এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

রুনা দত্ত



কবিতা (সাধারণ বিভাগ)




অথ যৌনতা

কিছুটা প্রেম কিছুটা ভালোবাসা বাসি
কিছুটা ঠোঁট কিছুটা শরীরে মাখামাখি,
কিছুটা উষ্ণতা কিছুটা যৌনতার দাবী
হয়তো এটাই সঙ্গম বা সহবাসের ছবি।




রাই

ঠোঁটে ঠোঁটে প্রজাপতি উড়ছে
টলমল বুকে রাই ভাসছে
প্রেম থই থই দুধপুকুরে
পদ্ম শালুক জাগছে, জাগছে।

নাভিমূলে হাস্নুহানা ফুটছে
উরুসন্ধির কালো তিল
ভালোবাসা যে খুঁজছে
প্রেম সায়রে রাই ডুবছে, ডুবছে।

কোমলগান্ধার সুরে শরীর ভিজছে
এলো চুলে রাই ফুল তুলছে
নুপুরের রিনিঝিনি রিনিঝিনি
শরীরে ঝড় তুলেছে, ঝড় তুলছে।

ভেজা ভেজা অঙ্গের কাঁপনে
আগুন তো জ্বলছে নিভছে
উষ্ণ শীতল বারুদের নির্যাসে
রাই তবু ভালোবাসছে, ভালোবাসছে।


ঘ্রাণ

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান, একটা ক্ষীণ কান্না,
কিন্তু হাসি এসে মিলিয়ে গেলো ঠোঁটের কোণে!
মা জানলো, হয়তো বা অবাক পৃথিবীও জানলো-
জঠরের অসম্পূর্ণ ভ্রুণে-
জন্ম নিয়েছে পুত্র নয় কন্যা ও নয়, জন্ম নিয়েছে তৃতীয় লিঙ্গধারী একটি অবয়ব।

সে ঠিক স্বাভাবিক মানুষের মতো মানুষ নয়,
আর পাঁচটা শিশুর মতো ও নয়,
কিন্তু সেও তো দশ মাস দশ দিন সযত্নে লালিত মার্তৃ জঠরের ঘ্রাণ!



অথ প্রেম
শরাব নয় চোখেই তো গভীর নেশা,
জাম নয় ঠোঁটেই তো চিরতৃষ্ণা।
জাহান্নামের দরজা আজ বন্ধ রেখেছি,
মদিরা নয় শরীরেই তো জন্নত খুঁজেছি।



বানভাসি

তোমার শরীরের বানভাসি তে আমি নৌকা ভাসালাম,
হয়তো এমন বর্ষা নিয়েই তোমার কাছে যাওয়া  যায়---
হয়তো বৃষ্টিভেজা রাই নূপুর ঝমঝমিয়ে বলবে,
" সেই তো এলে "---
বৃষ্টি ভেজা উঠোনে  শালিক চড়ুই ভীড় করবে,
ওরাও বুঝি আসন্ন লগ্নের অপেক্ষায় -- তোমার শরীর ছুঁয়ে জুঁই বেলির ও যেনো
আগমনী গানের প্রতীক্ষা----
বৃষ্টিরা ও ফোঁটা ফুলের মতো ঝরে
পড়বে তোমার অধরে, চিবুকে ---
তোমার বর্ষায় নিজেকে ভিজিয়ে নিতে নিতে -আমি ও শুধু ভেসে যাবো একটিবারের
জন্য,আনন্দে পাগল হবো!




শীতলতার জন্য

যতোই দাবদাহ দাও, তার সবটুকু বৃষ্টি ভেবে জমিয়ে রাখি বুকের ভেতর।
তারপর দীর্ঘ প্রতীক্ষায় থাকি যদি কোন এক প্রখর
গ্রীষ্মের দুপুরে তুমি আশ্রয়হীন হয়ে ফিরে আসো,
যদি শীতলতা খোঁজো!
তখন বুকের দরজা খুলে দিয়ে বলবো,কেউ কেউ দগ্ধ হতে হতে ও কারো জন্য বৃষ্টি জমা করে রাখে,যদি সে কখনো ফিরে আসে, একটু শীতলতার জন্য।




না বলা শূণ্যতা

বলি বলি করেও যে কিছু হয়ে ওঠে না বলা,
শুধু বিরামহীন যতিহীন জীবনের নাঙর বয়ে চলা।
ধূসর দ্বীপের মতো কিছু সময় কিছু নিঃসঙ্গতা, কিছু প্রেমহীন জীবনের অনির্দিষ্ট ঘনিষ্ঠতা  ,
হেমন্তের হলুদ বিকেল ঝরা পাতার বিবর্ণতা,
নিঃশব্দে বয়ে চলা নদীর পাশে নিভে যাওয়া চিতা,
সবাই তো জীবন কে একবার ছুঁয়ে যেতে চেয়েছিলো----
অথচ যবনিকা পতনের সূত্রপাতে সেই শূণ্যতাই  হাতে এলো---
তাই বলি বলি করে আজো যে বলা হলো না কোন কথা---
নদীর ঢেউয়ে ও যে প্লাবন উঠে কবিতারা জানলোনা তার গভীরতা!!



নিকোটিন আর তুই

নাহ, নিকোটিনের গন্ধ মাখা তুই বড়ই অসহ্য,
তাও সেই নিকোটিনের গন্ধে মাখামাখি তোর অসহ্য ভালোবাসা!
রাখবো না ঝেড়ে ফেলবো বুঝতেও পারিনা
ছাই!
বুঝতে বুঝতে যখন চোখ খুলি, দেখি আমি আর আমার
ঠোঁট সবই যেনো বড় বেশী নিকোটিনময়!





