বিভাগ : গল্প (বড়ো গল্প)
অজানা মানুষের প্রেম
এক
সূর্য পাবলিশার্সের ‘বিশ্বসেরা গোয়েন্দা গল্প ’ বইটা এই ক’দিনের মধ্যে আমার রাতের সঙ্গিনী হয়ে উঠবে ভাবতে পারিনি ! কলকাতা ছেড়ে উত্তরবঙ্গে আসবার জন্য যখন তিস্তা-তোর্সা ধরলাম , সাথে একটা ভি আই পি ছিল । সেই ভি আই পি –র ভিতর জামা , প্যান্ট আর দরকারি জিনিস নিয়েছিলাম । জন্মদিনে উপহার পাওয়া বইটাও নিয়ে নিলাম । অপরিচিত জায়গা । চেনা মুখ নেই , তাই ফাজলামি করে সময় কেটে যাবে তেমন সুযোগ নেই । তাছাড়া আমি খুব সহজে খুব তাড়াতাড়ি মিশতে পারিনা । ফলে যদি কেউ মিশতে সাতদিন সময় নেয় , আমি নেব একমাস । এত কিছু ভেবেই আমি ভাবলাম , যদি পড়বার নেশা থাকে আর সেই নেশার সামগ্রি সে বহন করে নিয়ে যায়, তবে তাকে আর সময় কাটানো নিয়ে চিন্তা করতে হবে না । আমার কাছে গোয়েন্দা বা রহস্যের বই বেশ লোভের বস্তু । তবে একে নতুন জায়গা , তার উপর নতুন কাজ – এই সব নিয়ে এত চিন্তায় ছিলাম যে , গল্পের বই নিয়ে সত্যি –সত্যি কিছু ভাবনা মনে আসেনি । আমি শুধু ভেবেছি কাজটা আমাকে টিকিয়ে রাখতে হবে ।
আমি কাজটা পেয়েছি অনেক কষ্টে । এখানে চাকরির জন্য অনেক জায়গায় ঘুরেছি । পায়ের ছাল উঠে গিয়ে ক্ষত হয়ে গিয়েছে । তাও পাইনি মনের মতন চাকরি ! শেষে এক বন্ধু মারফৎ জানতে পারলাম , নিউ জলপাইগুড়ির কাছেই মফস্বলে , একটা কাঠের কারখানা আছে । এখানে দেখাশোনার জন্য একজন সুপারভাইজার দরকার । থাকা আর খাওয়া ফ্রি , মাস গেলে দশ হাজার হাতে আসবে । বাধ্য হয়েই রাজি হয়ে গেলাম । আসলে যাদের কাছে বিকল্প থাকে , তারাই বলতে পারে – এই চাকরি করব না , আরেকটু দেখি । যার সেই সুযোগ নেই সে নিজেকে সান্ত্বনা দেয় । আমার হাতে এই মুহূর্তে শুধুই ‘কর্মখালি নেই ’ এর দৃশ্য ছিল , তাই বেশি না ভেবে বাড়ি ছেড়ে জলপাইগুড়ি চলে এসেছি ।
এখানে এসেছি তাও তিনদিন হয়ে গিয়েছে ।
তিনদিন আগে স্টেশনে নেমেই প্রথমে রিতাকে ফোন করি । রিতা সিং । কলকাতা থেকে প্রথম যেই দিন আমি জানবার জন্য ফোন করেছিলাম , এই মেয়েটির সাথে কথা হয়েছিল । দেখতে কেমন জানিনা । আমি দাঁড়িয়ে আছি মেয়েটার অপেক্ষায় । আসলে রিতা না এলে আমি এক পা নড়তে পারব না। এমন ঠিকানা যে , আমাকে নিয়ে যাবে কোম্পানির গাড়ি ।
দু’পুর তিনটে বাজল । স্টেশনে অনেকেই দাঁড়িয়ে আছে । আমি দেখলাম প্ল্যাটফর্মের মুখে একজন কালো রঙের টি ’ শার্ট আর ব্লু জিনস পড়ে , দাঁড়িয়ে আমার দিকে হাত নাড়ছে ! খুব একটা অবাক হলাম না । আমার ভাগ্যের প্রতি বিশ্বাস ছিল । খুব কষ্টে নিবেদিতা আমার জীবনে এসেছিল । আজ ও এমন স্মৃতি , যাকে ভুলতে চাই। জীবনে সব কিছুই মনে রাখবার দরকার পড়েনা । অনেক কিছুই ভুলে যাবে , অনেক কিছুই ভুলতে হবে । যাই হোক মেয়েটা আমাকে চেনে এবং কোম্পানির সাথে যুক্ত ।
-হাই ।
-হ্যালো । আই অ্যাম......
