এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

পিয়ালী বসু


বিভাগ : কবিতা (সাধারণ বিভাগ)


মন থেকে মনান্তরে

(১)
.
আমার সামনে থাকা উঠোনটায় এই ভরন্ত দুপুরে বিন্দু বিন্দু লিনেন শব্দে জড়িয়ে রয়েছে ... মনখারাপের বাস্তুরাগ।
.
ঋতুদের বানভাসি হবার আগে প্রিয়তর যে অনুভবগুলি উড়ে আসে ,জুড়ে বসে ... সেগুলিই পরে ছত্রাকের জন্ম দেয় । যেভাবে নিঃস্বপ্ন ঘুমের মধ্যে সারি সারি ডাকবাক্স , বিলি করে গোপন বাঘনখ , ভাঙতে না পারাগুলো সেভাবেই এই মুহূর্তে আমার মধ্যে জন্ম দিচ্ছে এক অলৌকিক স্নানদৃশ্যের ।
.
আমার শরীর ছুঁয়ে নেমে যাচ্ছে প্রবাসী প্রেমের চূর্ণ আলোকণা । ঝিমন্ত সন্ধেয় ... যাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে , ক্রমিক দৃশ্যমান সিল্যুয়েট রচনা করি আমি ।
.
গত একমাস ধরে একটি লেখাও লিখতে না পারার ব্যর্থতার মাঝে , দ্বিধার নিকোটিন নিয়ে, তুমিও কি আমার কথা ভাবছো ? অন্যের প্রেমিকা কে কামনা করার অভ্যাসটা , দেশলাই জ্বালিয়ে এই উঠোনটার সামনেই শুরু করেছিলে তুমি ... সেও কয়েক দশক আগে ।
.
ক্ষণলগ্ন এই সময়টায় , বড় অসহায় মনে হয় নিজেকে । আচ্ছা ... আমিও কি ক্রমশ পোড়া গন্ধ হয়ে উঠছি ? তোমাকে ভালবাসার পর , প্রথম অনুভব করেছিলাম ... শব্দের উৎসবে আসলে নিবিষ্ট অতীত সুপ্ত থাকে , যার ধাক্কা সময়ের সাথে সাথে , তীব্র থেকে তীব্রতর হয় ।
.
আকাশের পশ্চিম দিকে আটকে থাকা ফ্যাকাশে আলোর গুমোট , চলতা ওঠা এই ঘরটায় ঢোকে না তেমন । একটু পুরনো হলে কিছু কিছু ক্ষত , সৃষ্টিতে বাড়ে বলে , তাদের যথাসম্ভব বাঁচিয়ে চলি । দশক পেরনো সম্পর্কে অযাচিত মায়া , ক্লান্তিকর অসুখ ডেকে আনে ।
.
অফুরন্ত মেয়েবেলায় , বইয়ের র‍্যাকজুড়ে আমিও জমা করে রাখতাম ঠাসাঠাসি জ্যোৎস্না । বিছিয়ে বসতাম রোদ মাস্তুল । এখন অবশ্য গল্প জমে চোখের পাতায় , আলতো চিবুক জুড়ে ।
.
.
(২)
.
এখন স্মৃতিপাতা ঝরার সময় । আজ রাতে আমার মৃত্যু হলে , কতদিন পরে
তোমার কাছে সেই সংবাদ পৌঁছবে কখনোই তা জানতে পারবো না আমি । সম্পর্কের নিরাকার অবয়বে অভ্যাসের সুতো খুলে গেলে , হয়তো বা এমনই স্পষ্টতর হয় কথার কোলাজ - বলিরেখা।
.
তুমিই তো বলেছিলে , 'এগিয়ে চলো ' , শক্ত আশ্বাসের মোহজাল ভেদ করে আমিও পা বাড়িয়েছিলাম অজ্ঞাত সেই গন্তব্যের দিকে , যেখান থেকে ফিরে আসে না কেউ । চূড়ান্ত শব্দের অবুঝপনায় হয়তো বা কিছুটা আহ্লাদী আব্দার লেগে ছিল , আর তাই ... অন্য একটি প্রস্তাবনার দিকে এগোতে কিছুটা বেশী সময় নিয়েছিলাম আমি ।
.
আমাদের বাড়ির পাঁচিলের গায়ে এলিয়ে পড়ে থাকা আগাছার জঙ্গলঘেরা সেই জমিটার কথা মনে পড়ে তোমার ? যার ঠিক পাশে আশ্বিনের পড়ন্ত রোদে আমায় জাপটে ধরেছিলে তুমি । ধূসর-বাদামি ঔদাসিন্যে ভরা শরীরটা কেঁপে উঠেছিলো তোমার পৌরুষ স্পর্শে । সেদিনের পর থেকে বিভাজিকা এঁকে রেখেছিলে তুমি আমার শরীরে ।
.
আজ বিকেলের স্রোতে অনেকগুলি মাইল পেরনোর পর ,শরীরের মিঠাস'ও ফেলে আসা ভালবাসা খুঁটে খেতে দ্বিধা বোধ করে , তবুও তুমি এসো । বিকেলের লাজুক মেঘে লেখা হোক আমাদের গোপন ইচ্ছেগুলো । আমরা বিশ্বাসে বিশ্বাস ' মিশিয়ে বাঁচি ... নিজেদের মতো ।
.
লিখে রাখো । শব্দের আগে এবং পরে থাকা নীরবতা আদুরে মায়ার যে চিরল আলো ' রচনা করে , তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মিথ্যে । ভেসে যাওয়াটাই আসল , তাই ক্রসরোডে কোনদিন যদি দেখা হয় আমাদের , আমি কিন্তু চিনবো না তোমায় , পোস্টকার্ড-স্ক্র্যাপবুকের মৌসুমে সেদিন লেখা হবে ' We are strangers'
.
আমি ফিরে আসবো চেনা আস্তানায় , নমিত দালানের পাশ দিয়ে গুণে গুণে বারো পা মেপে । জল খাবো , আলো জ্বালবো । ঠোঁটের কোণে খেলে যাবে আলতো হাসি । বৃত্তপথ অতিক্রম করে খুব সহজেই পৌঁছে যাবো মরচে ধরা লোহার গেটটার সামনে । কোনদিকে পরোয়া না করে ঢুকে যাবো একতলার দক্ষিণমুখো ঘরটায় ।
.
আমাদের শরীরের ঘনিষ্ঠ ব্রীজে সেদিন সন্ধে ঘনাবে ... নভেম্বর রেনের ভেজা ক্লোকে । 


পিয়ালী বসু
পিয়ালী বসুর জন্ম ১১ ই নভেম্বর দক্ষিণ কোলকাতার এক সংস্কৃতিমনস্ক পরিবারে ।  বাবা প্রয়াত প্রসূন বসু ছিলেন সাহিত্য / প্রকাশনা ও রাজনৈতিক জগতে এক প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব ।
২০১২ সালে এক কবি বন্ধুর সাথে ১০০টাকা বাজি ধরে কবিতা লেখার শুরু করেন পিয়ালী । এখন বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত লেখেন। পাঠকদের কথায় ... " নিজস্ব এক কাব্য ঘরানা তৈরি করেছেন এ কবি । "  প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা চার।  এই মাসেই প্রকাশিত হচ্ছে তাঁর প্রথম কাব্যসংকলন ' শব্দঋণ ও ম্যাভিক অবসন্নতা ' ।
পিয়ালী পড়াশোনা করেছেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে  যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে  কর্মসূত্রে আয়ারল্যাণ্ডের ডাবলিনে স্থিত ।

                                                          
   

No comments:

Post a Comment