এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

মানবেন্দ্র ব‍্যানার্জী




ছড়াক্কা সমগ্র



আষাঢ়

আষাঢ় এলো ঝমঝমিয়ে পায়ে বেঁধে নূপুর |
গাছ গাছালি বৃষ্টি মাখে
কোকিল ভেজে কদম শাখে
দলছাড়া সব দামাল মেঘে
জমে জমে ঝরায় বেগে
হিসেব থেকে হারিয়ে যায় সকাল বিকেল দুপুর |



রঙ মিলান্তি

সারা বছর ভিজতে থাকি নানান কাজে কর্মে।
এক ঘেঁয়েমি ধরায় হাপ
মাথায় চড়ে কাজের চাপ
ফুলেল হাওয়ায় এসো ভেসে
একটুখানি মুচকি হেসে
রঙ করে নি চকলা ওঠা রগ্ চটা এই মর্মে।।




ফুলেল বর্ষা

হাসনুহানা আসবে রাতে জুই চামেলি সাথে
কদম মাখে বেদম কাদা
পাল তুলেছে কেউবা সাদা
বাতাস মাতে মধুর ঘ্রানে
দেয়া সাজে ফুলের টানে
কেতকী ফুল সুবাস ছড়ায় নদীর খর খাতে।




তেল

তেল দেওয়া এক বিশেষ শিল্প বিশ্ব চরাচর।
তুষ্ট এতে  মন্ত্রী নেতা
তেলে গলে জগৎ পিতা
লজ্জা শরম দাও ঘানিতে
ফলবে সুফল তেলকানিতে
হৃষ্ট মনে তুষ্ট কর আপন কি বা পর!


বসন্ত এসেছে

রঙিন হল শিমূল পলাশ ভরল ফুলে বন।
চাদর শীতে আবেশ উড়ে
কোকিল কুহু দিচ্ছে ছুঁড়ে
বেড়ে চলে চাঁদের কলা
ক'দিন  পরেই হোলি খেলা
বসন্ত তো এসেই গেছে ব‌ইছে সুপবন।



ছড়াক্কা

কাব্য ভুবন আলো করে এলো ওরে ছড়াক্কা
মহাকাব্যের সময় তো নেই
পোস্ট মডার্নে হারাই যে খেই
কোথায় পাব কাব্য মধু?
ছড়াক্কাতেই আছে যাদু
ছড়ার ব্যাটে ছন্দ বেটে চালাও ধুম ধড়াক্কা ।


সন্ত্রাসবাদ

রক্ত নিয়ে খেলা করে কচি কাঁচা প্রাণ
বিশ্ব জুড়ে এরা বালাই
মগজ কারা করল ধোলাই ?
মানবতার অবমাননা…
ধর্মপথের নাই ঠিকানা …
এদের মনে আলো জ্বেলে করো বিশ্ব ত্রাণ |




নতুন পোশাক

নতুন পোশাক পরলো ধরা কালোর ঘোমটা খুলে
সাজলো নদীর বালুচর
ছবির মতো মাটির ঘর
নীল আকাশে রোদের ঝালর
নকশা কাটা মেঘের চাদর
খুকুর মতো সাজলো সকাল শিশির ভেজা ফুলে।





ছড়া- ছড়াক্কা সংবাদ

ছড়া বলে ছড়াক্কা তোর চেহারা খুব বেটে |
ছয় চরণে চলিস পথ
কি যে তোর মনোরথ !
বলতে বলতে ফুরোয় কথা
নটে গাছের মুড়োয় মাথা |
তোর ব্যথাতে ছাতি আমার যাবে বুঝি ফেটে !

ছড়াক্কা খুব ভেবে বলে হাতে মাথা খুটে |
আমি তো তোর জাতি ভাই
তোর সঙ্গে তো বিরোধ নাই
দুজন আমরা সুজন হই
অন্তমিলের উড়োই খই
বেশি কিছু বললে হাঁড়ি ভাঙবো আমি হাটে|




রাঙিয়ে দিয়ে যাও

তীরের পাশে আছি বসে ছোট্ট আমার নাও ।
অচিন পুরের পথের দিশা
জানি না হে--এ ঘোর নিশা
চারি পাশে,ধরো এসে
দুটি হাতে--ভালোবেসে।
আঁধার মনে তোমার আলোয় রাঙিয়ে দিয়ে যাও।