-জানি ডিয়ার , অম্বিকা লায়েক । তাইতো ?
-আপনি রিতা ?
মেয়েটা মিষ্টি করে হাসল । গায়ের রং চাপা । ঠোঁট গভীর , রসালো চিলি ফল । চেহারা একটু ভারী হলেও মোটা নয় । নাতিদীর্ঘ ।
-আমি মিমি বর্মণ । ম্যাডামের সহকারী । তুমি আমার সাথে এসো ।
-আপনি আমায় চিনেছেন , এটা সত্যিই আমার টেনশন কিছুটা কমিয়েছেন । আমি ভাবছিলাম , আমাকে আপনাদের খুঁজে পেতে না অসুবিধা হয় !
-কেন ?
মিমি আমার দিকে আচমকাই সরে এসেছিল । ঠোঁটের খুব কাছে নিজের ঠোঁট এনে বলল
-এত টেনশন ! অ্যাপ্লিকেশনে তোমার ছবি রয়েছে ডিয়ার । আমাদের চোখ খুব ভাল । দৃষ্টি এখনো ঝাপসা হয়নি । তুমি আমাদের এই প্রথম দেখবে । আমাদের কাছে তোমার ছবি আছে । সেই ছবির সাথে তোমার খুব একটা পার্থক্য নেই । খালি মাথার চুল এখন ছোট করে ছেঁটেছ । তুমিই বলছি ... আমাদের বয়সের পার্থক্য খুব বেশি নয়।
-না । মানে আমি তা বলিনি ।
আচমকা একটা অল্প বয়সী মেয়ের এমন ঘনিষ্ঠ আবেদনে , আমি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম কিছুটা । নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম
-তা ঠিক , আমারই ভুল হয়েছে ।
- এত নরম হলে তদারকির ভার নেবে কি করে !
-সে ঠিকাছে । প্রথম দিন । তাই এতো সমস্যা । আমি নাহলে...
দামী ফোন । মিমির অ্যানরয়েড বাজতেই সেই দিকে চোখ চলে গেল । সে ফোনে কথা বলছিল , আমার দিকে তাকিয়ে তার পিছু আসবার জন্য ইশারা করল।আমি মিমির পিছনে গেলাম ।
-হ্যাঁ ম্যাডাম । উনি এসেছেন । আমি নিয়ে আসছি ।
আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-অম্বিকা তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে । মারুতি বাইরে দাঁড়িয়ে আছে ।
স্টেশন থেকে কারখানায় পৌঁছাতে প্রায় ঘণ্টা খানেক । মফস্বল শহর , এখানকার মানুষ খুব অল্প দেখছি রাস্তায় । মনে হচ্ছে পৃথিবীর এক কোণে চলে এলাম ! আসলে মানুষের মনই সব । সেখানে যদি কেউ একা হয়ে পড়ে , তবে তাকে দোকা করতে কেউ পারেনা । আমার এখন তেমন অবস্থা !
কারখানায় বড় বড় কাঠকে কেটে সাইজ করা হয় । তারপর সেই কাঠ গুলো দরজা –জানলা ব্যবহারের জন্য তৈরি করে দূরে অর্ডার অনুযায়ী সাপ্লাই দেওয়া হয় । আমার কাজ আমি তখনো জানতাম না । এইটুকু শুনলাম , গাড়ি করে আসতে –আসতে মিমির মুখে ।
গাড়িটা একটা পাঁচিল ঘেরা বাড়ির এলাকার সামনে এসে দাঁড়াল । ভিতরে যেতেই দেখলাম অনেকটা জায়গা জুড়ে কারখানাটা । তার পাশেই লম্বা অফিস ।
আমাকে একটা শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে নিয়ে যাওয়া হল । ভিতরে দেখলাম , ছবিতে ভরা । সব কটা ছবিই নগ্ন পুরুষের , আর বাঁধানো । সেই সব ছবি দেখে আমার ভারী অদ্ভুত বলে মনে হচ্ছিল !
