদারকির দায়িত্ব দিলো রিয়ান। কুইকার্-এ একটা অ্যাড্ দিয়ে দিলো — মাস্টারবেসন হাব্। সঙ্গে রিয়ান ও প্রসূনের অল্টারনেটিভ্ মোবাইল নম্বর।

তিন দিন পর চারজন ছেলে এসে খোঁজখবর নিয়ে গেলো। এর মধ্যে প্রসূন একটা গিফ্টের আয়োজনও ক'রে ফেললো। এন্ট্রি ফি — পাঁচ টাকা। দেয়ালে দেয়ালে ডিসপ্লে করে রাখা আছে হস্তমৈথুনের উপকারিতা, অপকারিতা এবং গাইডলাইন্স। লিঙ্গ ইরেক্ট্ করার জন্য বেশ কিছু স্টিল্ নেকড্ মেয়ের ছবি রাখা হ'লো। সবাই বেশি সময় নিয়েই বীর্য ফেলতে চাইবে। তাই যে সবচেয়ে কম সময় নিয়ে বীর্যপাত ক'রে কাউন্টারে আসবে, সবার রেকর্ড রাখা হবে এবং সপ্তাহের সেরা প্রথম তিনজনকে পুরস্কৃত করা হবে।

ধীরে ধীরে লোক সমাগম হ'তে শুরু হ'য়ে গেছে। যারা আসছে তারা সবাই খুশি এ রকম একটা জায়গা পাওয়ায়। সবাই ফিডব্যাক্ ফর্মে এই হাবের আরো উন্নয়নের জন্যও বিভিন্ন দিক তু'লে ধ'রছে। কেউ কেউ এজন্য ডোনেশন দিতেও রাজি আছে। কিন্তু এ সবের মাঝেই হঠাৎ একদিন একদল পুলিশ এসে হাজির। ধরপাকড় শুরু হ'য়ে গেল।



******
Subhankar Paul,
7/149, Mukundapur,
Mukundapur Sub-Post-Office,
P.S.- Purba Jadavpur,
Kolkata – 700099.
(Mobile) – 8420020161
(E-Mail) – spsubhankarpaul@gmail.com

No comments:

Post a Comment