এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

শুভঙ্কর পাল




কবিতা (সাধারণ বিভাগ)





স্পট লাইট

ফাগুন ভেজা চাঁদ , খুঁড়িয়ে চলে
ঘরের দরজায়
উদভ্রান্ত ছুটে যায় নগ্নতা
সূচনায় : সিরাজের জানু থেকে
ঢেলে দিয়েছে ভাড়াটে পাখির ডানায়
ভিতর থেকে বেরিয়ে আসছে
অর্ধেক সাপ ।

বেসবল লুফে নিলেও
চিরহরিৎ পাইনের সুগন্ধি
লুকিয়ে রাখবে
উলঙ্গ কবিতার কাছে ;

স্পট লাইট :৪
তখনো নুনের গন্ধ আর ঋতু রক্তে
করিডরে পরে থাকে
মৃত এক বালিকা....






অনুগল্প



আদরের হাত দুটি

তারপর গোধূলির  আকাশের দিকে চেয়ে দেখি পশ্চিম দিগন্তে ঘন কালো মেঘে কে যেন লাল আবিরের রং মেখে দিয়েছে । চৈত্র মাসে হয়তো সেটা অস্বাভাবিক নয় । কিন্তু তাই বলে ঘন্টা খানেকের মধ্যেই এমন বদলে যাবে ভাবেনি মণি । মনির বয়স আন্দাজ করা মুশকিল । মুশকিল এই কারণে এ বয়সেও দাঁড়ি গোঁফ তেমন গজিয়ে ওঠেনি আর উচ্চতায় চার ফুট হবে কিনা তা নিয়েও  সন্দেহ । কিন্তু অদ্ভুত ওর মনটা । প্রকৃতির সাথে এক নিবিড় বন্ধন যেন সে অনুভব করে । ওর শিরায় শিরায় মেঘের অনুভূতি ও যেন শুনতে পায় । অবস্থা বেগতিক দেখে সবাই ঘরের দিকে ছুটে গেলেও ও খোলা মাঠ আর নদীর বুক থেকে যেন জীবনের রসদ খুঁজে নিতে চায় । কিন্তু আজকের আকাশ আর দশটা দিনের থেকে যেন আলাদা । ওকে দেখে আমার প্রায়ই মনে হত ও যেন রবি ঠাকুরের বলাই ।
          দেখতে দেখতে মেঘের গর্জন শুরু হয়ে গেলো । বিদ্যুতের ঝলকানিতে চোখ ধাঁধিয়ে আসে । আর শব্দে হৃদ কম্প বেড়ে চারগুণ । কানে যেন তালা লেগে যাচ্ছে । দু একটি সাহসী ছেলে অবিনাশ বাবুর আম বাগানে ঝড় উপেক্ষা করে আম কুরোবার জন্য ব্যাস্ত । আজ আর বুকে সাহস কুলোচ্ছে না মণির । প্রকৃতির এমন রুদ্র রূপ সে আগে কখনো দেখেনি । ফেরার পথে হঠাৎ ওর চোখে এলো একটি ছাগল ছানা দলছুট হয়ে রয়ে গেছে শালবনে । ওর পা আটকে যায় । কী করবে ভেবে কুল কিনারা করতে পারেনা । এই ঝড়ে বনে প্রবেশ করা সমীচীন হবে কিনা একবার ভেবে নেয় । তাই বলে ওমন একটি ছাগল ছানার অসহায়তা সে এড়িয়ে যেতে পারেনা । সে ছুটে যায় বনের ভিতর এবং ছানাটি কোলে তুলে নিয়ে বেড়িয়ে আসার মুহূর্তেই একটি গাছের ডাল এসে ওর মাথায় আঘাত করে । কিছু বুঝে ওঠার আগেই ও জ্ঞান হারায় । এদিকে প্রবল ঝড়ে মণি বাড়ি না ফেরায় বাড়ির বৃদ্ধা মা চিন্তায় পরে । ঝড় থেমে যেতেই পাড়ার ছেলেদের নিয়ে ছুটে যায় এদিক ওদিক । আকাশে তখন আধফালি চাঁদ দেখা দিয়েছে । একাকী জীবনে এই বাপ মরা ছেলেটিই ছিলো তার একমাত্র বেঁচে থাকার আশ্রয় । আর দশটা সাধারণ বালকের মতো না হলেও সে তার মায়ের নয়নের মণি । তাই উন্মাদের মতো মনির মা তার নাম ধরে ডাকতে থাকে । বনের ধার দিয়ে যাবার সময় একটা গোঙানির আওয়াজ ও ছাগলছানার ডাক শুনতে পেল । সেই অবলা জীবের গলাতেও যেন কেমন একটা আর্তস্বর । এগিয়ে যেতেই আবছা আলোয় তারা দেখতে পেল মণির মাথা ফেটে পড়ে আছে । জ্ঞান ফিরলেও সে উঠতে পারছিলো না । মণির মা চিৎকার করে কেঁদে ওঠে । মায়ের কান্না ওর কানে যেতেই মণি চোখ মেলে একবার মায়ের দিকে তাকায় আর একবার কোলে আগলে রাখা ছাগল ছানার দিকে তাকায় । ওর মাথা দিয়ে দর দর করে রক্ত ঝরলেও সেদিকে ওর খেয়াল নেই ,বরং বলে ওঠে দেখেছো মা ছাগল ছানাটি একটুও আঘাত পায়নি ।আর দেখো কেমন মায়া নিয়ে আমার গালে আদর করছে । মা বুঝতে পারেনা এমন ছেলের জন্য হাসবে না কাঁদবে । ছেলেকে সে বুকে জড়িয়ে ধরে । আর ততক্ষণে মেঘ সরে গিয়ে আকাশে চাঁদ জোছনা ছড়িয়ে দিয়েছে ।


শুভঙ্কর পাল

No comments:

Post a Comment