এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

শাল‍্যদানী


বিষয় : প্রবন্ধ


*বিন্দু তে সিন্ধু (প্রথম পর্ব)*


কোনো ধর্মতত্ত্ব নয় উপলব্ধি থেকে বলছি,

ভোরবেলা আজানের সময় আমি খেয়াল করে দেখেছি কিছু শব্দকে নিয়ে ছন্দের খেলা দিয়ে শুরু করে হিন্দু চন্ডীপাঠে সেই শব্দ গুলো রূপ নিতে শুরু করে আর ছন্দকে ভাঙা শুরু করে।
তা আবার বাইবেলের প্রার্থনায় ব্যাখ্যা আনে পরিপূর্ণ গল্পে।। সেই গল্পকে পুনরায় বিন্দু নাদে ফিরিয়ে দিচ্ছে তান্ত্রিকের বীজ মন্ত্র। 
পরের ভোরের আজানের অপেক্ষায়...

সবটাই কি সাজানো আর অপুর্ব মার্জিনাল..

আমরা অনেকে ছন্দ নিয়ে লেখাকে মানতে চাই না

আসলে ছন্দ নিয়ে কাজ কঠিন
নিজে পারিনা বলে কি তাকে ত্যাগের বুদ্ধি দিচ্ছি।।

একই কথা বলবো এক্সপেরিমেন্ট এর ক্ষেত্রেও।।

আমি এক্সপেরিমেন্ট কে কবিতার একটা বিভাগ ভাবি।।

তবে শুধু এক্সপেরিমেন্ট কবিতা বাকী সব বকবাস এসব মানি না।।

আমার দেশে নতুন শব্দ জন্ম নিতেই পারে, কিন্তু শব্দ ছন্দ পুরোনো বা ত্যাজ্য হয় না।।

কবিতায় চিহ্ন ব্যবহারে আপত্তি নেই। কিন্তু কিছু প্রশ্ন অবশ্যই আছে।।

বাংলা শব্দ ভাণ্ডার অবশ্যই পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধ ভাণ্ডার,  তাহলে আমাদের মধ্যে এমন অনুভুতি এত বেশী আর অন্যরকম যে তা বাংলা শব্দ ভাণ্ডারকে ছোট করে দিচ্ছে?

তার মানে কবি সরল থাকছেন না, সহজিয়া থাকছেন না।

জটিল বস্তুপিণ্ডতে পরিণত হচ্ছেন। যার মধ্যে শুধু চিহ্ন কিলবিল করে
শব্দহরিনী সঞ্চার করে না?

ওঁ স্বস্তিন ইন্দ্রো বৃদ্ধশ্রবাঃ স্বস্তিনঃ পূষা বিশ্ববেদাঃ।  স্বন্তিনস্তার্ক্ষো অরিষ্টনেমিঃ স্বস্তিনোবৃহস্পতির্দ ধাতু।  ওঁ স্বস্তিনো বৃহস্পতি দধাতু।। 
যজু – ২১/৬-৭।। ১৭/৬৯।।২০/৫০।। সা -১৯৭৫

বঙ্গানুবাদ: হে প্রকাশ স্বরূপ (ইন্দ্র:) ইন্দ্র পরমাত্মন! (বৃদ্ধশ্রবা:) জ্ঞানের আদি মূতত্ত্ববেত্তা। আপনি আমাদের (স্বস্তি) সর্বদা কল্যাণযুক্ত পথে নিয়ে চলুন। আপনি (বিশ্ববেদা) জড় চেতন ব্রহ্মাণ্ডের (ন:পূষা) রক্ষক আমাদেরকে সমস্ত দিক থেকে (স্বস্তি) কল্যাণযুক্ত করুণ। (স্বস্তি ন:) আমাদের কল্যাণের জন্য (তার্ক্ষ্য অরিষ্টনেমি:) শীঘ্র গতি যুক্ত অশ্বের সম গন্তব্যের শেষ প্রান্তে গিয়ে প্রাপ্ত করিতে পারি। হে (বৃহস্পতি) বেদজ্ঞানের স্বামী (ন:) আমাদেরকে সমস্ত প্রকারের মূল তত্ত্বজ্ঞান (স্বস্তি) কল্যাণের জন্য (দধাতু) প্রদান করুন। (স্বস্তি ন: বৃহস্পতি দধাতু) এই কল্যাণযুক্ত প্রার্থণা আমরা সকলে বার বার করিতেছে। আমাদের কামনা পূর্ণ হোক।

ব্যাখ্যা নয়, বঙ্গানুবাদ আনলাম মাত্র।

(শব্দ-নাদ-শব্দ) ছন্দিত ইংগিত = বেদের ভাষ্য।      

(নাদ=গুপ্ত)

ওই যুগে ওই বিষয়টা স্বাভাবিক।

আমি বেদের সময় কালে সমসাময়িক আর কোনো সাহিত্য নিদর্শন পাই না যে বেদকে সরল বা জটিল বলবো। কার সাথে তুলনা করে এগুলো বলবো?