-অম্বিকা তুমি এখানেই বসতে পারো । আমি ভিতর থেকে ম্যামকে ডেকে আনছি ।
অফিসের ভিতরেও আরেকটা অফিস রয়েছে , মিমি সেখানে চলে গেল ।
কিছুক্ষণ বাদে একজন বছর পঁয়তাল্লিশের মহিলাকে নিয়ে ফিরে এল ।মহিলা টপ আর কেপ্রি পড়েছিল ।
-আমিই রিতা সিং । এই কোম্পানির ম্যানেজার ।
-নমস্কার ম্যাডাম ।
-আপনি অনেক দূর থেকে এসেছেন । রেস্ট নিন । পাশেই আপনার থাকবার ব্যবস্থা করা হয়েছে । ওটা স্টাফ কোয়াটার্স । আজ থাক । পরে কথা হবে ।
-ম্যাম , কাজ গুলো যদি কিছু বলে দেন ।
-দেখুন মূলত আপনাকে কোম্পানি , স্টাফ , আর কাস্টমার তিনজনকেই সামলাতে হবে । আর এই সংক্রান্ত যাবতীয় ট্রেনিং দেবে আপনাকে মিমি ।
সেই থেকে আজ এই তিন দিন হল । মিমি সাথেই ছিল । সমস্ত কিছু মানে স্টাফদের দিকটা , স্যালারির বিল দেখা , কোম্পানি ঘুরে দেখা , অর্ডার নেওয়া , পৌঁছে দেওয়া --- এই সব কিছু দেখে এই রাত দশটা হল ঘরে এসছি ।
হাতে গোয়েন্দার বইটা নিয়ে , বিছানায় শুয়ে মুখ রেখে তিন দিনের স্মৃতি ভাবছিলাম। এমন সময় আচমকাই দরজায় খট খট শব্দ ।
আমি দ্রুত দরজা খুললাম । বাইরে দেখি ধিরাজ দাঁড়িয়ে । তার মুখটা দেখে আমার মনে হল কিছু হয়েছে । চোখ দুটো আতঙ্কিত ।
-তুমি ? এখন ?
-সাব , আপনি নতুন । জানেন না । আপনাকে বলছি , আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন । আপনার ঘরে আলো জ্বলছে দেখে ।
আমি খেয়াল করিনি , ঘড়িতে এখন রাত একটা । আর হ্যাঁ সত্যিই টেবিল ল্যাম্প জ্বলছে । আমার মনে হল , জানলায় সেই আলোটা এমন ভাবে পড়েছে যে , নীচ থেকে দেখা যাচ্ছে । আমি বললাম
-ধিরাজ , আমি একটু বেশি রাত করে পড়াশোনা করি । কাল রবিবার , অফিস বন্ধ তাই ভাবলাম...
-সাব , আপনি দিনে পড়াশোনা করুন । এত রাত অব্দি ঠিক নয় ।
দেখলাম বৃদ্ধ ধিরাজ রাম আস্তে –আস্তে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে যাচ্ছে ।আমি দরজা বন্ধ করে , লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম ।
দুই
সকালে মোবাইলের অ্যালার্ম বেজে উঠতেই দেখলাম , বিছানার উপর মুখ উপুর করে শুয়ে আছি । আরেকটু খেয়াল হতেই দেখলাম , বারমুডা প্যান্টটা নেই ! মেঝেতে পড়ে আছে । কাল রাতে ঘুমে এতটাই বিভোর ছিলাম ! আমি ভাবছি , দিনের বেলা আজ চারপাশ একটু ঘুরব । মিমিকে ডেকে নেব । এই চারদিনে মেয়েটার সাথে বেশ আলাপ হয়ে গিয়েছে । মেয়েটার সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে , অনর্গল কথা বলে যায় । প্রথম দিন দেখে মনে হয়েছিল খুবই গায়ে পড়তে পারে , কয়েকদিন দেখলাম ; অনেকেই ওকে চায় , তারা মিমিকে ছুঁতে পারেনা । মিমি নিজে ধরা না দিলে , কেউ ওকে ধরতে পারবেনা । আমি এই ধরাধরির খেলার মধ্যে নেই । নিজেকে সরিয়ে রাখতে ভালোবাসি ।
এই উত্তরবঙ্গের মফঃস্বলে মিমি বর্মণ ছাড়া অন্য কেউ নেই , যাকে নিয়ে আমি ঘুরতে পারব । আমি মিমিকে ফোন করে আসতে বলব ।
যখন সকালের জলখাবার খেয়ে আমি মারুতিতে গিয়ে বসলাম , মিমি বলল
-কিছুটা দূরেই সরু নদী আছে । খুব পাতলা । মুরতি নদী । তোমাকে দেখাব ।
- স্রোত কেমন থাকে ?
