কবিতা (সাধারণ বিভাগ)
ভিখারী
ছাইভস্ম একটি জীবন ক্লান্ত হাত পেতে ছেঁড়া কাঁথায়,
ঘুপচি জীবন কিংবা ফুটপাতে গড়াগড়ি পয়সার আওয়াজ ছন্দপতন ঝংকার ফুটো থালা।
গ্রহন গিলে খায় সংলাপ ভিখারী বৃদ্ধার ঝোলা স্তন,
শুকনো ছানা কাটা দুধ অভাব ধূলোয় মুখ মোছা শিশু।
GST এর চাপে মধ্যবিত্তর মাথায় হাত অপদার্থ সঠিক ভিখারীর মর্মাথ দিতে।
তাই বিকানো সখের হাহুতাশ, বহুরূপী সাজে কাজলের রেখায় সাহসী চোখের ঢঙ।
হাত পেতে তীর্থের সাদা কাক ঘরের চৌকাঠে,
ফেরারী চাতক, দাও দাও ভোট, তোমরাই আজ ঈশ্বর, আপামর জনতা আমার।
কাল দেবো তোমাদের অট্টালিকায় মুড়ে।
আজ ঠোঁটরাও পতঙ্গ হয় প্রজাপতির ভিখারীর ডানা,
ফিরে ফিরে হতভাগা যাচে তোমার মৌ জমা প্রতিশ্রুতির বিষ।
বিষাদে সূর্যপোড়া ছাই আজ চায় তোমার সঙ্গমের প্রলাপ।
চেনা বাঁশির পুরানো সুর সংসার নেই নেই হাততোলা বার্ধক্য পিতামাতা যথেচ্ছ সন্ততির ভোগ বিলাসিতা।
বেকারে ফোঁস ফোঁস বিষাক্ত সর্পের দীর্ঘশ্বাস,
খাতার পর খাতা রদ্দী পাশ ফেল ফেলে টাকার গদির ঘুষ।
চাই অর্থ চাই রোজগার সেই এক কানপচা স্লোগান।
না হলে দেনার দায়ে আত্মহত্যা, এযাবৎকাল পড়াশুনা ভস্মে ঘি ঢালা।
বইমেলা
চালচুলোহীন হাভাতে দোলা বাগদীর ছেলের কাছে,
তুমি নিষ্প্রয়োজন এঁটো চায়ের কাপে যাপনচিত্র।
সাঁঝ দোকানের ঝাঁপ ভবিষ্যত পাশ ফিরে শোয়।।
লেখক মন খাঁচার পাখি স্বাধীনতার আশাবরী রাগ,
ঝাপসা স্মৃতি টুকে রাখে অভিমানের ক্লান্ত বেলা।
টুকরো খন্ডচিত্র কান্নাহাসি পলকে ছারখার ধ্বংসলীলা।।
অপোগন্ড বন্ধুগুলো আড্ডা জমায় বোতল বেশি খোলে,
তুমি হলে বইপোকা পুঁথিগত বিদ্যায় মুখ গুঁজে।
ঔদাসীন্য কর্ণপাত বাস্তব জীবনের প্রেক্ষাপটে।
নিশিজল তোলা গৃহে বরন কুমোদিনী তোমার সংসারে,
শুধু কপালে জোটে তোমার মুখঝামটা।।
পলাশরাঙাভোর বইমেলায় আমি ভ্রান্ত পথিক,
ঝলসে উঠা বিলাসিতা অট্টালিকার পাতার পর পাতা,
ধামসা মাদল বুকে আনচান উন্নত সমৃদ্ধ জীবন।
মড়কলাগা গাছগাছালির হাঘরে জীবন বস্তাপচা রদ্দী তুমি,
আজ শুধু মানিয়ে নেওয়ার খেলা।
থুঁতনি ভাঁজে দাড়ি মানানসই জ্ঞানের সামঞ্জস্য।।
উথালপাতাল আধডোবা মন,
বইমেলায় জ্ঞানের ছড়াছড়ি ঘটা করে তোমার প্রদর্শনীর সংগ্রহশালা।
হাজার দুর্বিপাকে ছাপোষা মানুষ খাতার পাতায় ঠেসে,
তিল পরিমান দুষ্প্রাপ্য বই তোমাকে ঘরে এনে,
চিবুকে বসায় স্বপ্নের নৈঃশব্দ শিখায়,
উজ্জ্বল হাড়ভাঙা দ্যুতি।