আমরা নিজেদের বুদ্ধি দিয়ে বেদকে কেউ সরল, কেউ জটিল/বক্র ভাবি।

কিছুদিন আগে এক নবীনা কবিকে দেখেছি সখীত্ব শব্দ ব্যবহার করেছেন।

চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি সখীতত্ত্ব (পরকীয়া বাদ) সম্পর্কে কোনো নলেজ তার নেই।

কেন এটা?
সময়ের ডাক বলে নিজে নিজের মত যেকোনো তত্ত্ব দাঁড় করিয়ে বলবো এটা সময়ের জন্য?
কোনো পড়াশুনা থাকবে না?

নতুন শব্দ আসুক আপত্তি কোথায়
তাই বলে পুরোনো শব্দ বাদ মানতে পারলাম না

*বসিয়া বিরলে*
*থাকয়ে একলে*
*না শোনে কাহারো কথা*

পুরোণো শব্দগুলিকে বাদ দিয়ে একই ফ্লেভার আনুক কেউ।

ওপেন চ্যালেঞ্জ।।

বিনয় মজুমদারের সংকেত নিয়েছে অনেকে বিনয় মজুমদারকে বাদ দিয়ে।।

"বুকের দুধ না খাইয়ে শুধু ছোলার ছাতু খাওয়ালে কি ছেলে বাঁচে?" - রবি ঠাকুর


মহারাস।
গোপবালাগণ রাসমঞ্চে উঠেছেন। মাঝে রাসেশ্বরী বিনোদিনী এবং রাসবিহারী কৃষ্ণ। যুগলকে মাঝখানে রেখে ঘুরছেন গোপীগন। একবার ডান দিক থেকে বামদিকে আবার বামদিক থেকে ডান দিকে ঘুরছে রাসচক্র। এক কৃষ্ণ বহু কৃষ্ণ হয়ে প্রতি গোপীকে আলাদা আলাদা করে সঙ্গ দিচ্ছেন।

শব্দলেখাও এভাবে বিস্তার করে শব্দকে। শব্দই নাদ, আদি এক পিণ্ড ছন্দ। রাসমঞ্চ সেই মহাশূন্যের ভাবমঞ্চ, গোপবালাগন এক একটি শব্দ হয়ে বিস্তার লাভ করেছে। মাঝখানে আদি বিন্দুনাদ রূপে কৃষ্ণ এবং তার অস্তিত্ব প্রমাণরূপে রাধা।
রাধা→ধারা 
কৃষ্ণ অস্তিত্ব দানের নিরন্তন ধারা। সেই প্রথম প্রকাশ রূপে অস্তিত্ব আকারে শব্দরূপ রাধা। সেই আদি নাদ আর শব্দরূপকে ঘিরে আছে গোপীগন, মানে টুকরো অনুভূতিরা। তাদের প্রত্যেকের সাথেও কৃষ্ণরূপ আদি নাদ আছে। বাম দিক থেকে ডানদিকে ঘুরছে কবিতা ঝরছে। তার নাম এক্সপেরিমেন্ট,  এগিয়ে ভাবে। ডান থেকে বামদিকে ঘুরছে, আবার কবিতা ঝড়ছে। সেও কবিতা তবে সংকেত চিহ্নবিহীন। চিহ্নিত কবিতা নয়।

বেদে বলা হয়েছে একই রূপ:

ওঁ স্বস্তি পন্থামনুচরেম সূর্য়্যা চন্দ্রমসাবিব  । পুনর্দদতাঘ্নতা জানতা সংগমে মহি।।ঋ ৫/৫১/১৫

বঙ্গানুবাদ: হে কল্যাণময় প্রভু পরমাত্মন! – আমরা আপনার কাছে এই প্রার্থনা করি (সূর্য্য-চন্দ্রসমৌ-ইব) যেভাবে সূর্য এবং চন্দ্রমা পরাস্পর এক অন্যের সাথে মিলিয়ে চলে এবং সৃষ্টির নির্মাণ ধারণ পালন পোষণাদি করে, আমরাও যেন এভাবে আশ্রম ব্যবস্থার মধ্যে থাকিয়া পরাস্পর সম্মিলিতভাবে উন্নতির (পন্থম্‌) পথকে অবলম্বন করিতে পারি এবং (পুন:) বার বার (সংগমেমহি) প্রত্যেক সংগঠনযুক্ত কাজে থাকিয়া (দদতা-জানতা-অঘ্নতা) দেওয়া নেওয়া আদি শুভকার্য্য করিয়া আজীবন (শ্‌ম) কল্যাণযুক্ত হইয়া থাকিতে পারি।

একই সুর। রূপে রসে রূপান্তরে কবিতা যাপন।।
চিহ্ন প্রয়োজনে হাঁতিয়ার হোক, একান্তকাম্য কখনই নয়।।

চর্যাপদ-৪২
কানু

শূন্যে পূর্ণ চিত্ত সহজে,
কাঁধ ভেঙে গেলে দুঃখ নেই;
কানু ম’রে গেছে, তোমরা কহ যে–
সে আছে ত্রিলোকে সবখানেই।
দৃশ্যলোপে যে বুক-দুরুদুরু,
ঢেউ কি কখনও শোষে সাগর?
দেখে না চক্ষু-বিহীন মূঢ়
দুধে-মিশে-থাকা দুধের সর।
আসে না যায় না কেউ এ-ঠাঁই,
এই বুঝে কানু আছে তোফাই।

একই একই।। নতুন আবিস্কার করেছি না বলে বিন্দুতে সিন্ধুতরঙ্গ মানাই বুদ্ধিমানের কাজ।

বিপুল তরঙ্গ রে...

এতক্ষণ যা বললাম তাতে নতুন কি? কিচ্ছু না। নতুন বলতেতো আসিনি। কাব্য ছেড়ে গদ্যে এসেছি কবিতা কে দেখাবো বলে। কবিতা এটা মেয়ের নাম হতে পারে। আমার লেখা কবিতায়:

*কবিতা ৩*

সময়ের খাপে তলোয়ার বন্দী করেছি।
এসো জনমে মরনে হাসির প্রহরিণী
মেনেছি ক্ষতি।  এগিয়ে ভাবি আলোর দিশা
জলকন্যা এসেছে কলমে
গুঞ্জরনে।।

নার্গিস পাতায় আলতা হাতের ছাপ
প্রমাণ। সংহার। ক্লান্তি। কবর
ঘুমিয়ে পরে কবিতার বিছানায়
তুমি কাঁদলে এ শহর থমকে দাঁড়ায়
অক্ষক্রীড়া ছেড়ে।

আলাপী ঠোঁটেঠোঁটে পিছন নেয় 
অলিগলি সিংহবাড়ি
অনেককাল শব্দিত এস্রাজের সুরে
ভেসে ওঠে শিশু কবিতা।

কবিতায় শব্দরা কাজল হয়ে যায়
তোমার চোখে আঁকবে বলে

এটাই বক্তব্য। কলমে রসের উতস্রোত না হলে তা গদ্য, তা সে যতই সাজিয়ে গুছিয়ে হোক বা চিহ্নভেদ হোক। ইমোশাম চাই গুরু, ফিলিংস চাই। কবিবাবু বলছেন আমার কবিতা বুঝতে উত্তম আবাদি ব্রেন চাই। আমার মত কিছু অতি উৎসুক বাচাল কিছু না বুঝেই বাঃ বাঃ করে উঠলাম। কেন করলাম? ক বাবুর কথা অনুযায়ী উত্তম সার মিশ্রিত জমির বিজ্ঞাপন দিতে? কেউ কেউ বলে বসলেন অন্যপ্রকার জীব না হলে কবিতা হয় না। কি আনন্দ।
spontaneous overflow of feelings   এ তত্ত্ব নিপাত যাক। আহা ভাবনার কি ছিরি!
ভাই কবিতা লেখা একজিনিষ, আর সেই লেখা প্রকাশ আর একজিনিষ। কবি কবিতা প্রকাশ করেন কেন? একটাই উত্তর পাঠকের জন্য।। নিজের জন্য লিখি বলে ধানাইপানাই না করে সত্যি বলাই ভালো। নিজের জন্য লিখলে নিজের ডাইরিতেই রাখুন না।

এবার আসি অন্য একটা কথায়। এখন ২০১৭ সাল। বেসিক্যালি মানুষ ব্যস্ত ভীষণ। সেই সকালে উঠে দৌড়ানো শুরু। বউয়ের মুখঝামটা, বরের তাড়াহুড়ো, বাচ্চার পড়াশুনা, কাজের জায়গায় সহস্র জটিলতা। টেনশন। দিনের শেষে বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে এককাপ চা নিয়ে গরম চপে কামড়। সাথে কবিতার বই অথবা ল্যাপটপে ই-বুক বা ব্লগজিন। সামনে এলো এমন এক কবিতা যেন গোলকধাঁধা। সারাদিনের এত জটিলতার পর পাঠক আদেও বেছে নেবেন সেই নতুন জোটিলতাকে? কবি সারাদিন ধরে গুছিয়ে গুছিয়ে শ্রেষ্ঠ জটিলতাগুলোকে গুছিয়ে রেখেছেন কবিতার মোড়কে। পাঠকের জীবনেতিবৃত্ত জটিলতা, নতুন করে আবার? না বস, পাবলিক নেবে না। খিল্লি করবে।

বেসিকালি গল্পটা এখানেই। ওয়াটস আপ, ফেসবুকে কবিতা কারা পড়ছে। কবি বন্ধুরা। তারাই লিখছে তারাই পড়ছে  তারাই লাইক মারছে,কমেণ্ট করছে। সাধারন পাঠক কই?

কেউ কেউ বলছেন আগামী দিনে আমার লেখাটা থাকবে, এটাই বর্তমানের ভাষা। তাদের কাছে প্রশ্ন, তারা কি গ্রাসরুটের খোঁজ রাখেন। তাদের পাঠক কারা? সাধারন পাঠকের সাথে কতটা সম্পর্ক আছে? সন্দেহ।।
(ক্রমশ)

শাল‍্যদানী
চেয়ারম্যান, তরঙ্গ পরিবার

No comments:

Post a Comment