-বর্ষার সময় জলে ভরে থাকে । এমনি সময়ে তুমি পায়ে হেঁটে এগোতে পারবে ।
গাড়ি চলতে শুরু করল । গাড়ি যতই তার স্পিড বাড়িয়েছে , হাওয়ায় মিমির চুল উড়ছে । সেই উড়তে থাকা চুল আমার নাক ছুঁয়ে যায় । এই ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা , সারা রাস্তায় খেলতে –খেলতে আমরা যখন পৌঁছালাম , দুপুর দেড়টা বেজেছে । গাড়িতে উঠেছিলাম এগারোটায় ।
আমি গাড়ি থেকে নেমে পাথর , নুড়ি ভরা নদীর চড়ে পা রাখলাম । মিমি তার টপটা আচমকাই খুলে দিল ! আমি দেখলাম মিমির ফর্সা বুক , স্তন -- পাতলা ইনারের ভিতর রয়েছে । আমাকে বলল
-ডিয়ার , এখানে এসে ওই গুটিয়ে থাকলে চলবে না । আমার সাথে মস্তি করতে হবে ।
আমি নিবেদিতাকে একবার মাত্র চুমু খেয়েছিলাম । তাও ওর ঠোঁটের ফাঁকে ঠোঁট ছুঁয়ে। আমাদের সম্পর্ক চার বছরের পুরানো ছিল , তাতেও ওকে খোলামেলা পাইনি ।
-আরে অম্বিক । এখানে লোক সংখ্যা খুব কম । আমার সাথে এসো । লজ্জা পাচ্ছ কেন?
মিমির সাথেই সেই প্রথম আমি নদীর পাতলা স্বচ্ছ জল হাতে নিয়েছিলাম । পা চুবিয়ে অনেকক্ষণ বসে থেকেছি আমরা । নদীর বুকে এক্তা আস্ত দিনকে ডুবে জেতে দেখলাম ।সূর্যের আলোয় নুড়ি গুলো আরও মসৃণ হয়ে উঠেছিল ।
দুপুরের খাবার , গাড়িতেই খেয়ে নিয়ে ছিলাম ।
সন্ধ্যা নেমেছে । মিমি বলল
-এইবার ফিরতে হবে ।
রাতের খাওয়া শেষ হতেই , আমি আমার ঘরে বিছানার উপর চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লাম ।
রাত হবে , দুটো ? হ্যাঁ , ঘরে লাইট বন্ধ করেছি । অস্পষ্ট আলোয় দেখলাম , পায়ের কাছে যে চেয়ার তাতে একজন লোক বসে আছে ।
আমি হুরমুরিয়ে উঠলাম । হাতের কাছে খুব কেঁপেই আলো জ্বালতেই দেখলাম সবটাই আমার চোখের ভুল । তাও কেন জানি আর আলো নিভিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়তে সাহস পেলাম না।
পরের দিন সকাল বেলা থেকেই মাথাটা ধরেছে । মিমি এসে বলল
-আজ একটু আগে তোমাকে আমি নিয়ে যাব ।
-কোথায় ?
-সে আছে একজায়গায় ।
-কিন্তু ফিরতে হবে যে , মানে কাজ শেষ হতে প্রায় সাতটা । তারপর কোথায় যাব ?
