এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

সিলভিয়া ঘোষ

বিভাগ : গল্প (অণু গল্প)



মডেল


বহু আকাঙ্ক্ষিত দিনটি আজ।এত্তোগুলো বছর এই দিনটির অপেক্ষায় রয়েছে যে কটি লড়াকু মানুষ তারা আজ সকালের অমানুষিক ভিড় ঠেলে ট্রেনে বাসে করে এসেছে কলেজে।আজ MFA---এই ক্লাস টাতে একটা চাপা উত্তেজনা। সিথ্রী( মানে চারু চন্দ্র চক্রবর্তী )র এই ক্লাস কেউ মিস করতে চায় না।আজ ক্লাসের পাঁচজন কে ভীষণ উত্তেজিত লাগছে।সিথ্রী    কিন্তু সকল কে পর্যবক্ষেণ করছেন অথচ ভাব খানা দেখাচ্ছেন যেন কিচ্ছু দেখছেন না। সায়ণ আস্তে করে অনামিত্রকে বলল ,আজ শালা বাসে একটা মালের সাথে হেব্বি কিচাইন হয়েছে ।মনটা ভালো  লাগছে না।
এরমধ্যেই চারু বাবু উঠে দাঁড়িয়ে বললেন "এসো মা"।তারপর সকলের দৃষ্টি সেই মা এর দিকে হতেই সায়ণ যেন কারেন্ট খাবার মতো লাফিয়ে অনামিত্র কে চিমটি কেটে বলল ---আরে সেই মালটা অনা ! মহিলা চারু বাবুকে প্রণাম করে বলল আসছি আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে ।ঘরের মধ্যে  তখন উত্তেজনার  পারদ তুঙ্গে ।
মহিলা এসে দাঁড়াতেই চারু বাবু সবাই কে বললেন--'আজ দেখি কে কত  বেশি ফেমিনিস্ট'।এই আঁকার আগে বলে নেওয়া দরকার যে সকললেই নিজের সবচেয়ে কাছের মানুষের কথা মনে করে এই ছবি আঁকবে'।

মহিলার বয়স এই ত্রিশের কাছে অথচ মুখখানা সেই আঠারোর মতোই ,শরীরে মেদ নেই,গায়ের রং কালো ,নিটোল মুখ খানি, ঠোঁটের রঙ এখন আর নেই ,দুহাতের শাঁখা পলাটাও নেই ,মাথার সিঁথি ফাঁকা ,পাতলা ফিনফিনে সাদা ধূতি খানি জড়িয়ে  এসেছিলেন ।চারুবাবু  তাকে একটি আলো আঁধারিতে বসিয়ে এক ভাগ চুলকে খোলা ক্লীভেজে ছড়িয়ে  দিলেন আর গায়ের কাপড় খানি খুলে দিলেন.........

যে সৌরভ নুন শো দেখতে গেলে খান দশেক সিটি মেরে নেয় নায়িকার আগমনেই ,সেই সৌরভের এই আশ্বিনের শিরশিরে আবহাওয়ায় গলদঘর্ম অবস্থা।

সামনের বেঞ্চে বসা বিদিশার আজ কান দিয়ে আগুন বের হচ্ছে,ডেনিম সার্টের বুকের  বোতামটা খুলে দিয়েছে কখন নিজের অজান্তেই।আজ কেউ যদি তাকে নিমাই বলে খ্যাপায় ,তবে তাকে জোর করে ঐ শূন্য বুকেই চেপে ধরবে সে------

ওদিকের লাস্ট বেঞ্চে চুপচাপ বসা  আরাত্রিকার , মনে পড়ে যাচ্ছে তার দাদুর ছোঁয়া  (গোপন অঙ্গে) দিন গুলোর কথা!উফফ কি অসহ্য লাগছে তার....

