এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

অভিষেক মিত্র





কবিতা (সাধারণ বিভাগ)




ইনফিনিটি

পঁচিশ তলা, রসায়ন ল্যাব।
বসন্ত ফিরে আসে, ‘উইথ এ ব্যাং,’ – দেখ পৃথিবী!
তারপর, দুনিয়ার চারটে দেওয়াল ঢেকে দেয় রঙিন কাঁচে;
সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে একাকীত্বে, সঙ্গী হেডফোন আর ই-টিভি।

আমিও কান পেতে শুনি। ছোট্ট ছেলেটার
ক্ষুধার্ত চিৎকার, ‘সন্ধ্য প্রতিদিন, সান্ধ্য স্টেসম্যান,’ - শুকনো,
সবাইকে ঘিরে থাকে ঐশ্বরিক ইলেক্ট্রো-ম্যাগ্নেট।
নোংরা কথা, চলে যেতে না চাওয়া, নীচে স্টিরিওটাইপ ফুটনোট।
আর ঝর্ণাগুলো, ভিনগ্রহীর মত বসে থাকে বর্ডারে।
দেখে সূর্যাস্ত কিভাবে বদলে দেয় সৌন্দর্যের সংজ্ঞা।
কি কল্পনা! পারি না!
একটা শূন্যতা ছড়িয়ে পড়ে, আস্তে আস্তে
জীবনটা মুহূর্তে বদলায়, সুদীপ আর জারিনার...

তাকিয়ে দেখি চারিদিক,
একটা নতুন কান্না – বুলেটের মত ছুঁয়ে যায় দেহ, গির্জায়;
সবাই ব্যস্ত কানের হেডফোনটা নিয়ে,
নাড়িভুঁড়ি ছড়িয়ে আছে রাস্তায়, মৃত্যুটাও অল্প একটু ভিড় চায়...

আজ ডিএনএ-গুলো, ভিন্ন হয়েও এক,
আজকে আমরা সবাই নিম্ফোম্যানিয়্যাক।






অনুগল্প




হাত

ডাঃ সান্যাল গলায় ঝলানো স্টেথোটা টেবিলের উপর রেখে বললেন, “না, আপনার রিপোর্ট একদম নর্মাল। যদিও সিটি স্ক্যানের রিপোর্টটা পাইনি এখনও তবু...”

টেবিলের উল্টো দিকের চেয়ারে মাথা নিচু করে বসে ছিল শুভাশিস। আস্তে আস্তে বলল, “তাহলে ডাক্তার বাবু?”

“আমার মনে হয় আপনি একবার কোন সাইক্রায়াটিস্ট দেখান। এটা শারীরিক রোগ নয়। আমার এক বন্ধু আছে ডাঃ কার্তিক মল্ল, তাঁকে বরং একবার ...”

ডাঃ সান্যালের কোথা শেষ করতে দিল না শুভাশিস, প্রায় চেঁচিয়ে উঠে বলল, “আমি পাগল নই ডাক্তারবাবু। আমি পাগল নই। আপনারা কেন বিশ্বাস করছেন না? আমি সত্যি বলছি, আমার হাত দুটো আমার কথা শুনছে না। আমার হাত দুটো যেন দুটো আলাদা এন্টিটি। আর এইটা শুরু হয়েছে গত হপ্তা দুয়েক। আর এই দু হপ্তায় আমার বিরুদ্ধে তিনটে এফ আই আর হয়ে গেছে। আমার বন্ধুকে প্রায় মেরে ফেলছিলাম আমি। আর পারছি না ডাক্তারবাবু, আমি আর পারছি না...” এই বলে মাথা হেট করে কাঁদতে লাগোল শুভাশিস।

এই ঘটনার আরও দু সপ্তাহ কেটে গেল। নতুন ডাক্তার আর নতুন ওষুধ খেয়েও কোন ফল হল না। নিজেকে ঘরের মধ্যে সারাদিন আকটে রাখে শুভাশিস, জনসমক্ষে গেলে পাছে কারুর কোন ক্ষতি করে ফেলে ওর ‘হাত’ দুটো।

‘কিন্তু আর না,’ মনে মনে ভাবে ও, ‘এই ভাবে বেঁচে থাকার থেকে মরে যাওয়া ঢের ভালো।’

সেদিন সন্ধ্যের দিকে শুভাশিস ধীর পায়ে এগিয়ে গেল ওর বাড়ির লাগয়া কাঠের কারখানাটার দিকে। তারপর সুইচ টিপে চালু করে দিল ‘টেবিল স’ টা (Table Saw)। ঘড় ঘড় শব্দে চলতে লাগল যন্ত্র। চোখ বন্ধ করে অনেক কষ্টে হাত দুটো এগিয়ে দিল মেশিনটার তলায়।

লালবাজারের সিনিয়ার ইন্সপেক্টর মিঃ নাগ কারখানাটায় ঢুকেই রুমাল বের করে নাকে চাপা দিল।  ওনাকে আসতে দেখে সাব-ইন্সপেক্টর এসে বলল, “যাচ্ছে তাই ব্যাপার স্যার। নিজেই নিজের হাত কেটে ফেলেছে টেবিল স-এ। আর তারপর অত্যাধিক রক্তক্ষরণের ফলে মৃত্যু।” তারপর একটু থেমে বললেন, “আর একটা অদ্ভুত ব্যাপার, লোকটা হাত তো কাটলো কিন্তু হাত দুটো গেল কোথায়? এখানে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তো সে দুটোকে পেলাম না।”


*****

অভিষেক মিত্র
(সম্পাদক - অযোগবাহ সাহিত্য পত্রিকা,
ঋতুযান সাহিত্য পত্রিকা)
ঠিকানা ১ – D-2, Flat No – 504,
OCL New Colony,
Rajgangpur, Orissa – 770017
ঠিকানা ২ - c/o Dr. Pabitra Mitra, Nungi Station Road, Batanagar, Kol - 700140
ফোন - ০৯৪৩৮২০০১৯৮

No comments:

Post a Comment