-আমাদের আরেকটা অফিস আছে । সেখানে গেস্ট হাউস আছে ।
-সেখানে কেন যাব ?
- রিতা ম্যাডাম আজ তোমার সাথে দেখা করতে চাইছেন ।
-কেন ?
- ভয় নেই । এই এখানে এসে থেকে তোমার সাথে দেখা হয়নি । তাই আজ একটু কথা বল নেবেন ।
আমি যখন গেস্ট হাউসের ওয়েটিং রুমে বসেছিলাম , দেখলাম রিতা এসেছে । আমাকে দেখে বলল
-এখানে কেমন লাগছে ?
-ভালোই ।
-কিছু অসুবিধা হচ্ছে না তো ?
-না ।
-তোমার কোন সমস্যা হলে মিমিকে জানিও ।
মিমি আমার দিকে তাকিয়ে , গভীর ভাবে হাসল । আমি সেই হাসির ভিতরে লুকিয়ে থাকা অর্থ বুঝতে পারলাম ।
রিতা বলল
-আমি এখন আসছি । বুঝলে ভীষণ টায়ার্ড ক্লাইন্টদের সাথে বকতে – বকতে । তোমাকে মিমি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসবে । গুড নাইট ।
রিতা গেস্ট হাউসে নিজের ঘরে চলে গেল । তিনতলা গেস্ট হাউসের একতলায় আমরা বসে । রিতা দ্বোতলায় চলে গেল ।
-এখানে বসে কী করবে । চলো আমার রুমটা দেখাবো ।
মিমির ঘরে যখন ঢুকলাম , দেখলাম দিঘার দামি ভাড়া করা রুমের মতনই সাজানো ও সবরকমের সুবিধা রয়েছে । সুইচ অন করে দিল । -তুমি বাড়িতে কবে যাও ?
-দু’ মাস পর পর ।
-কেন ?
-সব কেনর উত্তর হয়না ।
-কিন্তু উত্তর খুঁজতে পারা যায় তো ?
-না , সব উত্তর পাওয়া যায় না । তুমি কলকাতা ছেড়ে এখানে কেন ?
-চাকরির জন্য ।
-আমিও । বাড়িতে বাবা –মা আছে ।
-আর কেউ ?
আমার দিকে তাকিয়ে , মিমি বলল – জানতে চাইছ ?
-আমি শুনতে চাই ।
-আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল । ছেলের বাড়ির লোকেরা চায়না আমি বিয়ের পর জব করি । আমি মেনে নিতে চায়নি । বিয়েটা আমিই ভেঙেছি । অনেক বড় হতে চাই । চারবছর হল এই কোম্পানিতে চাকরি করছি ।
-তারপর ?
-একদিন , আমি জানিয়ে দিলাম বাড়িতে আমি এখন বিয়ে করব না । নতুন করে যেনও ছেলে না দেখে । বাড়ি গেলেই সেই এককথা ।
-তারপর ...
-আর বিয়ের চিন্তা করিনি ।
মিমি আর বেশি কথা না বলে আচমকাই আমার ঠোঁট কামড়ে ধরল । চুষছিল আমার ঠোঁটটা , আমি কিছুক্ষণ বাদে ওকে শুইয়ে দিলাম ।আমরা দু’জনেই বিছানায় বসেছিলাম । এখন মিমি নিজের হাতে টপ খুলল । আমি সেই মুহূর্তে আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না । ব্রা ‘ টা আঙ্গুল দিয়ে খুললাম । গলায় চুমু খেলাম । মাথার বাধা চুল ছড়িয়ে দিয়ে , ওকে উপুর করে শুইয়ে দিলাম । খুব একটা মিষ্টি হাল্কা গন্ধ নাকে আসছে । এই বডি স্প্রেটা আমার খুব ভালো লাগে । মিমির কাছাকাছি থাকলেই পাই ।
আমি আমার প্যান্ট আর জাঙ্গিয়া খুলে ফেললাম । ওকে লম্বালম্বি শুইয়ে দিলাম । আমার মুখের দিকে মুখ । আমি ওর ঠোঁটে ঠোঁট রেখে দিলাম । মিমি ওর নরম হাত দিয়ে আমার পুরুষাঙ্গটায় হাত বোলাচ্ছিল । ওকে খুব করে চুমু খাচ্ছি । এসি চললেও আমাদের শ্রিরে ঘাম । মিমি নিজকে আর ধরে রাখতে পারল না।
-প্লিজ অম্বি , কিল মি । আমাকে মারো ...