ঘুম ভাঙতে নারাজ স্বর্ণালী আগামী,
ঐখানে তোর থাকার কথা, ঐখানে তুই থাক।।
অণুগল্প
চেনা শূন্যতা
একরাশ দমচাপা ক্ষোভ গুম খেয়ে কখন থেকে বসে। কিছু একটা টানাপোড়েন গায়ে পড়া উপচে আগন্তুক, ছাড়ো না বাবা একবার একলা, নিজেকে নিজের মতন গুছিয়ে নিই। খুটুর খুটুর ল্যাপটপে পাশবালিশ ঘেঁষটে, কি যে কর ঘাড় হেঁট একাগ্রচিত্তে? দৃষ্টি নিরীক্ষণে সংসার গোছানা স্বত্তা গুটিয়ে হাতটান রাশভারী, আজ অন্য দিনের তুলনায় তুমি বেশ ঝলমলে। বিধ্বস্ত ভাব যেন কোথায় গেছে উড়ে। কিছুতো বিশেষ আস্কারা আছে যা গুটি গুটি মননে দ্বন্দ্ব পরকীয়া, নেই ভ্রূক্ষেপ নিজ স্ত্রীর। বস্তাপচা কপচানো মুখভার দিনরাত সংসারে সঙ সেজে হেঁশেল আর দুধেলা বাচ্ছাদের ঝকমারি। গোলাপের প্রতিশ্রুতির প্রথম অঙ্গীকার প্রনয়, সতেরো বার বলতে থেকে কাজ হাসিলে এখন অপ্রচলিত প্যাঁনপ্যাঁন তোমার আবদার। বয়স বাড়ছে এখন এসব কি আর মানায় যত বুড়ো বয়সের ন্যাকামো। দ্বন্দ্ব চলছে মনে আর সেই ক্ষত এখন শুকনো আঁচড়। তোমার মুখের এক কপচানো থেকে গলদঘর্ম অপ্রিয় সত্য ভাষনে পন্ডশ্রম । তোমার সংসারে করে কি লাভ? ভবিষ্যতের সিঁড়ি ভাঙা অঙ্কে হাত কাঁপানো,মাথায় চাপ কফিতে চুমুকে উষ্ণতায় মেটানো দায় বদ্ধ। কড়িকাঠ খোলা হাওয়া অবরুদ্ধ। করতে মন কোথায় তবুও একে অপরের দিকে তাকিয়ে বেমালুম কাটিয়ে দিলাম বিশ বছর। রাতের মধুচন্দ্রিমা এখন বাক্সবন্দী দুচোখ চেনা শূন্যতায় হাতড়ায় নিষ্প্রান কাল্পনিক শরীর। ঘরের মেঝে উঠোন সব আমার তিলে তিলে গড়া ছোট সংসার। হাড়পাঁজর কোন অচেনা আগন্তুক শ্বাপদের দাঁতের তলায় পিষতে থাকে গোছানো সুখ। চিরকুট হৃদয় রোজ লেখে চিঠি অবাক শূন্যতায়। তোমাকে কাছে টানবে আজ একটু কিন্তু তুমি সুগন্ধী সাবানের ঘেরাটোপে নৈশ প্রসাধনীতে মত্ত পরে নাইটিতে রজনীর যাপনচিত্র। হতাম যদি সুতো পুরানো গাঁটছোলার বস্তাপচা রদ্দি নয়। আঠালো রেশম গুটিসুটি বাঁধতাম বক্ষযুগল টানতাম রাশ শুনতাম হৃদস্পন্দন বক্ষে নিতাম আস্কারা। হতাম শৈশব স্তনপানে পেতাম প্রশয়। হতাম যদি প্রসাধন তোমার স্নিগ্ধ চুলে অঙ্গুলীচারনায় আলিঙ্গনে জটে আবদ্ধ নৈশিল মাদকতায়।
