এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

শ‍্যামাপদ মালাকার


বিভাগ : গল্প (ছোট গল্প)


দিদি

প্রায় বছর দুই আগের ঘটনা-
ফেসবুকে পরিচিত এক দিদির,--মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে উনার গ্রামে যখন
পৌছিলাম,-- তখনও সকাল হতে কয়েক দণ্ড বাকি।

দিনটা ছিল,-মধ্যবসন্তের কোন একটা সকাল।
ঈষৎ শিশিরসিক্ত পুষ্পিত শাখের কণায় তখন জীবিত ছিল সঙ্গীতপ্রিয় বিহঙ্গীর
মার্জিত কণ্ঠের প্রবাহ।

জীবিত ছিল নিদ্রিতা জননীবক্ষে ভোরেজাগা পূর্ণ দামালের মুক্ত দৌরাত্ম্যের
নিবিড় গন্ধ।
সবেমাত্র সকাল। তবু এখনও জেগে আছে,-মরা তটিনীর খরা বিজন তটে, ঘন পলাশের
ছায়ায়,--রাখাল-রাখলীর নিঃস্বার্থ আনাগোনা।
সবেমাত্র সকাল।
সকল গ্রামবাসী এখন জাগে নাই,-কারণ, কর্মক্ষেত্রে বেরোবার সময় সকলের হাতে
যথেষ্ঠ পরিমানে রয়েছে, তাই সংবাদটা,-- প্রভাতবাহী সমীর- সিদা গ্রামের
প্রতি দ্বারে রেখে কতটুকু ক্রিয়া করবে তা বুঝে উঠতে পারছিনা।

তবে আজ আর কোন আশঙ্কা নেই। শ্বেতবসনপরিধানা তুলসী প্রাঙ্গণে শায়িতা ঐ
হতভাগীর আজ আর কোন লজ্জা নেই ভেবেই,--সব সমালোচনা ও বিবিধ
নিন্দানিঃসৃতকণ্ঠের কৈফিয়ৎ দিতে দিতে পুড়ে যাচ্ছিল,-অভিমানিনীর শিয়রে
কয়েক'টি ধূপের কাঠি।
আজ মনে পড়ছে,-তার নির্ম্মল-শুভ্র বসন ভেদ করে এক জ্যোর্তিময়ী আভা
চারিদিকে যেন আলো করে রেখেছিল। সেই মহিমাময় দীপ্তি যার উপর পড়ছিল, সেই
যেন বিকশিত হয়ে উঠছিল, একটি বারও মনে হয়নি সেদিন,-"সে মৃতা।"

ইতিমধ্যে এই ছোটো জীবনে অনেক পথ হেঁটে ফেলেছি। কিন্তু আজও দিদির মতো আর
একটিও সুন্দরী ও আমি দেখতে পাইনি।
সে আজ প্রভাতের আগেই সকল মানুষের সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে চির-শান্তির ঘুমে নিমগ্ন।
আজ আর কাউকে ডেকে মিমাংসা করতে হবে না। নিষ্পত্তির মণ্ডপে করলগ্ন কপালে
বিচারকদের আর বসে থাকতে হবে না,-- আর কোনো মানুষের মাথা হেঁট হবে না,--
কি শান্তি -- কি প্রশান্তি -- আজ কি আনন্দের দিন।

"হায় রে হতভাগী,--যদি জানতাম ঐ মরণে সকল পল্লী নিঃসাড়- নির্বাক হবে, তবে
প্রাণনাথকে ভালবেসে শুধু ঐ মরণেরই বাসনা রাখতাম।"
পোড়ামুখি একবার চেয়ে দেখ!--তোর চির-সীমাহীন শয্যার শিয়রে সকল গ্রামবাসী
এসে দাঁড়িয়েছে,--যেন অনাদি - অনন্ত- স্তব্ধতায় তারা বিভোর!।
শুধু একটু প্রণয়ের জন্য,--যে সমাজ পতিরা একদিন দিদিকে অসতী বলে সমস্ত
শাসনের খাঁড়া মাথার উপর ঘোরাত,--আজ তারাই খোল-করতাল নিয়ে বিরাট হরিধ্বনির
সাথে "দিদি"কে কাঁধে তুলে নিল।।





No comments:

Post a Comment