-তুমি খুব সুন্দর ।
-আমি আর পাঁচজনের মতন নই । আমি আমার মতন । আমি খুব হতাশ ।
-কেন ?
-টাকা টাকা টাকা । আমিও সেক্স চাই । প্যাশান চাই । ভালবাসা চাই ।
-শুধু নিজেকে সম্পর্কে জড়াতে চাও না ।
-ভুল বললে , আমি সম্পর্কে জড়ালেও তার জন্য সামাজিক সমর্থন চাইনা...
আমি বুঝতে পারলাম না । সময়টা এমন ভাবে কেটে যাবে । এই প্রথম কোন নারীর নগ্নতা আমাকে মুগ্ধ করল ! মিমির দুটো ফর্সা স্তন , লালচে আভা মাখা স্তন বৃন্ত , নাভি , দুটো জঙ্ঘা , গহ্বর , সব কিছুই আজ এই সময়ে সত্যি ! এই সব সিনেমা নয় । কাব্য নয় , প্রবন্ধ নয় । এই সব কিছুই উপভোগ করা যায় ।
-আঃ ...
এই আর্তনাদ মিমির । পাথরের বুকে আঘাত করলে যেমন প্রত্যুত্তর প্রকাশিত হয় , মিমির বাঘিনীর মতন নখ আমার ডান আর বাঁ কাঁধে দাগ করে দিয়েছে !
আমরা দুজনেই নগ্ন । আমরা দু’জনেই ঘেমেছি । আমরা দু’জনেই এখন অভিজ্ঞ ।
ওর দু’গালে উপর জিভ রেখেছি , আসতে –আসতে চাটছিলাম । মিমির মাখনের মতন স্তন দুটো মুখে নিলাম । মেয়েটা আমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে । খুব ভালো লাগছে । ভিতরের চাহিদাটা আরও বাড়ছিল ।
আমি ক্রমশ এক নেশায় ডুবে যাচ্ছিলাম ! সব কিছু শেষ হওয়ার পর , দু’জনেই পাশাপাশি শুয়ে আছি ।
আচমকাই দেখলাম উল্টোদিকে সেই ছায়াটা !
-মিমি , ওঠো রাত এগারোটা বেজেছে ।
মিমি নিজেই অর্ডার দিয়েছিল । সেক্সের একটা ধকল থাকে । যতটা শরীরের , তার চেয়েও বেশি মনের । অর্ডার দেওয়া জিরা রাইসের প্যাকেটটা শেষ হয়নি । মিমিও খুব অল্প খাবার খাচ্ছে । কথাও বলল না ।
গাড়িটা এসে যখন আমার আবাসনের সামনে যে ছোট্ট মাঠ আছে , সেখানেই থামল , চারপাশে রাতের নিঃশ্বাসের শব্দ অব্দি পাওয়া যাচ্ছিল । ড্রাইভারকে ছুটি দিয়ে দিয়েছে । মিমি একাই ড্রাইভ করছিল । এই সব জায়গায় খুব দ্রুত রাত নামে । মিমি বলল
-অম্বিকা , গুড নাইট ।
-তুমিও ।
মেয়েটা হাসতে –হাসতে চলে গেল । আমি ভাবছিলাম – শেষ পর্যন্ত একটা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লাম ! ভালই হল , পৃথিবীতে কোন মানুষই একা থাকতে চায়না । আমিও বা কেন চাইব ? নিবেদিতা নিজের জীবনের সুখের জন্য আমায় ছেড়ে পালিয়েছে । ওর পালিয়ে যাওয়ার জন্য আমি দায়ি নই । আমি ভদ্র চাকরির খোঁজ করেছিলাম । পেলাম না ।
রাতে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না । দরজা খুলে ঢুকলাম । জানিনা আমার মনে হল , মিমির ঘরে আমরা যখন শরীরী খেলায় মত্ত ছিলাম , আমাদের দু’জন বাদ দিয়েও তৃতীয় কেউ ছিল ! কিন্তু কে ?