প্রেমের কোন দিবস নেই--

একটি দিবস প্রেমের জন‍্য একটি গোলাপ ফুলের !
প্রেমের জন‍্য খুঁড়ে মাথা
খুলবে প্রেমের নতুন খাতা!
কিন্তু প্রেম কি দিন ক্ষণ মেনে--
আসে গহীন গোপন মনে--?
বরং একটা দিবস চাইই কথার খেলাপ,ভুলের।





অভিনব

এই বসন্ত এই স্নিগ্ধ রাত --কবি সব‌ই তব।
এই যে জগৎ--ক্ষুধার রাজ‍্য
করছো তুমি --নিত‍্য সহ‍্য
ভালো মন্দ ব‍্যথাদীর্ন
সুখে দুঃখে পরিপূর্ণ
সে সব সত‍্য কাব‍্য হয়ে  উঠুক অভিনব।




হরির লুঠ

ঝুটা ভাষণ শুনে শুনে যাচ্ছে ভরে দু'কান ।
মুঠা মুঠা নোটের থাড়া
যাচ্ছে উড়ে আইন ছাড়া
খাচ্ছে যাদের আছে খুঁটি
ধরছে চেপে তোমার টুঁটি
হরির লুঠে খাচ্ছে খুঁটে আছে যাদের দোকান।



ছড়াক্কা

ছড়াক্কা এক নতুন চিন্তার কাব্য স্থাপত্য |
গুরুগম্ভীর ভাবের কথা
কিংবা চটুল কথকতা
সমাজ ধর্ম জীবন যাত্রা
সবই পাচ্ছে নবীন মাত্রা
বাংলা কাব্যের নোটন পালক একথাটি সত্য ||



রাজনীতি

রাজনীতির যা হালহকিকৎ, ক্ষুধার্ত এক উদর!
প্রোমোটারি আনে টেনে
জমিজায়গা বেচেকেনে
গণেশের ভুড়ি বেড়ে চলে
ন্যায়ের শাসন গিলে ফেলে
খুন খারাবি হাবিজাবি ভ্রষ্টনীতির আসর !



কার্টুন

কোমল মনে আঘাত হানে রঙ বেরঙের কার্টুন
কাড়ছে ছড়া কাড়ছে পড়া
নিচ্ছে কেড়ে নড়াচড়া
কুয়োর মধ‍্যে  বেঁধে রাখে
চশমা আসে কচি চোখে
কোথায় যাচ্ছি আজকের আমরা বলতে পারে ফরচুন।



শতবর্ষ পরে  

জল দাও --জল দাও-- চারিদিকে উঠছে আর্ত রব!
সাগর জলে ছলছল
ব‌ইছে না নদী কলকল
দিকেদিকে ঊষর মরু
চিহ্ন নেই কো গুল্ম তরুর
ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পড়ে জীব জন্তুর শব ।



কূপমণ্ডূক

থাকি বসে আপন মনে গৃহকোণে---
মরচে ধরা অন্ধকারে
দরজা সব বন্ধকরে
জ্ঞানকে করে বর্জিত
অতীত করি চর্বিত
মনের কথা রাখি পুষে সঙ্গোপনে।



মহিষাসুর

আলোর চেয়ে আঁধার বেশি ঢাকা পড়ে মহতী সুর
দিকে দিকে খুন খারাপি
বাহুবলীর দাপাদাপি
দেশের মাটি উঠে কেঁপে
রক্ত বৃষ্টি আসে ঝেঁপে
রাজনীতির ঐ মুক্তাঞ্চলে তাণ্ডবরত মহিষাসুর



Passage রেখো

বাড়ি করবে?সামনে রেখো একটু খানি Passage
ফুলের ফলের দিবে বাগান
পাখি এসে গাইবে যে গান
রঙ বেরঙের প্রজাপতি
এলেই বা কি তোমার ক্ষতি?
পরিবেশ কে সুস্থ রাখার এটাই হবে Message ।



চন্দ্র গ্রহন

রাহু কি আকাশে পেতেছিল ফাঁদ?
দিগন্ত ধোয়া আলোকে
ঢেউ উঠেছিল ভূলোকে
দখিনা বাতাসের দোলা
মেঘেরা যেন পালতোলা---
হঠাৎ দেখি খেয়েছে কে একটা আস্ত চাঁদ!



