এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

বনবীথি পাত্র




কবিতা (সাধারণ বিভাগ)



মেয়েমানুষের লাশ

.
পাটের ক্ষেতে নাকি একটা লাশ পাওয়া গেছে ,
মেয়েমানুষের লাশ ....
গায়ে নাকি লজ্জাবস্ত্রটুকুও নাই ।
ছেলে , বুড়ো , কচি-কাঁচা সবাই ছুটছে লাশ দেখতে ,
যেমন করে সবাই দলবেঁধে যায় গাজনের মেলায় ।
রক্তমাখা শাড়িটা এলিয়ে আছে ধূলোয় ,
ঠোঁটের কষ বেয়ে গড়িয়ে আসা রক্তে
ভিড় জমিয়েছে খানকতক মাছি ,,
আর সারা শরীরে ভিড় জমিয়েছে
কিছু লোলুপ পুরুষ দৃষ্টি ।
মৃত শরীর থেকেই চেটে নিচ্ছে তার
বেঁচে যাওয়া নারীত্বটুকু.......
টিভি আর খবরের কাগজের লোক এসেছে ছবি তুলতে ।
ক্যামেরার আলো মুহুর্মুহু ছুঁয়ে যাচ্ছে
নারীদেহের গোপনীয়তাকে.....
মরেও শান্তি নেই ,
হলেই বা লাশ .......
ও তো মেয়েমানুষের লাশ !!!!




চোদ্দ_পিদিম
.
সবার বাড়িতে আলো জ্বলেছে ,
ছোট্ট কুঁড়েটা আজও অন্ধকার ।
তুলসীতলায় প্রতিদিনের মত সাঁঝের পিদিম খানা জ্বেলে দিয়েছে বাতাসী ।
সেই পিদিমের একটু আলো এসে পড়েছে দাওয়াতে ।
.
আষাঢ়ের এক বাদল ঝরা রাতে ,
রতনের চোখে নিজেকে প্রথমবার  দেখেছিল বাতাসী ....
লজ্জায় মুখ গুঁজেছিল রতনের লোমশ বুকে ,
নতুন মানুষ , নতুন সংসার ,
বেশ কাটছিল দিনগুলি.....
দুগ্গা ঠাকুর আটনে ওঠার আগেই এসেছিল
সেই নতুন খবর ।
দাইমা বলেছিল , নতুন অতিথি আসছে ঘরে ।
খুশিতে দুহাতে মুখ ঢেকেছিল বাতাসী ।
ওটা পেটে আসার পর থেকে
আঁধার সইতে পারতো না কিছুতেই ,
অজানা কালো ভয় যেন তাড়া করতো তাকে ।
সবার ঘরে চতুদ্দশীর পিদিম জ্বলছিল সেবারেও ,
চোদ্দ পিদিমের কথা বলতেই
রতন ছুটেছিল বাজারে ,
পোয়াতি বৌয়ের সাধ অপূর্ণ রাখতে নেই যে ........
পিদিম নিয়ে রতন ফেরেনি ,
ফিরেছিল রতনের সাপেকাটা শরীরটা......
.
বাপ মরার আগেই
সোহাগ করে নাম রেখেছিল "আলো" ,
অথচ ঈশ্বর তার চোখে আলোই দিলেন না !!!!!
বাতাসীর আর আঁধারকে ভয় পায়না ,
আঁধার এখন তার বেশ লাগে ।
.
.
চোদ্দটা বছর কেটে গেছে ,
ছোট কুঁড়েতে চোদ্দ পিদিম আজো জ্বলেনি ।



বনবীথি পাত্র

No comments:

Post a Comment