এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

অতনু গঙ্গোপাধ্যায়

বিভাগ : গল্প (ছোট গল্প)



গোপনখেলা


বিছানা থেকে পা টিপে টিপে নামল অদ্রিজা ওর ঘরের দরজাটা ভেজানোই ছিল
নির্ভূল হাতড়ে পড়ার টেবিলের ড্রয়ার খুলে বের করল দেশলাই আর মোমবাতি।
টেবিলে সাজানো মোমবাতিগুলি জ্বলে উঠার সাথে সাথে অন্ধকারের কালো কালো ছায়াগুলি অদ্রিজা হাত ছুঁড়ে পালিয়ে গেল
চার দেওয়ালে আলোর ছোট ছোট বলের খেলা অপলক মুখখানি মুগ্ধ হয়ে শুধু দেখছিল  মুখখানি আরো কাছে নামিয়ে নিয়ে এল 
সার সার জ্বলে থাকা মোমবাতির সলতে ঘিরে নীল,আকাশি আর হাল্কা সবুজ রংযের দিকে তাকিয়ে তার মনে পড়ে  বাবা পিছন ফিরে চলে যাচ্ছে বনপথ দিয়ে,
প্রিয় আকাশী রঙয়ের টি-শার্ট ।
অদ্রিজা চোখ বুজে দেখতে পায় যেটা পড়লেই বাবাকে মনে হতো এক বিশাল পাহাড়কে ডেকে ফেলেছে নীল  আকাশ 
আলোর সবুজ দানাগুলি এক একটা গাছের হাত হয়ে বাবাকে নিয়ে যাচ্ছে দূরে দূরে  আবার সবুজ হারিয়ে মেলছে আবার লাল রংএর দানাগুলি । অদ্রিজার চোখের কর্নিয়ার চারপাশ জুড়ে খেলে চলেছিল আর কালো কোকড়ানো  চুলের প্রান্তগুলি হয়ে যাচ্ছিল লালাভ  অদ্রিজার মনে হচ্ছে ও লাল কনিকাগুলি ওকে নিয়ে আচ্ছে সোলার ওয়েভের কাছাকাছি।
ও পুড়তে চাইছে ওই লোহিত সাগরে 
হিমেল লাল লাল দানাগুলি মোমবাতির আগুন  ছুঁড়ে ছুঁড়ে দিচ্ছে আর  রক্তের হিমোগ্লোবিনের মধ্যে  ওর দৌড় শুরু হয়ে গিয়েছে 
অদ্রিজার মনে পড়ে গেল মামাবাড়ির কালীপূজার রাত
মাঝরাতের আকাশের কালিমা মুছে নিচ্ছে শুকতারা  হিমে ভিজে যাচ্ছে মাথা 
ঢাক-কাঁসর ছাপিয়ে আর্তচিতকার থেমে গেল আর ছপাত করে এক ঝলক রক্ত ছিটকে এলো অদ্রিজার স্কার্টে । ভয় পেয়ে অদ্রিজা বাবার দু-পায়ের ফাঁকে মুখ গুজে দিয়েছিল।
মুখটা একটু তুলে সলতেগুলির পোড়া শরীর পেরিয়ে চোখ রাখলো যেখানে লাল মিশে গিয়েছে কমলায় 
মাঝরাতের এই প্রিয় খেলা শুরু হয়েছিল যখন ঠাকুমা মারা যাওয়ার কিছুদিন পরে।
দেশলাই কাঠি জ্বালিয়ে ঘরময় পোড়া কাঠি ছড়িয়ে রাখত । ছেলে নেই  ঠাকুমার মুখাগ্নি করেছে  একমাত্র নাতনী। 
এখন কমলা রং আরো উঁচুতে উঠে মিশে যাচ্ছে হলুদ হয়ে আবার ছড়িয়ে পড়ছে ঘরে,অদ্রিজার মনে হোলো ও যেন দাঁড়িয়ে আছে সরষে ক্ষেতের মাঝে এক পুকুরের কাছে  
হলুদ আলোর ঢেউ,হাল্কা হলুদ কনে দেখা আলোয়  মা চলে যাচ্ছে বিকাশকাকুর হাত ধরে পুকুরে হলুদ রঙ ঠোটের হাঁসেরা এক অদৃশ্য বৃত্ত এঁকে ঘুরে চলেছে   আর হলুদ ঝোপের থেকে লাফিয়ে পড়ছে সোনা রঙয়ের ব্যাঙ । এতো  হলুদ আলো ডুবে যাওয়া অদ্রিজাকে ক্রমশ  ক্লান্ত করে তুলছিল। মুখটা হলুদ আলোর আরোও একটু উপরে ডানা মেলে ধরতেই বুঝতে পারলো ধূষর ধোঁয়া একটু একটু করে কখন ঢেকে ফেলেছে  আকাশ 
হলুদ আলোর মাঠ পেরিয়ে অদ্রিজা দৌড়ে যাচ্ছে  ঢেকে দেওয়া কালো মেঘের ছাতার তলায়  টুপ টুপ করে আকাশ ভাঙ্গা জলে ভেসে যাচ্ছিল চারপাশ ।
অদ্রিজা সেই বৃষ্টির মধ্যে মোমবাতিগুলি টেবিলে দু-পাশে সাজালো 
কালো পিচ ঢালা রাজপথের দু-পাশে আলোর সারি নেচে উঠছে অল্প বাতাসে । মধ্যরাতে শুনশান পড়ে আছে কারো প্রতিক্ষায়  অপেক্ষার ক্লান্তিতে যখন ভোরের পাখিটা জানালার ধারে প্রথম ডেকে ওঠায় অদ্রিজা তার গোপন খেলার শেষে সরে আসতে চাইছিল একটি একটি করে মোমবাতি নিভিয়ে ।
সাদা ধোঁয়া একটি আর একটির সঙ্গে  মিশে পরিসর বাড়িয়ে দিচ্ছে  ছায়াপথের বিস্তার ।


অতনু গংগোপাধ্যায়

পেশা - চাকুরী

নেশা - কবিতা পড়া ও লেখা, ভাবা। কবিতা লিখছি অনেকদিন ধরে।মাঝে মাঝে ছোট গল্প লেখা।

বই বেরিয়েছে - জলস্তম্ভ ভেংগে।





No comments:

Post a Comment