এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

সুদীপ্তা পাল

বিভাগ : গল্প (ছোট গল্প)



আজকাল চিঠি ........


আজ তুই, কেমন আছিস?
আজ কি তোর বাড়ির স্হলপদ্ম গাছে একটাও ফুল ফুটেছিল?
আজো কি তোর দেরী করে ঘুম ভেঙেছে?
কাক ডাক ভোরে আজ কি তোকে জাগিয়ে দেবার কেউ ছিল না।
-----নাকি এমন কেউ ছিল, যে তোর পাশে সুগন্ধি আতর মেখে তোকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে ছিল।
যার গোপন স্পর্শ আর আলতো ঠোঁটের আদরে তুই আস্তে আস্তে চোখ মেলেছিস।
যার চোখের দিকে তাকিয়ে এক প্রহর সময় চলে গেছে বুঝতেও পারিস নি ।
যার সাথে বসে চা খেয়েছিস আর বলেছিস---"সময় তুমি থেমে যাও"
যেমন আমাকে বলতিস --কোন জ্যোৎস্না মাখা রাতে -----"আজ রাতকে বলনা যেন না যায়, প্লিজ.. প্লিজ"।
আমি বলতাম - তোর রাত তুই বল।
তখন তুই অভিমান মেখে বলতিস--
"দুজনের একটাই রাত
একটা heart
একটাই heart beat"
তোর whats up pageএর দিকে তাকিয়ে আমার বুকের রক্তে শিহরণ খেলে যেত।
একবার ঠাঠা পড়া তপ্ত রোদে দাড়িয়ে তুই আমায় বলেছিলিস
-----"যে তোর বর হবে
সে তোকে স্পা করিয়ে দেবে
ম্যাসাজ করে দেবে
মনের মতো করে সাজিয়ে দেবে"
আমি বললাম- তোর থেকেও কি বেশী ভালোবাসবে?
তুই পাগলের মতো হেসে উঠে বললি- ধুর পাগলি"
এখন আমার দিন শুরু হয়
সকাল বেলার ঘর ঝাঁট
আর এঁটো বাসন দিয়ে
ম্যাসাজ হয় ঠিক'ই কিন্তু শিলনোড়ায় আর একবালতি ভিজে জামাকাপড়ে।
মার শরীর খারাপ হলে আমি যদি রান্না করতাম তুই বলতিস-" কষ্ট হয়নি।"
আমি বলতাম  "না"
যদি এতটুকু কষ্ট হয়েও থাকতো তবে তোর কথায় সব কষ্ট এক লহমায় মুছে যেত।
মনে হতো আমি যেন পৃথিবীর সব চেয়ে সুখী মানুষ, হাওয়ার তোরে গা ভাসিয়ে মেঘের ভেলায় ভাসছি।
আর তুই শক্ত করে আমার হাত ধরে আছিস।
আমি যখন বলতাম
------আজ আমার মন খারাপ
তুই বলতি, "কেন, কি হয়েছে?"
আমি অভিমানী সুর করে বলতাম
---"এই তুই আমায় ভালোবাসিস"
তুই সুর টেনে টেনে বলতিস
-----আমি তো ভালোবাসতেই জানি না।
তোকে সময় দিই না।
ফোন করি না।
দেখা করব কথা দিয়ে
আসি না।"
আমি ভাবতাম--আসলে তো আমার মন খারাপ'ই হয়নি।"
আজ, আমার শরীর আছে কিন্তু কোন মন নেই।   কারণ মনের খবর রাখার মানুষ নেই---
তুই যখন প্রতি প্রহরে জিজ্ঞেস করতিস,
"খাওয়া হয়েছে?
আজ শরীর কেমন আছে?"
-----আমি হেসে বলতাম  --"ফাস্ট ক্লাস"
তুই কোন কথা না পেয়ে চুপ করে যেতিস
আজ,  যখন সবার খাওয়ার শেষে আমি পড়ে থাকা রুটির দিকে তাকিয়ে থাকি
আমার কানে বাজে,
-----"খাওয়া হয়েছে
আজ কি দিয়ে খাওয়া হল?"
আবহমানের ঘূর্ণিপাকে ঘোরে একটাই সুর
-----তু...মি...    অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর
তোমার কথায় শব্দ দূষণ, তোমার গলার স্বর"

রাতে আমাদের চাঁদ দেখা শেষ হলে তুই আমায় বলতিস, ----"এবার আমি তোর চোখের পাতায় সুর সুরি দিয়ে দি"
---আ-মি বলতাম --"হ্যাঁ.."
সেল ফোনের কাছে মুখ নিয়ে তুই বলতিস
---"আমাকে fellকরছিস"
আমি বলতাম --"হ্যাঁ"
তুই বলতি আমি তোর পাশেই শুয়ে আছি, এবার আমায় জড়িয়ে ধর"

এখন যখন আমার শরীর ভেদ করে তপ্ত লোহা স্পর্শ করে , আমি তার মধ্যে তোর আলতো ছোঁয়া হারিয়ে ফেলি।
আর বুঝতে পারি না।

তুই বলেছিলিস, ----"আমাদের একটা ঘর না হলেও, চাঁদ একটাই থাকবে।
আকাশ একটা থাকবে
এক'ই পৃথিবী থেকে oxygen নেবো আমরা।

আমি তখন বোকার মতো চুপ করে যেতাম।
----কিন্তু আজ আমার একা চাঁদ দেখতে ভয় করে।
মনে হয় চাঁদ যেন আমায় অট্টোহাসিতে ঠাট্টা করছে।
পূর্ণিমার জ্যোৎস্না আমার গায়ে আগুনের ছেকা দেয়।
সারাদিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টি হলে তুই যখন বলতিস,
-----"আজ সারাদিন বৃষ্টি দেখতে দেখতে গল্প করতে হয়"
আর বৃষ্টি শরীরের সাথে আমার সেল ফোন যখন ভিজত, তুই বলতিস
------"বৃষ্টিতে ভেজার পর আজ আমরা কি করবো।"
তুই আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলতিস
---"স্নান করে নেব
নাহলে কিন্তু ঠান্ডা লেগে যাবে"
তখন আমাকেই শুনতে হবে-----
"আমার মাথা ব্যথা করছে
গা গরম"
ঝরে পড়া শান্ত বিকেল তুই যখন বলেছিলিস
----"এরকম'ই কোন এক দিন তুমি তোমার বরের হাত ধরে ওভারব্রিজের উপর দিয়ে হেঁটে যাবে,
আর আমি তোমার সামনে দাড়িয়ে বলবো
-------"আমি তোমার সূজন যাকে, তুমি ভালোবাসার কথা বলেছিলে......."
তখন তুই বলবি --"ক'ই , আমার তো সেসব কিছুই মনে নেই"

তোর সাথে আমার দেখা হয়নি ঠিক'ই
কিন্তু যদি হতো আমি বলতাম ,
-------"তোমায় আমি ভুলি নি
তুমি কি শুনতে পারছো।"
তখন হয়তো আমার স্বর তোর হৃদয় ছোঁবে না
কিন্তু আমি পাগলের মতো চিৎকার করতে থাকবো
--------আমি তোমায় ভুলি নি
তোমায় ...ভুলি  নি
      ভু..লি    নি।


সুদীপ্তা পাল

হাবিবপুর, রানাঘাট

নদীয়া

ছাত্রী, বি.এ (তৃতীয় বর্ষ)





No comments:

Post a Comment