তিন
সকালবেলা প্রচণ্ড দরজার ধাক্কার আওয়াজে ঘুম ভাঙতেই দেখি , ঘড়িতে নটা । কর্মীআবাসন লাগোয়া অফিস , দশটার মধ্যেই ঢুকে যেতে হয় । আমি দরজা খুলে দেখলাম ধিরজ চা নিয়ে দাঁড়িয়ে ।
-সাব , আপনার আজ অনেক দেরী হয়ে গেল !
-হ্যাঁ , আটটার মধ্যে উঠে যাই । আজ একটু বেশীক্ষণ ঘুমালাম ।
-আপনার জলখাবার তৈরি ।
-আচ্ছা ধিরজ , আমি এসে তোমাদের বড় বাবুকে দেখিনি । মানে মালিক । রিতা ম্যাডাম কত বছর ধরে কাজ করছে ?
-সাব , উনিইতো মালিকের অবর্তমানে সব কিছুর দায়িত্বে থাকেন । মালিক খুব একটা আসেন না ।
-তারমানে রিতাই সব ?আর কেউ ?
-দুটো দারোয়ান , আমি , মিমি দিদি আর এখন আপনি ।
-তাহলে এই যে কোয়াটারের পিছনে দেখলাম তিনতলা হয়ে বিল্ডিংটা অর্ধেক অবস্থায় পড়ে আছে ! এটার ব্যপারটা ...
-সাব , এখানে ট্যুরিস্ট লজ হওয়ার কথা ছিল । কিন্তু হয়নি ।
-কেন ?
-সাব আপনি এই কেনর উত্তর নিজেই পাবেন ।
আর কিছু বলবার আগেই ড্রাইভার চলে এল । ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে । পর্দা সরিয়ে মাথা ঢুকিয়ে বলল
-মিমি দিদি পাঠিয়েছে ।
-কেন ?
-আপনাকে নিয়ে আজ একটু লেবারদের সাথে মিটিং করতে হবে ।
-কেন ?
-তাইতো বলল দিদি ।
আমি স্নান করে সকালের খাওয়া খেয়ে নিয়েছি । গাড়িতে উঠে বসলাম ।
চার
রাতে শুয়ে –শুয়ে ভাবছিলাম , আজ মিমিকে বলে দিলে ভাল হত । অবশ্য বলবার কিছু নেই । মিমি ভীষণ আত্মনির্ভর । আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি । আমার মনে হয়না মিমি কোন সম্পর্কে জড়াতে চাইবে ।
রাত কটা বাজে । আমি বুঝতে পারলাম না। ঘরে আলো নেই । জানলা খোলা । বাইরের চুইয়ে পড়া আলোয় , ঘরের ভিতর দেখা যাচ্ছে ।
আচমকা টের পাচ্ছি একটা ঠাণ্ডা স্রোত আমার পা থেকে কোমর পর্যন্ত বয়ে যাচ্ছে! আমি নিথর হয়ে আছি , কিছু করতে পারছি না । নিজের চোখে যা দেখলাম , তা বিশ্বাস করতে পারলাম না । আমার প্যান্ট নিজে থেকেই খুলে নিল , কেউ যেন খুলছে আমি বুঝতে পারছি ! আমি চেষ্টা করেও নিজেকে রুখতে পারলাম না ।
আমি স্পষ্ট দেখলাম , সেই কালো ছায়া , যাকে দেখেছিলাম সেই ছায়া আমার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে ! আমি বুঝতে পারলাম , আমার চিৎকার করবার মতনও কোন ক্ষমতা নেই । সে চেষ্টা করেও লাভ নেই ।
কতক্ষণ এই অবস্থা চলেছিল জানিনা । ভোরের আলো মুখে আসতেই হুঁশ ফিরল । আমি কোন রকমে বিছানা থেকে নেমে পড়লাম ।
পাঁচ
-ধিরজ তুমি আমায় বলবে আসল রহস্যটা ।
আমি ধিরজকে আমার ঘরে ডেকেছি । আগের রাতের ঘটনাটা বললাম । ও প্রথমে চুপ করে ছিল । আমি চেপে ধরতেই হাউ –মাউ করে বলতে শুরু করল
-সাব , এই জমিতে একটা খুনি ইতিহাস আছে ।মালিকের এক কুকীর্তি চাপা পড়ে আছে ।
-কেমন ?