এদিকে সিথ্রী    পিছন থেকে বলেই চলেছেন আজ তোমাদের আসল পরীক্ষা ,মনেকরো তোমাদের সামনে তোমাদের মা , বোন , প্রেমিকা ,ধর্ষিতা ,কিম্বা কোন প্রতারক নারী কে দেখছো তোমরা। ফুটিয়ে  তোল নিজেদের পরিচিত  নারীর ছবি নিজের নিজের ক্যানভাসে .........

ক্লাসের সবচেয়ে নটোরিয়াস ছাত্র বাপ্পা মানে বাপ্পাদিত্য আজ সবচেয়ে শান্ত ,ক্যানভাসে মনদিয়ে   ছবি আঁকছে সে,এমন কোন দিন নেই যেদিন  সে সিথ্রী এর কাছে গাল মন্দ খায় না,আজ স্যর ও অবাক তাই ........

সায়ণ , অনামিত্র , সৌরভ সবাই  নিজেদের মতোন করে মডেল কে রূপ দিচ্ছে ।সায়ণ তার কল্পনার প্রেমিকা কে,অনামিত্র তার মা কে ,সৌরভ বিশ্বাসঘাতক তার প্রেমিকা কে, বিদিশা কেমন যেন সাঁওতালি মেয়ে ধাঁচে নিজের শরীর কে বেঁধে নিয়েছে ,আর আরাত্রিকার ক্যানভাসে ধরা পড়েছে মা চন্ডীর রণং দেহি মূর্তি ।ঘুরে ঘুরে সবার ক্যানভাস  দেখার পর সিথ্রী   যখন বাপ্পাদিত্যের ক্যানভাসের কাছে  গেলেন তখন অবাক হয়ে দেখলেন , তার ক্যানভাসে ফুটে উঠেছে স্নেহময়ী ,মমতাময়ী ,লাস্যময়ী অবিকল সম্মুখের নারীর প্রতিভূ।খানিকটা অবাক হয়েই তিনি বাপ্পাকে বললেন ,তোমার যে এতো ভালো আঁকার হাত ,তা আগে কোনদিন জানতে দাও নি তো ! আজ কি হলো তোমার !  এমন স্কেচের সঙ্গে এতো সুন্দর রঙের মিশেল অভাবনীয় বাপ্পা ।মনে হচ্ছে যেন সাক্ষাৎ মা এসে বসে আছেন । কি করে পারলে তুমি এটা করতে.........

বাপ্পা মাথা নিচু করে আছে দেখে স্যর মুখটা উপরে টেনে ধরতেই বাপ্পা স্যরকে জড়িয়ে ধরে বললো  ......ও যে আমার দিদি স্যর ! স্যর যেন কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে পড়লেন......শুধু মেয়ে টি নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে  যখন স্যর কে আসি বলে বেড়িয়ে গেল .......তখন বাপ্পা বলে উঠলো  ........একা যাস না দিদি,আজ আমি যাবো তোর সঙ্গে !
স্যর বললেন ও কি বিবাহিত বাপ্পা ?
বাপ্পা বলে......বেঁচে থাকার লড়াই এ এটুকু অভিনয় তো করতেই হয় স্যর .........



পিছনের ক্লাবে  তখন বেজে  উঠছে  রূপং দেহী/ জয়ং দেহী/যশঃ দেহী/ দ্বিষ দেহী --মহালয়ার আগের দিন যে  .......মনে ছিলনা  কারোর।

সিলভিয়া ঘোষ

মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে থেকে একুশ বছরের আটপৌরে ঘরের  গৃহবধূ,  না ঠিক গৃহবধূ না বলে আজকাল যেমন হোমমেকার বলা হয় আমিও ঠিক তেমনটাই। লেখাপড়ার  সঙ্গে সম্পর্ক  প্রায়  কুড়ি বছর শেষ হয়ে গিয়েছে!   ফেলে আসা বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে  যোগাযোগ হয় ২০০০ সালে,এই ফেবু দুনিয়ায় ।তাদের উৎসাহেই আজও  আমার আমি কে খুঁজে চলেছি অন্তহীন............. 






No comments:

Post a Comment