এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

বিশ্বজিৎ লায়েক




সিরিজ কবিতা




শরীরে সরীসৃপ


১১।
আয়নার সামনে দাঁড়ালাম
মনে হল বাঁ হাত ডানদিকে সরে গেছে
ডান হাত বাঁ দিকে

এই তো সোনা রুপা তামার খনি
গোটা গোটা অক্ষরে লেখা
টাকা মাটি মাটি টাকা

পকেটভর্তি মাটি কুড়োচ্ছি আমি
পকেট ভর্তি টাকা
আর সব ভেসে যাচ্ছে ছড়ানো খড়কুটো
আমি এই সভ্যতার জল
আমি এই সভ্যতার মাটি

ডুবে যাচ্ছি ভেসে উঠছি
খননের ভেতর আদিম অবয়ব


১২।
বাড়ির গল্প শোনাব বলে রৌদ্রের গল্প বলি
ছাদের টবে মৃত গাছেদের কথাও বলি
তোমার সঙ্গে কতকাল দেখা হয়নি
ওইখানে ঘুমিয়ে আছে বিয়ের পাঞ্জাবি
                  নীলবর্ণ বিষাদ

আর কতটুকু টেনে রাখবে আমাকে
এবার ঠিকঠাক তুলে নাও
ক্রমাগত ভুল মেখে মেখে আমার শরীর তীব্র আঠালো
যা কিছু ছোঁয়াচ্ছি শরীর নিচ্ছে টেনে
ফিরিয়ে দিচ্ছে কিছু লবণ ও জল

বাকিটুকু অসুখ পড়ে থাকুক রাস্তায়
                  বাকিটুকু স্বর্গও



১৩।
ঘুম থেকে জেগে উঠল আধমরা সাপ
আমি এই আবহাওয়া চাইনি
সর্বস্ব দিয়ে থুয়ে আমার এখন শামুকের গতি
দেওয়ালের গায়ে যারা লিখেছিল আদিম লোকগান
আজ তারা গাইছে মৃত ঘিলুর আস্বাদ
এইসব কিছু না ভেবেই আমি হাঁটতে বেরিয়েছি আজ
না, আমার কোনো তাড়া নেই
আপাতত আমি কোথাও যাচ্ছি না

এখন দুপুরবেলা সূর্য ঢলে পড়ছে
                অসম্ভের জলে

আর একটু অপেক্ষা করো , দেখবে—
‘তুমি দাঁড়িয়ে আছো আমার গানের ওপারে’
আর আমি
দাঁড়িয়ে আছি তোমার আলুপোস্ত ডালমাখা ভাতে


১৪।
শরীরে লেগে আছে স্নান
অলস ঘাম
চোখ খোল, দেখ—খসে পড়ল অন্ধকার বিষ

তালুতে লেগে আছে ক্ষমতার জোর
না, না, ঈশপের গল্প নয়, নেহাত বিষণ্ণ টোপ
সর্বনাশ গিলে নিচ্ছে রোদ

শরীরে লেগে আছে স্নান
আয় খোকা মুছে দিই বিষ, বিষণ্ণ বিষাদ


১৫।
ছেলেরা বলছে, বাবা তুমি রোজ রোজ আসতে পারো না কেন?
আমি চুপচাপ। বলেছি, আয় সেলফি তুলব
আসলে ভালোবাসা নীল বিষ গীতবিতান হয়ে ওঠেনি

হাত ধুয়ে বসে আছি
দুঃখের কোনো শব নেই, ফুটছে নোনাজল
নেবে জন্মান্তর, তবে নাও
আমার বিশ্বাস নেই আগামী জন্মে
অন্ধকার নামার আগেই লিখে যেতে চাই মহাবোধি গান

ছেলেরা বলছে, বাবা তুমি রোজ রোজ আসতে পারবে!
আমার হ্যাঁ আর না দুটো শব্দই ঘুমিয়ে পড়েছে তখন
আর বাড়ী ফিরে আমি বিয়োগ চিহ্নের মতো স্নান করেছি
                                          একা একা


১৬।
যন্ত্রণা শব্দটির কাছে ফিরে যাচ্ছি এখন। আমাদের দেওয়া-নেওয়া
সকল ক্রিয়াপদ ছুটতে ছুটতে বেরিয়ে গেল। তুমি ভয় পেলে!
কারা এসেছে আজ দেখো, গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে শ্বাসকষ্ট।
                                              বলো, যাচ্ছি...

‘তাহলে সেকথাই থাক’ বলে চলে গেল অন্ধকাক। কিছুই বলেনি
স্বপ্নে পাওয়া বেড়াল। মাথা ঝাঁকাল সবুজটিয়া। বাঁদর নাচল।
কাঠবেড়ালি...
না, আমার বাতাপি লেবু নেই, সামান্য মনখারাপ আছে।
লুফে নাও বন্ধু, লুফে নাও...


বিশ্বজিৎ লায়েক
আমি একটি সরকারি চাকরি করি।
খাই দাই ঘুরে বেড়াই।
কবিতা পড়ি।
আর অঙ্ক ফিজিক্স নিয়ে আলোচনা করতে ভালোবাসি।
মূলত চাকরির সময়টুকু বাদ দিয়ে আমি একা একা ঘুরেই বেড়াই।
সকাল সাতটায় ঘুম থেকে উঠে বেরিয়ে পড়ি
তারপর বো বো ঘোরাঘুরি।
অফিস।
তারপর আবারও ঘোরাঘুরি।
গোটা শহর কলকাতায়।
বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ১২টা হয়ে যায়।
এর বেশি কিছু পরিচয় আমার নেই।

No comments:

Post a Comment