নিতাম চুম্বন লিপস্টিকের রঙীন বসন্ত প্রচ্ছদে হতাম পর্নমোচী পত্র পেতাম তোমার খোলা হাওয়া। দূর সবকিছু পাশে থেকেও অনতিক্রম্য একরাশ দুরত্ব। পিঠের শিঁড়দারা যেন লতানো মাছের কোমরের কাঁটা, শেষ লেশটুকু চেটেপুটে শেষ পাতে উপাদেয় ভোগ্য রাতে। পাতের কোনে সরিয়ে রাখি চুষে মাছের কাঁটা।দূর সবকিছুই চোখের বায়স্কোপে চলতে থাকা সিনেমাটোগ্রাফি।সব চরিত্র এখানে কাল্পনিক। অন্ধ প্রত্যাশার চোরাপথে গুপ্তহত্যা।মুখ বুজে অশ্রুজল বালিশের পাষানপ্রস্তরে স্রোতসিনী ঝর্না কুল কুল শব্দে তোমাকে চাই আমার কাছে বলে প্রতিধ্বনি চোখের কোলে জমায় মেঘ।ওদিকে তুমি নির্বাক প্রনয়াষ্পদ হীন খটখটে রৌদ্রদগ্ধ শরীর অবহেলায় নিজের কাজ গুছিয়ে বিশ্রামের কোলে পাশ ফিরে আড়িঠেস যেন অনেক আগেই সব প্রাপ্তি শেষ অপূর্ন সার্থকতায় ছাইয়ে চাপা পড়া ধিকি ধিকি আগুন। আমারো আছে বিনিদ্র রজনীর যাপনচিত্র ল্যাপটপের ক্যানভাসে অপ্সরা পরকীয়া। নিঃশ্চুপে ডুব দিয়ে তার নৈশিল মাদকতায় বাঁধতে লেগেছি তোমার পশ্চাদপানে অনভিজ্ঞ উচাটনে উন্মুখ প্রত্যাশা। আগুনের পরশমনি নিজ আয়োজনে নতুন প্রস্তুতি আগমনী বসন্ত অপরূপা অভিসন্ধি। শুকনো অজয় নদীর চরায় বৃষ্টি হয়ে অঝোর ধারায় ঝড়ে পরো আমার বুকে আমি পিপাসার্ত গলাফাটা চীৎকারে ক্রন্দনে চাতক। গাঁয়ের বকাটে ছেলে পুকুড়পাড়ে সন্ধ্যামনির সৌগন্ধে আর কচু পাতার টলমলে নধরকান্তির গড়নের ঝোপে আত্মগোপনে উন্মুখ উদাসী রোমান্টিকতায় আস্কারার উচ্ছাসে বেপরোয়া মন দূরে ডুব দিত সাঁওতাল কুমারীর সন্ধ্যাস্নানে। পূর্নিমার চন্দ্র ঢালতে লেগেছে জোৎস্না বাছবিছার বাদে শুদ্ধি স্নানে উষ্ণ প্রসবন এলোপাথারি চুম্বন আকাশের বাউন্ডুলে মেঘ এলোমেলো। কি অপরুপ সেই অঙ্গশোভা দিগন্তহারা পথিক অখিল আস্বাদনে কম্পিত সুধা রসময়ী। শিহরনে মৃদুমন্দ বাতাস অঙ্গুলীচারনায় আবদার ছোঁয়ার। পুলকিত তমসা কলসী কাঁখে ঘরে ফেরে আমাকে অবাঞ্চিত পিপাসার্ত রেখে দুচোখে কষ্টার্জিত কল্পনা তৃষ্ণা মেটায় আঙ্গিকে মিটিমিটি সমুদ্র
কনা দুচোখের চেনা শূন্যতায় আমাকে হারায়। আজ আমার বদ্ধ আতিশয্যে সমাজের স্বাক্ষরিত তকমার পরিনয় দমবন্ধ বিষাক্ত সাপ শ্বাসরোধ করে। দীর্ঘশ্বাসে ল্যাপটপের কোলে জমাটি ঘুম অর্ধস্বত্তা। চন্দ্রমা হারায় মধ্যগগনে মেঘের কোলে একদিন তো তুমি আমারি ছিলে। খুটুর খুটুর ল্যাপটপে কি করছো মাঝরাত অবধি শুতে যাবে না। হঠাৎ ভেঙে যায় আমার নিঃসঙ্গ জ্যোৎস্না একা চাঁদ একা রাত।ডানা মেলে বিহঙ্গ বলাকা উড়ে গেল সেই পুকুরপাড়ের পরিত্যক্ত তমসা বাকি রেখে। অচ্ছুত অস্তিত্ব।
সুপ্রীতি বর্মন। |
No comments:
Post a Comment