এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

মানসী গাঙ্গুলী



কবিতা (সাধারণ বিভাগ)



প্রতিবাদ

মেঘে মেঘে আকাশ গেছে ছেয়ে
মনের মেঘ যে কালো তারও চেয়ে,
বড় হয়েছে ছোট্টবেলার মেয়ে
মনটা যে তার ছিল রঙীন হয়ে;
আজ সেটা বিষাদে গেছে ভরে
মনটা যে তার মনেই গেছে মরে,
সমাজ তাকে করেছে সমাজচ্যুত
আজ সে যে ধর্ষিতা নামে পরিচিত;
এ যে তার কত বড় অপরাধ
বুঝি ধর্ষিত হবার ছিল তার বড় সাধ,
ধর্ষকেরা বুক চিতিয়ে ঘোরে
মহান তারা মহান কাজ করে;
কালো মেঘ ঘনায় বুকের মাঝে
সইবে না সে মোটেই মুখ বুজে,
হতে হবে তাকে প্রতিবাদে সোচ্চার
আর কি বা হতে পারে তার!
সমাজ তো আগেই ফেলেছে তাকে ছুঁড়ে
না হয় সে থাকবে দূরে দূরে,
আরো কিছু তার প্রাপ্য হয়তো হবে
তবুও সে আর থামবে নাকো মোটে;
প্রতিবাদ তার গর্জে উঠবে জোরে
আকাশ বাতাস জুড়ে,
গুরু গুরু ঐ মেঘের সংলাপে।




সাত সাত আরো সাত

সাত সাত আরো সাত আর
আকাশের তারা গুনি নিরন্তর
আঁধার রাতে,অন্ধকারে
একাকী,চাঁদের সোহাগ মেখে গায়ে।

শুধু আকাশের চাঁদ আর
রাতের তারারা ছিল সাথে
ছিল না কোনো প্রিয়জন পাশে
সে রাতে।

গুণে গুণে রাত করেছি পার
তবু অপেক্ষার শেষ হল না আর
ঘুম ঘুম চাঁদ পাতল বিছানা
হল না আমার আর শেষ তারা গোণা।

হল না আমার অপেক্ষার শেষ
আমার মতই একলা ধ্রুবতারা
আকাশে রইল বেশ।




অণুগল্প



নিহত গোলাপ

     
            বাড়ীটার সামনে আজ ভিড়ে ভিড়,লোকে লোকারণ্য, সবার মুখ থমথমে। আর হবে না-ই বা কেন,ছেলেটির মিষ্টি স্বভাবের জন্য সে যে সবার প্রিয় ছিল,এমন ফুলের মত সুন্দর তরতাজা একটি ছেলে,আর এইতো টুকু বয়স, সবাই হায় হায় করছে।
         মায়ের বড় প্রিয় ১৬ বছরের সুনু, তিন দিদিরও খুব প্রিয় তাদের একমাত্র ভাই, দেখতে যেমন রাজপুত্রের মত, টকটকে ফর্সা, তেমনি মিষ্টি স্বভাব। ঘোরে ফেরে, মা মা করে। মায়ের মেয়েদের থেকে ছেলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব একটু বেশিই ছিল, তাতে অবশ্য দিদিরা রাগ করত না, তারাও যে ভাইকে খুব ভালবাসত। এবারে মাধ্যমিক দেবে সুনু, টেস্ট পরীক্ষা হয়ে গেছে। সেদিন ৩১শে ডিসেম্বর, বাড়ীতে পৌষমাসের লক্ষ্মীপূজো ছিল। ঠাকুরকে পায়েস ভোগ দিয়ে পূজো হয়ে গেলে পাশের বাড়ীর কাকীমার সাথে সুনুর মা গেলেন ফিল্ম দেখতে। ছেলে আবদার করল, "মা, আমার জন্য নৌকো পাউরুটি নিয়ে আসবে"। তাই ফেরার সময় ছেলের জন্য এল নৌকো পাউরুটি। সন্ধ্যেয় প্রাইভেট টিউটর পড়াতে আসার আগে মা তাকে নৌকো পাউরুটি আর ঠাকুরের ভোগের পায়েস খেতে দিলেন।
       টিউটরের কাছে পড়ার মাঝে সে টয়লেট যেতে চায়। ওদের টয়লেটে যেতে তিনটে সিঁড়ি উঠতে হয়। তিনটে সিঁড়ি ওঠার পর সুনু ওপর থেকে নীচে পড়ে যায়, সবাই ছুটে আসে, ও বলে কিছু হয়নি। মা ভাবেন কাঁচা পাউরুটি আর পায়েস খেয়ে পেটে গ্যাস হয়ে মাথা ঘুরে পড়ে গেছে তাই একটু কার্মোজাইম খাইয়ে দেন,আর ভাল করে দেখেন কোথাও কেটে ছড়ে গেছে কিনা।না, সেসব কিছু হয়নি দেখে নিশ্চিন্ত হন মা।কিন্তু এর আধঘন্টা পরে সে বমি করে ফেলে ঘরের মধ্যেই আর এতে সে খুব লজ্জা পেয়ে যায়। মা আবারও ভাবেন গ্যাস থেকেই বমি হল। সবাই তাকে শুতে বললে সে বলে যে সে ঠিক আছে। এরপর আস্তে আস্তে সে ঝিমিয়ে যেতে থাকে। রাত প্রায় ১১টা নাগাদ ওর মুখ থেকে যখন গ্যাঁজলা বেরোয় তখন ডাক্তারের কথা সবার মনে হয়।বাড়ীর নিচেই একজন ডাক্তারের চেম্বার, যেখানে সন্ধ্যে থেকে ডাক্তারবাবু ছিলেন, রাত ১০টা নাগাদ চেম্বার বন্ধ করে চলে যান। প্রাইভেট টিউটর ওখানেই ছিলেন, এমন অবস্থায় ছেড়ে চলে যেতে পারেননি, তিনি তখন ছোটেন ডাক্তার ডাকতে। কিছুদূরে ডাক্তারবাবুর বাড়ী গিয়ে সব বললে, তিনি আক্ষেপ করেন সন্ধ্যে থেকে ওখানেই ছিলেন, আর এত পরে?তিনি নিজের মনেই বলে ওঠেন, "ইন্টারনাল হেমারেজ", আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন।
       এরপর হাসপাতালে নিয়ে গেলে এমার্জেন্সীতে ডাক্তার ওকে পরীক্ষা করেই মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েন। বিলাপের মত নিজের মাথায় চাপড় মেরে বলতে থাকেন,"It's too late,too late.একটা ফুটন্ত গোলাপকে ছিঁড়ে নিয়ে এলেন?আমায় কিছু করার একটু সুযোগ দিলেন না?"বস্তুত হাসপাতালে নিয়ে যাবার পথেই তার মৃত্যু হয়।


****

2 comments:

  1. খুব ভালো লাগলো লেখাগুলো

    ReplyDelete
  2. খুব ভালো লাগলো !

    ReplyDelete