স্মৃতিডোর  (হাই-ড়াক্কা  || মাত্রাবৃত্ত ছন্দ )

মহালয়ার মন্ত্র ভেজা স্নিগ্ধ আলো ভোর |
নদীর স্রোতে                                      
পূর্বপুরুষের    
স্মৃতি তর্পণ    
আত্মদর্পণ |   
বাঁধলো আজ বেদনা ভরা পরমাত্মীয় ডোর |



কুড়িয়ে পাওয়া  (হাই-ড়াক্কা  || মাত্রাবৃত্ত ছন্দ )

কুড়িয়ে পাওয়া যেত যদি একটু বেশি সময়
রাঙিয়ে নিতাম অবসরে
জীবনটাকে নতুন করে
সাজিয়ে দিতাম--রঙিন কাগজ
জটিল ভাঁজে করতাম সহজ
বাঁচার মতো বাঁচা হতো--সেটাও তো কম নয় !


আষাঢ়

আষাঢ় এলো ঝম্ ঝমিয়ে পায়ে জলের নূপুর |
গাছ গাছালি বৃষ্টি মাখে
কোকিল ভিজে কদম শাখে
দল ছাড়া সব দামাল মেঘে
বাদল জমে ঝরায় বেগে
হিসেব থেকে হারিয়ে যায় সকাল বিকেল দুপুর |


খেলনা-বন্দুক

বীর পুরুষ যে হতেই হবে খেলনা-বন্দুক হাতে!
দোকানেতে মেলে মেলা
যুদ্ধ যুদ্ধ খেলবে খেলা
আসল নকল নয়তো বিষয়
রক্ত স্রোতে জাগে বিস্ময়
বন্দুক নলেই চলে শাসন যুগ যুগান্ত হতে।


শিক্ষক

শিক্ষা গুরু কল্পতরু দিলেন জ্ঞানের শিক্ষা
গুরু নিন্দা নানান ছলে--
যাচ্ছে সমাজ রসাতলে--
কেউ করলে হায় কোন ত্রুটি
গুরুকুলকে দেয় ভ্রূকুটি
সর্বক্ষেত্রে নিচ্ছে সমাজ ধৈর্য্য হারার দীক্ষা!


ভ‍্যালেন্টাইন ডে  

উটকো ঝঞ্ঝাট এলো উড়ে ভ‍্যালেন টাইন ডে
প্রেম কি আসে দিন ক্ষণ মেনে
বৃথা সবাই গোলাপ কেনে
হৃদয় নদী উতাল হলে
জোয়ার আসে প্রেমের জলে
আসে সে যে  নীরব ভাবে কী বা নাইট ডে।


ছড়াক্কা এক পানসি তরি

ছড়াক্কা এক পানসি তরি কাল্ স্রোতের নাও
শিউলি ঝরা অরুণ প্রাতে
শরৎ এসে বসলো তাতে
আকাশ,দীঘি উঠে সেজে
আগমনি উঠলো বেজে
মাঝি তোমার ছোট্ট তরি মনের সুখে বাও |



গাছ লাগিও নিজের হাতে

                  
মানুষ বড় বুদ্ধিমান সে সকল জীবের গুরু
চালায় গাড়ি উড়োয় জাহাজ
গরম বিশ্ব বানায় যে আজ
কুঠার হাতে পরশুরাম
গাছ কাটার যে কী পরিনাম
বোঝে না সে ,কাটতে থাকে বৃক্ষ গুল্ম তরু।

                        
ধাত্রীমাতার বুকের মাঝে হেনো না আর শূল
এবার তোমার ফেরাও মতি
করো না আর গাছের ক্ষতি
গাছের জীবন বাঁচায় বিশ্ব
ন‌ইলে জগৎ হবে নিঃস্ব
গাছ লাগিও নিজের হাতে আর করোনা ভুল।

                      
গাছ লাগিয়ে বেড়া দিও সময় মতো জল
করতে হবে পরিচর্যা
হয়তো হবে একটু খরচা
বাড়বে চারা হবে বৃক্ষ
গাছকে যদি তুমি রক্ষ
বায়ু দেবে ফুল ফোটাবে দেবে স্বাদু ফল।


প্রেম

প্রেমের ছোঁয়ায় মানব জীবন হয়েছে আজ ধন‍্য।
বিদীর্ণ হিয়ায় সহানুভূতি
একটু পেলে এমন কি ক্ষতি!
জীবন যখন তপ্ত নিদাঘ
রেখে যায় ছাপ গভীর দাগ
প্রেমের আলোয় পূর্ণ জীবন ন‌ইলে সব‌ই শূন‍্য।