-আজ থেকে তিরিশ বছর আগে , সেই দিন গুলো আমার চোখে ভাসছে । আমি তখন সবে মাত্র এইখানে এসেছি কাজের লোক হিসেবে । প্রথম দিন থেকেই বিকি দাদাকে ভাল লেগে গেল ! আমি ছোট জাতের বা কাজ ছোট করি বলে দূরে সরিয়ে রাখল না। তার বয়স তখন তিরিশ । আমার ছাব্বিশ । আমদের ভালোবাসা খুব অল্প দিনের মধ্যেই শুরু হয়ে গেল । দুই পুরুষের প্রেম যা দিনানাথ গুপ্তার মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠল । সে শিল্পপতি । সামাজিক সম্মান আছে । তাছাড়া নিজের সন্তান এমন এক প্রেম করছে , যে প্রেম সমাজ সমর্থন করে না । আমরা একদিন ...
-বলও ।
-দরজা খোলাই ছিল । আমরা ঘরের ভিতর বিছানার উপর করছিলাম । প্রতিদিনই দুপুরের এই সময়টাতে আমরা এইসব করতাম । বাড়ি ফাঁকা থাকত । কেউ জানত না । সেইদিন গুপ্তা অফিস থেকে বাড়িতে কিছু কাজে চলে আসে। আমাদের ওই অবস্থায় দেখে ফেলে । রাগ সামলাতে না পেরে সিঁড়ির কাছে , ঘরের সামনে হেলানে রাখা লোহার রড দিয়ে মাথায় মারল বিকির । এই চোখেই দেখলাম , আমার ভালোবাসা মাটিতে পড়ে লোটাচ্ছে !! চোটটা আমার লাগত । বিছানা থেকে দুজনেই নেমে ছিলাম । হাতে রড নিয়ে গুপ্তা আমাকে মারবে বলেই চালিয়ে ছিল । বিকি নিজেই আমাদের মাঝে চলে আসে !
কিছুক্ষণ চুপ ।
-সাব , তারপর বিকির দেহটাকে পিছনে পুঁতে দেওয়া হল ! আমায় বলা হল এই রহস্য যেন চেপে যাই । নাহলে খুন করা হবে । আর মালিক ঠিক করল পিছনের ওই জায়গায় , যেখানে লাশ পোঁতা আছে তার উপর বিল্ডিং তৈরি হবে । এরপর একমাসের পর থেকেই প্রতি রাতে লেবারদের সাথে একই ঘটনা ঘটতে শুরু করে । একে –একে সবাই পালায় । আপনার আগেও অনেকে এসেছে কিন্তু কেউ থাকতে পারেনি । আপনিও পারবেন না। প্রতি রাতে আপনাকে বিকি শান্তিতে ঘুমোতে দেবেনা । আমি ওকে ভালোবাসি , তাই এখানে থেকে গেলাম । গুপ্তাকে ভয় পাই । জানি পুলিশ ওর হাতের পুতুল । জানেন গুপ্তা এখানে আসেনি । বিকিকে খুন করবার পর এইখানে আসেনা । হয়ত ভয়ে । পাছে তার পাপ তাকে তাড়া করে !
-আমি তোমাদের কারখানার গেস্টহাউসেও বিকির উপস্থিতি টের পেয়েছি ।
-এখানে সে আছে । কিন্তু গেস্ট হাউসে কেন , বলতে পারব না ।
-হতেও পারে আমার , চোখের ভুল বা মনের ।
আমি ভাবছিলাম , এখানে থাকব না পালিয়ে যাব ? বিকির আত্মার মুক্তি না ঘটলে , এই স্থান অভিশপ্তই থেকে যাবে । বাইরে তখন রোদ নিজের ঘনত্ব বাড়িয়েছে । ঘড়িতে বেলা সাড়ে বারোটা । আজ আর অফিসে গিয়ে বসব না ।
মিমিকে ফোন করতে হবে …
No comments:
Post a Comment