এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

মলয় রায়চৌধুরী




অনুবাদ কবিতা




ডেনিস ব্রুটাস ( আফরিকার কবি )
অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী

ডেনিস ব্রুটাস ( ১৯২৪ – ২০০৯ ) -এর জন্ম জিমবাবওয়ের হারারে শহরে । তাঁর গায়ের রঙ ফরসা হলেও তাঁর মুখাকৃতি ও গড়ন-পেটন আফরিকার মানুষদের মতো ছিল বলে, চার বছর বয়সে যখন তাঁর বাবা-মা দক্ষিণ আফরিকার পোর্ট এলিজাবেথ শহরে বসবাস আরম্ভ করেন, দক্ষিণ আফরিকার অ্যাপারথেড আমলের আইনানুযায়ী  ডেনিস ব্রুটাসকে ‘কৃষ্ণাঙ্গ’ হিসাবে বর্গীকরণ করা হয়েছিল । তাঁর অমন চেহারার কারণ তাঁর দেহে পূর্বপুরুষদের থেকে পাওয়া আফরিকা, ফরাসি ও ইতালীয় রক্তের সংমিশ্রণ ।

স্নাতক হবার পর ডেনিস ব্রুটাস স্কুলে শিক্ষকতা আরম্ভ করেন । কিন্তু তাঁর ট্রটস্কিপন্হী মতাদর্শ ও অ্যাপারথেডবিরোধী কাজকারবারের  দরুণ চাকরি চলে যায় । অ্যাপারথেডের নিয়মাবলী ভঙ্গ করার দায়ে ১৯৬০ সালে তিনি গ্রেপ্তার হন ও জামিনে ছাড়া পান । জামিনে থাকাকালে তিনি লুকিয়ে মোজামবিক পালান । সেখানে পর্তুগিজ গুপ্তচর পুলিশের হাতে ধরা পড়েন এবং পুনরায় দক্ষিণ আফরিকায় চালান হন । আবার জেল থেকে পালাতে গেলে রক্ষীদের গুলিতে আহত হন এবং কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন । তাঁকে রবেন আইল্যাণ্ড জেলে রাখা হয়েছিল, যে জেলে নেলসন ম্যাণ্ডেলাও কারারুদ্ধ ছিলেন ।

কারাগার থেকে বেরোবার পর তাঁর কবিতা প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়, যেকারণে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্হ ‘সাইরেনস, নাকলস অ্যাণ্ড বুটস’ প্রকাশিত হয়েছিল নাইজেরিয়ায় । স্বদেশে কবিতা প্রকাশের স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত ডেনিস ব্রুটাস ইংল্যাণ্ড চলে যান এবং সেখান থেকে আমেরিকা । ১৯৮৩ সালে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হিসাবে আমেরিকায় থাকার অনুমতি পান । আমেরিকায় তিনি নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভারসিটিতে শিক্ষকতা করতেন ।

দক্ষিণ আফরিকায় শ্বেতাঙ্গদের চাপানো অ্যাপারথেড রাজত্ব শেষ হলে তিনি দেশে ফেরেন ।

ডেনিস ব্রুটাস


অনুবর্তিতা, সাউথ আফরিকার জন্য

১.
সোনালি ওক আর জাকারডিয়
ফুল
চমৎকার চিত্রকল্প
আমার হৃৎপিণ্ড ছিঁড়ে তুলে নেবার জন্য


প্রতিটি দিন, প্রতিটি পল
বেদনাদায়ক নয়,
নির্বাসনও নয়, অঙ্গহানি,
এমন ক্ষত নেই যা থেকে রক্তপাত ঘটছে
খুবলে নেয়া মাংস নেই বা ছিঁড়ে নেয়া শিরাউপশিরা ;
চেপে বসছে গোপনীয়তা
অবগতির পথ রুদ্ধ করে ফেলা হয়েছে—
কটু বিশীর্ণ আর শুকনো দুর্গন্ধের  চারদেয়ালে ঘেরা
চোখে জ্বালা ধরিয়ে দিয়েছে,
গিলে ফেলছে নিঃশ্বাস
আর মগজকে হাউহাউ কান্নায় থমকে রেখেছে—
যতক্ষণ না কোনো ভাবনাহীন প্রশ্নকর্তা
উঁকি মেরে
সব আড়াল আলগা করে দিয়েছে

#
নির্বাসনের উপলব্ধিকে আমি বাদ দিতে পারি
যদি না কেউ আমায় ডাক দেয়


যন্ত্রণা ফিরে আসে
একটি সঙ্কটের পর, বিকার,
নিবৃত্তি আর তার পরের দুর্ভোগ ;
আমার অস্তিত্ব টের পাই এই ক্লান্ত নৈঃশব্দ্য,
বিশোধন নিয়ে আসে স্মৃতিবিভ্রম
কিন্তু
তরতাজা হয়ে ওঠার সঙ্গে, সহ্যশক্তি
যন্ত্রণা ফিরে আসে


রাত্রিবেলা
নিজেকে ঘুমিয়ে তোলার জন্য
আমি অক্ষরের খেলা খেলি
কিন্তু তোমার কথা ভেসে ওঠে মনে
আর আমি কেঁদে ফেলি


আমি লন্ডনে আর প্যারিসে
অ্যামস্টারডম আর রটরডমে
মিউনিখ আর ফ্রংকফুর্টে
ওয়রস আর রোমে
শুতে বাধ্য হয়েছি–
কিন্তু তবু বাড়ির জন্যে ফুঁপিয়ে উঠি


নির্বাসন
হল সৌন্দর্যের
ভর্ৎসনা
কোনো বিদেশি ভাষায়,
আবছা পরিচিত
কেননা তা স্মৃতির ভেতরে রাখা
সৌন্দর্যকে মেলে ধরে

( ১৯৭৫ )

মলয় রায়চৌধুরী

No comments:

Post a Comment