রবিবার

স্মৃতি মেদুর হয়ে উঠি এসে গেলে রবিবার
বাবা কাকা জ‍্যেঠু জুটি
পড়াশুনায় দিতেন ছুটি
আসর ছিল গল্পবলার
দিনটা ছিল কলার তোলার
কাজের চাপে এখন যে হায়!সময় নেইকো মরিবার।


শ্রাবণী দিন

কাজল কালো সকাল বেলা সজল মেঘের খেলা |
দুপুরবেলা মেঘের ঘটা
শ্রাবণ ভেজা বিকেলেতে
হারিয়েছে আলোর ছটা
সন্ধ্যা নামে সাঁজ নিতে
আকাশ গাঙে ডুবে গেছে হাজার তারার মেলা  |



ভয়

মেরু মজ্জায় ঘুণ ধরেছে হাড়ে অবক্ষয়
সমাজ নামক শক্ত কাঠে
মূল‍্যবোধ আজ উঠলো লাটে
দিনে রাতে ঘুরছে হায়না
দেখতে পাই না মনের আয়না
পা ফেলালেই ঘরের থেকে জাগে মনে ভয়।



ভুঁড়ি

বড় মামার ভুঁড়ি খানা যেন বড় জালা
আশি ইঞ্চি ইআ ছাতি
চললে যেন হাঁটে হাতি
গায়ের মাপে পান না জামা
লুচি সাঁটেন ধামা ধামা
গপ্ গপা গপ্ মিষ্টি টানেন, ভাত খাবেন চার থালা।


অসহিষ্ণুতা

খোয়াই তীরে দাঁড়িয়ে দেখি সময় বড় ক্ষয়িষ্ণু
সময় নয় তো এ যে নদী
ব‌য়ে চলে নিরবধি
যেটুকু যা ছিলো খাঁটি
যাচ্ছে ক্ষয়ে যেন মাটি
কাজে কর্মে প্রেমে ধর্মে মানুষ আজ অসহিষ্ণু!



আবহমান

জীবন হাটের ফেরিওলা আমরা হাটুরে
কালে কালে বসছে হাট
বদলে রকম পাল্টায় ঠাট
কখনো বনে কখনো গ্রামে
করি বসত ধরা ধামে
বনে বনে কেটেছি কাঠ আমরা কাঠুরে।



মৌসুমীদি কেরল কূলে

মৌসম ভবন দেখে শুনে মাথায় তুলে হাত…
মৌসুমীদি খেলার ছলে
বসে থাকেন কেরল কূলে
সমীরণদার সঙ্গে আড়ি
চলার নেইকো তাড়াতাড়ি
ভ্যাপসা গরম হা হুতাশে কাটে না দিনরাত !



আড্ডা শেষের পরে

ছড়াক্কা তার মুদলো আজি রাত জাগানো আঁখি
সময় গেলো গড়িয়ে রাতের
র‌ইলো যে সব কথা আঁতের
হবেই হবে বলতে সবে
মনের পাতা পাড়া রবে
কবি মনের হাট দুয়ারে বেঁধে রাখি রাখী।



বর্ষা-ভর্সা

আম কাঁঠালে ধরলো পাকন আসুক এবার বর্ষা…
জৈষ্ঠ্য মাসের খর তাপে
মানুষ জন উঠে ভেপে
রুখা শুখা মাঠের মাটি
জল ধারায় হবে খাঁটি
বাংলাদেশে বৃষ্টিবাদল চাষী ভাইয়ের ভর্সা |



কিস্ মিস্
কিসের জন‍্য মাতামাতি কাদের ভালো কিসমৎ?
হুজুগ আসে সারিসারি
শুদ্ধ বাতাস হয় রে ভারি
মানুষ এখন বড়োই খোকা
খায় যে লাথি, খায় যে ধোঁকা
কিসমিস হলে নিচ্ছে ঢেলে গলায় বিষমদ।



রবীন্দ্র-তন্দ্রা

আজকে তখন বোশেখ রোদে ঢুলুঢুলু দুপুর
অ আ বলে ছোট খোকা
ছোট নদী আকা-বাঁকা
বড় ব‌উটি ভাত বাড়ে
গাছেরা সব পাতা নাড়ে
ভাত ঘুমেতে এসে দাঁড়ান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর!

মানবেন্দ্র ব‍্যানার্জী

রামকৃষ্ণপল্লী, অরবিন্দ নগর (উঃ)
বাঁকুড়া,৭২২১০১


1 comment:

  1. প্রতিটি কবিতার ছন্দে মন ভরপুর হয়ে গেল !!!

    ReplyDelete