এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

মৌসুমী ভৌমিক


বিভাগ : কবিতা (সাধারণ বিভাগ)


মনের অলিন্দে

মনের অলিন্দে আধপোড়া দুখ
                সুখটানেতে দিল মশগুল
মাতাল মাতাল স্বপ্নচোরা -
                    দৃষ্টিগোচর সবই ভুল।

বোঝা বোঝা ভুলকথা
                     খাতা ভরা গদ্য
মুখোশ নিয়ে হাঁটা শুধু
                     হিসেব চায় পদ্য।

ভাবনারা হাঁটে রঙমিছিলে
                    ভুলে গেছে ছন্দ
বাউল শুধু হারায় পথ
                বাতাসে বারুদ গন্ধ।

উগ্রবাদের নিশানা তাক
            ফুৎকারে নেভে জীবন ।
বাৎসল্য চাষ কল্পনায়
           আধুনিকতায় পোড়ে মন।


প্রেম

সভ্যতার ক্যানভাসে
       প্রেম হয়েছিল।
গান্ধর্ব বিবাহ।
ভেসেছিল দুজনে
               দুজনের বাহুডোরে।

বৈধ - অবৈধ শব্দের খেলাঘরে
           প্রবেশের কথা কেউ ভাবেনি।
           ভুলেছিল বারেবারে।
বাস্তবে ফিরেছিল যেদিন
           জেনেছিল তখন
           'সোনার আংটি বাঁকা হলেও ক্ষতি নেই' ।

সভ্যতার ক্যানভাসে
                তাই শুধু মেয়েটির নরকযন্ত্রণা
মুখোশধারী নির্লজ্জ
          আপন মানুষগুলোও
                    যেন অন্য জগতের প্রাণী।

বাস্তবটা অন্য জগত
      বোধগম্য হল এতদিনে।
দীর্ঘশ্বাস প্রেমের বাতায়নে
       ফিরে যাও.......

   শুধু মুক্তি  চাই
       মুক্তি.......
  অনন্ত মুক্তি ............



বিভাগ : কবিতা পাঠ



এক মাংসপিণ্ডের মানুষ
মৌসুমী ভৌমিক 
************************

প্রচণ্ড ঘৃণায় নিজের থেকেও মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিল মেয়েটি -একদিন যে ছিল নীরা, বনলতা আরও কত আদরের নামের প্রেয়সী -
তাকেই কিনা শেফালি, গোলাপী বানানোর প্রচেষ্টার কি ঘৃণ্য তাড়না !
স্নানঘরে শাওয়ারের নীচে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে নিজের শরীরটাকে ধুয়ে ফেলতে চাইল সে।
ঘষে ঘষে শরীরটা খসখসে করেও মনে হল - এ ঘৃণা যে যাবার নয়।
মাথা মুখ ঠোঁট চিবুক কাঁধ নিতম্ব  - মেয়েটি যেন তার প্রত্যেকটি অস্থি'র ওপর থেকে
মাংসপিণ্ডগুলোকে খুবলে ফেলে দিতে চাইছিল।
এত মলিনতা সে আর কিছুতেই বহন করবে না।
আত্মগ্লানি  - পরিণতি কি আত্মহত্যা  ?
কয়েকটা দিন যেন কয়েকটা বছর --
প্রত্যেকটা মুহূর্ত যেন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতম ঠেকছিল -
বাঁধভাঙা কান্না - অসহয়তা - বিবসতা -
তীব্র ঘৃণা পর্যবসিত হলো অভিশাপে।
যে শরীর -যে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কলুষিত করেছে তাকে -
মেয়েটি তার সমস্ত মনপ্রাণ, প্রত্যেকটি বলা, না বলা অক্ষর দিয়ে তার সমস্ত ঘৃণা - বিদ্বেষ দিয়ে অভিশম্পিত করলো সেই শরীরকে !
একসময় ক্লান্ত হতে হতে মনে হল - তার নিজের শরীরের কি দোষ ?
এ তো নয় তার কর্মফল - তবে নিজের প্রতি কেন এ ঘৃণা , এ বিদ্বেষ ?
সত্যানুভুতি সহায় হলো তার  -
ধীরে ধীরে সে অনুভব করলো এ শরীর একান্তই তার নিজস্ব।
কালির দাগটাকে সাবানজলে ধুয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে দেখার ইচ্ছে হল তার ---
সে আজ বিজয়ী, না নীরা কিংবা শেফালি কোনোটাই সে নয়।
আবেগহীন - স্থিতধী সে শুধু আজ এক মাংসপিণ্ডের মানুষ।

মৌসুমী ভৌমিক
জন্ম: দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার সাফানগর গ্রামে। স্নেহময় পিতা মহেন্দ্র নাথ প্রামাণিক ও মাতা বুলু প্রামাণিকের ছায়ায় বেড়ে ওঠা। বর্তমানে সরকারী চাকুরীরতা। ছোটবেলা থেকে সাহিত্যানুরাগী। দুই কন্যা সন্তানের জননী, স্বামী প্রভাস ভৌমিকের উৎসাহে লেখালেখির প্রয়াসে নিয়োজিত।


No comments:

Post a Comment