এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

জয়দীপ রায়




মুক্ত গদ‍্য




মেঘ পিয়নের চিঠি

সকাল থেকেই দেখছি আকাশটা মুখ গম্ভীর করে, বহুদিন বাদে ওকে রাগ করতে দেখলাম। কি জানি, আকাশেরও কি রাগ হয় ? আকাশের ভায়া হয়ে আসা বৃষ্টি ভাবুক পরশ যেন তারই প্রত্যুত্তর হ্যাঁ হয়। গোসা ঘরের যাপন রহস্য ভেদ সাংসারিক গোয়েন্দাদের,আমাদের মতো বিবাগী পাবলিকের নয়। তবু মানানোর চেষ্টার কোন কসুর রাখিনি। প্রশ্ন উত্তরের খেলা চলছিল বেশ দেওয়া নেওয়ার রোয়াকে দাড়িয়ে। তারই মাঝে ভুলে গেছিলাম যে নোটবুক ফলো করা যে বাকি রয়ে গেছে, সত্যি একদমই ভুলে গেছি। ওটা আমার রোজকার অভ্যেস।

তারপর মিনিট খানেক সেই রোয়াকেই পাইচারি মেঘুস্তর গোনা শেষ করে দিলাম পাড়ি সকালের ক্রিয়া কর্ম অব্যয়ের মাঝে। চোখ রাখলাম অভ্যাসের নোটবুকের
নোটবন্ধীর তালিকায় কোন নাম নেই। ব্যস বাঁচা গেছে। সারাটা দিন তাহলে *বরাচিত* সাপের মত কেলিয়ে পড়ে থাকি। না সেইটে আর হল না। একা থাকলে যা হয়। কাজের সূত্রে বর্তমানে বর্ধমান। বর্তে গেছি বলাই বাহুল্য, সেই সস্তায় পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার ফ্ল্যাট আর কি চাই হ্যাঁ এবারও চাই এক কাপ চা।

বৃষ্টির দিন হলেও কফির প্রত্যাশা করা দুর অস্থ। উপকরণটা একটু সিধিয়ে নিয়ে স্টোভ মুখী আগুনের আঁচ। উফ্ কি কফি বানিয়েছো প্রশান্ত। হ্যাঁ আমিই সেই প্রশান্ত, নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ালাম। পিঠ চাপড়ানোর লোকের এখন বড় অভাব।

খবরের কাগজ নিয়ে সদ্য কাপে চুমুক,, এই চোখ বোলাব সেই মুহূর্তে বজ্জাত নখুর হাঁক। জগতে এই নখুর মতন কিছু মানুষ যাদের কুকুরের লেজ মাফিক আচরণ কখনও সোজা হয়না। মেজাজ ভিমরি খাওয়ার উপক্রম সেইমতবস্থায় শান্তভাবেই জিজ্ঞাস্য, কি হয়েছে ভায়া ? এত্ত সকালে কীসের দরকার জানতে পারি?
অমনি ছাব্বিশ পাটি বার করে নখুর প্রত্যুত্তর আপনার লগে চিঠি আইসে দেইখ্যা নিন গে। হঠাৎ বজ্রপাত এমনই অবস্থা আমার আবার চিঠি ই-মেইলের যুগে চিঠি শব্দটা বড্ড বেমানান। অগত্যা আমারই হেতু যেতে হল সিঁড়ি ডিঙিয়ে ডাকবাক্সের নিকট। চিঠি খানা উল্টে পাল্টে দেখি আমারই নাম, স্পষ্ট বাংলায় লেখা তাতে প্রশান্ত বারিক c/o ঠিকানা বর্ধমান। উদ্বুদ্ধ কণ্ঠে ট্র্যাডিশান স্ট্যান্ডে কোন বাঙালি আমার প্রতি দয়া পরবশ তা জানতে মনটা বড্ড উৎবেল থেকে কৎবেল হয়ে উঠল। প্রত্যাশার পারদ যেন রান্নার হাঁড়ির ফ্যান উঁচিয়ে পড়ছে। প্রেরকের নাম দেখে চক্ষু চড়ক গাছে তখন, এক্কেবারে অদ্ভুত নাম মল্লারীর চিঠি। সোজা অর্থে মল্লার মানে বোঝায় মাঝি কিন্তু মল্লারী কি! সেটা আর ব্যাকারণ বই না ঘেঁটে সোজা চিঠির মূল বক্তব্যে হাজিরা দিলাম। দুটো কবিতা পাঠিয়েছে মোর ডাকবাক্সে সৌভাগ্যবশত আমিই এই পত্রিকার সম্পাদক। গর্বে যেন আমার গর্ব ভরে উঠল। কিছুটা সামলে নিয়ে সিরিয়াস সম্পাদকের মত আমিও পড়তে বসলাম প্রেরকের কবিতাটি। সত্যি বলতে কি লাইন গুলো বেলপাহাড়ির পথ ধরে কামরায় বসা রোজের প্যাসেঞ্জার পাশ দিয়ে কি যেন ফিস ফিসিয়ে বলে গেল। বাইরে অনবরত বৃষ্টির শব্দ জানলা বেয়ে বৃষ্টির ঝাপটা না আজ ভিজালাম না। আজ ছাতা হাতে নিয়ে বেরোনোও হল না। কবিতা দুটো যেন সারাদিন সঙ্গ দিল সম সঙ্গিনীর মত। প্রাপ্তি স্বীকারের ইচ্ছে জাগল। জানতে ইচ্ছে করল কবির পরিচিতি। তিনি আপনি যেই হন না কেন। লেখাটি সত্যি আমার ভালো লেগেছে। আসলে কথা বলার অভিপ্রায় জেগেছিল জাগিয়েছিল বলা বাহুল্য বৃষ্টি স্নাত দিনটা।

আবারও রবিবাসরীয় সকাল নখুর হুঙ্কার আজ আর খারাপ লাগেনা বরং ভালই লাগে পিয়ন মাফিক ডাক চিঠি আইস্যে মোর ডাকবাক্সে। এত্ত দিনে জানলাম নাম ওর আত্মজা। নামটা বেশ তো নামের মধ্যে একটা নিজস্বতা খুঁজে পেলাম। কলমের কালি ব্যস্ত অক্ষর বিন্যাসের খোঁজ জানলার কার্নিশ মরচে ধরা শিক অজান্তেই পা টিপে টিপে সিঁড়ি দিয়ে। কার চিঠি পড়ছো জানোনা বুঝি। টোল গালটা ধিমে ধিমে গলায় উত্তর দিল হ্যাঁ আমিই আত্মজা ।


জয়দীপ রায় 

বর্তমানে সাহিত্য চর্চা,
(এম এ) করছি রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। উত্তর কোলকাতার পাইক পাড়ায় থাকি ।কবিতা লিখতে ও পড়তে ভালবাসি। প্রিয় কবি শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায় ও জয় গোস্বামী।

No comments:

Post a Comment