পরিযায়ী প্রেম

ভালোবাসা প্রেম এগুলো অনেকটা পরিযায়ী
পাখীর মতো,
হঠাৎ এসে বাসা বাঁধে আবার বুঝে ওঠার
আগে কেমন ফুড়ুৎ হয়ে যায়।
প্রেমকে জানার আগেই ভালোবাসা শেষ
হয়ে যায়।
ঠিক যেনো আগমনের আগেই বিসর্জনের ঢাকে কাঠি।
চলমান ব্যস্ততার ফাঁকে প্রেমকে ঝালিয়ে
নিতে কখনো বা দুদন্ড মুখোমুখি বসা,
কখনো বা আবেগতাড়িত হয়ে বিছানার
চাদরে একটু ঘনিষ্ঠতা খোঁজা।
সম্বিৎ ফিরে এলে আবার সেই গুটিগুটি পায়ে
গতানুগতিক জীবনে ফেরা,
শামুকের খোলসের মতো নিজেকে লুকিয়ে রাখা,এভাবেই প্রয়োজনের খাতায় প্রেম আসে প্রেম যায়,দৈনন্দিন ব্যবহার্যর মতো জড়িয়ে থাকে জীবনে।

প্রেম প্রেম নেশা নিকোটিনের মতো ঠোঁটে
লেগে থাকে-
ভালোবাসার নিদির্ষ্ট সীমা অবধি পৌঁছয়ও না,
সময়ের পা বন্দীতে একটু আধটু ঝলসে ওঠে,
আবার কখন যেনো দপ করে নিভে যায়।
তাই প্রেম ভালোবাসা আর কোন বিশেষ
অনুভূতি নয়,
শুধু একটা সময়মাত্রিক বিশেষণ হিসেবেই জেগে থাকে!!



মধুমাসের মধুচন্দ্রিমা
ডাগর কালো চোখ, ডালিমের মতো ঠোঁটের
ফাঁকে একঝলক সেই হাসি
চোখের আগুন ঠোঁটের ফাগুন, মন উদাসীর বাঁশি
আজ যেনো নিদারুণ সর্বনাশী
টিকলো নাক,মরাল গ্রীবা,উদ্ধত চিবুক, বুকের খাঁজে ভরাট উপতক্যা
শরীরের দুধসাদা শাড়িতেও বড় বেশীরকম স্বচ্ছ আজ ভালোবাসার কথা
সব মিলিয়ে মিশিয়ে যেনো মধুমাসের মধুচন্দ্রিমার ক্ষণ
আজ না হয় শরীরী প্রেমেই হোক নিভৃত অবসর যাপন   
শরীর যৌনতা উষ্ণতায় হোক আমার উপসংহার আমার একান্ত আপন কবিতা
বাকি সব তো আজ বড়ই আপেক্ষিক, ভেসে যাওয়া দোদুল্যমানতা।




দৃশ্যমানতা

আমার জিন্সের প্যান্ট তোদের খুব ভাবায় বুঝি
আমার আঁটোসাঁটো লং টপ উফ্ফ সেটাও অসহ্য
কাঁধের পাশ দিয়ে ব্রার স্ট্র্যাপ উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে কিনা তা নিয়েও বড্ড মাথাব্যথা যে-
রাত করে কাজের থেকে প্রতিদিন ফেরা
এটাও ঠিক হজম হওয়ার নয়,
মানে  অমুকের বা তমুকের স্বেচ্ছাচারিতার
মাশুল দিতে না চাওয়া মিসেস আমি,
হঠাৎ করে মিস হয়ে নিজের আকাশটাকে
সাজিয়ে নিতে চাইলেই বাঁকা দৃষ্টির জল্পনা!

আচ্ছা আমার পাঁচবছরের ছেলেটার হঠাৎ করে অনেকটা মানসিক বড় হয়ে ওঠা
ওর বিবর্ণ শুকনো মুখ-
দিনের পর দিন রাতের পর রাত ছেলেকে
আঁকড়ে ধরে আমার বেঁচে থাকা,
একটু সুস্থ ভাবে জীবন যাপনের জন্য আমার প্রাণপাত,
শখ সুখ আহ্লাদ সবকিছু থেকে নীরবে  স্বেচ্ছানির্বাসন ,
এসব ও নিশ্চই স্বচ্ছতায় চোখে আঙুল দিয়ে
চোখে পড়ার মতোই--
তাহলে তখন কেনো সবার তির্ষকভাবে পাশ
কাটিয়ে যাওয়া !

আসলে আলোচনা সমালোচনা ছাড়া
মেরুদন্ডহীন মানুষের
হয়তো গঠনমূলক কিছুই করার বা বলারও
বিশেষ থাকে না।
তাই তোদের এই বাঁকা দৃষ্টির ঝাঁজটা
আমাকে আর বিদ্ধ করে না
বরং বলা ভালো তোদের মতো অপাংত্তেয়
গুলোকে আমি ঠিক পাত্তা দিই না।

তাসের মতো ভেঙে পড়া ঘর একদিন আমি ঠিক সাজিয়ে তুলবই
আমার ছোট্ট ছেলেটা আবার হাসবে খেলবে সবুজ পৃথিবীতে দৌড়ে বেড়াবে
ততদিন আমার জিন্স আমার ব্রার স্ট্র্যাপ আমার রাত করে ফেরা
তোদের এই টক ঝাল রসালো আলোচনা গুলো আমি ফুৎকারে উড়িয়ে দিলাম
উদ্ধতএকরোখা দৃঢ়তায় হেঁটে গেলাম আমার অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে।


রুনা দত্ত

1 comment: